somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাউকে টাকা ধার দেয়ার চেয়ে পাপের কাজ আর হয় না। **********************

০১ লা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনি কি কখনো কাউকে টাকা পয়সা ধার দিয়েছেন? যদি না দিয়ে থাকেন তাহলে শপথ নিন- জীবনেও কাউকে টাকা ধার দিবেন না। আর যদি আপনি ইতিমধ্যে টাকা ধার দিয়ে থাকেন এবং হাজারো চেষ্টা চরিত্র করে ও সেই টাকা তুলতে পারেননি। খেলাপী হয়ে গেছে ঋণ তারাও শপথ নিতে পারেন- জীবনে কাউকেও টাকা ধার দিবো না।

বাংলাদেশের একটা বিপুল সংখ্যক মানুষ মনে করে কারো কাছ থেকে টাকা ধার নিলে সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার দরকার নেই।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে টাকা ধার নেওয়ার জন্য প্রত্যেক দেশেই নানান ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থাকে। সে প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারি হতে পারে। আবার বেসরকারি হতে পারে । অর্থাৎ আমি বলছি ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কথা।

কিন্তু এই সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার নিতে চাইলে নানান ধরনের আনুষ্ঠানিকতা আছে । আরো আছে আইনের নানান ধরনের মারপ্যাচ। আমার বা আপনার অথবা যে কারো কোন কারণে কোন প্রয়োজনে নগদ টাকার দরকার হতে পারে তখন আপনি চাইলেই কিন্তু ব্যাংক বা অন্য নাস্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ আপনাকে টাকা ধার দিবে না ।

টাকা ধার দেবার জন্য নানান আনুষ্ঠানিকতা আছে। আইনগত ব্যাপার স্যাপার আছে।

আপনি যে টাকা লোন নিবেন সেটা পাশ হওয়ার জন্য তাদের কিছু অনুষ্ঠানিকতার পর আপনি অবশেষে আপনি হয়তো টাকাটা হাতে পাবেন। আপনার কাছ থেকে তারা একটা বড় অংকের টাকা সার্ভিস চার্জ হিসাবে রাখবে।

যে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়াটা অনেক সহজ এবং বাংলাদেশের অনেক মানুষ এটা করে থাকে। তিনি বলে দেন যে ভাই টাকাটা আপনি আজকে দেন আমি আগামী সপ্তাহে দিয়ে দেবো।

যদিও সেই আগামী সপ্তাহ সাধারণ আর কখনো আর আসে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।

আমার ক্ষেত্রে এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি আমাদের এক হলমেট আমার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল । যদিও হলজীবনে আমরা সবাই খুব কষ্টই চলতাম। তবু আমার মনে আছে আমি অনেক মানুষকে টাকা ধার দিয়েছি। কেউ কেউ ফেরত দেয়নি। চির বাকির খাতায় রয়ে গেছে সেই ধার। মনে হয় কুঋণ। কয়েক মাস চলে যাওয়ার পরে আমি তাকে টাকাটা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে তাকে স্মরণ করিয়ে দেই।

কিন্তু স্মরণ করিয়ে দেওয়ার একপর্যায়ে এসে আমাকে খুবই মজাদার একটা উত্তর দিয়েছিল। সে বেশ আবেগে গদগদ হয়ে বলল- টাকাটা না দিলে চলে না?

শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার পরে কর্মজীবনে এসো দেখেছি টাকা ধার দেওয়ার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় দিতে হয়।
কিন্তু টাকা ধার দেওয়ার পরে আপনি বুঝতে পারবেন যে টাকা ধার দিয়ে আপনি নিজেই বরং বিপদে পড়ে গেছেন। আপনি একজনকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে উল্টা নিজেই পড়েছেন মহাবিপদে।

