somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের কথা-৪৭

২৬ শে অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলছে.....

হঠাৎ করে শুনলাম রানা দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

রানা বিদেশ যাওয়ার জন্য কেনো চেষ্টা করছে জানি না, আমাকে তো কিছু বলে না! সম্ভবত টাকার জন্য সেটাই স্বাভাবিক।
খুশি হবো নাকি মন খারাপ করবো বুঝতে পারছি না।
মনে মনে খুশিই হলাম হয়তো, কিন্তু প্রকাশ করলাম না। আমার কাল রাত্রি গুলো থেকে এবার মুক্তি পাবো।
বছরখানেক চলে গেলো আমি দিন গুনছি, কবে পাবো নিস্কৃৃতি।
শেষ পর্যন্ত হয়ে গেলো, সৌদি আরব কিং খালেদ হসপিটালে চাকরি হলো।
তবে চলে যাওয়ার তিন মাস আগে থেকে টেলিফোন করাটা বন্ধ হয়েছিলো। মনে একটু আশা হলো হয়তো রানা তার ভুল বুঝতে পেরেছে।

রানা যাওয়ার তিনদিন আগে বুঝতে পারলাম আমি আবার প্রেগ্রনন্ট, দিবসের তখন মাত্র এক দেড় বছর, এখন বাচ্চা নেওয়াটা একটু কঠিন হয়ে যাবে আমার জন্য তার উপর পড়াশোনা আর দুইটা বাচ্চাই সিজার হয়েছে। কিন্তু তবু মন চাইলো থাক....হোক । কিন্তু আবার এম. আর. করতে বললো রানা , আমি অনেক অনুরোধ করলাম থাক না তুমি তো চলেই যাচ্ছো যদি একটা মেয়ে হয়!
প্রতিবারের মত এবারও হার মানলাম এম. আর. করিয়ে আনলো। ডাঃ বলে দিলে ৭দিন সেক্স করবেন না। আরো বললো অবস্থা বেশী ভালো না, মাত্র ১বছর আগে সিজার হয়েছে এখন আবার জরায়ুতে একটা প্রেসার পরলো একটু সাবধানে থাকবেন।
তাই কি হয়? বাংলাদেশে থেকে যে লোক মুক্তি দেয়নি সে ২দিন পরে চলে যাবে এখন কি করে মুক্তি দেবে?
আমার জন্য রানার এক বিন্দু মায়াও ছিলো না অবশিষ্ট, ডাঃ এর কোন কথাই মানলো না সে, সেই রাতেই সেক্স করলো। যে দুদিন ছিলো সে দুই দিনও করলো। ফলটা পরে পেয়েছিলাম।
রানার জন্য মনের কোন কোণে হয়তো তখনও এক চিলতে ভালোবাসা অবশিষ্ট ছিলো, যাওয়ার আগে মন খারাপ হয়েছিলো..বালেঅ করে কথা বলেছিলো সেদিন.........হয়তো চলে যাবে বলেই বলার জন্যই বলেছিলো। চলে গেলো রানা, মনটা কিছুটা খারাপ।
তারপর দিনই অসুস্থ হলাম আমি শুরু হলো আমার অসহ্য যন্ত্রণা, আম্মার বাসায় চলে আসলাম। প্রচন্ড চিৎকার করতে থাকলাম।
আব্বা বাসায় ডাঃ নিয়ে আসলো -ডাঃ এসে অনেক রাগারাগি করলো বললো এর স্বামী কোথায় একজন ডাঃ হয়ে এমন কাজ সে কি করে করলো, মেয়েটা যদি মরে যায় ব্লিডিং হয়ে কি করবে সে। যাই হোক। এত যন্ত্রণা যে আমার সহ্য করার ক্ষমতা ছিলো না। আমাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখলো। অনেক ওষুধ দিলো খেতে। ১মাস অসুস্থ ছিলাম। আস্তে আস্তে সুস্থ হলাম। কঠিন সময় গেলো।

