ডেঙ্গুর সিজন চলছিল। আশেপাশের কম বেশী সবারই ডেঙ্গু হচ্ছিল। খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। এই বুঝি সে ঘরে এলো।
শেষ পর্যন্ত রক্ষা হলো না। আমার একমাত্র পুত্র এডিস মশার কামড়ের প্রথম শিকার হলো। রাতে ভালো মানুষ ঘুমিয়েছিল। সকালে স্কুলে যেতে হবে। কিন্তু ঘুম ভাঙ্গছে না। মাথায় হাত দিয়ে দেখি প্রচন্ড জ্বর। পুত্রের খালামণিকে কল করলাম। তিনি বললেন- দ্রুত ব্লাড টেস্ট করাতে।
বাসার কাছে সিটি হসপিটাল। গেলাম সেখানে। টাকা পরিশোধ করে ব্লাড স্যাম্পল দিতে গিয়ে ভিমরি খেলাম। যে রুমে স্যাম্পল নেয়া হচ্ছে সেটা খুবই অপরিস্কার একটা রুম। ৩/৪ জন বসে জম্পেশ আড্ডা দিচ্ছিল। আমরা দুজনে দরজার সামনে অপেক্ষা করছিলাম। তারা আর ডাকে না। বেশী দেরী হচ্ছে দেখে নিজেই রুমে ঢুকে পড়লামঃ আমার ছেলে রক্তের স্যাম্পল দিতে হবে। এখানেই কি নেয়া হবে?
মনে হলোঃ তারা খুব চেতে গেছে। যাক তারা তাদের ময়লা হাতে রক্তের স্যাম্পল নিল। তুলনামূলকভাবে বেশী ব্যাথা পাওয়া গেছে বলেই আমার ছেলে জানালো।
ঠিক করলাম নেক্সট টেস্ট এখানে করবো না। যারা ন্যুনতম পরিচ্ছন্নতা মেনে চলে না তাদের সাথে আমি নেই । এবার গেলাম ইবনে সিনা, ধানমন্ডিতে। সেখানে গিয়ে দেখি শত শত লোক। তারা সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ডেঙ্গু টেস্ট করাতে। প্রথমে পেমেন্ট কাউন্টারে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। বিরাট লাইন। তবে অতবেশী সময় লাগল না।
ডেঙ্গুর জন্য প্রথমেই যে টেস্টটি করতে হয় তার নাম Complete Blood Count (CBC) এর মূল্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত। আমি পেমেন্ট কাউন্টারে দায়িত্বরত ব্যক্তি কাছে জানতে চাইলাম- সিবিসি টেস্টের জন্য কত টাকা লাগে। উনি বললেন- ৫০০ টাকা। আমি বললাম- আপনাদের এখানে তো সব টেস্টে ২৫% ডিসকাউন্ট আছে শুনেছি। উনি বললেন- সব টেস্টে ২৫% ডিসকাউন্ট থাকলেও এই টেস্টে নেই।
-কেন নেই।
- কারণ এটা সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। তাই এখানে ডিসকাউন্ট দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
- এই ৫০০ টাকা কি আপনারা সরকারের কোষাগারে জমা দিবেন?
- না তা কেন দিব?
- তাহলে ডিসকাউন্ট কেন দিবেন না?
এবার উনি উনার যুক্তি প্রদর্শন করলেন। সারা দেশে ডেঙ্গুর মৌসুমে হাজারে হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। অবধারিতভাবে তখন মানুষকে কয়েকবার টেস্ট করাতে হয়। এই চান্সে টাকা কামানোর হিড়িক পড়ে যায় । তখন যে যার মতো টাকা রাখতেন। কোন জায়গায় এই টেস্ট নিত ১০০০ টাকা । কোন জায়গায় ১৫০০ টাকা। কোথাও বা তার চেয়েও বেশী। ফলে মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকার তখন কিছু টেস্টের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
আর যেহেতু সরকার বলেছেন- ৫০০ টাকা নিতে তাই ইবনে সিনা এই টেস্টে কোনপ্রকার ডিসকাউন্ট দিবে না।
আমি বললাম- যেহেতু এই ৫০০ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হবে না এবং সরকার ডিসকাউন্ট দিতে নিষেধও করেনি আর আপনারা তো আপনাদের ওয়েব সাইটে এই কথা উল্লেখও করেননি।
- ভাইরে, বাদ দেন। বাংলাদেশে কেউ ওয়েবসাইট পড়ে?
সে যাই হোক। আমার যুক্তিতে কোন কাজ হবে না। তাদের দোকান। তারা ডিসকাউন্ট দিলেও পারে না দিলেও পারে। তাদের ইচ্ছা।
হুদাই ১০০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে ডিসকাউন্টের আশায় ১ ঘন্টা ঠেলাঠেলি করে লাইনে দাঁড়িয়ে রইলাম। এর চেয়ে মোঃপুর থানার পাশের আল মানারের সার্ভিস অনেক বেশী ভালো।