somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের কথা-৫০

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলছে.....

পরদিন সেজানকে টিচারের বাসায় দিয়ে আমি বান্ধবী শিখার বাসায় গেলাম, ওকে কিছু কথা বললাম, ওর বোন টাঙ্গাইল থাকে, বললাম সেখানে যেয়ে কিছুদিন থাকতে চাই আমি। ও রাজি হলো।
এবার আমার প্রস্তুতির পালা, দোকানের কিছু টাকা আমার কাছে ছিলো, সেটা কাছে নিলাম। সেজানকে প্রতিদিন পড়াতে নিয়ে যেতাম যখন তখন আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা শখের কিছু কিছু জিনিস সাথে নিয়ে যেতাম, শিখার বাসায় রাখতাম। তবে আমার কোনো দামী জিনিস আমি আনিনি এমনকি আমার বিয়ের সময় মায়ের দেয়া গহনাও আমি আনিনি।
আমার কিছু শখের জিনিস ছাড়া আর কিছুই নিলাম না। আর আমার হাতে একটা স্বর্ণের আংটি ছিলো।
শিখা ছাড়া চলে যাওয়ার কথা কাউকে বললাম না।
এর মধ্যে রানা একদিন আমাকে বাইরে নিয়ে যেতে চাইলো, আমি না করলাম না।
মানুষের মন বড় লাগামছাড়া চলে যাবো তবু কেমন মায়া ছাড়তে পারছি না, মায়া হলো,
এত কষ্ট দিলো যে আমায় তার জন্য আবার কষ্ট! হয়তো বা আমিই একটা আজব মানুষ!
সংসদভবন নিয়ে গেলো আমাকে, বিয়ের পর পর খুব যেতাম রোজ সন্ধ্যায়। মনে পরে গেলো সেই কথা। কিছুটা ঊদাসী হলো মন।
১৭/১৮ দিন হয়ে গেলো ঐ বাসায় কারো সাথে কথা বলিনি।
রানা অনেক বুঝালো আমাকে, মাপ চাইলো আমার কাছে, আমি চুপ করে আছি। খুব মায়া লাগলো আমার, দয়া হলো রানার জন্য।
কথা বললাম, রানা তোমার জন্য আমার খারাপ লাগছে কিন্তু ডিসিশনটা তো অনেক দেরিতে নিয়েছি আমি তাও আবার অনেক ভেবেচিন্তে...
তাই আমার যত খারাপই লাগুক আমার ডিসিশন আমি বদলাবো না।
আরো বললাম, আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমারও কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তবু আমি তোমার সাথে সংসার করবো না! অনেক স্থির শান্তভাবে কথাগুলো বলেছিলাম সেদিন।
কষ্ট অনেক পেয়েছি এতদিন তোমার কাছে থেকে আর এখন পাবো তোমার কাছ থেকে সরে যেয়ে, পার্থক্য এটুকুই।
রানা আবার বললো আমাকে মাপ করে দাও আর একবার আমাকে সুযোগ দাও।
প্লিজ তুমি এভাবে বলো না তাতে আমার কষ্ট হচ্ছে, আমি তোমার কথা রাখতে পারবো না।
মনের মধ্যে একটা স্থির কষ্ট হচ্ছিলো, মনের কোন সুুপ্ত ভালোবাসাতো একটা ছিলোই, তাতো অস্বীকার করার কোনো পথ নাই। ভালোবাসাতো গাছের মত যত দিন যায় চারিদিকে শিকড় ছড়িয়ে পরে। সবতো আর কেটে ফেলা যায় না, কিছু থেকেই যায়.....তবু বুকের রক্ত ক্ষরণে তা লুকিয়ে রাখলাম।
চলে যাবার আগেরদিন রানাকে শেষ ছুঁতে দিয়েছিলাম, শেষ ছোঁয়া হিসাবে।
আমি মনে মনে মুক্ত হলাম। ভাবলাম আজই তোমার সাথে শেষ দিন। এত বছর পাশে থাকার একটা মায়াতো থাকেই। সত্যি অদ্ভুত মন মানুষের। রানাকে সত্যি ভালোবেসেছিলাম, ওকে ছাড়তে কষ্ট হয়েছিলো কিন্তু তাছাড়া আর তো কোনো উপায় ছিলো না।

