somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাইতুল্লাহর পথে (পর্ব-০৪)

২১ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উমরাহ শেষ করার মাধ্যমে আমাদের হজের একটি পর্ব সমাধা হলো। ট্র্যাভেল এজেন্ট আমাদেরকে জিয়ারা-র (মক্কা নগরীর দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ) জন্যে প্রস্তুত থাকতে জানালেন। যথাসময়ে বাসে চেপে রওনা হলাম। প্রথমেই দেখলাম জাবালে সুর, উঁচু একটি পাহাড়। হিজরতের সময় রাসুলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে সাথে নিয়ে এই পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই পাহাড়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক।

জাবালে সুর
পরে একে একে দেখলাম উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, আরাফার মাঠ, মিনার তাঁবু শহর, জামারাহ, জাবালে নূর।

আরাফার মাঠ

মিনার তাঁবু শহর। দূরে পাহাড়ের উপরে সেই স্থান, যেখানে হযরত ইবরাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কুরবানী করতে নিয়ে এসেছিলেন
জাবালে নূর পাহাড়টি অনেক উঁচু, এখানের একটি গুহাই হলো ঐতিহাসিক হেরা গুহা। যে গুহাতে নবুয়ত প্রাপ্তির আগে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধ্যানমগ্ন থাকতেন। ভাবতে অবাক লাগে যে, সেই সময়ে হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা এত উঁচু পাহাড়ে চড়ে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খাবার পৌঁছে দিতেন। কোন সুস্থ সবল মানুষের পক্ষে এই পাহাড়ে চড়া যথেষ্ট কষ্টসাধ্য তো বটেই। এই হেরা গুহাতেই কুরআন নাযিল হয়; সেই রাত্রির কথা কল্পনা করলেও মনে ভয় জাগে। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথারীতি ধ্যানমগ্ন অবস্থায় রয়েছেন, এমন সময় জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে বললেন, 'পড়ো, তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।' রাসুলুল্লাহ্ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই রাতে প্রচন্ড ভয় পেয়ে নিজের ঘরে এসে হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহাকে পুরো ঘটনা জানিয়ে বলেছিলেন যে, 'আমাকে কম্বল দিয়ে মুড়ে রাখো।' ঘটনাটি সবারই জানা, তাই এখানে আর বর্ণনা দিচ্ছি না।

জাবালে নূরের উঁচুতে হেরা গুহা
পবিত্র কুরআন নাযিলের স্থান দেখে আমাদের বাস আবারো মক্কা অভিমুখে ছুটলো। সবগুলো দর্শনীয় স্থান মক্কা শহরের কাছেই, কোনটি মক্কা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে, কোনটি হয়তো ৬ কিলোমিটার দূরে- এমনই অবস্থান। মক্কা শহরে পৌঁছে দেখলাম জান্নাতুল মু'আল্লা, এই কবরস্থানে হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহাসহ বেশ কয়েকজন সাহাবীর কবর রয়েছে। আমাদের দেশের মত আরবের কোন কবরই সুসজ্জিত নয়, এমনকি কোন কবরে নামফলকও নেই; তাই কোনটি কার কবর- তা এখন হয়তো আর জানা সম্ভব নয়। প্রায় আড়াই ঘন্টায় জিয়ারা শেষে আবারো হোটেলে ফিরলাম আমরা।


জান্নাতুল মু'আল্লা। এখানে হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা সহ অনেক সাহাবীর কবর রয়েছে


কিছুটা হলেও ইতিহাস জানতে পারবো এই আশায় ঠিক করলাম যে, হোটেলের কাছাকাছি জায়গাগুলো হেঁটে হেঁটে ঘুরবো। আগের পর্বে বলেছি যে, আমাদের হোটেল ছিলো Ibrahim Al Khalil Street-এ। এখান থেকে হেঁটে বেশি দূরে যাইনি। মসজিদুল হারাম সংলগ্ন এলাকাতেই ঘুরেছি। বেশির ভাগ দোকানে দেখলাম সেলসম্যান হিসাবে বাংলাদেশীরা কাজ করছেন। বাংলাদেশের মোহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম, একটি কসমেটিকসের দোকানে কাজ করে। ছেলেটির বয়েস বেশি না, ২৩/২৪ বছর হবে হয়তো। এই বয়েসে পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে ছেলেটি প্রবাস জীবন বেছে নিয়েছে- তার দায়িত্ববোধ থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। কষ্টের কাজ করেন রাস্তার ঝাড়ুদারেরা, প্রচন্ড রোদের মাঝেও হাতে ঝাড়ু নিয়ে রাস্তা পরিস্কারের দায়িত্বে রয়েছেন তারা। এমনই কয়েকজনের সাথে আলাপ হলো, জানলাম যে তাদের বেতন কম হলেও হাজী সাহেবেরা তাদেরকে বখশিশ দিয়ে পুষিয়ে দেন। অনেকেরই মাসিক রোজগার ২,০০০ রিয়াল ছাড়িয়ে যায়। ইয়েমেনী এক চায়ের দোকান থেকে প্রতিদিনই চা খেয়েছি, ৩ রিয়াল দাম। মোহাম্মদ আইজুদ্দিনের কথা হয়তো ভুলবো না, কি চমৎকার ব্যবহার ওদের! সৌদী আরবে একটি বিষয় খেয়াল করলাম- প্রতিটি রাস্তায় অসংখ্য বিড়াল আর কবুতর। কোথাও কুকুর নেই। পরে মরুভূমিতে কুকুর দেখেছি।