যখন আপনার আর্থিক কারণে যখন আপনার নিজেরই টাকার প্রয়োজন কিন্তু যিনি আপনার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি আপনাকে আজ দেব কাল দেব করে টাকা দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে এমন পরিস্থিতিও দাঁড়ায় যে সে আপনাকে দেখলে মাথা নিচু করে চলে যাবে।

এই টাকা ধার নেওয়া দেওয়ার ব্যাপারে আমার অনেক খারাপ অভিজ্ঞতা থাকলেও এই মুহূর্তে একটি বাজে অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করতে চাই । ২০১০ সালে আমি চাঁদপুর জেলার মোঃ নোমান নামে এক লোককে ৩৫ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলাম এই শর্তে যে সে আজ যেহেতু শুক্রবার সে পরবর্তী রবিবার অথবা সোমবারের মধ্যে টাকাটা আমাকে দিয়ে দিবে। কারণ তার ব্যাংকে ড্রাফ্ট জমা দেয়া আছে। কোন কারণবশত সেটা ক্যাশ হয়নি। যাক আমিও তার ভালো মানসিক কথাবার্তা খুবই বিশ্বাস করে টাকাটা দিলাম এবং বড়ই আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তার সেই রবিবার অথবা সোমবার আজও আনেনি। ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল মাঝখান থেকে পেরিয়ে গেছে দশটি বছর ।

সেই আমলে ৩৫ হাজার টাকা হয়ত খুব একটা কম টাকা ছিল না। কিন্তু ২০২৪ সালে অনেকে হয়তো বলবেন মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। হোক না মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। অন্যের টাকা ধার নিয়ে ফেরত দেবেন না? এটা কোন কথা? তিনি আমার টাকা তো ফেরত তো দেনই নাই । উল্টো মোবাইল ফোনে আমাকে ব্লক করে রেখেছেন । ফেসবুকে আমাকে ব্লক করে রেখেছেন। মাঝে মাঝে মনে হয় যে পুলিশ সাহেবের কাছে নালিশ দিয়ে আসি। পরে আবার ভাবি পুলিশ সাহেব তো কাগজ চাইবেন। আমার তো কাগজ নেই।

পুরো পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর এক মাত্র দেশ যেখানে টাকা পয়সা অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে ধার নেওয়া হয় এবং আশ্চর্যজনকভাবে এই সমস্ত ধার দেনার কোন লিখিত ডকুমেন্ট রাখা হয় না। লিখিত ডকুমেন্ট রাখলে কমপক্ষে কোর্ট কাছারি করা যেত, সালিশ করা যেত । যেহেতু কোন লিখিত প্রমাণপত্র নেই তাই এটা নিয়ে আইন-আদালতে যাওয়াটা হয়ে যায় আরেক দুর্দান্ত ঝামেলার বিষয়। অন্যের উপকারের জন্য নিজের কষ্টের জমানো টাকা-পয়সা ধার দিলাম আবার সেই টাকা আদায় করার জন্য উকিল মুহুরী নিয়োগ করে আমাকে দৌড়াতে হবে কোর্টের দুয়ারে! এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কি হতে পারে?

সে যাই হোক পরিশেষে আমজনতার প্রতি একটি উপদেশ বা পরামর্শ বিনামূল্য দিচ্ছি।

সেটা হচ্ছে কাউকে ধার দিবেন না । আবার কারো কাছ থেকে ধার নিবেনও না।

পেটে ভাতে কষ্ট করে চলবেন। প্রয়োজনে টিউবয়েল থেকে পানি এনে খেয়ে চলবেন। না খেয়ে থাকবেন। তারপরেও কারো কাছ থেকে টাকা ধার আনবেন না। আপনার যদি অতিরিক্ত কোন টাকা পয়সা থাকে রেখে দিন। তারপরেও কাউকে ধার দিতে যাবেন না। আপনার কষ্টার্জিত টাকা ধার দেওয়া মানে তাকে আপনার শত্রুতে পরিণত করা। আপনি অযথা মানুষকে শত্রুতে পরিণত করতে যাবেন?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×