রানা চলে যাওয়ার পর, বাবুদের নিয়ে বেশী ব্যাস্ত থাকতাম।
খারাপ ছিলাম না ভালোই ছিলাম তখন। চাওয়া থাকলেও কষ্ট থেকেতো রেহাই পেয়েছিলাম।
সময় পেলেই ডুব দিতাম আমার ভাবনার সাগরে। যেখানে আমার ভালোলাগার জগৎ।
চারুকলার ক্লাস চলছে মোটামুটি। সেজানের টিচার,স্কুল, আমার ক্লাস, বাসায় দিবস সব মিলিয়ে মোটামুটি ব্যাস্ত থাকতাম সারাদিন। কেটে যাচ্ছে দিন। মাঝে মাঝে রানার কাছে চিঠি লিখতাম। রানাও প্রথম প্রথম লিখতো পরে আর তেমন লিখতো না।
বাংলাদেশে অনেকে আমাকে বলতো ওখানে অনেক ফিলিপিন নার্স আছে যাদের সাথে তার রিলেশন আছে রানা আর ফিরে আসবে না। যেহেতু কখোনো এমন কিছু দেখিনি এই অবিশ্বাসটা ছিলো না। অথবা এ বিষয়ে আমি উদাসীন ছিলাম।
প্রথম কিছুদিন শুনলাম আমাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, পরে আর চেষ্টা করেনি।
যাই হোক ভালোই হয়েছে আমার পড়াটা তাহলে শেষ হতো না।
বাংলাদেশে রানার বেশ কিছু শেয়ার ছিলো তখন শেয়ারের দাম বেশ চড়া, আমি লিখলাম রানাকে এখন শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেই লাভ হবে, আমার এক ফুপাতো ভাইকে দিয়ে সেগুলো বিক্রি করালাম আর টাকাটা ব্যাংকে রাখলাম।
বাচ্চাদের খরচ আমার খরচ ওখান থেকে নিতে বললো রানা আমাকে, তবে কম খরচ যেনো করি সেটাও বলে দিলো।
খুব ধীর গতিতে নির্লিপ্ত জীবন কেটে যাচ্ছে কোন রকম। এর বেশী সেই মূহুর্তে আশাও করিনি।

রানা নেই দেশের বাইরে,
রাতে একা থাকি ভাবনার ব্যাপ্তিটা দিন দিন বাড়তে থাকলো, বিভিন্নরকম ভাবনা অনন্ত অসীম যার সীমা নাই।
ভাবনার বিষয়বস্তু পাচঁমিশালী রানাকে বিয়ে করে কি পেলাম, কেনো আজও সংসার করছি, কতটুকু ভালোবাসি তাকে, আসলে কি চাই আমি, কেনো মেনে নিলাম বাচ্চার কথা চিন্তা করে নাকি আম্মার উপর জেদ করে? আরো কত কি!
বিভিন্ন রকম উত্তর পেতাম সাথে নানারকম যুক্তি, কে যেনো কথা বলতো আমার সাথে, আমার প্রতি কথায় যুক্তি দিতো সে,
কখোনো তার জয় হতো কখোনো আমার!
জীবনের জটিল ভাবনায় নিমজ্জিত হতাম।

আমার ছোট ছেলে দিবস আমাকে ছাড়া কিছু বুঝতো না সব সময় আমার সাথে সাথে থাকতো কারো কাছে যেতে চাইতো না।
খুব দুষ্টু ছিলো ও, আমাকে অনেক জ্বালাতো, রাতে ঠিকমত ঘুমাতে দিতো না, কিন্তু কখোনো আমি ওকে মারিনি বা বকাও দেইনি,
সেজান ছিলো দিবসের বিপরীত খুব শান্ত স্থির নিজের মত থাকতো ও।

