আমাদের দেশের মুরুব্বিরা তো বটেই এমনকি চলতি আধুনিক যুগের অনেকেই সেই আমলের বাংলা ছবিতে উত্তম -সুচিত্রার অভিনীত চিত্রকলা দেখে মুগ্ধ হন। ওপার বাংলার উত্তম-সুচিত্রাই বা কেন, এপার বাংলার রাজ্জাক-কবরীর অভিনীত ছবি আজো অনেকর মন কেড়ে নেয়। তাদের অভিনীত ছবিতে সেই আমলের সমাজ ব্যবস্থার বাস্তব প্রতিফলন ছিল। নরন-নারীর শ্বাশত প্রেমের সুন্দর প্রকাশ ছিল তাতে। সেই সব ছবির গানের মাধ্যমেও তা ফুটে উঠত নিখুঁতখুঁ ভাবে। তখনকার প্রেম ছিল কতই না সুন্দর।
সেই আমলের প্রেম কাহিনী ছিল অনন্য সাধারণ। নরনারীর চার চোখের মিলন নিয়ে কত কবি যে কত কবিতা লিখে ফেলতেন তার কোন ইয়ত্বা নেই। পরস্পরকে নিয়ে ছিল কত স্বপ্ন আর কত ভাবনা। তখন ডেটিং মানে ছিল কোন নিভৃত স্থানে দেখা করে দুদন্ড মনের কথা বলা। স্বপ্ন বুনা। সর্বোচ্চ সাহসী কর্ম ছিল প্রেমিক পুরুষ কর্তৃক প্রেমিকা রমণীটির হাত ধরা পর্যন্তই। এর বেশী তারা কল্পনাও করতে পারতো না। অথচ তাতেই ছিল কতইনা আবেগ আর লজ্জা মিশ্রিত অনুভূতি। সেই স্মৃতি তারা সারা জীবন ভুলতে পারতেন না। প্রথম হাত স্পর্শ করার দিনটি সারা জীবন মনে রাখা হত। পরবর্তী দাম্পত্য জীবনে তারা স্মরণ করত প্রথম হাত স্পর্শের মধুমাখা স্মৃতিটুকু ।
এখন দিন বদলেছে। সময়ের আবর্তে এখন ডিজিটাল যুগ শেষে স্মার্ট যুগ চলছে। তাই প্রেমেও ডিজিটালও স্মার্টনেসের ছাপ সুস্পষ্ট। আর তাই এখন প্রেম শুরু হয় মোবাইলের মিস কল দিয়ে কিংবা ফেসবুকের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে। আর শেষ হয় ইন্টারনেটে রগরগে অন্তরঃঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও প্রকাশের মধ্য দিয়ে। সারা দেশে সাড়া পড়ে যায় তাতে। কত ছবি আর ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।
আগের দিনের প্রেমে ছেলে মেয়ে উভয়ই সুন্দর সোনালী স্বপ্ন দেখত। নীড় বাঁধার কাব্যিক স্বপ্ন মাখা ছিল তাতে। আর এখন প্রেমের মূল টার্গেটই যেন ফিজিক্যাল রিলেশনশিপ টা কত তাড়াতাড়ি করে ফেলা যায়। একটু বিলম্ব করা মানেই তো অনেক লস। সব ক্ষতি কাটিয়ে উঠা যায়। এই লস কি আর কাটিয়ে উঠা যায়! না কাটিয়ে উঠা সম্ভব! আজকের ছেলে-মেয়েরা যেন লস করতে রাজি নয়।
এমন একটা সময় ছিল যখন এক জন ছেলে এক জন মেয়েকে নিয়েই বিভোর থাকত। এখন কোন কোন ছেলের একটা মাত্র প্রেমিকা এটা কোন কোন ক্ষেত্রে তার বন্ধু মহলে বিরাট প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। শিডিউল করে অনেক ছেলেই একাধিক প্রেম সামাল দেয়। কোন কোন মেয়েও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। যুগের হাওয়া অনেক বড় বিপ্লব নিয়ে এসেছে যেন।
আগের দিনে প্রেয়সীকে না পেলে প্রেয়স বাবু দিওয়ানা হয়ে যেতেন। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে খোঁচা খোঁচা দাড়ি রেখে দেবদাস বাবু সাজতেন। দুর্মুখেরা বলতঃ ছেলেটি ছ্যাঁকা খেয়েছে। অভিভাবকরা তাকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে যেতেন।
এখন আর কেউ ছ্যাঁকা খায় না। খেতে চায় না। এখন ছেলে-মেয়েরা অনেক বাস্তববাদী। একটা গেছে তো কি হয়েছে। আরো কত আসবে! কত যাবে!
এখন প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে বিশ্বাস আর আস্থার দারুণ আকাল! সর্বত্রর্ব সব বিষয়েই যখন আকাল তাই এ ক্ষেত্রেই বা আকাল বেচারা পিছিয়ে থাকবে কেন?
বিখ্যাত লেখক যাযাবর মহাশয় বলেছেন- আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ। কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ। তাই এখনকার স্মার্ট তরুণ-তরুণীরা জীবনে গতি চায়। কত দ্রুত টার্গেট স্পর্শ করা যায় সেই চিন্তা তাদের মাথায় । আবেগ এখন ঠুনকো! ঠুনকো আবেগ দিয়ে আর যাই হোক আধুনিক তরুণ আর আধুনিকা তরুণীর প্রেম চলতে পারে না!!
আফসোস! বড়ই আফসোস!
**********************************
#(রচনাকালঃ ৩১ শে আগস্ট, ২০১০ )
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