সাম্প্রতিক সময়ে একটি আত্মজীবনী আমাদের সাহিত্য ও রাজনীতিতে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বইটির নাম ''অসমাপ্ত আত্মজীবনী'', লেখক শেখ মুজিবুর রহমান। ২০১২ সালের মাঝামাঝি বইটি ইংরেজি অনুবাদের পৃথক বইসহ প্রকাশিত হয়েছে। বইটির মূল্য ৫২০ টাকা, যা এর পৃষ্ঠাসংখ্যার সাথে তুলনা করলে যথেষ্ট বেশি। তবুও দেদারসে বইটি বিক্রি হয়েছে, হচ্ছে, হবে। কারণ বইটি বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা একমাত্র গ্রন্থ এবং এখানে তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা অসাধারণ লেখনী প্রতিভায় সংগৃহীত আছে। মোটামুটি ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা এখানে সংযোজিত হয়েছে। আর লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এখানে মুজিবের ব্যক্তিগত জীবনের চেয়ে রাজনীতির ইতিহাস রচনাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। রচনাকাল ১৯৬৭, আগরতলা মামলা দায়েরের পূর্বে রাজবন্দী হিসেবে যখন ঢাকা জেলে আটক ছিলেন। আমি নিজে বইটি পড়ে এতোই মুগ্ধ হয়েছিলাম বিশেষ করে তাঁর রচনাশৈলীতে যে এখানে শেখ মুজিব সত্যের অপলাপ করেছেন তা ঘুণাক্ষরেও মাথায় আসেনি। তবে সাম্প্রতিককালে আমি তৎকালীন রাজনীতি সম্পর্কে অধ্যয়ন করে শেখ মুজিবের লেখায় প্রকৃত ইতিহাসের সঙ্গে গুরুতর কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করেছি। এবং নিশ্চিতভাবে এই অসঙ্গতিগুলো তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে করেছেন, কিছু রাজনৈতিক দায়মুক্তির উদ্দেশ্যে। এহেন তথ্যবিভ্রাট কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। নিজের সুপ্রিম ইমেজ রক্ষার্থে তিনি এসব করে থাকতে পারেন। বইয়ের শেষ দিকে যুক্তফ্রন্টের গঠন করে নির্বাচন ও সরকার গঠন ও পরিচালনার ব্যাপারগুলো বেশি আলোচিত হয়েছে। যুক্তফ্রন্টের নমিনেশনের ব্যাপারে শেখ মুজিব ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন তা সবারই জানা। তৎকালীন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা খোন্দকার মুস্তাক আহমেদ (জয়েন সেক্রেটারি) কেন যুক্তফ্রন্টের নমিনেশন পেলেন না সে ব্যাপারটা শেখ মুজিব এড়িয়ে গেছেন এই বলে যে অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে নমিনেশন দেয়া যায়নি। এব্যাপারে নিজের আন্তরিক চেষ্টা ও দুঃখ প্রকাশে শেখ সাহেব ত্রুটি রাখেন নি। অথচ প্রকৃত কাহিনী হচ্ছে শেখ মুজিবের একগুঁয়েমির জন্য মুস্তাক মনোনয়ন পান নি। ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন আওয়ামীলীগ গঠিত হয় (শামিম ওসমানের বাবা ওসমান দালালের নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে), মুস্তাক ও মুজিব উভয়েই জয়েন্ট সেক্রেটারি হন, শামসুল হক হন সেক্রেটারি। বয়সে বড় হবার কারণে এবং হাইকোর্টের প্রভাবশালী আইনজীবী হবার কারণে মুস্তাককে মুজিবের সিনিয়র করা হয়। কিন্তু শামসুল হক জেলে থাকা অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি হিসেবে মৌলানা ভাসানি মুজিবকেই মনোনীত করেন। ১৯৫৩ সালে সোহরাওয়ারদি ও ভাসানির আশীর্বাদপুষ্ট মুজিবই স্থায়ী সাধারণ সম্পাদক হন। দলের জুনিয়র নেতাদের মধ্যে মুস্তাক ও মুজিবের ভেতরে একটি প্রতিযোগিতা ছিল যেখানে মুজিবের সেক্রেটারি হওয়া মুস্তাক কে পিছনে ফেলে দেয়। তবুও মুস্তাক তখনও আওয়ামীলীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। এমন অবস্থায় ১৯৫৪র নির্বাচনে তাঁর মনোনয়ন না পাওয়া বিস্ময়ের ব্যাপার। আওয়ামীলীগ ও শেরে বাংলার কে এস পির মধ্যে ১৬২ ও ৭৫ আসনের সমঝোতা হয়। শেরে বাংলা তাঁর দলের প্রাপ্য ৭৫ আসনের মধ্যে কুমিল্লার দাউদকান্দি চাননি। কারণ তিনি নিশ্চিত ছিলেন মুস্তাকের আসন আওয়ামীলীগই রাখবে। কিন্তু শেখ মুজিব শেরে বাংলার কাছে গোপন প্রস্তাব পাঠান এই মর্মে যে দাউদকান্দিতে আমরা কে এস পির প্রার্থী মেনে নেবো, কিন্তু প্রার্থী আমি নিজে নির্বাচন করবো। শেরে বাংলা সবই বুঝতে পারলেন এবং প্রস্তাবে সায় দিলেন। এভাবে শেখ মুজিব মুস্তাক কে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেবার পাঁয়তারা করেছিলেন। ব্যাপারটা সোহরাওয়ারদির কানে গেলে তিনি মুজিবকে কিছুই বলেননি। কিন্তু চালাকি করে মুস্তাক কে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাশ করিয়ে দলের ঐক্য রক্ষা করেন। এই কারণে তৎকালীন সময়ে দলের অভ্যন্তরে শেখ মুজিব সমালোচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর লেখায় সত্য গোপন করে তিনি রাজনৈতিক সুবিধা পেতে চেয়েছেন। অবশ্য নির্বাচনের পরে মুস্তাক আওয়ামীলীগে যোগ না দিয়ে কে এস পিতে যোগ দেন এবং শেরে বাংলার নেতৃত্বে গঠিত প্রাদেশিক পরিষদের চীফ হুইপ হন। শেখ মুজিব আওয়ামীলীগের পক্ষে পূর্ণমন্ত্রী হন। এভাবে দুজনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা টিকে থাকে। কিন্তু শেরে বাংলার মৃত্যুর পর কে এস পি বিলুপ্ত হলে মুস্তাক মুজিবের নেতৃত্ব মেনে নিয়ে ১৯৬৪ সালে আবার আওয়ামীলীগে যোগ দেন। কিন্তু দুজনের মধ্যে দূরত্ব কখনোই মোচন হয়নি। যার ফলশ্রুতি ১৯৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট। এই বইয়ে আরও কিছু অসঙ্গতি আছে। পর্যায়ক্রমে সেসব নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা আছে।
আলোচিত ব্লগ
আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।
আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার
মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা
তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান
উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!
এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন