বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে কিছু কথাঃ
অধ্যয়ন জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ও বলা যায় শেষ ধাপ বিশ্ববিদ্যালয়। এ পর্যন্ত আসার সামর্থ্য অনেকেরই হয় না, হলেও অনেকে মাঝে পথে ঝড়ে যায়। তারপর, যারা পার হয়, ঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে অনেকেই কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছায় না। তাদের নিয়ে কিছু কথা বলার আগে বলে নিচ্ছি যে নিচের শর্তগুলোতে আপনি না পড়লে বাকীটা আপনার জন্য নয়ঃ
ক. যাদের অবস্থা “ভাল”, প্রাইভেট গাড়িতে চলাচল করে, তাদের জন্য নয়, কারণ আমি নিজে সে পর্যায়ের না। তাই আপনাদের কোন উপদেশ দিতে না পারায় দুঃখিত।
খ. যারা দ্বীন পালন করেন না, বা করতে চান না মানে ইসলাম বিদ্বেষী, তাদের জন্যও না।
গ. যাদের পিতা-মাতা, অভিভাবক নিয়মিত গাইড করেন, তাদের জন্যও নয়, কারণ যা বলব তা তাদের জন্য যাদের অভিভাবক গাইড করতে পারেন না, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াতেই অবস্থা খারাপ। এতটুকুই অনেক। সেটার জন্য কৃতজ্ঞ, নইলে আজ আমি এই লিখা পর্যন্ত ও আপনি এই লিখা পড়তে আসতে পারতেন না।
ঘ. অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের অধিকারী, কারণ, বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের অধিকারীরা নিজেরাই অনেক কিছু বুঝে নেয়। আপনারাও আমন্ত্রিত।
এবার আসল কথায় আসা যাকঃ
১. বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কিভাবে কাটানো উচিৎ - ?
এক কথায় উত্তর হল – সেভাবে যা আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যটাকে ঠিকভাবে গুছিয়ে নিবে।
পড়ালেখাঃ এটার দুইটা ধরণ; ১. মার্ক ভাল পাওয়া, যা দরকার তার সবই করা, দিন শেষে, CGPA থাকবে, অন্য কিছু না।
২. অবশ্যই শেখা, নইলে অসম্মানিত হতে হবে।
টিউশনিঃ অবশ্যই করা উচিৎ। অনেক কিছু শিখতে পারবেন। মানুষের ব্যবহার, ছাত্র-ছাত্রী কেমন হয় সেটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ মিলবে।
কোচিংয়ে পড়ানোঃ সুযোগ পেলে করা উচিৎ। বিশেষ করে নিজ এলাকায়।
ফ্রিল্যান্সিংঃ কিছু একটা শিখে করা উচিৎ। এটা জীবনের একটা অলিখিত অর্জন।
ব্যবসায়ঃ পড়ার পাশাপাশি ব্যবসার চেষ্টা করা উচিৎ। তাহলে আর চাকরির জন্য বসে থাকা লাগবে না। বই বিক্রি, হাতের কাজের জিনিস, মৌসুমি ফল, মধু, তৈল – এসবের ব্যবসায় দিয়ে শুরু করা যায়।
ভিন্ন কিছু শেখাঃ এমন কিছু শেখা উচিৎ যা এক ধাক্কায় যে কেউ বলবে ওটা আপনার কাজ নয়।
সফট স্কিল শেখাঃ কম্পিউটার, ছবি তোলা, ওয়ার্ড, এক্সেল, গ্রাফিক্স, বক্তৃতা দেয়া, প্রেজেনটেশন দেয়া, যোগাযোগ দক্ষতা, ইমেইল করা, গুগল সার্চ করা, নিরাপত্তা বিষয়ে শেখা, দরকারি আইনগুলা জানা – এসব একটা একটা করে শেখা উচিৎ। গ্রুপ করে শিখলে আরও ভাল।
ভাষা শেখাঃ আরবিটা আবশ্যক। এই ভাষায় এত সুন্দর করে গভীর ভাব প্রকাশ করা যায়, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর পর, স্প্যানিশ, জাপানিজ, চাইনিজ, ইটালিয়ান,কোরিয়ানসহ অন্য যেকয়টা ভাল লাগে শেখা দরকার। ইংরেজি শেখার গুরুত্ব নিয়ে বলার আলাদা করে কিছু নাই।
ইলম অর্জনঃ এটা সবচে গুরুত্বপূর্ণ। জেনারেলের অধিকাংশেরই শরীয়া নিয়ে কোন ধারণা নেই। বিয়ে, তালাক, গোসল, লেনদেন, হারাম, হালাল, ফিকহ, বিভিন্ন মাসাইল, রুকইয়াহ, সন্তান পালন,পারিবারিক জীবন ব্যবস্থা, পিতা-মাতার সেবা, শক্ত পরিস্থিতি সামলানো, ডিপ্রেশন মোকাবিলা – এসব নিয়ে কোন ধারণা নাই – এমন অনেক পাওয়া যাবে। তাই, উস্তাযের কাছে, সোহবতে ইলম অর্জন আবশ্যক। শুধু বই থেকে অর্জন করলে বিপথে যাওয়ার অনেক সম্ভাবনা আছে।
প্রেমে না জড়ানোঃ প্রয়োজন হলে বিয়ে করুন, ভুলেও প্রেম নয়। কারণ, এটা হারাম, এটা যিনা, এটা অশ্লীলতার বাহন। মাহরাম, গায়রে মাহরাম মেনে চলুন।
মনে রাখুন – পুরুষের জীবনের অধিকাংশ সমস্যা হয় গায়রে মাহরাম নারী থেকে, আবার নারীর জীবনের অধিকাংশ সমস্যা হয় গায়রে মাহরাম পুরুষ থেকে।
একটা মূলনীতিঃ আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, সুন্নাহ্ অনুসরণ করুন। ইলম অর্জন করুন। দ্বীন চর্চা করুন, দাওয়াত দিন। নইলে জীবনে অনেক ভূল করে ফেলবেন। শোধরানোর সুযোগ পাবেন না।
নেটওয়ার্ক তৈরিঃ আপনার আগের ৫ ব্যাচ ও পরের ১০ ব্যাচ – এদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করুন। শুধু নিজের ডিপার্টমেন্ট না, অন্য ফ্যাকালটির অন্যান্য ডিপার্টমেন্টেও!
গুটিবাজি শিখুন, চাকরিতে খুব কাজে লাগে।
রাজনীতিঃ সুযোগ পেলে করুন।
বিসিএসঃ সরকারী চাকরি নিয়ে বেশি আকাঙ্খা না করে নিজেই কিছু করুন। আর যাদের ইচ্ছা প্রচুর, তারা সেইফ জোনে খেলুন। ৩০ পর্যন্ত অপেক্ষা করা পরিবারের জন্য অনেক বড় বোঝা।
চাকরিঃ প্রচুর পরিমাণ কৌশলি হতে হয়। উপরের কাজগুলা করলে এটার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ্।
সাজ্জাদ হোসেন
পেশাদার হিসাববিজ্ঞানী
#sazzadais #wordsofwisedom #learnwithsazzad
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:০৩