পরদিন সকালে একটু আম্মার বাসায় যাচ্ছি বলে বের হলাম দিবস কে নিয়ে, রাস্তা থেকে ফোন করলাম রানাকে আমি চলে যাচ্ছি তবে আম্মার বাসায় নয়। কোথায় যাচ্ছি বলবো না, তবে আমি ভালোই থাকবো, আমাকে খুঁজবে না প্লিজ। রানা অনেক অনুরোধ করলো ফিরে যেতে, রানার কথা শুনে কেঁদেছিলাম অনেক, ফিরে যেতে ইচ্ছাও করেছিলো কিন্তু এক ঝলক চিন্তা করে ভেবে নিলাম অনেক কষ্টে ডিসিশন নিয়েছি, যত কষ্টই হোক আর ফিরবো না, ঐ জীবনে। চোখের পানি মুছে ফেললাম।
চোখের পানি মুছতে মুছতে শুধু বললাম, হয়তো আমি তোমাকে সুখ দিতে পারিনি... তুমি সুখে থেকো,
আর আমি ! সুখে না থাকলেও ভালো থাকতে চাই। রাখি। রেখে দিলাম ফোন।
চলে গেলাম টাঙ্গাইল দিবসকে নিয়ে বান্ধবীর বোনের বাসায়।
তারপর শুরু হলো খোঁজাখুঁজি সব বান্ধবীর বাসায় আত্মীয়ের বাসায় কোথাও পেলো না পাওয়ার কথাও নয়।
দেড় মাস কোনো যোগাযোগ করিনি কারো সাথে। আম্মার কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি। আম্মা নিশ্চয় অনেক কষ্ট পাচ্ছে, অনেক টেনশন করছে।
খোঁজ করতে করতে শেষ পর্যন্ত চারুকলার বন্ধু বান্ধবও বাদ থাকলো না।
দেড় মাস চলে গেলো আম্মার কথা ভেবে ফোন করলাম বাসায়,
বললাম আমি ভালো আছি আমার জন্য চিন্তা করো না তবে কোথায় আছি জানতে চেয়ো না।
আম্মা কান্নাকাটি শুরু করলো তুই ফিরে আয়, আর আমি কিছু বলবো না, তোর যা ইচ্ছা তাই করিস। আমি কোনো কিছুতে বাধা দেবো না।
আমি রাজি হলাম না, বললাম তোমার বাসায় আমি আর আসবো না। আমি একাই থাকবো।
শেষ পর্যন্ত আম্মা বলে বসলো তোর পায়ে ধরি তুই ফিরে আয়, আমি আর কিছু বলবো না!
কি করবো ফিরেতো আসতেই হবে অন্য বাসায় আর কতদিন, ঠিক আছে চলে আসবো।
দু’একদিন পর ফিরে আসলাম, আম্মার বাসায়।
থমথমে দিন কাটছে,
রানা মাঝে মাঝে ফোন করে ফিরে যেতে বলে।
আমি স্থির, ফেরার পথ বন্ধ।
আমি উকিলের কাছে গেলাম ডিভোর্সের কাগজপত্র তৈরি করলাম, কাগজে লেখা ছিলো বড় ছেলে রানার কাছে থাকবে আর ছোটছেলে আমার কাছে থাকবে। কাবিনের টাকা চাই না, কোনো দাবীও নেই। কিন্তু সে কাগজ আমার কাছেই থাকলো,
আম্মা বললো রানার কাছে না যেতে চাইলে না যাও কিন্তু ডিভোর্স করার দরকার কি এভাবেই থাক ?
আমি বললাম ঠিক আছে।
রানা তখনও আশা ছাড়েনি, আমাকে চিঠি লিখতো ফিরে যাওয়ার জন্য। চিঠিগুলো পড়ার দরকার ছিলো না তবু কেনো যেনো পড়তাম আর কাঁদতাম।
মনের মধ্যে এত কষ্ট নিয়ে দোকানটা আর চালাতে পারিনি, বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু সেটা ভুল হয়েছিলো আমার, ধরে রাখা উচিত ছিলো।
এমনি করে দিন যাচ্ছে, খুব কষ্টের সময় ছিলো সেটা।
আম্মা খুব ভালো ব্যবহার করতো না, মনে মনে রাগ ছিলো আমার উপর।
কিছুদিন যেতে না যেতেই রানা আবার আসলো এসে অনেক ঝগড়া করলো অযথা উল্টাপাল্টা কথা বললো।
আমি চুপচাপ কিছুই বলার নেই, দিবসকে নিয়ে যেতে চাইলো, তখন আমি বাঁধা দিলাম।
এই নিয়ে অনেক তর্ক হলো।
এক পর্যায়ে কি যেনো চিন্তা করে রানা বললো, চলো তুমি বাচ্চাদের নিয়ে আলাদা থেকো আমি বাসা ভাড়া করে দেবো, আমি থাকবো না মাঝে মাঝে যাবো।
আমি না করলাম, সেটা কখোনো হবে না। আমি জানি তুমি যাবেই। আর আলাদাই যদি থাকতে হয় তবে তোমার বাসা ভাড়া করে দিতে হবে কেনো সেজানকেও দিয়ে যাও আমি একটা চাকরি জোগাড় করে ওদের নিয়ে আলাদা থাকবো।
আবার রেগে গেলো রানা কথাটা মন মতো হয়নি তার।
এক পর্যায়ে চলে গেলো সে।
এরপর দিন যাচ্ছে, ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগছে না। ভাবলাম রেজাল্ট বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে একটা কিছু করা দরকার
ভর্তি হলাম কম্পিউটার গ্রাফিক্স শেখার জন্য আমার কাছে হাজার দশেক টাকা ছিলো তাই দিয়ে।
এরপর রানা একদিন ফোন করলো বললো সে বিদেশ চলে যাবে সেজানকেও আমার কাছে দিয়ে যাবে।
খুব খুশি হয়েছিলাম।
কিন্তু সেদিন বুঝিনি আমার খুশির মধ্যে এভাবে পানি ছিটাবে রানা। মিথ্যে বলেছিলো সে।
তারপর.....

সামনের পর্বে শেষ হবে....
চলবে....
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×