somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিতে মাহে রমজান এবং তারাবী লা লীগা

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোজার দিনের বেশুমার স্মৃতি থেকে ছেঁকে ছেঁকে সবচে মজারগুলো বের করে আনা সহজ কম্মো নয় । সেহরী ইফতারের মজা তো সবাই অল্পবিস্তর করেছে ,তবে আমি ছিলাম আরও এককাঠি সরেস ।মনে পড়ে ,ছেলেবেলায় বাবা -চাচারা ইফতারের পর খানিক জিরিয়ে তারাবীর উদ্দেশ্যে রওনা দিতেন তখন আমিও গাড়লের মত তাদের সাথে যাওয়ার জন্য বায়না ধরতাম ।কিন্তু আমার মত নেহায়েত পিচ্চি যে ২০ রাকাত নামাজ পড়তে পেরেশান হয়ে পড়বে ,তা জানা ছিল বলে আমাকে তারা নিতে চাইতেননা ।কিন্তু কাহাঁতক আর প্রতিদিন আমার ত্রাহি চিৎকারে কান বুঝে থাকা যায় ।তাই একদিন আমার এহেন অন্যায় আবদারের ঠেলা সইতে না পেরে আমাকে তারাবীতে নিয়ে যান ।খানিক বাদেই টের পেলাম আমার যারপরনাই ঘুম ঘুম আসছে ।ইমামা সাহেব ওদিকে কোরানের আয়াত পাঠ করছেন আর আমি দাঁড়াতে দাঁড়াতে ত্যাক্ত এবং অবশেষে ক্লান্ত বিরক্ত হয়ে কখন যে চোখ বুজে ফেলতাম তা আমি নিজেই জানিনা ।প্রথম চার ছয় রাকাত তাও যা ধৈর্যের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে আমি মোটামুটি কান খাড়া করে ইমামের আয়াত শোনার চেষ্টা করেছিলাম ।কিন্তু পরে এমনই অবস্থা হল ,ইমাম সাহেব রুকুতে যেতে আল্লাহু আকবার বলার আগ পর্যন্ত এক রাকাত মোটামুটি আরবী ঘোড়ার মত ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলাম ।এরপর যখন বিশ রাকাত শেষ হল তখন দুর্বল পায়ে আর একরত্তি শক্তি ছিলনা ।বলাই বাহুল্য ,ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায় আর এরপর আমি ঐ বয়েসেই বুঝে গিয়েছিলাম ,এই আবদার ফের করলে আরও গাড্ডায় পড়তে হবে,তাই এটা না করাই সমীচীন ।



খানিক বড় হতে আরো একটু বুদ্ধি যখন মাথায় গজাল তখন আমি বাবার সাথে তারাবীতে যাওয়ার জন্য বের হতাম ঠিকই ,কিন্তু মওকা পেলেই ফুড়ুত করে সটকে পড়ার ধান্দা করতাম ।তখনা আবার আমাদের কলোনীতে আমার বেশ কিছু বিচ্ছু দোস্ত জুটে গিয়েছিল ।আমরা এমনই দস্যি ছিলাম যে ,কেলাসে টিচারের হোমওয়ার্ক থেকে শুরু করে মায় তারাবীর নামাজেও কিভাবে সবার নজর এড়িয়ে ফাঁকি দেওয়া যায় ,তার তরিকাও আবিষ্কার করে ফেলেছিলাম ।প্ল্যানমাফিক তারাবী শুরু হলে ভাল ছেলের মত আমরা সটান দাঁড়িয়ে অপরিসীম মনোযোগের সাথে নামাজ পড়তাম ।খানিক বাদে চুপিচুপি এলাকার মুরব্বীদের সতর্ক দৃষ্টি এড়িয়ে আমরা সব কটা জমায়েত হতাম মসজিদের পেছনে ।এরপর শুরু হত ওখানেই আমার ইন্সট্যান্ট বাঁদরামো ।দুই রাকাত পর পর নতুন ভাবে ইমাম সাহেব যখন নিয়্যাত ধরতেন তখনও আমরা ব্যস্ত ছিলাম একজন আরেকজনের ঘাড়ে চিমটি কাটায়, মৃদুস্বরে হিহি করে হাসাহাসি করায় ।এরপর যখন ইমাম রুকুতে যেতেন তখনই পড়ি কি মরি করে আমরাও চলে যেতাম রুকুতে ।উচ্চতায় আরও খানিক লম্বা হলে আমাদের বাঁদরামির তলিকায় নিত্যনতুন সৃজনশীল কৌশল যোগ হতে থাকে ।কারও চপ্পল লুকিয়ে রাখা বা কারও একপাটি চপ্পলের সাথে অন্য কারওটা বদলে দেওয়া এসব তো ছিল মোটামুটি কমন ।আমি নিজে অবশ্য নিজে প্রায়ই এই হামলা থেকে বেঁচে যেতাম ,কিন্তু ভুক্তভোগীরাদের রীতিমত নরক গুলজার করে ছাড়তাম আমরা ।




