(এটি আমার ১ম পোস্ট। আরও অন্যান্য বিষয় নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে। কিছু ভুল হলে শুধরে দেবেন)
আমার চাকরীর বয়স দেড় বছর। আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে চাকরী বিষয়ক বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক পোস্ট দেব ভাবছি।এর মধ্যে দুইবার চাকরী বদল করেছি। একবার নিজের ইচ্ছায় এবং আরেকবার ফায়ার করা হয়েছিল। এই এক বছরে বিভিন্ন মজার ও কষ্টের অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
যাই হোক, এবার আমার চাকরি পাবার আগের একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম।
জীবনের ১ম চাকরীর ইন্টারভিউঃ
- ২০০৮ সালের ঘটনা, মাস্টা ঠিক মনে নেই (মার্চ/এপ্রিল হবে)বি বি এ পরীক্ষা শেষ, ব্রিটিশ কাউন্সিলে একটা ইংলিশ কোর্স করছি। ঠিক দুপুর বেলা একটা ফোন কল এল মোবাইলে। অপরিচিত নাম্বার দেখে খুব বিরক্ত হলাম এবং কেটে দিলাম (ভাব দেখানোর জন্য কাটা আরকি)।২য় বার ওই নাম্বার থেকেই কল, খুব বিরক্ত হয়ে বললাম- হ্যালো...
ওই প্রান্ত থেকে- (----আমার নাম) সাহেব বলছেন?
আমি- জ্বি বলছি। (একটু কড়া গলায়)
ওই প্রান্ত থেকে- আমি ----লি (একটা আ্যড এজেন্সি) থেকে বলছি।
আমি- জি বলুন (আমার বুকে তখন ধুক পুক শুরু হয়ে গেছে)
ওই প্রান্ত থেকে- আপনি আমাদের এখানে C.V post করেছিলেন। শনিবারে আপনার ইন্টারভিউ। আপনি আমাদের আ্যড্রেস নিয়ে নিন।
আমি- হ্যাঁ হ্যাঁ আমি লিখে নিচ্ছি।
(আমি তখন কলম খুজতে শুরু করে দিয়েছি!! আমার কলম যেন কোথাই যেন লুকিয়েছে।কলম পেলাম না ত পেলামই না। শেষ পর্যন্ত পাশের জনের কলম নিয়ে ঠিকানা লিখা শুরু করলাম। কিন্তু বিধিবাম!! অর্ধেক লিখে আর কালি বের হয় না। শেষ পর্যন্ত গাঢ় করে লিখে কন রকমে লিখলাম।
ওই প্রান্ত থেকে- আপনি কি ওইদিন বিকাল ৩ টায় আসতে পারবেন?
আমি-হ্যাঁ হ্যাঁ পারব।(পারব মানে!! নিশিরাতে ইন্টারভিউতে ডাকলেও সমস্যা নাই)
ওই প্রান্ত থেকে- ও কে থ্যাঙ্ক ইউ।
আমি- থ্যাঙ্ক ইউ (আমার বুকের হার্টবিট যেন ১০ গুন বেড়ে গিয়েছে)
ওই ঠিকানাটা ছিল ধানমন্ডির। তো আমি ক্লাস শেষ করে ওই ঠিকানা খোঁজা শুরু করলাম।সেদিন ছিল বৃহষ্পতিবার, ভাবলাম আগে থেকে চিনে রাখা ভাল। প্রায় দেড় ঘন্টা হাটাহাটি করে খুজে পাবার পর ওই ঠিকানা পেলাম। ভাবলাম ভিতরে একটু ঘুরে আসি। কিন্তু কোথায় অফিস?? এটা তো একটা এক্সিবিসন গ্যালারী!!! ঠিকানাটা আবার ভালো করে খেয়াল করলাম.........ওই নাম্বার টা ওল্ড ধানমন্ডির, আমি এতক্ষন নিউ ধানমন্ডি তে খুজছিলাম!!
ইন্টারভিউ’র দিন এক ঘন্টা আগেই ওখানে পৌছে গেলাম। বাইরে কোন কিছু বোঝার নাই যে এটা অফিস। গার্ড বল্ল তিন তালায় যেতে। ৩ তালায় গিয়ে সাইনবোর্ড দেখে নিশ্চিন্ত হলাম এইটাই সেই অফিস। ঢুকতে গিয়ে দেখলাম দরজা বন্ধ। বেল্ দিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম হয়তো কোন সুন্দরী তরুনি দরজা খুলে মিষ্টি গলায় বলবে “কাকে চাচ্ছেন??”(যেহেতু অ্যাড এজেন্সি, সুন্দরী রিসিপ্শনিস্ট থাকা স্বাভাবিক) দরজা একজন খুল্লো, কিন্তু কোন সুন্দরী তরুনি নয়, একজন ৩০/৩৫ বছরের একটা লোক, কান চুলকাচ্ছে!! তাকে ইন্টারভিউ’র কথা বলতে সে আমাকে ভিতরে নিয়ে একটা সোফায় বসালো। চারপাশ দেখে বুজলাম একটা বাসাকে অফিস বানানো হয়েছে। একটু পর ওই লোক এসে একটি কোশ্চেন পেপার নিয়ে এসে বলল, “আপনার সময় ৪৫ মিনিট।“ (একদম আমাদের মিডটার্ম পরিক্ষার মত)। কোশ্চেন হাতে নিয়ে দেখলাম ১০ টার মত কোশ্চেন, এর মধ্যে ৬ টারই উপর কোন ধারনা নাই। শেষ পর্যন্ত সব প্রশ্ন নিজের ভাষায় বানিয়ে লিখে ফেল্লাম। এট পরীক্ষায় সবসময় করতাম, কারন স্যার/ম্যাডাম’রা খাতা পুরোপুরি অবশ্যই পরতেন না, যার কারনে প্রশ্ন না পারলে গোজামিল দিতাম, আর মার্কেটিং এর কোর্সে গোজামিল দিয়ে লেখা কিছুটা সহজ। আমি ভাবলাম সেই প্রতিভা হয়তো এখানেও কাজে লাগবে!! এর পর সেই লোক খাতা নিয়ে একটা দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো। আমার আশেপাশে দুজন চাকরীপ্রার্থী বসে ছিলেন গম্ভহীর মুখে। একটু পর তাদের একজন কে ডাকা হল। প্রায় ৩০ মিনিট পরে বের হয়ে আসলো। এরপর এল আমার পালা। যেটা ছিল আমার জীবনের ১ম এবং ব্যার্থ ইন্টারভিউ. এই ইন্টারভিউ দেয়ার পর মনে হয়েছিল আমি একটা অপদার্থ, কোনদিন হয়তো আর চাকরী পাবোনা.....(চলবে)
(অপেক্ষায় থাকুন......২য় পর্বে ইন্টারভিউ’র ঘটনা বর্ননা পোস্ট করব।)