somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রজক্টে এলিয়ান (পাই সিগন্যাল)

২৯ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রজেক্ট এলিয়ান (পাই সিগন্যাল)

১. আমি নীলাকে ভালবাসি, খুব বেশি ভালবাসি। কিন্তু এই কথাগুলো আজ আমাকে খুব বেশি খোচা দেয়। যখন হলোগ্রাফিক স্কিনে পৃথিবীব ছবি ভেসে উঠে, তখন নীলার সৃত্মি আমাকে কাতর করে তুলে। মনে হয় মহাকাশে ঝাপিয়ে পড়ি, ছুটে যায় নীলার কাছে। কিন্তু জানি এটা আর সম্ভব নয়। তবু আমি ঠিকমত ঘুমাতে পারি না, কোন কাজ করতে পারি না। শুধু চোখের সামনে ভাসতে থাকে ছলছল নীল চোখ। মনে হচ্ছিল এই বুঝি সে কেদে ফেলবে, কিন্তু তার চোখ থেকে একটা ফোটাও জল গড়িয়ে পড়ে নি। যে চোখ দেখে আমি বুঝে নতাম তার মনের ভাষা, সেই চোখ খুব অপরিচিত লাগছিল। সেই দিন ঐ দুর্বোধ্য চোখে আমি কি খুজছিলাম জানি না। সেই চোখে কি অভিমান লুকানো ছিল? কিছুটা ক্ষোভ? আমি যে কিছুই খুজে পাচ্ছিলাম না! আমি উৎভ্রান্তের মত বলি, “নীলা মাত্র ক’দিন, তারপরই তো চলে আসব। ঠিকমত হাইপার জাম্প দিতে পারলে বড় জোর এক বছর।” নীলা মুখ তুলে তাকায়, তার চোখটা ঢেউহীন সাগরের মত শান্ত, স্বচ্ছ। সেই চোখে আমি শূণ্যতা ছাড়া কিছুই খুজে পাইনি। মহাকাশ যানের সিড়িতে পা দিয়ে আমি ঘুরে তাকালাম। দূরে নীলাকে দেখা যাচ্ছিল আগের মতই দাড়িয়ে আছে। দু’পাসে লিওন-লিয়া, শক্ত করে ধরে আছে ওদের হাত। আমার ভিজুয়াল ক্যামেরার জুম বাড়াতে থাকি, না সে কাঁদছে না। তার চোখ আগের মতই ছলছলে। সেই চোখে কি ছিল?

“ড: শুদ্ধ. .. ...” আমি চমকে ঘুরে তাকালাম। নাইনাকে কিছুটা বিভ্রান্ত দেখায়। ও আমার দিকে এগিয়ে আসে, তারপর হাত বাড়িয়ে চোখের কোনে জমে থাকা একফোটা জল তুলে নেয় আঙ্গুলের ডগায়। ওর ঠান্ডা আঙ্গুলের ছোয়ায় আবারও সৃত্মি কাতর হয়ে পড়ি। নীলা মাঝে মধ্যে ঠিক এভাবেই আমাকে এক্টুখানি ছুয়ে দিত। নাইনা অবাক হয়ে বলল,“আপনি কাঁদছিলেন! আরে আপনি কাঁদছিলেন!!” নাইনার কিছু ব্যাপার আছে একেবারে বাচ্চাদের মত। মাঝে মাঝে মনে হয় ওর মাঝে নীলার কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে। পৃথিবীতে ফিরে গেলে আরার-এর কাছে জানতে হবে, নাইনার চরিত্রটা ও কিভাবে প্রোগ্রাম করেছে। আমি বললাম, “কিছু বলবে নাইনা?” নাইনা একটা ডিজিটাল নোট প্যাড বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ক্যাপ্টেন এটা আপনাকে দেখতে বলেছেন।” নোটপ্যাডে কিছু সমিকরণ লিখা, একবার চোখ বুলিয়ে বললাম, “কিসের সমিকরণ এগুলো?” “আমাদের বামে যে নক্ষত্রটি, তার দ্বিতীয় গ্রহ থেকে এই সিগন্যাল আসছে। ক্যাপটেন এটা নিয়ে আপনার সাথে আলোচনা করতে চেয়েছেন।” এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার তবু এটা নিয়ে এখন আলোচনা করতে ইচ্ছে হচ্ছিল না, কিন্তু উপাই নেই। তাই নাইনাকে কিছু না বলেই ক্যাপ্টেনের রুমের দিকে হাটা শুরু করলাম। পেছন থেকে নাইনা বলল,“কনফারেন্স রুমে. .. ...” আমি ঘুরে কনফারেন্স রুমের দিকে হাটা শুরু করলাম। হঠাৎ মনে হল, নাইনা কি হাসছে? ঘুরে তাকালাম, ঠিক তাই হাসছে। অবিকল নীলার মত। কিন্তু রোবট হাসে কি করে!


