somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতা -ফোবিয়া

৩১ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙ্গালী মাত্রই কবিতাপ্রিয় ,আর দশটা বাঙ্গালীর মত সেই শৈশবকাল থেকে কবিতার প্রতি আমারও এক দুনির্বার মোহ কাজ করত।কথাটিতে একটু ভুল হল,কবিতা কি জিনিস তা অনুধাবন করার মুরোদ তো সে সময় আমার ছিলনা,বরং বলা যায় সেই মোহ ছিল অনেকটাই ছন্দের প্রতি।আর সেই বালসুলভ আকাঙ্খার বর্শবর্তী হয়ে ছন্দ মেলানোর অন্ধ আক্রোশে লিখেও হয়তো ফেলেছিলাম খানকয়েক ছড়া।বলাই বাহুল্য ,সেই ছড়াতেই আমার দৌড় যে কদ্দুর তার আভাস ভালভাবেই মেলেছিলা।কিন্তু অবুঝ বয়েসের সাত খুনও মাপ,তাই কাঁচা হাতের সেই ছড়ারুপী ছন্দ মেলানোর আকুল প্রয়াস দেখেও মনে মনে যাই ভাবুননা কেন,মুখে বাবা মা মায় ক্লাসটিচার পর্যন্ত এই সুবোধ বালকটির পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন আর বলেছিলেন, লেগে থাক বাবা ,তোমাকে দিয়েই হবে (এটা অবশ্য হলফ করে বলতে পারছিনা,স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে থাকে আর কি ! ) আমার তো এমনকি এও মনে হত,রবি ঠাকুরও তো এই বয়েসে "জল পড়ে পাতা নড়ে টাইপের " ছাইপাশ লিখেছিলেন,তার চেয়ে আমার কবিতা নিশ্চয় অনেকই উচ্চমার্গীয় ,কিন্তু হায় এই অর্বাচীনের যদি বোঝার সাধ্য থাকত,ওই জল পড়ার নড়ার মাঝে যে ভাব লুকিয়ে আছে, তা বোঝা এই অপোগন্ডের কম্মো নয় তাহলে ওই প্রজেক্টে বহু আগেই ইস্তফা দেওয়া হত।


যাই হোক, বয়েস অল্প,চোখে রঙ্গিন স্বপ্ন ,খানিকটা মতিভ্রম হয়তো হয়ে থাকবে,তাই কবিতা লেখার ভূত তখনো মাথা থেকে চাপেনি।একদিন হঠাৎ মনে হল ,আমার এইসব কবিতা তো পত্র পত্রিকা পেলে লুফে নেবে।
তখনো বুঝিনি,আদতে সেই মতিভ্রম খানিকটা আতঙ্কজনক পর্যায়েই চলে
গিয়েছিল,নইলে এমন সর্বনাশা চিন্তা মাথায় কিভাবে এল তা ভেবে আমি এখনও শিউরে উঠি।তারওপর ক্লাসে ছিলাম শেয়াল বনের রাজা,তাই এসব ভাবনার পালে হাওয়া পেতে খুব একটা দেরি হয়নি।তাই আমার বিপুল সাহিত্য সম্ভার থেকে বেছে বছে সবচে কম উচ্ছিষ্ট আবর্জনাটা বের করে একদিন পাঠিয়ে দিলাম এক স্বনামধন্য পত্রিকার শিশু বিভাগে ।যদিও আমি নিজের লেখা শিশু বিভাগে পাঠানোর পক্ষে খুব একটা রাজি ছিলাম না (নিজেকে বেশ লায়েক মনে করতাম কিনা !),তথাপি নিজের প্রতিভা বিকাশের জন্য এর চেয়ে ভাল কোন প্লাটফর্মের কথা আমার জানা ছিলনা !

