somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের কথা-৪৯

৩১ শে অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলছে....

রানা চলে গেলো আমি আম্মার বাসায় রয়ে গেলাম,
আম্মা সেই আগের মতই ব্যবহার করতে থাকলো, কথা বলে না ঠিকমত।
আমিও কথা বলি না।
আব্বা আগের মতই আমাকে বুঝালো,
আমি বললাম আব্বা আমি বড় হয়েছি, এখন অনেক ভালো মন্দই আমি বুঝি। আমার ডিসিশন আমাকেই নিতে দাও।
আরো বললাম আব্বা একটা কথা মনে রেখো নিশ্চয় কোনো কারণ আছে! তাই এমন করছি আমি।
আব্বা আর কিছু বলেনি।
আম্মার সমাজ আর প্রেস্টিজ নিয়েই সে আছে, মরে যাবো তবু সম্মান হারাবো না।

কয়েকদিন পরে রানা নিতে আসলো আমাকে। কোনো লজ্জা নেই রানার একই মুখে অনেকরকম কথা বলতে পারে সে, একটুও অস্বস্তি হয় না তাতে। তার চিরাচরিত স্বভাব নিয়ে সে আমাকে ফিরিয়ে নিতে আসলো, ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যতরকম কথা বলা দরকার তা বলতে তার একটুও বাঁধতো না। তখন রানার কথা কেউ শুনলে তাকেই সবাই ফিল করবে।
আমাদের ফ্যামিলির অনেকেই এখোনো রানাকে পছন্দ করে, কারণ কোনোদিন জানবে না তারা রানার আসল পরিচয়।
আম্মারও ইচ্ছা যে আমি ফিরে যাই।
আম্মা এবং রানা একাধারে বিভিন্ন কথা বলে যাচ্ছে, আমি নিশ্চুপ পাথর......কোনো কথা বলছি না। এসব কথার কোনো যুক্তি নাই। তাই চুপ থাকাই শ্রেয়। ঘন্টার পর ঘন্টা চললো তাতের যুক্তি মনে হলো আমি একটি পণ্য তাকে নিয়ে দর কষাকষি চলছে, আমার চাওয়া পাওয়ার কোনো মূল্যই নেই, এক পর্যায়ে আম্মা আমার হাতটা ধরে রানার হাতে দিয়ে বললো, আজ থেকে মনে করো আমি ওকে দিয়ে দিলাম, তোমার যা খুশি তাই করতে পারো আমার কোনো দাবী থাকলো না।
স্কুলে থাকতে ‘হৈমন্তী’ গল্পে পড়েছিলাম, হৈমন্তীর স্বামী ওকে অনেক ভালোবাসতো,
ভালোবেসে কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একদিন হৈমন্তীকে বলেছিলো,‘তুমি আমার সম্পত্তি নও, তুমি আমার সম্পদ’।
কথাটা মনে ধরেছিলো, ”সত্যি সম্পত্তি হতে চাইনি কারো সম্পদ হতে চেয়েছিলাম কিন্তু হলো না সম্পত্তিই হয়ে গেলাম”’ আজ যেনো নতুন করে উইল করে দিলো আম্মা।
আম্মার দিকে তাকিয়ে থাকলাম, মা হয়ে কি করে পারলো এমন কথা বলতে! কথপোকথনের শুরু থেকে আমি চুপ, এখোনো চুপ করে রইলাম বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রণা করে উঠলো, যন্ত্রণা পেতে পেতে আমার হার্টটা দূর্বল হয়ে গেছে। এমনি করেই হয়তো আস্তে আস্তে
নিস্তেজ হয়ে যাবো একদিন, কেউ জানবে না। দীঘির মাঝে একা দাড়িয়ে থাকা নীল পদ্মের মত ধীরে ধীরে পানিতে তলিয়ে যাবো। হয়তো তলিয়ে যাওয়ার পর শুভাকাক্সক্ষী কেউ একটু সমবেদনা জানিয়ে বলবে, ‘আহা নীল পদ্মটি তলিয়ে গেলো, বড় একা ছিলো,বড় দুঃখী ছিলো ও?
তোমাকে ভালোবাসার সাধ ছিলো কিন্তু সাধ্য ছিলো না। আমাকে ক্ষমা কর নীল পদ্ম !’ হা হা তারপর সব শেষ............................

আম্মার উপর আবারও জেদ হলো তখনও নিঃশ্চুপ আমি, বিনা বাক্য ব্যায়ে রানার সাথে চলো গেলাম।
তবে আগেরবার আম্মার উপর জেদ আর এবারের জেদের মধ্যে অনেক তফাত ছিলো।
রানার সাথে গেলাম ঠিকই আম্মার বাসায় থাকবো না ভেবে, তবে রানার বাসায় থাকবো সেটা ভেবেও নয়।
কি করবো কিভাবে সমাধান হবে সেটাই ভাবছিলাম।