২. কনফারেন্স রুমে দেখলাম প্রায় সবাই আছে। আমি প্রবেশ করতেই ক্যাপ্টেন বললেন,“ড: শুদ্ধ, সমিকরণগুলো দেখেছেন?” আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। ক্যাপ্টেন আবার শুরু করলেন, “আমাদের রাডারে যে সংকেতটা ধরা পড়েছে সেটি সম্পূর্ণ বিক্ষিপ্ত, এবং কোনভাবেই একে কোন সংগাতে ফেলা যাচ্ছে না। তারপরও আমার ধারণা সেখানে বুদ্ধিমান কোন প্রাণের বিকাশ হয়েছে।” ক্যাপ্টেন কিছুক্ষন থেমে আবার শুরু করলেন, “কারণ সংকেত প্রেরনের ধরনটা অদ্ভুত। সংকেতে এক থেকে নয় গিগা হার্জের কম্পাঙ্ক ব্যাবহার করা হচ্ছে। আর সংকেতটা যত গিগা হার্জের হচ্ছে, তার স্থায়িত্ব তত মিলি সেকেন্ড হচ্ছে। মানে কম্পাঙ্ক সাত গিগা হার্জ হলে সংকেতের স্থায়িত্ব হচ্ছে সাত মিলি সেকেন্ড।” আমার মাথায় যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল, “হয়াট. .. তার মানে কি তারা ডেসিমেল সংকেত পাঠানোর চেস্টা করছে? তাহলে জিরোর ক্ষেত্রে কি হচ্ছে? আর এ ধরনের কম্পাঙ্কের তো একটা ফিগার দাড় করানো যায়।” ক্যাপ্টেন মুচকি হেসে বললেন, “বললাম না সংকেতটা বিক্ষিপ্ত, তাই এখন পর্যন্ত কোন অর্থবোধক ফিগার দাড় করানো যায় নি। আমাদের কেন্দ্রিয় নিউরাল কম্পিউটার সেটা বিশ্লেষণ করছে। আর সংকেতটা কিছু সময় পরপর পূর্ণ এক সেকেন্ডের জন্য থেমে যাচ্ছে, আমরা ধরে নিচ্ছি সেটা জিরো।” “তাহলেতো একটা গানিতিক সংখ্যা পাবার কথা!” “হ্যাঁ পাওয়া গেছে, সংখ্যাটা এভাবে শুরু হয়েছে, ৩৫৯৮২৫৩৪৯০৪২৮৭৫৫৪৬৮৭৩১ . .. ... এর পর আরো অনেকগুলো অংক আছে, কিন্তু অংকগুলো কোন নিয়ম মেনে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে না। অংকগুলো হুটহাট চলে আসছে।” আমি গনিতবীদ রুশোর দিকে তাকালাম, তাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে; শেষ পর্যন্ত আমিই প্রশ্ন করলাম, “এখন পর্যন্ত কতগুলো অংক পাওয়া গেছে?” ক্যাপটেন নোটপ্যাডটার দিকে তাকিয়ে বললেন, “১.২৮ মিলিয়ন। তারপর থেমে যায়।” “থেমে গেছে! হঠাৎ!!” ক্যাপটেন কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন, “মহাকাশ যানের নীতিমালা অনুযায়ী কোন বুদ্ধিমান প্রাণের অস্তিত্ব পেলে, মানুষের পরিচয়বাহী সেগান-ড্রেক সংকেত প্রেরণ করতে হয়। আমি সে সংকেত প্রেরণ করেছিলাম। আমার ধারণা ওরা অমাদের সংকেত রিসিভ করার পর তাদের সংকেত প্রেরণ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কিছুক্ষন আগে থেকে সেই সংকেত আবার আসতে শুরু করেছে। আগের মতই বিক্ষিপ্ত, এবার শুরু হয়েছে এভাবে ৩১৪১৫৯২৬৫৩৫. .. ...” গনিতবিদ রুশো হঠাৎ বলল, “এক মিনিট, এক মিনিট। আবার শুরু করেনতো প্রথম থেকে।” ক্যাপ্টেন ভ্রু কুচকে রুশোর দিকে তাকালেন, তারপর আবার নোট প্যাড থেকে পড়তে শুরু করলেন, “৩১৪১৫৯২. .. ...” লুশো মুচকি হেসে বলল, “আর পড়তে হবে না। আমার ধারণা সংকেতটা পাই এর মান।” সবাই চমকে উঠল, হয়াট!!! রুশো বলল, “৩ পয়েন্ট ১৪১৫৯২৬৫৩৫. .. ...” সংখ্যাটাকে এবার চিরচেনা মনে হতে থাকে। রুশো বলল, “আমার ধারণা আগের সংখ্যাটিকে পাই এর মানের সাথে মিলিয়ে দেখলে কোন এক যায়গায় মিলে যাবে। এটা কোন বিক্ষিপ্ত ঘটনা হতেই পারে না”