এরপর ধীরে ধীরে কৈশোরের রঙ চড়ানোর সাথে সাথে আমাদের তারাবী পড়ার উৎসবে খানিকটা ভাটা পড়তে শুরু করে ।এরই মাঝে আমরা চলে আসি নতুন বাসায়,সেখানে আমার নতুন কিছু বন্ধুও জোটে এবং অবধারিতভাবে এখানে শুরু হয় তারাবীতে ফাঁকি দেওয়ার নতুন অপারেশন ।আগে ফাঁকি দিতাম কিছুটা রয়েসয়ে ,মুরুব্বীদের চক্ষুলজ্জার ভয় তো ছিলই ,তার ওপর নিজেদের মধ্যেও বোধ হয় কিঞ্চিত ভালমানুষী অবশিষ্ট ছিল ।কিন্তু কখন যে ইবিলিশ শয়তানের ওসওয়াসায় সেইটুকুও যে ধুয়ে মুছে সাফ হুয়ে গেছে তা বুঝতেও পারিনি ।তাই তারাবীতে ফাঁকি দিতে আমরা হয়ে উঠলাম অনেক বেশি ডেসপারেট আর ইনোভেটিভ ।আমাদের এই নতুন বাসা আবার ছিল স্কুলের সাথে লাগোয়া ,তাই আমরা তারাবীতে যাওয়ার নাম করে সবকটা দল বেঁধে স্কুলে চলে আসতাম ।স্কুলের ভেতরের ছোট্ট মাঠে টিমটিম করে দুটি একশ ওয়াটের বাতি জ্বলত ,সেই আলো আঁধারিতেই আমরা সবাই সক্রোশে বলের ওপর লাথি হাকাতাম ।আমাদের এই নৈশকালীন ফুটবলের কোড নেম ছিল তারাবী লা লীগা ।তারাবী শুরু হওয়ার সাথে সাথে আমাদের এই ফুটবল স্যাগা শুরু হয়ে যেত আর তারাবী শেষ হওয়ার খানিক আগে আমরা ইস্তফা দিতাম ।এরপর উদোম গায়ের ঘামটুকু ভালমত শুকিয়ে পাঞ্জাবি চাপিয়ে বাসায় ফিরে আসা ।কাউকে কাউকে তারপরও প্রশ্ন করা হত ,"কিরে তোর গায়ে এত ঘামের গন্ধ কেন ? " । যাদের বরাত খারাপ ,তারা জাঁদরেল বাবা মার দুর্ধর্ষ জেরার মুখে ফেঁসে যেত ,বাকিরা অবশ্য মোটামুটি সবাই উতরেই যেত বলা চলে । এমনকি কলেজে ওঠার পরেও আমাদের এই এই সিজনাল তারাবী লা লীগা মোটামুটি বহাল তবিয়তেই অনুষ্টিত হত ।


এখন ছুটিতে বাসায় গেলে সব বন্ধুদের একসাথে আড্ডায় ঘুরে ফিরে সেই তারাবী লা লীগার স্মৃতিই ঘুরে ফিরে উঠে আসে ,আমরা হয়ে পড়ি নস্টালজিক ।তারাবী না পড়ে নিজের পরকালীন জীবনের অপরিমেয় ক্ষতি হয়তো করেছি ,কিন্তু সেই দুরন্ত দিনগুলির জন্য এমন ক্ষতি স্বীকার করতেও আমি একপায়ে খাড়া ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ২:৩০
২২টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×