somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাইতুল্লাহর পথে (পর্ব-০১)

০৭ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাবা ঘর। কালো রংয়ের এই ঘরটি নিজের চোখে দেখার ইচ্ছে পোষন করেন, প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমের মনে এই ইচ্ছে সবসময়েই তাড়না দেয়। মনে হয় কখন যে কাবা ঘরের সামনে যাবো, গিয়ে ওখানে তাওয়াফ করবো। গত জানুয়ারিতে উমরাহ সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু ট্র্যাভেল এজেন্টের অসততার কারণে তা আর সম্ভব হয় নি। উমরাহর টাকাগুলো এখনো এজেন্টের কাছে আটকে আছে। কি আর করা? ঝগড়াঝাটি করে তো আর এ বিষয়ের সমাধান সম্ভব না। মহান আল্লাহ নিয়তিতে যা লিখে রেখেছেন, তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সবর করে রইলাম।

কাবা ঘরের সামনে যাওয়ার সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় স্বভাবতই আফসোস হয়েছে। এর মাঝে গত এপ্রিলের ১৯ তারিখে ফজরের নামাজের পরে সোহাগ বললো, 'ভাইয়া, তুমি হজে চলে যাও; টাকার ব্যবস্থা আমি করছি।' আমি তো বিস্ময়ে হতবাক। আমি তো বিস্ময়ে হতবাক। সোহাগ কি বলছে? নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না আমি। এত টাকা দিয়ে সে আমাকে হজ করাবে? ভাবতেও পারছি না তখন। আমার এই ভাইটি আসলে নারিকেলের মত, বাইরে থেকে শক্ত; কিন্তু ওর মনটি নরম। তারপরেও সে এত টাকা দিয়ে আমাকে হজ করাবে- এ যেন কল্পনাতীত !!! এখনকার সমাজে ক'জন ভাই এভাবে নিজের মায়ের পেটের ভাইকে সহায়তা করে? মহান আল্লাহ্ আমার এই ভাইটিকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করবেন, ইন শা আল্লাহ্। সোহাগের আশ্বাসে মনে সাহস পেয়ে হজের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম। মহান আল্লাহর অশেষ দয়া, মাত্র ৫দিনের মধ্যেই আমার ভিসা, টিকেট সব কিছু রেডি। ফ্লাইট হবে ২৩শে মে, শুক্রবার। এর মাঝে দেখলাম যে, ট্র্যাভেল এজেন্ট টিকার সার্টিফিকেট দিয়েছেন; সৌদী আরবের যাওয়ার সময়ে Meningitis আর Influenza এই দু'টো টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক। টিকা না দিয়েই কিভাবে টিকার সার্টিফিকেট পেয়ে গেলাম- বিষয়টি খটকা লাগলো। যাচ্ছি পবিত্র কাজে, এখানে ছলচাতুরির আশ্রয় কিভাবে নিই? পরে মৌলভীবাজারে ইপিআই সেন্টার থেকে Meningitis আর Influenza-র টিকা নিয়ে নিলাম। ইপিআই সেন্টারে গিয়ে জানলাম যে, এ দু'টো টিকা যদি খোলাবাজার থেকে নিই তাহলে খরচ পড়বে ১,৯৫০ টাকা। মাত্র ১,৯৫০ টাকার জন্যে আমাকে টিকা না দিয়েই টিকার সার্টিফিকেট দিয়ে প্রতারণা করা হলো, এমন প্রতারণা কতজনের সাথে যে করা হচ্ছে- তা কেবল আল্লাহই জানেন।


Influenza টিকা, যে টিকা না পেয়েই সার্টিফিকেট পেয়েছি। আসলেই সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ।


