মাধব কুমার বালো-র পিতৃ নিবাস হরিরামপুর। সে খুব বেশী ভালো ছাত্র ছিল না। জয়পাড়া কলেজে বি কম পড়তো। নিদারুণ আর্থিক অস্বচ্ছলতাকে কঠিন হস্তে মোকাবেলা করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল।
অনেকগুলো টিউশনী করতো হতো। পড়াশোনার খরচ তো আছেই । সেই সাথে বাড়িতে দরিদ্র মা-বাবাকে সম্ভবত সে সাহায্য করতো। প্রচন্ড ব্যস্ত থাকতো বলে দিনের কোন সময় তাকে পাওয়া যেত না।
রাত ৯টার পরে সর্বশেষ টিউশনীটি করে বের হলে তার সাথে দেখা হতো। আমাকে দেখে খুবই খুশী হতো।
- সাজ্জাদ ভাই, বলেন তো আপনাকে কী খাওয়াই?
- চল, তোমাকে চা খাওয়াই।
রাসেলের চায়ের দোকানে গিয়ে বসা মাত্রই শুরু হয়ে যেত তার অনর্গল কথা বলা। কাউকেই যেন ফ্লোর দিত না। তাই চুপচাপ শুনে যেতাম তার কথা। তবে তার গল্প বলার স্টাইল ছিল ভালো। কষ্টের গল্পগুলোও অনেক মজা করে বলতো।
******মাধব কুমার বালো******
- ভাই, আর বাঁচুম না। একবার ইন্ডিয়া যাওয়া দরকার। যদি তারা বাঁচাতে পারে।
তার কণ্ঠে হতাশার সুর স্পষ্ট। এক সময় জয়পাড়া ছেড়ে ময়মনসিংহ ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে কাজ নিই। জীবনের প্রয়োজনে আমরা ছড়িয়ে যাই দেশ থেকে দেশান্তরে। হাজারো ব্যস্ততার মাঝে কে কাকে মনে রাখে।
এরই মধ্যে পৃথিবীতে আসে ফেসবুক। এখানে মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়। এক সময় মাধবকে খুঁজে পেলাম। তার একটি মোবাইল নম্বরও হয়েছে। ঢাকার একটি কোম্পানীতে কাজ পেয়েছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সাথে তার কাজ। এই কাজের জন্য সারা দেশ চষে বেড়ায় সে। এরই মাঝে এক সময় ঢাকা এসে খবর পাই মাধব কাজ উপলক্ষে ঢাকার হেড অফিসে এসেছে। বিকাল সাড়ে ৫টার মধ্যে যেতে পারলে মতিঝিলের অফিসে তাকে পাওয়া যাবে।
তাকে পাওয়া গেল। সেই হাসি মুখ। সেই প্রাণখোলা উচ্চ হাসি। মাধবকে দেখে বড় ভালো লাগলো। এরই মাঝে ফোন এলো জানে আলম ভাই এর । তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংক জয়পাড়া শাখায় কাজ করতেন। তিনি ব্যাংকের হেড অফিসে আছেন দিলকুশা। মাধবকে বললাম- চল- আমরা দুই জনেই যাই। আলম ভাই কে দেখি না অনেক দিন।
মাধবকে নিয়ে গেলাম মার্কেন্টাইলে ব্যাংকের হেড অফিসে। সেখানে থেকে বের হতে ৯টা বেজে গেলে । বের হয়ে যার যার পথে চলে গেলাম।
অনেক দিন পরে বেশ কয়েক বছর আগে খবর পেলাম- মাধব হঠাৎ করে মারা গেছে। শুনে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। চটপটে হাসিখুশী একটা ছেলে হুটহাট মরে যাবে এটা কোন কথা?!
মাধব চিরতরে চলে যাবার পর ফেসবুকে ওর ছবি খুঁজলাম। কোন ছবি পেলাম। তার কোন ফেসবুক হিসাব ছিল কিনা তাও বুঝতে পারছিলাম না। পরিচিত অনেকের কাছেই খোজ নিলাম তাদের কাছে মাধবের কোন ছবি আছে কিনা।
কারো কাছে হয়তো সে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। ফলে তার ছবি কারো কাছেই পেলাম না। হতাশ হয়ে আবার অনলাইনে খোজা শুরু করলাম গুগুলে, মুগুলে সব জায়গায় । যদি কোথাও কেউ কোন ভাবে ছবি পোস্ট করে থাকে তাহলে গুগুল হয়তো খুঁজে বের করতে পারবে।
অবশেষে একদিন পেয়ে গেলাম তার ছবি। কেমন যেন দুঃখী দুঃখী। সেই মাধব। সেই হাসিখুশী মাধব। সামান্য মজার কথা শুনলেই যে প্রচন্ড জোরে হা হা হা করে হাসতে পারতো। সেই এখন ধরা ছোয়ার বাইরে। এখনো মাঝে মাঝে যখন জয়পাড়া যাই মাধবকে খুব মনে পরে। সামান্য একজন অখ্যাত মানুষ । তাকে মনে রাখতে কার ঠ্যাকা পরেছে। কিন্তু আমার খুব মনে পরে।
মাধব কুমার বালো, দ্বিতীয় জগতে তুমি অনেক অনেক ভালো থেকো। সেই জগতে নিশ্চয়ই কোন অভাব অনটনের টেনশন নাই। কেবলই শান্তি, শান্তি আর শান্তি।
*******
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:২১