৩. আমরা এসেছি পৃথিবী থেকে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে এম-১৩ নক্ষত্র পুঞ্জে। এটা আসলে অসংখ্য নক্ষত্রে পরিপূর্ণ একটা ঘিঞ্জি এলাকা। অনেক আগে থেকেই ধারণা করা হত এই অঞ্চলে প্রাণের বিকাশ হতে পারে। তাই পরিকল্পিতভাবে এলিয়েনদের উদ্দেশ্যে মানুষের পরিচয়বাহি প্রথম বার্তাটি প্রেরণ করা হয় এ এলাকায়। সে-ও অনেক বছর আগের কথা, ১৯৭৪ সালে! গতানুগতিক নিয়মে সে সংকেতের জবাব পেতে অনেক সময় লাগার কথা, তাই হাইপারজাম্প টেকনোলোজি আবিষ্কারের পর প্রথম অনুসন্ধানী টিমটাকেও পাঠানো হয় এই এলাকায়। তাই পাই সিগন্যালটা ধরা পড়ার পর থেকে আমাদের ব্যাস্ততা বেড়ে গেল। সংকেতটা ডিকোড করার মূল দ্বায়িত্ব আমার আর রুশোর। কিন্তু যেভাবেই চেষ্টা করি না কেন পারি না। এক সময় রুশো বলল, “শুদ্ধ এ তো দেখি সেই প্রাগঐতিহাসিক প্রবলেম।” “মানে ঠিক বুঝলাম না।” “কোন এক গনিতবিদ বলেছিলেন পাই এর মাধ্যমে শ্রষ্টা কিছু বলতে চায়। পাইকে যদি ভাষায় রূপান্তর করতে পার তবে শ্রষ্টার কথা বুঝতে পারবে।” “তাই নাকি এমন কথা কে বলেছিল?” “ঠিক মনে নেই।” আমি মুচকি হেসে বললাম, “রামানুজন হবে হয়ত, আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের গনিতবিদ।” রুশো কিছুক্ষন চিন্তা করে বলল, “না বোধহয়।” আমি হেসে বললাম, “আরে আমি আর ক’জন গনিতবিদকে চিনি বল।” রুশো আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন গনিতবিদদের াম না যানা খুব বড় অপরাধ। আমি বললাম, “এবার চিন্তা কর পাই এর উত্তর কিভাবে দেয়া যায়।” রুশো বলল, “তাইতো। আচ্ছা এমন করলে কেমন হয়, ওরা আমাদের একটা প্রবলেম দিচ্ছে; আমরা ওদের একটা প্রবলেম দেই।” “কিভাবে?” “ফাই- এর মাধ্যমে।” “কেন?” “আরে ফাই গোল্ডেন রেসিও না। ওয়ান প্লাস রুট ফাইব বাই দু। যার মান হয় ১.৬১৮০৩৩৯৮৮৭৪৯৮৯৪৮৪৮২. .. ... এবং চলতেই থাকে পাই এর মত।” “তাতো বুঝলাম, কিন্তু ফাই দিয়ে তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছ?” “বলতো পাই দিয়ে ওরা কি বোঝাতে চাচ্ছে?” “এখনও জানি না।” রুশো মুখে কৃত্রিম গাম্ভির্য এনে বলল, “তাহলে আমি ফাই দিয়ে কি বোঝাতে চাচ্ছি, সেটা জানতে চাচ্ছ কেন?” আমি ওর সুক্ষ কৌতুকে হেসে ফেলি।


