এই সপ্তাহের শুক্রবারে অর্থাৎ ১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ জুম্মার নামাজ পড়তে গেলাম লালমাটিয়া শাহী মসজিদ যেটাকে আবার বিবি মসজিদ ও বলা হয় ।
আমি সাধারণত সাড়ে বারোটা থেকে বারোটা ৪৫ এর দিকে রওনা হয়ে থাকি। কেননা বাসা থেকে মসজিদে যেতে সময় লাগে মাত্র দুই মিনিট ।
মসজিদে গিয়ে উপস্থিত হয়ে যথারীতি দেখতে পেলাম নিচতলার পুরোটাই কানায় কানায় ভরপুর ।
তাই স্যান্ডেল হাতে নিয়ে দোতলায় উঠতে শুরু করলাম । সাথে আমার পুত্র ছিল । ওঠার সিঁড়ির সাথে গ্রিলের কভার দেয়া হয়েছে অনেকটা সিলিং এর মত। সেখানে জনগণ জুতো রাখছে।
এই ধরনের জায়গায় আমি আগে কখনো জুতো রাখিনি । তাই আমার পুত্রকে ইঙ্গিত করতেই এসে রাজি হয়ে গেল ।
সে আর আমি জুতো রাখলাম। তারপর দোতলায় উঠে পড়লাম।
গিয়ে দেখি, সেখানে প্রচুর পরিমাণে জায়গা আছে আমাদের দাঁড়ানোর জন্য । তাই আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম। নানান বয়ান এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানিকতার পর খুতবা শেষে নামাজ এক সময় শেষ হয়ে গেল। এবার বেরিয়ে যাবার পালা।
প্রচন্ড রকম জনপ্রবাহের চাপে নিচে নামার সময় খেয়াল রাখলাম যাতে জুতো টা নিয়ে আসা যায় । সেই গ্রিলের সিলিং এ গিয়ে দেখি আমার পুত্রের জুতো জোড়া ঠিকই আছে ।
কিন্তু আমার যত জোড়া নেই। দেখে মনটা বেশ দমে গেল ।
সে যেই হোক আমার পুত্র দ্রুত মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল। কিন্তু আমি যদি বের হই আমাকে খালি পায়ে বের হতে হবে। একবার চিন্তা করলাম খালি পায়েই বের হয়ে যাব ।
পরক্ষণে আবার মনে হল নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি। যখন ইমাম সাহেব বের হয়ে যাবেন। তখন ভেতরে কোন নামাজী ই থাকবে না । ঠিক তখন বের হব ।
কারণ আমার ধারণা কোন চোর জুতা চুরি করেনি । কোন এক নামাজীর জুতার চেহারার সাথে হয়ত আমার জুতোর চেহারা মিলে গিয়েছিল ।
ফলে সে হয়তো ভুলক্রমে নিয়ে গেছে এবং সেটা যদি হয় তাহলে সবাই চলে যাওয়ার পরেও এক জোড়া জুতো এখানে অবশিষ্ট থাকবে ।
আমি অপেক্ষা করার পর সবাই যখন চলে গেছে আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম ঠিকই ওখানে এক জোড়া জুতা পড়ে আছে। কিন্তু জুতো জোড়ার চেহারা আমার আগের জুতো জোড়ার চেহারার সাথে ফিফটি পার্সেন্ট মিল ও নাই ।
কি করবো ভাবছিলাম । খালি বাসায় চলে যাব ? না এটাই পরে যাব।
এরপর যে চিন্তা করলাম এটা পরেই যাই ।
কারণ আমি এটা না পড়লে এটা তো এখানে পড়েই থাকবে। সে যাই হোক এই জুতো জুড়া আমার জুতো জোড়ার চেয়ে অনেক বেশি দামি মনে হচ্ছে। কিন্তু পরের দামি জুতা আমার পড়তে মোটেই ইচ্ছা করছে না।
আমি চাচ্ছি যে করেই হোক, এই জুতো জোড়া আসল মালিকে ফেরত দিতে । এ জন্য এখন আমার কী করা উচিত?
আমি কি এই বিষয়টি নিয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে আলাপ করব?
এমনও তো হতে পারে যে, আগামী শুক্রবারে জুম্মার নামাজে ওই ভদ্রলোক আবারো নামাজ পড়তে আসবেন । তিনি আমার জুতো জোড়া হয়তো ওই গ্রিলের সিলিং এর উপর রাখবেন এবং আমিও এই জোড়া নিয়ে ওই সিলিং এর উপর রাখবো ।
এবার হয়তো তিনি আর ভুল করবেন না ।তিনি তার জুতো জোড়া এবার নিয়ে যাবেন । আর আমি আমার জোড়া নিয়ে যাব।
এই জিনিসটা কতটুকু সত্যি হতে পারে আমি বুঝতে পারছি না।
আফসোস।