ব্লগ বন্ধুরা দুঃখিত, বিষেশ ঝামেলায় ছিলাম তাই পর্বটি দিতে দেরি হলো,
চলছে......
হঠাৎ একদিন মাস্তান টাইপের কয়েকটা ছেলে আমাকে খুঁজতে চারুকলায় আসলো, ছেলেগুলো তুষারভাইদের পরিচিত ইউনিভার্সিটিতে পরে, উনাদের কাছেই জানতে চাইলো সীমানা নামে কাঊকে ওরা চেনে কিনা।
ওরা জিজ্ঞেস করলো কেনো?
রানাতো অনেক ছেলেদের কাছেই ফোন করে দিতো কেউ কেউ তো মাস্তান হতেই পারে, তারা আমার সাথে দেখা করতে চাইতো, কিন্তু আমিতো না করতাম, তাদের মধ্যেই কেউ একজন ছিলো এই ছেলে।
তুষারভাইদের কাছে সবই বলেছিলো ছেলেটা সাথে কি কথা বলি, আরো বলেছিলো মেয়েটাকে পেলে উঠিয়ে নিয়ে যাবো।
তুষার ভাইরা অস্বীকার করলো এই নামে কাউকে চিনি না আমরা, উনারা আরো বললো হয়তো মেয়েটা মিথ্যা বলেছে চারুকলায় পড়ে।
মনে মনে সবাই প্রচন্ড রাগ হলো আমার উপর।
এসবের আমি কিছুই জানি না।
পরদিন উনাদের সাথে চারুকলায় দেখা হলো কেউ তেমন কথা বলছে না। ঝুঝতে পারলাম না কি হয়েছে।
অবাক লাগলো কি হলো হঠাৎ সবার, একদিনের মধ্যে, তবে বোঝা যাচ্ছে একটা কিছু হয়েছে।
তুষারভাইকে ডাকলাম, কি হয়েছে তুষারভাই, মনে হয় আমি খুব অন্যায় করেছি কেউ আমার সাথে কথা বলছে না কেনো?
উনি বললেন তোমার সাথে কথা না বলাই উচিত, তোমাকে আমরা এমন ভাবিনি, তুমি যে এমন একটা কাজ করতে পারো আমরা ভাবতেও পারি না। তোমাকে অনেক ভালো একটা মেয়ে মনে করতাম।
তুমি সুজনকে চিনো, চমকে উঠলাম, সমস্ত শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেলো।
তোমাকে খুঁজতে এসেছিলো, সব বুঝে গেলাম কি ঘটেছে, লজ্জায় মিশে যেতে ইচ্ছা করলো মাটির সাথে। কি ভাবলো আমাকে ওরা। কি বলবো আমি, সত্যি কথাতো বলতে পারবো না কখোনো। কাঁদতে থাকলাম আমি।
কেনো বলো কেনো এসব কথা মানুষের সাথে বলো, রানাভাই কোথায় থাকে তখন? তোমার লজ্জা করে না।
তার দিকে তাকিয়ে শুধু কাঁদছি, আর মনে মনে বললাম-লজ্জা করে তুষারভাই খুব লজ্জা করে, আমার যে হাত পা বাঁধা আমার যে আর উপায় নেই। কি করে বলি সে লজ্জা।
মুখে শুধু বললাম রানা সব জানে ওর সামনেই কথা বলেছি। শুধু দুষ্টুমী ছিলো সেটা।
তুষারভাই প্রচন্ড রাগ হয়ে উঠে চলে গেলো, আমার কথা বিশ্বাস করলো না।
বাসায় যেয়ে রানাকে বললাম সব, সে পরে তুষারভাইদের কি বলেছিলো জানি না আস্তে আস্তে ওরা ঠিক হলো, নরমাল হলো।
এতকিছুর পরও একই অবস্থা চলতে থাকলো, একবার বাচ্চা নষ্ট(এম আর) করেছি, তারপরও রানা একটুও সচেতন না আবার প্রেগনেন্ট হলাম আমি, এবারও বাচ্চা রাখতে চাইলো না সে। কিন্তু আমার মনে হয়েছিলো বাচ্চাদের নিয়েইতো আমার বেঁচে থাকতে হবে হোক না।
রানা রাজি হলো না, জোর করার শক্তি বা মনের ইচ্ছা কিছুই তখন ছিলো না।
বার বার নিজেকে মনে করিয়ে দেই আমিতো রানার কৃতদাসী। শত চেষ্টা করেও পারলাম না রোধ করতে, শুধু একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ভাবলাম কৃতদাসীর কিই বা ক্ষমতা থাকে?