৪. আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টাই একে একে ব্যার্থ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আমরা গ্রহটির বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে লাগলাম। আমাদের এসট্রোনোমার জানালো ‘গ্রহটি পৃথিবীর তুলনায় বেশ ছোট, ভর কম হওয়ায় অভিকর্ষ ত্বরন নেই বললেই চলে। কিন্তু ঘূর্নন অনেক বেশি হওয়ায় এর চারিদিকে একটা ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয়েছে। এই ফিল্ডটাই গ্রহের চারিদিকে একটা হালকা বায়ুমন্ডল ধরে রেখেছে। বায়ু মন্ডলে এমোনিয়া আর মিথেনের পরিমান অনেক বেশি। গ্রহের উত্তর মেরু অত্যাধিক ঠান্ডা, সেখানে মিথেন তরল অবস্থায় আছে। মানে মিথেনের সাগর আছে বলা যায়। অপর মেরুর তাপমাত্রা কিছুটা বেশি, এদিকে ছোট ছোট পাহাড় আর শক্ত মাটি আছে। এমনটি হয়েছে দক্ষিণমেরু অস্বাভাবিক ভাবে গ্রহটির নিজ সূর্যের দিকে হেলে থাকার কারনে।’ জীব বিজ্ঞানি জানালো, ‘এমন পরিবেশে স্বাভাবিকভাবে প্রাণের বিকাশ হওয়া সম্ভব নয়। আর হলেও আমাদের পরিচিত কোন প্রাণীর সাথে এই গ্রহের প্রাণীর অঙ্গসংস্থানগত মিল থাকা সম্ভব নয়।’ গ্রহটিকে বার বার স্ক্যান করেও পরিচিত কোন প্রাণের চিহ্ন পাওয়া গেল না। রুশো অনেক হিসাব নিকাশ করে জানাল, পাই সিগন্যালটা আসছে দক্ষিণ মেরুর একটা পাহাড়ের গুহা থেকে। মানে এদের সাথে দেখা করতে হলে আমাদের সেই গুহায় যেতে হবে।

এমন একটা অদ্ভুত গ্রহে স্কাউট টিম পাঠাতে ক্যাপ্টেন কিছুতেই রাজি ছিল না। কিন্তু জীব বিজ্ঞানী নারা প্রথমেই ক্যাপ্টেনের সিদ্ধান্তে ভেটো দিল, আমিও কিছুক্ষন পরে নারাকে সমর্থন করতে লাগলাম। কারণ পাই সিগন্যালটা প্রমান করে এই গ্রহের প্রাণী গুলো যথেষ্ট বুদ্ধি মান। আর এরূপ বৈরি পরিবেশে তাদের বিকাশটা কিভাবে হয়েছে সেটি জানার আগ্রহও হচ্ছিল বেশ। মুলত এই একটি কারনেই নারা সেই গ্রহে যেতে চাইল। শেষ পর্যন্ত নারা ও আমাকে নিয়ে দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম গঠন করা হল। আর সর্বক্ষনিক পর্যবেক্ষনের জন্য নাইনাকে সংগে দেয়া হল। আমরা যখন স্কাউট সিপের ভেতরে উঠে বসলাম, রুশো বলল “দেখ সব কাজ কিন্তু নাইনা-ই করতে পারত। শুধু শুধু তোমরা এতবড় রিক্স নিতে যাচ্ছ। আমার কাছে ব্যাপারটা পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়।” আমি মুচকি হেসে বললাম, “নারার কথা জানি না। কিন্তু আমি আবার ভাল ছিলাম কখন, সেই প্রথম থেকেইতো পাগল।” নারা কিছু বলল না, মুচকি হেসে স্কাউট সিপের দরজাটা টেনে দিল।