অতঃপর শুরু হল প্রতীক্ষার প্রহর,সপ্তাহের একটি বিশেষ দিনে হকারের
আসার পথে একবারে চাতক পাখির মত অপেক্ষা করে থাকতাম ।বলাই বাহুল্য,প্রায় প্রতি সপ্তাতেই আমি নিরাশ হতে থাকি ,আর আমার হতাশাও চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে যেতে থাকে ।প্রতিবার মনে হয় ,লেখাটা বোধহয় খানিকটা দেরিতেই পৌচেছে ,আর আশায় বুক বাধতে থাকি ।কিন্তু বিধিবাম,মানুষের সবুরে মেওয়া ফলে আর আমার বেলায় মিলল কেবল মাকাল ফল ।অনেক বিনিদ্র রজনী পার করার পর একদিন এই লেখার কথা আমার মন থেকে মুছে যেতে থাকে আর ওদিকে আমার কবিতার খাতায়ও ধুলোর স্তর পুরু থেকে পুরু হতে থাকে।


এরপর অনেক দিন কেটে গেছে । কবিতার প্রতি মোহ আমার ততদিনে কেটে গেছে ।নৈমিত্তিকতার গ্রাসে কবিতা লেখার ইচ্ছের সলতে তখন নিভু নিভু হয়ে গিয়েছিল । একদিন হঠাৎ পুরনো বই খাতার স্তুপে আবিষ্কার করলাম আমার সেই কবিতার বই ।মলাট বলতে তখন আর কিছু নেই ,কেবল গুটি গুটি হরফে লেখা কিছু কথা সাক্ষ্য দিচ্ছিল আমার এককালীন বিরলপ্রজ প্রতিভার ।খাতা হাতে নিয়ে আমি উল্টোতে থাকলাম,আর
নিজের অবিনশ্বর কীর্তির দিকে তাকিয়ে আপনমনেই মুচকি হাসলাম।

মোদ্দা কথা হল , কবিতার সাথে গাঁটছাড়া বাঁধার খায়েশ ষোলআনাই ছিল ,সেই আশা পূরণের কোশেশও খুব একটা কম করিনি ,কিন্তু সবার শেষ কথা হল তাখতই যদি হয় কমজোর,তাহলে মোল্লা আর বড়জোর কদ্দুর দৌড়াবে। মেঘমেদুর দিনে মেঘের ঘনঘটা দেখে আমি পুলকিত হইনা, বরং শিউরে উঠি এই বুঝি জরুরি কাজটা পন্ড হল বলে, হঠাৎ আসা বর্ষণে আমি ভেজা মাটিতে সোঁদা গন্ধ খুজে পাইনা ,বেয়াড়া প্রকৃতির জন্য আজকের সকালটা মাটি হল, এই ভেবেই আমি গজগজ করতে থাকি ।পঞ্চমীর চাঁদ ডুবে গেলেও আমার মাথায় একরত্তি কাব্য আসেনা । আর মানুষ হিসেবে আমার রোমান্টিকতা তো দিল্লী দূর অস্ত ।সে আলাপ এখানে করা অনেকটা কাকস্য পরিবেদনার মতই শোনাবে ,তাই ওদিকে আর গেলামনা । বাশ বনে ঝড় বাতাস দেখে আমি কস্মিনকালেও প্রিয়ার এলোকেশ বলে ভাবিনা , বনলতা সেনের সন্ধানে নাটোর যাওয়ার ইচ্ছেও কখনো উকি দেয়নি ,মোটকথা ওসব কল্পনাবিলাস আমার ধাতে সয়না ।কবিতা পড়ে হদয়ঙ্গম করতে তাই আজকাল আমাকে জেরবার হতে হয় , নিজেকে সান্তনা দিই এই বলে যে এ যে আমার সক্ষমতারই অপ্রতুলতা। ভয় হয় ,কবিতার সাথে এই আপাত বিচ্ছেদের বোঝা আবার আমায় বেশিদিন বইতে না হয় ,কবিতার প্রতি আমার না আবার অ্যালার্জি পেয়ে বসে ।ডুবন্ত মানুষও খড়কুটো আঁকড়ে ধরে রাখে ,আমিও তাই আর হাপিত্যেশ না করে বরং আশায় আছি ,একদিন কবিতার দেবী হয়তো আমার দিকে মুখ তুলে তাকাবেন ,কবিতার সাথে আমার ফের মিতালী হবে ।
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×