রানাকে একেবারেই সহ্য করতে পারছি না।
হয়তো পুরো গল্পটা পড়ে কেউ ভাববে সারাজীবন এতো সহ্য করে এখন কেনো আর পারছি না।
পারছি না কারণ এতাদিন ভেবেছি মেনে নেবো চেষ্টা করবো সব ঠিক করতে এখন বুঝে গেছি...এ আর ঠিক হবার না তাই ডিছিশন নিয়েছি আর সংসার করবো না.......আসলে মানুষ মন থেকে যেটা আত্তস্থ করতে পারে সেটাই সে করে...আমি ব্যতিক্রম কিছু না......
অনেক ধৈর্য্য আমার, মেনে নিতে নিতে বহু ধাপ পর্যন্ত যেতে পারি আমি, কিন্তু কোনো এক সময় সেই ধাপতো শেষ হয়.................. পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই আমাকে ঠেকাতে পারে। ধৈর্যের শেষ ধাপে আমি এখন। রানার ক্ষেত্রে এটাই আমার শেষ ধাপ ছিলো।

রানার বাসায় গেলাম ঠিকই কিন্তু কোনো কথা বলছি না, একটা পাথর হয়ে আছি, রানা ছাড়া বাসার কেউ-ও আমার সাথে কথা বলছে না। সারাদিন রাত ঘরের কোণে চুপ করে বসে থাকলাম, এভাবে চলে গেলো ৮/১০ দিন, এর মধ্যে আমার মুখ দিয়ে একটি কথাও উচ্চারিত হয়নি, ঠিক বোবা মানুষের মত আছি, কোনো কথার উত্তর দিচ্ছি না, নিশ্চুপ আমি। শুধু ভাবছি সংসার আমি করবো না এটা নিশ্চিত কিন্তু কিভাবে কি করবো কোথায় যাবো, সেটা ডিসিশন নিয়ে তারপর কথা বলবো।

কোনো কথা বলি না, কোনো কথার উত্তরও দিচ্ছি না, কেমন যেনো পাথর হয়ে গিয়েছিলাম জেদে।
একদিন কেনো কথার উত্তর দিচ্ছি না বলে রানা খুব রেগে গেলো আমাকে যা ইচ্ছা তাই বলতে থাকলো তবু আমি চুপ, নির্বিকার।
আমি যত নির্বিকার ভাব নিয়ে আছি রানা ততটাই উত্তেজিত হচ্ছে। চিৎকার চেচামেচি করতে করতে এক সময় রাত হলো ঘুমানোর সময় হলো, সেজান ওর দাদির সাথে ঘুমায়, রানা খেতে গেলো পাশের ঘরে দিবসকে ঘুম পাড়িয়ে আমিও ঘুমিয়ে পরেছি।
রানা ঘরে এসে আমাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে সম্ভবত অনেক রেগে গেলো, ঘুমের মধ্যেই আমাকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে উঠিয়ে বসালো, আমি প্রচন্ড চমকে গেলাম হাত পা কাঁপতে থাকলো তবু কিছু বললাম না শুধু তাকিয়ে থাকলাম,
রানা পাগলের মত চিৎকার করে যা ইচ্ছা তাই বলতে থাকলো,
দিবস ঘুম থেকে জেগে ভয় পেতে পারে ভেবে ওর গায়ে হাত দিয়ে রেখেছি আমি, সেটাও সহ্য হলো না রানার,
দিবসের কাছ থেকে সরে যেতে বললো আমায় আমি তবু সরছি না কোনো কথাও বলছি না,
এবার রানা প্রচন্ড শব্দ করে দরজাটা খুলে অন্য ঘরে যেয়ে তার বাবা মাকে ডেকে আনলো দিবস চমকে উঠলো আমি ওকে কোলে নিলাম,
রানা তার বাবা মাকে নিয়ে এসেছে ততক্ষণে,
দিবসকে কোলে নিয়েছি দেখে রানা আমার কোল থেকে প্রচন্ড জোরে এক টানে আমার কাছ থেকে নিয়ে গেলো একবারও ভাবলো না বাচ্চাটা ব্যাথা পেতে পারে, হিংস্র অমানুষ মনে হয়েছিলো।
এক মুহূর্তের মধ্যে আমার হাত উঠে গেলো, রানাকে আমার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রচন্ড জোরে একটা চড় মারলাম।
তবে এটা আশা করা ঠিক হবে না আমি চড় মারলাম আর রানা আমায় ছেড়ে দেবে, রানাও মারলো আমাকে
আমার চেয়ে রানার শক্তি অবশ্যই বেশি, কত জোরে মেরেছিলো বলা কঠিন তবে অনেক জোরে।
তবু কাঁদিনি জেদ করে চুপ করে বসে আছি কথা বলিনি তখনও।
দিবস ততক্ষণে ওর দাদির কোলে, ভয় পেয়েছে বাচ্চাটা।
রানার বাবা হঠাৎ করে বললো এমন মেয়ের সাথে সংসার না করলে কি হবে, আমার ছেলের জন্য কি মেয়ের অভাব হবে?
মনে মনে হেসেছিলাম।

সেই রাতেই ডিসিশন নিয়ে নিলাম, কাউকে না বলে চলে যাবো কোথাও, কেউ যেনো খুঁজে না পায়। কিন্তু ভাবছি কোথায় যাবো। ঢাকার বাইরে কোথাও যেতে হবে। যেনো খুঁজে না পায়.....

চলবে............
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১:৩২
১৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×