৫. গ্রহে স্কাউটসিপ ল্যান্ড করাতে বেশ বেগ পেতে হল। তারপরও ঠিক মত ল্যান্ড করতে পারলাম। পাহাড়ের গায়ে মোটামুটি একটা সমতল যায়গায় স্কাউটসিপটা ল্যান্ড করেছে। ল্যান্ড করার জায়গাটা থেকে বেশ কিছু উপরে সেই গুহামুখ। নাইনাকে বেশ হিংসে হচ্ছিল, কোনরকম স্পেস সুট না থাকায় কি সুন্দর তরতর করে সে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে যাচ্ছিল আর নারা ও আমার ঘাম ছুটে যাচ্ছিল। নাইনা অবস্য দেখিয়ে দিচ্ছিল আলগা পাথরগুলো। আমরা সেই পাথরগুলো এড়িয়ে চলছিলাম। হঠাৎ আমার পা একটা আলগা পাথরে পড়ে হড়কে গেল। আমি পাহাড় থেকে পড়ে গেলাম, মনে হতে থাকে অসীম কোথাও পড়ে যাচ্ছি। আমার কাছে চারদিক ধোয়াশা মনে হতে থাকে, হঠাৎ মনে হয় আমি বুঝি শূণ্যে ভেষে আছি। আমি চিৎকার করে উঠি, কিন্তু আমার কন্ঠশ্বর যেন আমার কাছেই অপরিচিত মনে হতে থাকে। আমি নিজের মাঝে অন্যের অস্তিত্ব টের পাই। হঠাৎ তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করি, মনে হয় কেউ যেন আমাকে খন্ড বিখন্ড করে দিচ্ছে। এক সময় আমাকে কাল আধার ঘিরে ধরে, নিকষ কালো আধার। মনে হয় অনন্ত সময় আমি সেই কালো আধারে আটকে ছিলাম। তারপর খুব ধিরে ধিরে ভোরের আলো ফোটার মত সব কিছু আবার আলোকিত হতে থাকে।একসময় দেখি একটা বড় পাথরের উপর নীল শাড়ি পরে নীলা পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আমি চোখটা বন্ধ করে ফেললাম, বেশ কিছুক্ষন পর চোখ খুলে দেখলাম নীলা আগের মতই হাসি মুখে বসে আছে। ও বলল, “কেমন আছ?” আমি ঠিক কি বলল বুঝতে পারছি না। ও আবার বলল, “শুদ্ধ তুমি এখানে কেন এসেছ?” আমি চোখ বন্ধ করে বললাম, “আমি জানি এটা আমার দৃষ্টি বিভ্রম।” চোখ বন্ধ করেই মাথা নাড়তে লাগলাম। নিলা বলল, “শুদ্ধ তুমি ফিরে যাও, এখানে কিছুই পাবে না। আমরা এক মাত্রিক।” আমি চমকে চোখ খুললাম, “মানে!” নিলাকে আর দেখতে পেলাম না, কিন্তু কে যেন মাথার মধ্যে বলে উঠল, “তোমার প্রতিটা কোষ আমি দেখে ফেলেছি শুদ্ধ, প্রতিটা কোষ, ডি.এন.এর এক একটা বেজ পেয়ার। সব. .. ... খুলে খুলে দেখেছি। এখন আমি তোমাকে জানি, তোমার মাধ্যমে পৃথিবীকে জানি।”

