somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাইতুল্লাহর পথে (পর্ব-০২)

১১ ই জুলাই, ২০২৫ ভোর ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৩শে মে, শুক্রবারে আছরের সালাতের পরে তালবিয়া পাঠ করতে করতে রওনা হলাম মসজিদুল হারামের উদ্দেশ্যে। সুযোগ পেলে উমরাহ করে নেবো, এমন মানসিক প্রস্তুতি ছিলো আমাদের। মসজিদুল হারামে প্রবেশের পরে সেখানকার নিরাপত্তারক্ষী আমাদেরকে মাতাফ (যেখানে তাওয়াফ করা হয়) যাবার রাস্তা দেখিয়ে দিলেন, আমাদের সবার পরনে ইহরাম পরা ছিলো, সে কারণেই হয়তো তিনি আমাদেরকে উমরাহ-র তাওয়াফ করার সুযোগ দিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইহরামের কাপড় ছাড়া পুরুষদেরকে মূল মাতাফে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। অনেকেই মূল মাতাফে তাওয়াফ করার জন্যে ইহরামের কাপড় পরে থাকেন; তাওয়াফ শেষ করে নিজের আবাসনে ফিরে গিয়ে ইহরামের কাপড় খুলে ফেলেন। আবার পরের ওয়াক্ত সালাতের সময়ে ইহরামের কাপড় পরে তাওয়াফ করতে আসেন, এটি আসলে এক ধরনের প্রতারণা- কারণ ইহরামের কাপড় পরার উদ্দেশ্যই হলো উমরাহ কিংবা হজ করা, তাওয়াফ করা নয়। এ ধরনের হাজীর কারণে অনেকের উমরাহ-র তাওয়াফ করতে কষ্ট হয়, অপেক্ষা করতে হয়, মূল মাতাফে অত্যাধিক ভিড়ের সৃষ্টি হয়। নফল তাওয়াফ করতে হলে মসজিদুল হারামের উপরের তলাও থেকেও করা যায়, এতে বেশি হাঁটতে হয় ও সময়ও লাগে। নিজের একটু আরামের জন্যে অন্যকে বঞ্চিত করে ইহরামের কাপড় পরে তাওয়াক করা- বিষয়টি কতটুকু যৌক্তিক, তা বিবেচনার অনুরোধ রইলো। এতে অন্যের হক নষ্ট হচ্ছে, সে বিষয়ে হাজীরা সম্পূর্ণ বেখবর। এ বিষয়টির প্রতি সবারই খেয়াল রাখা উচিত।

কাবা ঘর যখনই দৃষ্টিগোচর হলো, তখন থেকেই শুধুমাত্র মহান আল্লাহর অফুরন্ত দয়ার কথাই মনে হচ্ছিলো; মহান আল্লাহ্ আমার মত অভাজনকে এত দয়া করে কাবা ঘরের সামনে নিয়ে আসবেন- বিষয়টি আসলেই স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিলো। কাবা ঘর দেখতে দেখতেই মাগরিবের আজান, মূল মাতাফে মাগরিবের সালাতের সুযোগ পেয়ে গেলাম। মসজিদুল হারামের মুয়াজ্জিনের হৃদয়ছোঁয়া আজানের ধ্বনি, ইমামের সুকন্ঠী তেলাওয়াত- মুগ্ধ হয়ে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে কিছুটা সময় তাসবীহ তাহলীল করার সুযোগ দেয়া হয়, তারপরেই শুরু হয় জানাজা। মুয়াজ্জিন যখন জানাজার ঘোষণা দিলেন, বুঝতে পারলাম না। সবার দেখাদেখি দাঁড়িয়ে গেলাম, তখনই হঠাৎ মনে হলো যে, মসজিদুল হারামে প্রতি ওয়াক্ত সালাত শেষে জানাজা পড়া হয়। জানাজার সালাত শেষ হবার পরে হজরে আসওয়াদ বরাবর সবুজ রংয়ের দিক নির্দেশনা খুঁজে বের করলাম। হজরে আসওয়াদে চুমু দিয়ে তাওয়াফ শুরু করার নিয়ম, কিন্তু অত্যাধিক ভিড়ের কারণে তা সম্ভব হয় নি। হজরে আসওয়াদ বরাবর ইশারায় চুমু দিয়ে এবং আল্লাহু আকবার বলে তাওয়াফ শুরু করলাম আমরা। প্রচন্ড ভিড় ছিলো, তারপরেও তাওয়াফ করতে কোন অসুবিধে হয় নি আমাদের। তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিম- এর পেছনে দুই রাকআত সালাত পড়তে হয়। সেখানে সুযোগ পাওয়া প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার। এই দুই রাকআত সালাত মসজিদুল হারামের যে কোন অংশেও পড়া যায়। আমরাও মাতাফের বাইরের দিকে চট করে দুই রাকআত সালাত পড়ে নিলাম। তারপরে জমজমের পানি পান, নিয়ম হলো যে, তাওয়াফ শেষে দাঁড়িয়ে জমজমের পানি পান করতে হয়। অন্য কোন সময়ে এই দাঁড়িয়ে পান করতে হয় না। দাঁড়িয়ে জমজমের পানি পান করার পেছনেও বৈজ্ঞানিক যুক্তি রয়েছে। ভাবতেও অবাক লাগে যে, আজ হতে প্রায় ১৪৫০ বছর আগে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে বিধান দিয়ে গেছেন, এখন আধুনিক বিজ্ঞান তা সমর্থন করে। যদিও আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিধানের সাথে বিজ্ঞানের সামঞ্জস্য খুঁজে বেড়াচ্ছি না, তার কোন প্রয়োজনও নেই।