আমার বন্ধু জুবায়ের প্রায় ৩০ বছর ধরে সৌদী আরবের বাসিন্দা। তাকে ফোন করায় চলে এলো দেখা করতে, অনুমতি না থাকায় আমার হোটেলের কাছাকাছি আসতে পারেনি। নির্ধারিত এক জায়গায় সে তার গাড়ী নিয়ে উপস্থিত, ওদিকে আমিও হেঁটে হেঁটে সেখানে গিয়ে উপস্থিত। দুই বন্ধু মিলে রাতের মক্কা শহর ঘুরলাম, এক টার্কিশ রেস্টুরেন্টে গিয়ে টার্কিশ খাবারের স্বাদ নিলাম। এরপরে গেলাম জুবায়েরের বাসায়। সে মক্কার কাছাকাছি এক গ্রামে থাকে। রাতের বেলায় সেই গ্রামটি ততটা ভালো করে দেখা হয়নি, পরে আবারো যাবো ঠিক করলাম। এক ফাঁকে আমার এক আত্মীয় শাহ্ রইছ আলী -র দোকানে গিয়ে ওকে দেখে আসলাম। ভাতিজা তো আমাকে দেখে মহাখুশি! নিরাপত্তা জনিত কারণে অনুমতি না থাকায় মসজিদুল হারাম এলাকায় যেতে না পারায় তার আফসোস হচ্ছে, বুঝতে পেরেছি।
মক্কা যাবার ২/৩ দিন পরে আমার জ্বর হয়ায় মসজিদুল হারামে যেতে পারিনি। তাই জোহরের সালাতের সময়ে ফার্মেসীতে গিয়েছিলাম ঔষধ আনতে। যেই না মসজিদুল হারামে আজান হলো, কোন কোন দোকান খোলা রেখেই দোকানদার সালাতে চলে গেছেন। আবার কোন দোকান বন্ধ করে প্রচন্ড রোদের মাঝেও জায়নামাজ বিছিয়ে দোকানদারেরা সালাতে শামিল হচ্ছেন- দৃশ্যটি দেখে ভালো লাগলো। আমাদের দেশেও যদি এমনটি হতো?

[চলবে]






সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:১৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাকশাল নিয়ে কুৎসা রটনাকারিদের জন্য॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৯



গ্রীক দার্শনিক প্লোটো, অ্যারিস্টটল, ফার্সি এজমালি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন। বঙ্গবন্ধুর ফিলোসফির একটি শাখা হচ্ছে সমাজতন্ত্র। এরিস্টটল পোয়েটিকস লিখেছেন আর বঙ্গবন্ধু লিখেছেন আমার দেখা নয়া চীন ও কারাগারের রোজনামচা।

ফ্রাঁসোয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামিদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিজদের লেখা নারকীয়তার স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫




একাত্তরের নারী নির্যাতন আজ অনেকের কাছেই বিতর্ক , কারণ তারা বিশ্বাস করতে চায় না যে একটি রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এতটা নৃশংস হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম সত্য হলো: পাকিস্তানের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭১

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬



মানুষ দুনিয়াতে ন্যাংটা আসে।
ধীরে ধীরে বড় হয়। যোগ্যতা দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন করে। তারপর ইনকাম শুরু করে। সমাজের বহু মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা ইনকাম করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হত্যাকাণ্ড বন্ধে কেন ম্যাজিক জানা জরুরি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৪


জাতি হিসাবে আমরা বড়োই অভাগা। ইতিহাসের মঞ্চে রাজা বদল হয়, কিন্তু চিত্রনাট্য বদল হয় না। এক রাজা যায়, আরেক রাজা আসে; কিন্তু পর্দার পেছনের কলকাঠি নাড়া সেই একই হাত।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:০০


২০০১ সাল। নির্বাচনে বিএনপির ভুমিধস বিজয় হয় হাসিনা সেটআপ প্রশাসনে। এতে ভারত প্রচন্ড ভিত হয়ে যায় যে, ভোটে তাদের দোসর আম্লিগ আর কখনো জয়ী হতে পারবেনা। আম্লিগকে জয়ী করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×