somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের কথা-৪৮

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলছে...
এতদিন পর এলো কিন্তু খুব শান্ত স্থির কেমন যেনো। একবার ৭দিনের জন্য ইন্ডিয়া গিয়েছিলো রানা সেখান থেকে ফিরে ব্যাগটা রেখেই আমাকে রান্নাঘর থেকে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো, আমি বলেছিলাম সবাই কি ভাববে? বলেছিলো ভাবুক......
সেই রানা এতদিন পর এসে আমাকে কাছে পাবার জন্য একটুও অস্থির হচ্ছে না? কেনো?
ভালোবাসার জোরে অস্থির না হলেও শরীরের টানে তো কাছে আসার কথা, তার মত মানুষ... যে এতদিন একা ছিলো। কেমন যেনো হিসাব মিলাতে পারলাম না।
যাই হোক ভেবে নিলাম অনেকদিন পরে এসেছে সবার সাথে কথা বলছে তাই হয়তো...
বহু অপেক্ষার পর রাত হলো শোবার সময় হলো, ঘরে এলাম কই তবু তো রানা কাছে আসছে না! কেনো বুঝতে পারছি না।
আমিও ধরছি না আমারও কেমন অসস্তি লাগছে, এতদিন পর...
শুয়ে পরলাম দুজনেই, আমি জিজ্ঞেস করে ফেললাম- কি হয়েছে তোমার, কেমন যেনো মনে হচ্ছে তোমাকে?
কিছু নাতো। ওখানকার গল্প করলো কিছুক্ষণ, সেই গল্পে ফিলিপিন নার্সদের গল্পও ছিলো।
লাইট বন্ধ, আমিই রানাকে জড়িয়ে ধরলাম- যেহেতু রানার প্রতি রাগ একটু কমেছিলো তাই একটা নিরব চাওয় মনের মধ্যে জেগে ছিলো। ভেবেছিলাম আমার ভালোবাসা ফিরে পেয়েছি।
কিন্তু রানার শরীরে হাত দিয়ে আমি চমকে উঠেছিলাম........তাছাড়া এতদিন পরে যেমন থাকার কথা সেরকম উদ্দীপনাও ছিলো না তার মাঝে। সেক্স হয়েছিলো সে রাতে কিন্তু পুরোটাই কেমন নির্লিপ্ত নির্বিকার দায়সারা।
বুকের ভিতর চাপা পরা কষ্টটা প্রচন্ড যন্ত্রণা করে জেগে উঠলো-নিরব কষ্টগুলো দু’চোখে অশ্র“ হয়ে গড়িয়ে পরলো, বুঝে গেলাম নিশ্চিত ওখানে নিয়মিত সেক্স করতো রানা। বুকের কষ্ট আরো বাড়লো।
কেঁদে ভাসালাম সারারাত।

পরদিন রানা টাকাপয়সা নিয়ে কথা উঠালো, আমাকে চার্জ করতে থাকলো এত টাকা কি করে শেষ হলো, আমি সব হিসাব দিলাম, রানা বিশ্বাস করলো না। এই নিয়ে কথা কাটাকাটি চলতে থাকলো প্রতিদিন।
একদিন হঠাৎ রানা মানিব্যাগ থেকে কিছু বের করতে যেয়ে এক ফিলিপিন মেয়ের ছবি পড়লো নিচে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম কার ছবি?
বললো এক ফিলিপিন নার্স। মেয়েটা আমাকে পছন্দ করতো, ওর ইচ্ছা ছিলো আমি ওকে বিয়ে করি।
বললাম বিয়ের প্রশ্নতো অনেক পরে আসে, নিশ্চয় তুমি এমন কিছু করেছিলে যা বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে সাহায্য করেছিলো। তুমিও কি পছন্দ করতে? বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলো তোমার? বা কোনো কথা দিয়েছিলে?
‘না’ করলো রানা।
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম সত্যি করে বলোতো মেয়েটার সাথে তোমার কি সম্পর্ক ছিলো?
বললো কিস্ করেছি শুধু আর কিছু না।
বিশ্বাস আমার এমনিতেও ছিলো না, এখন আরও নিশ্চিত হলাম। আর কোনো প্রশ্ন করলাম না, রাগও করলাম না। চুপ করে থাকলাম।
এটাও মেনে নিলাম, শুধু ভাবলাম এখন সে আমার সাথে ভালো ব্যবহার করলেই আমি সুখী হওয়ার চেষ্টা করবো, জীবনটা শুধু চালিয়ে নেবার চেষ্টা করবো।
সব মেনে নিয়ে একটা যন্ত্র হয়ে গিয়েছিলাম, মেনে নিয়েছিলাম রানার সব অত্যাচার অন্যায় আবদার।
ভুলে গিয়েছিলাম আমার ভিতর একটা অতৃপ্ত আত্মা আছে, যার আকাশ পরিমান চাওয়া আছে, যে ভালোবাসার ডানা মেলে পাখির মতো উড়তে চাই। ভেবেছিলাম এমনি করেই কেটে যাবে পুরোটা জীবন।
রানা ছিলো না দুইবছর তত দিনে জেগে উঠেছে আমার অতৃপ্ত সুপ্ত আত্মাটা। ফিরে পেলাম আমার অস্তিত্ব। মনে হলো আমিও একজন মানুষ,
যখন দেখলাম রানার পরিবর্তনটা আমার অনুকূলে না বরং প্রতিকূলে তখন আর গ্রহণ করতে পারছিলাম না তাকে। বিবেক বাঁধা দিচ্ছিলো।
নিজেকে আর রুখতে পারলাম না। রানার অন্যায় কথাগুলির প্রতিবাদ হতে থাকলো ভিতর থেকে।