জমজমের পানি পান শেষে আমরা গেলাম সাঈ করতে, সাফা ও মারওয়া পাহাড় ৭ বার প্রদক্ষিণ করাই হচ্ছে সাঈ। এখন সেই পাহাড়ের কিয়দংশ মসজিদুল হারামের নীচের দিকে গেলে দেখা যায়, প্রচন্ড ভিড়ের কারণে সেখানে যাওয়া কষ্টকর ব্যাপার। আমরা দোতলা থেকে সাঈ করা শুরু করলাম। সাফা পাহাড় থেকে সাঈ শুরু, মনে হচ্ছিলো কয়েক হাজার বছর আগে হযরত হাযারাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে শিশুপুত্র হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্যে একটু খাবারের আশায়, একটু পানির আশায় কি অমানবিক কষ্টই না করেছিলেন! সেই স্মৃতি বিজড়িত সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাঈ করা শুরু করার একটু পরেই ইশার আজান। আমরা তখন মাত্র ৩বার প্রদক্ষিণ করেছি, ইশার সালাত শেষ করে সাঈ-র বাকী ৪ পর্ব শেষ করলাম। এবারে মাথা মুন্ডনের মাধ্যমে উমরাহ-র যাবতীয় কাজ শেষ হবে। আমরা মসজিদুল হারাম থেকে বের হয়ে পাকিস্তানী এক দোকানে গিয়ে মাথা মুন্ডন করে হোটেলে ফিরে গোসল করে ইহরামের কাপড় খুলে তামাত্তু হজের প্রথম পর্ব অর্থাৎ উমরাহ সম্পন্ন করলাম। আমাদের কাফেলায় এক ভাই ক্বিরান হজে এসেছেন। তিন প্রকার হজের মধ্যে ক্বিরান হজ সবচাইতে কষ্টকর, হজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আর ইহরামের কাপড় খোলা যাবে না এবং ইহরাম অবস্থায় যাবতীয় বিধি নিষেধও মেনে চলতে হবে। আগ্রহীরা হজ ও উমরাহ সম্পর্কে জানতে চাইলে গ্রহণযোগ্য আলেমের লেখা বই পড়তে পারেন।
বিশুদ্ধভাবে হজ্জ সম্পাদনের জন্য হজ্জের বিধি-বিধান অবগত হওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের উটের পিঠে বসে কংকর মারার সময় বলেছিলেন, 'তোমরা আমার কাছ থেকে হজ্জের নিয়ম-কানূন শিখে নাও। কেননা আমি জানি না, আমার এ হজ্জের পরে আমি আর হজ্জ করতে পারব কি-না।'
[মুসলিম- ১২৯৭; আবুদাঊদ- ১৯৭০]

[চলবে]


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০২৫ ভোর ৪:২৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাকশাল নিয়ে কুৎসা রটনাকারিদের জন্য॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৯



গ্রীক দার্শনিক প্লোটো, অ্যারিস্টটল, ফার্সি এজমালি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন। বঙ্গবন্ধুর ফিলোসফির একটি শাখা হচ্ছে সমাজতন্ত্র। এরিস্টটল পোয়েটিকস লিখেছেন আর বঙ্গবন্ধু লিখেছেন আমার দেখা নয়া চীন ও কারাগারের রোজনামচা।

ফ্রাঁসোয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামিদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিজদের লেখা নারকীয়তার স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫




একাত্তরের নারী নির্যাতন আজ অনেকের কাছেই বিতর্ক , কারণ তারা বিশ্বাস করতে চায় না যে একটি রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এতটা নৃশংস হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম সত্য হলো: পাকিস্তানের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭১

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬



মানুষ দুনিয়াতে ন্যাংটা আসে।
ধীরে ধীরে বড় হয়। যোগ্যতা দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন করে। তারপর ইনকাম শুরু করে। সমাজের বহু মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা ইনকাম করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হত্যাকাণ্ড বন্ধে কেন ম্যাজিক জানা জরুরি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৪


জাতি হিসাবে আমরা বড়োই অভাগা। ইতিহাসের মঞ্চে রাজা বদল হয়, কিন্তু চিত্রনাট্য বদল হয় না। এক রাজা যায়, আরেক রাজা আসে; কিন্তু পর্দার পেছনের কলকাঠি নাড়া সেই একই হাত।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:০০


২০০১ সাল। নির্বাচনে বিএনপির ভুমিধস বিজয় হয় হাসিনা সেটআপ প্রশাসনে। এতে ভারত প্রচন্ড ভিত হয়ে যায় যে, ভোটে তাদের দোসর আম্লিগ আর কখনো জয়ী হতে পারবেনা। আম্লিগকে জয়ী করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×