somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার এক জন নেতা বন্ধুর গল্প ****************************

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছাত্র জীবনে আমার এক বন্ধু ছিল । ছাত্র মোটামুটি ছিল তাও বলা যায় না। অনেকটা আদু ভাই না হলে আদু ভাইয়ের চেয়ে একটু ভাল ছাত্র ছিল সে।

তাকে ভবিষ্যতের কথা বলতেই বলত, আমি কোন চাকরি করব না।
কি করবি তাহলে?
ব্যবসা করব।
কিসের ব্যবসা?
জানি না । তবে ব্যবসা একটা করব এটা ঠিক।
কর। আমার উপায় নাই। গরীব মানুষ আমি। আমার চাকরি ছাড়া উপায় নাই। এম এ পাস করার পর বিরাট এক চাকরি ধরব।
ধর বিরাট চাকরিটাই ধর। আমি করব ব্যবসায়। অনেক বড় ব্যবসা।

কি জানি, হয়তো সব গরীব মানুষরাই চাকরি করে। কেননা তাদের পায়ের তলায় কোন মাটি নাই। মূলধন নাই। বেশীর ভাগ অসহায় মানুষরাই চাকরি করে। তাদের মতো মানুষ চাকর হবার জন্যই তো জন্মায়।

চাকরি করলে মানুষের ব্যক্তিত্ব বলতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। যেমন এই আমি আমার সব ব্যক্তিত্ব চাকরি করে করে শেষ করে দিয়েছি। আমার বন্ধুর সিদ্ধান্ত তাই সঠিক ছিল। সে অনেক বড় ব্যক্তিত্ববান। যে কাউকে থ্রেট করতে পারে।


আবার রাস্তায় বের হলে অজস্র সালাম পায়।
আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ সালাম দেয়নি। সালাম দেয়া ওয়াজিব। আমি অনেক কে সালাম দিয়েছি। তারা মুখ তুলে চেয়ে একটা জবাবও দেয়নি। এখন কাউকে সালাম দিতেও শংকা হয়। যদি উল্টা বকা দিয়ে বসে!


আমার সেই বন্ধু যোগ দিল ছাত্র রাজনীতিতে। দারুণ অবাক করা ব্যাপার! তার চেহারাই গেল পাল্টে। টি শার্ট আর জিন্সে তাকে দারুণ দেখাতে লাগল। আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। যেন নায়কের মতো দেখাচ্ছে তাকে। কলেজের অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে তাকে আহলাদ করে ভাইয়া ভাইয়া করছে। দেখে আমার কি যে ভাল লাগত। বন্ধু বটে আমার একটা। আমি গর্বিত।


দোস্ত, তোকে দারুণ লাগছে।
তাই বুঝি!
হ্যাঁ,তাই। টি শার্ট আর জিন্সে তোকে সাংঘাতিক মানিয়েছে। আচ্ছা, তোদের বুঝি অনেক টাকা?
কেন, তোর কি টাকা লাগবে? লাগলে আমাকে বলিস। লজ্জা করিস না। টাকা আমার কাছে কোন বিষয়ই না।

আমি জীবনেও কারো কাছে টাকা ধার চাইনি। বরং ধার দিয়েছি। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তা আর ফেরত পাইনি।আমি কেন আমার বন্ধুর কাছে টাকা ধার চাইতে যাব!


বন্ধুটি একদিন আমাকে বলল, তুই অনেক ভাল ছাত্র। পার্টি করিস না কেন?

কিভাবে পার্টি করব? আমি কাউকে ধমক দিতে পারি না, কাউকে চড় মারতে পারি না, কাউকে লাথি মারতে পারি না। আমাকে যদি পুলিশে ধরে নিয়ে তাহলে আমাকে কেয়ামত পর্যন্ত হাজতে থাকতে হবে। কেননা, আমার বাবা গরীব। তার টাকা টাকা নেই। সেও আমার মতো মাটির মানুষ। আজ পর্যন্ত একটা মুরগী পর্যন্ত জবাই করতে সাহস পায়নি। সেই আমি করব রাজনীতি!!