এবার কোন এক মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট-এর বাসায় নিয়ে এম,আর করালো আমার। কষ্ট হয়েছিলো অনেক কিন্তু মনের কষ্টটা ছিলো তার চেয়েও বেশী।
উনি বলে দিলেন ৭দিন সেক্স না করার জন্য কিন্তু পরদিনই সেক্স করলো রানা। সত্যি একটা পুতুল আমি। মানুষতো..! পুরো পুরি যন্ত্র হতে পারছিলাম না। তাই জীবনের ওঠা নামায় তবু হাসি তবু কাঁদি।
একদিন চারুকলায় লম্বা একটা ছেলে দেখতে ভালো স্মার্ট আমার কাছে এসে বললো আচ্ছা সীমানা নামে একটা মেয়েকে খুঁজছি মেয়েটা বিবাহিত, আপনি কি চেনেন? কোন ক্লাসে পাওয়া যাবে?
ছেলেটাকে দেখেই চিনতে পারলাম, তবু বললাম না আমিতো চিনি না।
বুঝলাম ছেলেটা হাসু যার সাথে সবচেয়ে বেশি ফোনে কথা বলি। ও যা বর্ণনা দিয়েছিলো সব মিলে গেলো, কেমন যেনো ভয় করলো, কেনো এসেছে ও!
কিছুক্ষণ পর ও আবার আসলো, কেউ বলেছে আমিই সীমানা,
হাসু আমার সামনে এসে বললো আমি হাসু, তুমি মিথ্যে বলেছো কেনো?
কি মিথ্যা বলেছি? আর তুমি কেনো এসেছো? এমনতো কথা ছিলো না।
মিথ্যা বলেছো তুমি তোমার যা বর্ণনা দিয়েছো তাতো তোমার সাথে মেলে না, তুমি খুব খারাপ দেখতে এটা কেনো বলেছো?
তোমার সাথে দেখা হবে সেটা ভেবেতো বলিনি, আর ভেবেছি আমাকে দেখার জন্য তুমি যেনো উৎসুক না হও তাই বলেছি।
যাক এসে যখন পড়েছো কিছু করার নেই, বেশিক্ষণ থেকো না রানা চলে আসলে মাইন্ড করবে।
চারুকলায় বসেই কিছুক্ষণ কথা হলো হাসুর সাথে।
ওর দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, আমি কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলি ওর সাথে? এত সুন্দর ইনোসেন্ট একটা ছেলে। ওর তো কোনো দোষ নেই, ওতো একটা ইয়াং ছেলে। কেমন যেনো খারাপ লাগলো খুব, মনের অজান্তেই চোখ ছলছল করে উঠলো।
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসু বললো, তোমার চোখটা ঠিক মার্বেলের মতো সচ্ছ আর গভীর কেমন মায়া জড়ানো, তোমার চোখটা এমন ছলছলে কেনো? তোমার চোখের দিকে তাকালে মনে হয় তোমার অনেক কষ্ট, তোমার কি কোনো সমস্যা আছে?
এমনিতেই চোখের পানিটা সামনে এসে ছিলো, গড়িয়ে পরলো।
কেনো কাঁদছো? কি হয়েছে তোমার বলো? আমি কি তোমাকে কোনো হেল্প করতে পারি?
বললাম পারো
তারপর সব বললাম ওকে কেনো ওর সাথে ফোনে কথা বলি। বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে। আমার কথা শুনে ওর মনটাও খারাপ হলো।
ও অবাক হয়ে বললো- এমন ঘটণা আমি পৃথিবীতে প্রথম শুনলাম। এমনও কি হয়? আমাকে বললো তুমি কেঁদো না আমি বড় কোনো হেল্প হয়তো তোমাকে করতে পারবো না তবে ছোট একটা হেল্প করবো।
বললাম কিভাবে?
আমার কাছে যে রাতে ফোন করে দেবে তোমার স্বামী, সে রাতটিতে তুমি রক্ষা পাবে, তুমি যা ইচ্ছা বলে যাবে আমি কিছুই বলবো না আমি শুধু গীটার বাজিয়ে শুনাবো তোমাকে দেখো তোমার ভালো লাগবে। প্লিজ তুমি আমাকে বন্ধু ভাবো! তোমার জন্য খুব মায়া হচ্ছে আমার । ফোন নাম্বারটা রাখো বেশী খারাপ লাগলে আমাকে ফোন করো।
মানুষের সবচেয়ে কষ্টের সময় যে পাশে এসে দাড়ায় সেই মূহুর্তে তাকেই সবচেয়ে ভালো বন্ধু মনে হয়।
চলবে......
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:৩৯