হঠাৎ কাধে কে যেন হাত রাখল “ড: শুদ্ধ!. .. ...” আমি যেন আবার বাস্তবে ফিরে এলাম। দেখলাম আমি আগের যায়গায় পড়ে আছি। নাইনা আমাকে দাড় করিয়ে দিল। তারপর তার সংবেদী চোখ দিয়ে স্পেসসুট চেক করতে লাগল, বলল, “না কোথাও ফুটো হয়নি। আপনি কি ঠিক আছেন?” আমার সব কিছু কেমন যেন ঘোলাটে মনে হতে থাকে, আমি নাইনার কথার উত্তর নাদিয়ে চুপ করে থাকি। নাইনা বলে “বেশ ভয় পেয়ে গেছিলাম, কিন্তু এই শুকনো মাটিতে পিছলে পড়ে গেলেন কি করে?” বললাম, “আমি নিজেও ঠিক বুঝতেছিনা, আচ্ছা আমি কি গড়িয়ে পড়েছিলাম?” নাইনা না সূচক মাথা নাড়ে কিন্তু নারা কেমন যেন অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।

গুহার ভেতরে গিয়ে কিছুই পাওয়া গেল না। একেবারে সাদাসিদে গুহা। আমরা গুহামুখে প্রবেশ করতেই পাই সিগনাল আসা বন্ধ হয়ে গেল। গুহার প্রতি ইঞ্চি তন্ন তন্ন করে খুজেও কিছু পাওয়া গেল না। আমার মন বলছিল, কিছু পাওয়াও যাবে না। মহাকাশ যানে ফিরে এসে আমার দেহে লাগানো ক্যামেরার ফুটেজগুলো দেখতে লাগলাম। আমি পড়ে যাবার পর থেকে প্রতিটি মুহুর্ত বারবার দেখেও সেখানে কিছু পেলাম না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ভিডিও ফুটেজ অনুয়ায়ি আমি গড়িয়ে পড়ি নি, জাস্ট পা পিছলে ঐ যাইগাতেই পড়ে গেছিলাম, এবং প্রায় সাথে সাথেই নাইনা আমাকে ধরে ফেলে! পুরো ঘটনাটা ঘটে মাত্র কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে, কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছিল কত যুগ যেন পার হয়ে গেছে।


৬. আমরা প্রায় একবছরের ভ্রমন শেষে পৃথিবীতে ফিরে এলাম। এই এক বছরে আমরা এম-১৩ নক্ষত্রপুঞ্জের ১৫০ টি নক্ষত্র ও তাদের গ্রহগুলো খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি। এই অভিযানে এমন কোন নক্ষত্রে পাওয়া যায়নি যেখানে কোন প্রাণের বিকাশ হয়েছে, শুধু পাই সিগন্যাল নামে একটা রহস্যময় অধ্যায় থেকে গেল।

মহাকাশ যানের সিড়িতে পা দিয়েই আমি নিলাকে দেখতে পেলাম, দুরে দাড়িয়ে আছে। ওর দুই পাশে লিওন-লিয়া, নিলা শক্ত করে ধরে রেখেছে ওদের হাত। আমার ভিজুয়াল ক্যামেরার জুম বাড়াতে থাকি, নিলার মুখে একটুকরো হাসি লেগে আছে। আজও একটা নিল সাড়ি পরে আছে ও। নিল সাড়িতে ওকে কি যে সুন্দর দেখায়! বর্ণনাতিত। আমি বড় বড় পদক্ষেপে ওর দিকে এগিয়ে যায়। হঠাৎ নিলার হাসিটা কোথায় যেন হারিয়ে যায়, ও স্থির চোখে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি হাসি মুখে হাতটা বাড়াই, ওর গালটা ছুয়ে দিব বলে। কিন্তু ও ভয় পেয়ে এক পা পিছিয়ে যায়, কম্পিত কন্ঠে প্রশ্ন বলে, “কে আপনি?” আমি চমকে উঠি. .. ...

জানার জন্য লিঙ্ক দিলাম
স্যাগান - ড্রেক
ড্রেক সমিকরন
সেটি
প্রজেক্ট ওজমা
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৫৫
১৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×