চলছে...
বাচ্চা আমি সব সময় পছন্দ করি, আর তখনতো আরো বেশী ওদের আঁকড়ে ধরে বাচাঁর আপ্রাণ চেষ্টা করছি, বাচ্চা হোক এটাই আমি চাচ্ছিলাম যাই হোক আমার ইচ্ছায়তো কিছু হয় না। যাক রানা কিছু বললো না এবার বাচ্চা নষ্ট করার কথা।
মনে মনে খুব খুশি হলাম.....নিরব নির্যাতন থেকে রেহাই পাবো....আর বাচ্চাদের নিয়ে বেঁচে থাকবো....আরতো কিছু নাই আমার
বাবু পেটে থাকতে সবসময় একটা মেয়ে চাইতাম, হয়তো সবাই ভাববে আমি নিজে এত কষ্ট পেয়েছি, তাছাড়া আমাদের সমাজে মেয়ে মানে অবহেলিত তবু কেনো মেয়ে চাই।
ভাবতাম মেয়েকে এমনভাবে মানুষ করবো যেনো আমার মত না হয় কখোনো যেনো কষ্ট না পায় প্রতিবাদী হয়। আর ওকে আমি আমার মায়ের মত দুরে ঠেলবো না, আমি ওর বন্ধু হবো ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আমাকে ও যেনো সব বলতে পারে। জীবনে সবচেয়ে দরকার একজন ভালো বন্ধু। আর সামাজিক অবহেলা সেতো ওদেরকেই ঘুচাতে হবে। অবস্থার পরিবর্তন তো একদিন হতেই হবে।
জীবনের যন্ত্রণায় আমি ক্লান্ত! বুঝতে পারি না জীবনের মানে কি?
বাবু পেটে শরীরটাও বিশেষ ভালো না, তারপরও নিস্কৃতি দিতো না আমায়।
সব সময় দোয়া করতাম বাবু হওয়ার সময় যেনো মরে যাই। আতœহত্যা করতে চেয়েছি অনেকবার, আম্মার কথা ভাবলে পিছিয়ে যেতাম, অরণ্য-আমার ছোট ভাই মারা যাওয়ার পর আম্মাতো অনেক কষ্ট পেয়েছে আমি মরে গেলে আম্মার কি হবে। পারিনি।
বাবু হওয়ার সময় হয়ে আসলো, খুব খারাপ ছিলো শরীর, ওজন বাড়েনি একদম খুব টেনশন হতো বাচ্চাটার জন্য কি জানি কি হয়! হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি সকালে রাত ১০টায় অপরেশন হবে। রানা সেদিনও চেম্বারে গেলো আমাকে রেখে।
অপরেশন-এর সময় পুরো অজ্ঞান করলো না আমায় হাফ এ্যানেস্তেসিয়া করে তখন কোমর থেকে, তাই করলো। হঠাৎ করে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না, আমি চিৎকার করছি আমি নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি না। শোয়া থেকে উঠে পরলাম আমি, ডাঃ বললো তাড়াতাড়ি শোয়াও, তখন আমার পেট কেঁটে ফেলেছে। ৫/৬ জন মিলে শোয়াতে পারছে না আমাকে। আমি কিছুতেই নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি না। আম্মাকে ডাকছি চিৎকার করে। আম্মা বাইরে থেকে আমার চিৎকার শুনতে পাচ্ছে এত জোরে ডাকছি আম্মাকে। সবাই মিলে শোয়ালো দুদিক থেকে হাত বেঁধে রাখলো, সবাই চেপে ধরে তারপর অক্সিজেন দিলো কয়েক মিনিট পর আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস নিতে পারলাম।
মৃত্যু কষ্ট কি সেদিন বুঝেছিলাম। কিন্তু তারপরও মরলাম না। আমি মরে গেলে কি করে হবে এত কষ্ট কার জন্য জমা থাকবে!