ইদানিং সেক্সটাকেও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছি। আর সহ্য করতে পারছি না কেনো যেনো রানাকে। অনেক করেছি আর কত.........
টাকা পয়সা নিয়ে রোজই চলছে ঝগড়া, সেদিন খুব প্রবল আকার ধারণ করলো তা,
আর পাররাম না প্রচন্ড রাগ হয়ে গেলো আমার বললাম বিশ্বাস হচ্ছে না কেনো তোমার? তোমার কি মনে হয় আমি কাউকে দিয়েছি টাকা?
তোমার দোকান করলে টাকা কোথায় পেলে?
আম্মার কাছ থেকে নিয়েছি।
মিথ্যে কথা!
বিশ্বাস না করলে আমার কিছু করার নাই। লিখে রাখো কত টাকার হিসাব মেলাতে পারো না। আমি সব ফেরত দেবো তোমাকে।
কোথা থেকে দেবে তুমি?
সেটা আমি বুঝবো! আবার বলছি তোমার টাকা দিয়ে আমি দোকান করিনি আম্মার কাছ থেকে নিয়েছি আর একজন-এর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছি।
সাথে সাথে বাজে একটা মন্তব্য করলো রানা, কে তোমাকে টাকা দিলো সম্পর্ক কি তার সাথে?
পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো, নিজের মত ভেবো না সবাইকে, খারাপ সম্পর্ক ছাড়া কিছু ভাবতে পারো না?
আরও অনেক বাজে কথা বলতে থাকলো।
আর পারছি না, রাগে মাথার ভিতর বুকের ভিতর কেমন যেনো করছে! হঠাৎ বলে ফেললাম- এভাবে করে কি সংসার করা যায়?
এক মুহূর্তে রানা বলে উঠলো, কি করতে চাও বলো ? যেনো অপেক্ষা করছিলো আমার এই কথাটির জন্যেই।
প্রচন্ড জেদ হলো, অনেক সহ্য করেছি আর না বললাম তুমি বলো কি করতে চাও?
আমার জেদটাই আমার সবচেয়ে বড় শত্র“, জেদ করে আমি যেমন সব মেনে নিতে পারি আবার জেদ করে সব ভেঙ্গে চুড়েও ফেলতে পারি! তা যত বড় ক্ষতিই হোক তার জন্য। কখন যে কোন দিকে বইবে এ ধারা তা বলা কঠিন! সহ্য করতে করতে এক সময় ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙে যায় আমার তখন সেই সময়,
রানা বলে ফেলেলো সংসার করতে না চাইলে চলে যাও।
ঠিক আছে এক মুহূর্ত আর না, আমি এখনই চলে যাবো, এই মুহূর্তে।
কালকে যেও, সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
না, যাবো যখন বলেছি এখনই যাবো, এক মুহূর্ত না। ভেবেছো শুধু সহ্য করেই যাবো।
রানা বললো ঠিক আছে চলো তোমাকে দিয়ে আসি, পরে বাসায় না যেয়ে অন্য কোথাও গেলে গেলো আমার দোষ হবে।
রানাও আসলো আমার সাথে আম্মার বাসায়, এসে আব্বাকে বললো, আপনার মেয়ে আমার সাথে সংসার করতে চায় না।
কথা শুনে রাগে আমার সমস্ত শরীর জ্বালা করতে থাকলো। কত বড় মিথ্যুক লোক। কিছু বললাম না।
‘এভাবে সংসার করা যায় নাকি ’ কথাটা হয়তো রাগ করেই বলেছিলাম পরে হয়তো ঠিক হয়ে যেতো কিন্তু আব্বাকে বলা রানার কথাটা শুনে মনে হলো এর সাথে সংসার করা অসম্ভব। জেদটা বেড়ে গেলো আরও।
আম্মা বললো কেনো হঠাৎ কি হলো?
জেদে আমার সমস্ত শরীরে যেনো বিষ ঝড়তে থাকলো, রানা যে মিথ্যা কথা বলছে সেটা আম্মাকে বললাম না,
উল্টা নিজের ঘাড়ে দোষ নিলাম বললাম ‘হ্যাঁ সংসার করতে চাই না আমি’। আম্মা আবার বললো কেনো...?
আমার ইচ্ছা আমি সংসার করবো না, কোনো কারণ নাই। চেষ্টাতো করলাম অনেক আর কত.....???
আম্মা তোমার ইচ্ছায় সব হবে নাকি?
হ্যাঁ হবে কোনদিন না হলেও আজ হবে, যেহেতু সংসারটা আমার।
জানি না কি হলো আমার, কখোনো আম্মার সাথে এভাবে কথা বলিনি।
সহজে জেদ হয় না আমার, কিন্তু হলে সেটা ঠেকানো কঠিন! তবে যুক্তি ছাড়া জেদ আমি করি না কখোনোই।
রানা চলে গেলো তারপর....

চলবে............
১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×