সৌদী আরবে যাওয়ার মূখ্য উদ্দেশ্যই ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করা, তাই উমরাহ শেষ করার পরের দিন হতে মসজিদুল হারামে প্রতিদিনই সালাত আদায়ের জন্যে যেতাম। আমাদের হোটেল থেকে মসজিদুল হারামে যেতে ৭/৮ মিনিট সময় লাগে, কিন্তু কোনো কোনো দিন এইটুকু রাস্তা পার হতে আধ ঘন্টাও সময় লেগেছে। মসজিদুল হারামের নিরাপত্তারক্ষীরা একেক সময়ে একেক রাস্তা বন্ধ করে ভিন্ন ভিন্ন রাস্তায় আমাদেরকে যেতে বলতেন। কখনো দেখা গেছে যে, রাস্তা পুরো খালি; কিন্তু সে রাস্তায় কাউকেই যেতে দেয়া হচ্ছে না। এসব বিষয়ে আমাদের দেশের হাজী সাহেবেরা খুবই বিরক্ত হতেন; অনেকেই নিরাপত্তারক্ষীদের উদ্দেশ্যে গালি-গালাজও বর্ষন করেছেন, তা নিজের কানেই শুনেছি। ইয়াজিদের বংশধর, আবু জাহেলের বংশধর- ইত্যাদি নানান উপাধিতে ভূষিত করতেন। ভাগ্যিস, নিরাপত্তারক্ষীরা বাংলা ভাষা বুঝেন না। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা এই কাজটি যে আমাদের ভালোর জন্যেই করতেন- সে বিষয়টি কেউই ভাবতেন না কিংবা বুঝতে চাইতেন না। হজ করতে এসে অসহিষ্ণু মনোভাবের পরিচয় না দিলেই কি নয়?

মসজিদুল হারামের দৃষ্টিনন্দন কার্পেট, যেখানে মুসল্লীরা সালাত আদায় করে থাকেন।
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে,'আমাদের ও কাফেরদের মধ্যে যে পার্থক্য তা হলো সালাত। অতএব যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দিল সে কুফরী করল' [তিরমিযী-২৬২২]। এ কারণে মসজিদুল হারামে অনেকেই বিগত দিনের ছেড়ে দেয়া সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে 'উমরী কাযা' আদায় করে থাকেন। সম্ভবত 'উমরী কাযা' ভারত উপমহাদেশীয় আলেমদের ফতোয়া। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘ সময়ের সালাত পরিত্যাগ করলে পরে সে সালাতের 'কাযা' করার বিষয়ে হাদীসে কোনোরূপ বিধান দেয়া হয় নি। যদি কোনো মুসলিম দীর্ঘদিন সালাতে অবহেলার পরে অনুতপ্ত হয়ে নিয়মিত সালাত শুরু করেন, তখন তার প্রধান দায়িত্ব হবে বিগত দিনগুলোর পরিত্যক্ত সালাতের জন্য বেশি বেশি করে কাঁদাকাটি ও তাওবা করা। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ২০০৫-২০০৬ সালের দিকে হজ ও উমরাহ বিষয়ক যে বই দেয়া হতো, তাতে 'উমরী কাযা', তাওয়াফের প্রতি চক্করে নির্দিষ্ট দু'আ- ইত্যাদি বিদআতী বিষয় ছিলো। বর্তমানে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় 'হজ ও উমরাহ সহায়িকা' নামে যে বইটি দিয়ে থাকেন, তাতে অবশ্য 'উমরী কাযা', তাওয়াফের প্রতি চক্করে নির্দিষ্ট দু'আ- এ ধরনের কোন বিদআতী বিষয় খুঁজে পেলাম না। আমি কোন মাদ্রাসায় পড়েছি বা কোন ইসলামী ডিগ্রী নিয়েছি- অনুগ্রহ করে কেউ আমাকে এসব প্রশ্ন করে বসবেন না। ইসলামের এসব বিধান জানতে হলে কোন মাদ্রাসায় পড়তে হয় না কিংবা কোন বিশেষ ডিগ্রীরও প্রয়োজন নেই।
বিদআত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে, যে বিষয়ে আমার অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।" [মুসলিম- ১৭১৮]। তারমানে হলো যে, সারাজীবনের সব আমলই বৃথা যদি না সেই আমল রাসুলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশিত পন্থায় না হয়। আমাদের আমলে ঘাটতি থাকতে পারে, কিন্তু যতটুকুই আমল করবো- তাতে অবশ্যই রাসুলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুমোদন থাকতে হবে। না হলে মুক্তির পথ কোথায়?
[চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