রানা গেছে প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলো এদিকে আমার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে,
ফর্ম ফিলাপ করতে টাকা লাগবে এছাড়া পরীক্ষার ক্যানভাস রং কিনতেও অনেক টাকা লাগবে।
কিছু করার নাই টাকাটা খরচ করতেই হবে পরীক্ষা দিতে হলে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রানার টাকা থেকেই খরচ করলাম।
পরীক্ষা শুরু হলো এই সময়টা আম্মার বাসাতেই ছিলাম, তখন আমরা সোবহানবাগ থেকে মিরপুর চলে এসেছি।
মাঝে মাঝে সেজান রানাদের বাসায়তেই থাকতো আমি আম্মার বাসায় আসলেও।
তখন ভোর ৬টায় আম্মার বাসা থেকে বের হতে হতো আমার, রানাদের বাসায় যেয়ে সেজানকে নিয়ে তারপর স্কুলে দিয়ে আমি চারুকলায় যেতাম তারপর পরীক্ষা শেষ করে ওকে আবার বাসায় দিয়ে আমি মিরপুর যেতাম।
ওদের বাসার কেউ কোনো হেল্প করতো না।
এমনি করেই পরীক্ষা শেষ হলো, ভালোই হলো পরীক্ষা।

ড্রেস ডিজাইনের প্রতি ঝোক ছিলো সব সময় আমার, একটা দোকান দেওয়ার ইচ্ছা হলো আমার, বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিলাম। কোথায় নেওয়া যায়। কত টাকা লাগবে এসব।
আব্বাকে বললাম কিছু টাকা দিতে আব্বা রাজী হলো।
সোবহানবাগ মোহাম্মদীয়া সুপার মার্কেটে একটা দোকান ঠিক করলাম। ৫০হাজার টাকা অগ্রীম দিয়ে দোকানটা নিলাম।
দোকানের নাম দিলাম রূপ।
দোকান নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যাস্ত হয়ে পরলাম আমি, দোকানটা সুন্দর করে সাজানো কি কি জিনিস থাকবে দোকানে সেটা ঠিক করা, আমার ইচ্ছা ছিলো বিভিন্নরকম জিনিস দোকানে থাকবে শুধু শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ থাকবে সেটা আমি চাইনি যেমন পটারী, টেবিল লাম্প, অর্নামেন্টস, শো-পিছ আরো অনেক কিছু।
তাছাড়া ইসলামপুর থেকে কাপড় আনা ড্রেস বানানো তাতে ডিজাইন করা, শাড়িতে কাজ করানো, সবই একা করতাম, যেহেতু ইনভেস্টমেন্ট কম ছিলো তাই হেল্প করার জন্য লোক তেমন রাখতে পারিনি।
বেশ কয়েকদিন দিন রাত খেটে দোকানটা মনের মত করে সাজালাম, কত জায়গায় যে গিয়েছি জিনিস জোগাড় করার জন্য তার ঠিক নেই।
উদ্বোধন হলো দোকান, সেদিন ভালো লেগেছিলো খুব, এটা আমার একটা স্বপ্ন ছিলো।
ভালোই চলছিলো দোকানটা, সবাই এসে খুব পছন্দ করতো। অনেকে গল্প শুনে শুধু দেখতেই আসতো। ভালোই বিক্রি হতো।
তবে আরো কিছু টাকা থাকলে আরো ভালো হতো
এ বিষয়টা রানা মেনে নিতে পারে নাই আমার উন্নতি।খবর পেলাম রানা বাংলাদেশে চলে আসছে।
রানা যাওয়ার সময় যেমন বুঝতে পারছিলাম না, খুশি না মন খারাপ তেমনি এখনও বুঝতে পারছি না খবরটা পেয়ে খুশি হলাম কিনা!
তবে আগের মতই মনকে যুক্তি দিয়ে বুঝালাম, যাওয়ার আগে তো কয়েক মাস রানা আর ফোন করাতো না তাছাড়া এতদিন দুরে থেকে সে নিশ্চয় তার ভুল সে বুঝতে পেরেছে।
রানা আসার দিন ঠিক হলো। এবার অপেক্ষার পালা, ........ আশা আছে বলেই মানুষ বাঁচে। আশা নিয়ে বসে আছি।
রানা আসলো সবাই খুশি, আমিও খুশি। সকালেই এসেছিল রানা।
আমি অপেক্ষা করে আছি, কখন আমার সাথে কথা বলবে...নিশ্চয় রানা ঠিক হয়ে গেছে...মনের মধ্যে ধক ধক করছে।

চলবে..........
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×