ছেলে হলো আবার মন একটু খারাপ হলেও বাবুকে দেখার পর মন ভালো হয়ে গেলো। টুকটুকে ফর্সা খুব চুল মাথায় সুন্দর হয়েছিলো ও।
এবার বাবুর নাম রাখলাম আমি, সেজানের নামটা দিবস রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা তো রাখতে পারিনি। এবার রাখলাম।
ছোট ছেলের নাম রাখলাম ‘দিবস দিগন্ত’।
জীবন চলছে একইরকম, সেজানকে বাসার কাছেই একটা স্কুলে ভর্তি করলাম।
ওদিকে আমার ডিপার্টমেন্ট ভাগ হয়েছে, পেইন্টিং নিলাম। রং ও ক্যানভাস কিনতে অনেক টাকা লাগে। রানা ঠিকমত টাকা দিতে চায় না। কিন্তু ক্লাসের কাজ ঠিকমত করতে পারছি না বলে মন খারাপ হতো।
এর মধ্যে একদিন হাসু আসলো চারুকলায় আমার মন খারাপ ছিলো ক্যানভাস কেনার টাকা নেই, নতুন কাজ দিয়েছে ক্লাসে কি করবো ভাবছি। মাঝে মাঝে আব্বার কাছ থেকে ক্যানভাস এনে কাজ করতাম।
হাসু বললো কি হয়েছে?
কেনো যেনো ওকে বলে ফেললাম।
ও বললো আমি যদি ব্যাবস্থা করে দেই?
তোমার কাছ থেকে টাকা নেবো আমি?
তাতো বলিনি!
তবে কি?
আমার ফুপুর মেয়েকে আর্ট শেখাবে সপ্তাহে দুদিন মাসে ১০০০টাকা পাবে।
কিন্তু রানা যদি করতে না দেয়?
বলো না আমার ফুপু, বলবে বাসার কাছেই বেশি দুরে না।
বললাম দেখি যদি রাজি হয়।
বাসায় এসে বললাম, কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। আমি বললাম টাকাটা পেলে আমার রং-এর খরচটা হয়ে যাবে।
কি মনে করে যেনো রাজি হলো।
গেলাম পরদিন সেই মৌচাকের পাশে আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স-এর মালিক উনি হাসুর ফুপা। তার মেয়েকে আর্ট শেখাতে হবে।
অনেক উপকার করলো হাসু আমার, ওর ফুপু খুব আদর করতো আমাকে। উনার বাসায় অনেক বই ছিলে, আর্ট শিখিয়ে আসার সময় প্রতি সপ্তাহে একটা করে বই নিয়ে আসতাম, বাসায় ভালো সময় কাটতো।
আমার ছেলে সেজানের স্কুল থেকে খবর পাঠালো দেখা করার জন্য, গেলাম
ম্যাডাম বললো, ডাক্তারকে ছেলের চোখ দেখান, বললাম কেনো?
ও সব ওল্টা লেখে। বললাম কেমন উল্টা?
আয়নার সামনে ধরলে সব লেখা সোজা দেখা যাবে এরকম।
সত্যি তাই। কিছতেই সোজা লেখাতে পারছি না, খুব সুন্দর করে সে উল্টা করে লেখে সব।
অনেক চেষ্টা করে আস্তে আস্তে কিছুটা ঠিক হলো কিন্তু পুরোপুরি ঠিক হলো না।
উদয়ন স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ালাম, চান্স পেলো না, উল্টা লেখার কারণে।
এসব দিকে রানার কোন খেয়াল নেই, সব দৌড়াদৌড়ি আমিই করি। স্কুলে গার্জিয়ান হিসাবে কেউ পাত্তা দেয় না। ছোট মানুষ ভেবে কেউ পাত্তা দিতো না। সবাই কাজ সেরে গেলে তারপর আমার কাজ হতো। এই নিয়ে অনেক সমস্যা হতো।
যা হোক আমি চেষ্টা চালিয়ে গেলাম টিচারে কাছে নিয়ে যেতাম, আমি পড়াতাম। এক বছর অনেক চেষ্টা করে কিছুটা ঠিক করতে পারলাম। আবার পরীক্ষা দেওয়ালাম পরের বছর উদয়নে।
এবার চান্স পেলো, আমার পরিশ্রম সার্থক হলো।
ওকে রোজ স্কুলে দিয়ে আমি চারুকলায় যেতাম। আবার আসার সময় নিয়ে আসতাম। মাঝে মাঝে আমার দেরি হলে আমার সাথেই চারুকলায় বসে থকতো। ওদেরকে মানুষ করা আর আমার পড়াশুনা শেষ করাই তখন আমর মুল লক্ষ্য। তখন আর কিছু মাথায় নাই, সব কষ্ট শেষ হবে একদিন,
এ আশায় তখন ছুটে চলেছি।
চলবে...........
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১০:৫৯