somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একা আলো বাঁকা বিষাদ, আমার দ্বিতীয় উপন্যাস, একুশে বইমেলা ২০১৬

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাছের আড়তে আজ মাছ এসেছে। গাবতলী থেকে মাছ আনিয়ে নিয়েছে ছামান আলী। মাছের আড়তও রাইস মিলের পাশে, স্টেশন ছেড়ে খানিক দূরে, রেল লাইনের কাছ ঘেঁষেই অনেকটা। এখান থেকে রেল লাইন পার হয়ে সোজা নিচে নেমে দু তিন বন পেরুলেই শ্মশান ঘাট। অনেকে তাই বলেছিল ছামান আলীকে মাছের আড়তটা অন্তত গ্রামের ভিতর দিকে বসাতে। ছামান আলী রাজী হয় নি। ছামান আলী নিজের সিদ্ধান্ত অন্যের কথায় বদলায় না। আকিম তদারকি করছে সব কিছু। গলা হাঁকিয়ে একে ওকে বলছে এটা কর, ওটা কর। ছামান আলী চুপচাপ বসে আছে একটা চেয়ারে। আকিম পাশে এসে বলে, 'ভাইজান, সব ঠিকঠাক আছে না?'
ছামান আলী উদাস ভঙ্গিমায় বলে, 'তোর যা মন চায় কর। সব দায়িত্ব তো তোরেই দিতে চাইছিলাম। তুই তো ছোলা বুট বেচবি।'
'ভাইজান কি আমার উপর রাগ?'
'রাগ করুম ক্যান? তুই আমার কাছের মানুষ। তোর অল্প কিছুতে রাগ করন যায় না।'
আকিম আবার হাঁক দেয়, 'ঐ জলিইল্লা, মাছ গুলান উত্তর পাশে রাখবার কইলাম না? অইহানে রাখোস ক্যান? মনডায় চায়।'
উঠে যায় ছামান আলী চেয়ার ছেড়ে। স্টেশনের দিকে পা বাড়াতেই হুড়মুড় করে দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে আসে হারুন।
'ছামান ভাই, আর একখান লাশ পাওন গেছে শ্মশান ঘাটের কাছে।'
ছামান আলী নিঃস্পৃহ দৃষ্টি ছুঁড়ে তাকিয়ে থাকে হারুনের দিকে। চোখে মুখে হারুনের প্রচণ্ড ভয়ের ছাপ। ছামান আলী বেশ শান্ত গলায় বলে, 'কার লাশ?'
'জানি না, অন্য এলাকার। কাপড় চোপড় নাই এইটারও।'
'তুই কী করতেছিলি অইহানে? গাঞ্জা খাইতে গেছিলি?'
হারুন মাথা নিচু করে ভয়ে ভয়েই বলে, 'হ, ভাই। আমি পাশ দিয়া যাইতাছি, তহন দেহি।'
ছামান আলী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
'আবার ঝামেলা। যা, শঙ্কররে খবর দে। আমি থানার দিকে যাই। পুলিশ আইয়া নয়ত আবার ঝামেলা করব।'
কোন লাশ পাওয়া গেলেই শঙ্করকে খবর দেয়া হয়। শঙ্কর এসে লাশ দেখে বলে, এটা মুসলমান না হিন্দু। ছেলেদেরটা বুঝতে পারা সহজ হলেও, মেয়েদের ব্যাপারটা কী করে বলে ও তা জানা মুশকিল। যদি হিন্দু হয়, শ্মশান সাজিয়ে শেষকৃত্য করার দায়িত্বও পড়ে শঙ্করের উপর। আর মুসলমান হলে শ্মশান ঘাটের কিছুটা পাশেই কবর দেয়া হয়। মৃত্যু অপঘাতে হতে পারে, অপঘাতে মৃত্যুর নাকি জানাজা হয় না, এ জন্য জানাজা পড়াতে চান না গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেব। এই কাজের জন্য মাসে মাসে টাকা দেয় ছামান আলী শঙ্করকে। তাছাড়া শঙ্করকে আন্দারমানিকে কতখানি জমিও নাকি কিনে দিয়েছে ছামান আলী। সে জমিতেই বাড়ি করে থাকে শঙ্কর। লাশ পাওয়া গেলে, আন্দারমানিক থেকেই শঙ্করকে খবর দিয়ে আনা হয়।
এ সময়টায় ছামান আলীর ছুটতে হয় থানায়। সেখানকার ওসির সাথে টাকা পয়সার লেনদেন হয়েছে। ভালই টাকা দিতে হয়েছে ওসিকে। এমন একটা শ্মশান ঘাট আছে এখানে, কয়েক দিন পর পর লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ আর কত দৌড়াদৌড়ি করবে? তার চেয়ে ছামান আলীই দায়িত্ব নিয়ে সেসব সামলাক। এখন গ্রামের একটা সমস্যা, ছামান আলীর তো দেখতেই হবে। সাদা বন নিয়ে আর কারও তো কোন চিন্তা নাই। সব চিন্তা ছামান আলীর একার।

শঙ্কর লাশ দেখে ঘোষণা দেয়, এটা মুসলমান মেয়ের লাশ। ওর এখানে কোন কাজ নাই। হারুন সহ দু তিন জন মিলে একটা কবর খুঁড়ে মাটি চাপা দিয়ে রাখে লাশটা। এরপর ইমাম সাহেব শুধু দোয়া পড়িয়ে দেন। এই কবর দেবার বা শ্মশানে পুড়াবার সময়টাতেও বেশী একটা লোক আসে না। এদিকটা সবাই খুব ভয় পায়। দিনের বেলায়ও ভয় পায়। আশেপাশে আরও কবর ছিল, কিন্তু সেসবের সব গুলো গর্ত করা। দেখে মনে হয় যেন কেউ লাশ গুলো কবর খুঁড়ে বের করে নিয়েছে। কবরের মধ্যে লাশও নেই।

অংশবিশেষ

উপন্যাসঃ একা আলো বাঁকা বিষাদ
লেখকঃ রিয়াদুল রিয়াদ
প্রকাশনীঃ বর্ষা দুপুর
আসছে একুশে বইমেলা ২০১৬ তে।

সবার কাছে শুভ কামনা চাচ্ছি।
একুশে বইমেলা ২০১৫ তে প্রকাশিত হয়েছিল আমার প্রথম উপন্যাস সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারঃ টুকরো ছায়া টুকরো মায়া।
প্রথম বইয়ের দুই মুদ্রণ ছিল আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। এই উপন্যাসেও নিজের সবটা ভালবাসা, স্বপ্ন মেশানো।

বইমেলায় সামুর আর কার কার বই বের হচ্ছে?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২০
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×