বন্ধুটি অনেক হাসল আমার কথা শুনে। যেন আমি অনেক মজার এক হাসির গল্প বলেছি। গোপাল ভাড়ের গল্পের চেয়েও অনেক মজার যেন আমার এই গল্প।


দোস্ত, আমি তোকে হেল্প করব। তুই রাজনীতি কর । এখনো সময় আছে। রাজনীতি ছাড়া পয়সা কামাতে পারবি না। সারা জীবন গরীব থাকতে চাস? বল চাস, তুই?


আমার বন্ধুর প্রশ্নের কোন সঠিক জবাব আমি দিতে পারিনি। আমার কখনো বড়লোক হতে ইচ্ছে করেনি। বেঁচে থাকার জন্য যে সামান্য টাকা পয়সা দরকার তার চেয়ে বেশী আমার কখনো কাম্যই ছিল না। সহজ সরল মানুষের যা স্বপ্ন থাকে আমারও তাই ছিল।


এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে টিউশনী ধরেছি। মাস্টার্স পাসের পরও তা আর ছাড়তে পারিনি। চাকুরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছি। পুরনো জুতা পলিশ করে বছরের পর বছর ব্যবহার করেছি। প্রতি রাতে লিখেছি এক গাদা চাকরির দরখাস্ত। বাসের রড ধরে জিপিও-তে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পোস্ট করেছি সব দরখাস্ত।


জিপিওর উল্টা দিকে বাটার মূল্য হ্রাসের দোকান থেকে জুতো কিনেছি। পয়সা ছিল না।


ফার্মগেট থেকে পিএসসি-তে ভাইভা দিতে গেছি পায়ে হেঁটে। হেঁটে। ওই রাস্তায় রিক্সা চলে না। ভিআইপি রোড ছিল ওটা। পাবলিক বাসে উঠা দায়। সে সব বাসে মহা ভীড়। সহজে ওঠা যায়না। যাদের শক্তি কম তারা তো উঠার কথা চিন্তাই করতে পারে না।


সিএনজি নেয়া তো স্বপ্নের ব্যাপার। হেঁটে হেঁটে কত বার যে গেছি পিএসসি-তে । বিসিএস টাইপের সব ধরনের পরীক্ষায় ভাইবা পর্যন্ত যাওয়া আমার জন্য যতটা সহজ ছিল ভাইবার উপরে যাওয়া তত সহজ ছিল না। কারণ, ভাইবার নীচের পরীক্ষাগুলোতে টাকা লাগে না। ভাইভায় টিকতে হলে টাকা লাগবে আর না হয় মামার জোর লাগবে। আমার মামাও ছিল না। ফলে হাহাকার করে ফিরেছি।

আর আমার সেই বন্ধুটি শানৈ শানৈ উন্নতি করতে লাগল। তার কোন চাকরি ছিলনা। কি ব্যবসা করে তাও জানি না। মাঝে মাঝে ফোন করলে বলত, দোস্ত, সাইটে আছি। পরে কল দিস। কথা হবে। ধীরে ধীরে সে অধরা হয়ে উঠে। তার কোন কুল কিনারা পাই না।

আজ আমি এক মাছি মারা কেরানী। প্রতি সন্ধ্যায় ভয়ে ভয়ে বাসায় ফিরি। এই বুঝি গিন্নি নতুন কোন বায়না নিয়ে আসে। ছোট্ট মেয়েটা যদি আবার কোন আব্দার করে বসে! জীবনের কাছে আমি প্রতিনিয়ত পলান্তি পলান্তি খেলছি।

আমার বন্ধুটি আমার মতো ভীতু নয়। সে পালিয়ে বেড়ায় না। অনেক বড় ঠিকাদার সে এখন। সম্প্রতি বিএমডব্লিউ গাড়ীও কিনেছে। ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছে। বসুন্ধরায় প্লট আছে। সেখানে খুব শীঘ্রই বাড়ির কাজ শুরু করবে।

আর আমি আজো স্বপ্ন দেখি। বাড়ির স্বপ্ন দেখি। গাড়ীর স্বপ্ন দেখি।আমার স্বপ্নগুলো কেবলই অলীক। স্বপ্নে দেখি,সাড়ে তিন হাত আমার বাড়ি। আমার গাড়ির কোন চাকা নাই। চার জনে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমার গাড়ী।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৯
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×