Meningitis টিকা, সব সম্ভবের দেশে টিকা না পেয়েই সার্টিফিকেট পেয়েছিলাম।

২২শে মে বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ঢাকায় সন্ধ্যায় পৌঁছুলাম। ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত এক ভাই নাজমুস সাকিব এলেন দেখা করতে, উপহার হিসেবে হজের দুয়া কার্ড পেলাম। মহামূল্যবান এই উপহারটি আমার খুব কাজে এসেছে। সুন্নাহ অনুযায়ী দুয়াগুলো পড়তে তো পেরেছি। রাত প্রায় ১টার দিকে গেলাম হজ ক্যাম্পে। সেখানে গিয়ে দেখি তুমুল হট্টগোল, লোকে লোকারণ্য যাকে বলে। এদিকে মশার অত্যাচার তো আছেই। এমন এক বিশৃঙ্খল অবস্থায় হজ ক্যাম্পে ইমিগ্রেশন শেষ হয়ার পরে বিমানবন্দরে গেলাম। বিমানবন্দরে গিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করার পরে সেখানেই ইহরামের কাপড় পরে ফজরের নামাজের পরে জেদ্দার ইমিগ্রেশনের জন্যে গেলাম। গিয়ে পড়লাম আরেক বিড়ম্বনায়। ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যাওয়ার পরে আমার ইমিগ্রেশন হলো না, কাউন্টারের কর্মরত ব্যক্তি আবার ইংরেজি জানেন না। তিনি ইংরেজি ভাষী একজনকে ডেকে আমাকে অন্য আরেক কাউন্টারে পাঠালেন। সেখানেও একই অবস্থা। আমি তো তখন টেনশনে, কূলে এসে তরী ডুবে যাওয়ার মত অবস্থা আমার। এর মাঝে বিমানের এক কর্মকর্তাকে পেয়ে আমার সমস্যাটি কোথায় তা জানতে চাইলে তিনি জানালেন যে, আমার পাসপোর্টের সাথে ভিসার নম্বরের একটু অমিল রয়েছে। তখন আরেক কাউন্টারে পাঠানো হলো আমাকে। আমি তখন আল্লাহকে ডাকছি এই বলে যে, 'মানুষ তো বোম্বাই হাজী হয়, আমাকে ঢাকাইয়া হাজী বানিও না।' যাক, তৃতীয়বারের চেষ্টায় ইমিগ্রেশন সফল হলো। বিমান যথাসময়ে মানে সকাল ৮:১৫ তে ঢাকা থেকে ছাড়লো। সৌদী আরবের স্থানীয় সময় দুপুর ১২:১৫ তে জেদ্দা পৌঁছুলাম। জেদ্দা বিমানবন্দরে নেমে দেখি, সেখানে শুধুমাত্র হজ যাত্রীদের জন্যে আলাদা টার্মিনাল। সেখানে আর ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যাওয়া লাগলো না, ঢাকাতেই তো জেদ্দার ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ। সৌদী আরবের মুয়াল্লিম (যিনি হজের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আছেন) বিমানবন্দরেই আমাদের জন্যে বাস পাঠিয়েছেন, বাসে উঠে সৌদী আরবের মরু প্রান্তর দেখতে দেখতে প্রায় দুই ঘন্টায় মক্কায় আমাদের হোটেলে গিয়ে উঠলাম। যাত্রাপথে সময় কিছুটা বেশি লাগলো, কারণ রাস্তায় বিভিন্ন চেক পোস্টে গাড়ী থামাতে হয়েছে। বিভিন্ন চেক পোস্টে আমাদেরকে যথারীতি আরবী সংস্কৃতি অনুযায়ী আপ্যায়ন তো আছেই, পানি দেয়া হচ্ছে সাথে বিভিন্ন শুকনো খাবার। বিষয়টি দারুণ লেগেছে আমার। মক্কায় Ibrahim Al Khalil Street-এ আমাদের হোটেলের নাম Marsa Al Jariya। বাস হোটেলে পৌঁছুনোর সাথে সাথেই মুয়াল্লিমের লোকজন আমাদের সবার হাতে একটি ব্যান্ড লাগিয়ে দিলেন, যে কয়দিন আমরা মক্কায় থাকবো হাতে সেই ব্যান্ডটি লাগানো থাকবে এবং আমাদের সবার পাসপোর্ট মুয়াল্লিমের লোকজন নিয়ে গেলেন। যে কয়দিন আমরা মক্কায় থাকবো, আমাদের সবার পাসপোর্ট মুয়াল্লিম অফিসে জমা থাকবে। এটিই সৌদী আরবের নিয়ম। হোটেলের রিসেপশনে যাওয়ার সাথে সাথেই আবারো আরবের আপ্যায়ন এবং সৌদী আরবের হজ ও উমরাহ মন্ত্রণালয় থেকে আমাদেরকে Nusuk Card দেয়া হলো এবং Nusuk Card ছাড়া কেউই বাইরে ঘুরতে পারবেন না, এটি আসলে এক ধরনের পরিচয়পত্র। আমার মোবাইলে Nusuk অ্যাপটি ইনস্টল করা ছিলো। Nusuk অ্যাপ আর Nusuk Card- এ আমার যাবতীয় তথ্য রয়েছে দেখলাম। মক্কা এবং মদীনায় এই অ্যাপটি খুবই কাজে এসেছে।


Nusuk Card। হাজীদের পরিচয়পত্র, যা সৌদী আরবের হজ মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহ করা হয়েছে।

আমাদের হোটেল থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দূরেই মসজিদুল হারাম। হোটেলে গিয়ে দুপুরের খাওয়ার পরে জোহর ও আছরের নামাজ পড়ে গেলাম সেই আরাধ্য কাবা ঘর প্রাঙ্গনে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকারের উদ্দেশ্যে লেখাটিতে কয়েকজনের নাম এসেছে। এই প্রসঙ্গে নীচের হাদীসটি পাঠ করে এর মর্ম অনুধাবনের অনুরোধ রইলো-
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তা'আলা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ নয়। [আবু দাউদ-৪৮১১]

[চলবে]


সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:২৮
২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×