somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাণীর ছবি আঁকা বা রাখা হারাম হলে উদ্ভিদের ছবি আঁকা বা রাখা হারাম নয় কেন? ইসলাম কি বলে?

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছবি আঁকা বা ছবি ঘরে রাখার ব্যাপারে ইসলামে নীচের হাদিসের মাধ্যমে একটা নির্দেশনা পাওয়া যায়।
It was narrated from Ibn ‘Abbaas that the Prophet (blessings and peace of Allaah be upon him) said: “Whoever makes an image in this world will be commanded to breathe the soul into it on the Day of Resurrection, and he will not be able to do that.” Narrated by al-Bukhaari (5618) and Muslim (2110).
বাংলায় অর্থ ;
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন ছবি তৈরি করে, আল্লাহ্ তাআ’লা তাকে শাস্তি দিবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার মাঝে প্রাণ দিতে না পারে। আর তাতে সে কক্ষনো প্রাণ দিতে পারবে না।” সহীহ বুখারী, চতুর্থ খণ্ড, হাদিস নং ২০৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশান অনুবাদ।

বাংলা আর ইংরেজি অর্থ দুইটা একসাথে মিলালে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে হাদিসে প্রান দিতে পারা বলতে দেহের মধ্যে রুহ (soul) প্রবেশ করানোকে বুঝাচ্ছে।

ইসলামে জীবন বা প্রান বলতে বুঝায় যখন আল্লাহতায়ালা মানুষ বা কোন প্রাণীর মধ্যে রুহ (soul) প্রবেশ করান তখন ঐ মানুষ বা প্রাণী জীবন লাভ করে। আবার যখন রুহ (soul) দেহ থেকে বের হয়ে যায় তখন ঐ মানুষ বা প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। কোরআন বা হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণীর রুহ (soul) আছে। রুহ বা আত্মা বিশিষ্ট সত্ত্বা ( মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী) তাদেরকে দেয়া সামর্থ্য অনুযায়ী স্বাধীন চিন্তা ও কর্ম করতে পারে। ফলে ইসলামে বলা হয়েছে যে এদেরকে বিচার দিবসে একত্র করা হবে।

সুরা আল – আনয়ামে আল্লাহতায়ালা বলেন-
“There is not a moving (living) creature on earth, nor a bird that flies with its two wings, but are communities like you. We have neglected nothing in the Book, then unto their Lord they (all) shall be gathered” [al-An‘aam 6:38] অর্থ ( আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যত প্রকার পাখী দু’ ডানাযোগে উড়ে বেড়ায় তারা সবাই তোমাদের মতই একেকটি শ্রেণী। আমি কোন কিছু লিখতে ছাড়িনি। অতঃপর সবাই স্বীয় প্রতিপালকের কাছে সমবেত হবে।)

সুরা তাকউইরে আল্লাহতায়ালা বলেন-
“And when the wild beasts shall be gathered together”
[al-Takweer 81:5] অর্থ - যখন বন্য পশুরা একত্রিত হয়ে যাবে।
এই আয়াতে বিচার দিবসের কথা বলা হয়েছে।

কুতায়বা (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক হকওয়ালার হক অবশ্যই আদায় করা হবে। এমনকি শিংহীন ছাগলের পক্ষে শিংওয়ালা ছাগলের পক্ষ থেকেও বদলা নেওয়া হবে। সহীহ, সহিহাহ ১৫৮৮, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৪২০ [আল মাদানী প্রকাশনী]

ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক মহিলাকে একটি বিড়ালের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সে তাকে বেঁধে রেখেছিল এবং অবশেষে সে মারা গিয়েছিল, পরিণতিতে মহিলা তারই কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করল। সে যখন তাকে বেঁধে রেখেছিল, তখন তাকে আহার ও পানি দিত না এবং তাকে ছেড়েও দিত না যে, সে কীট-পতঙ্গ ধরে খাবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

উপরের আয়াত ও হাদিসগুলির কোনটিতেই উদ্ভিদের প্রসঙ্গ আসেনি। কাজেই এটা সহজেই বোঝা যায় যে হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাদেরকেই বিচার করবেন যাদের দেহের মধ্যে রুহ (soul) প্রবেশ করানোর মাধ্যমে জীবন দেয়া হয়েছিল। এদেরকে আল্লাহতায়ালা তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কম বা বেশী মাত্রায় কর্ম সম্পাদনের স্বাধীনতা দিয়েছেন। উদ্ভিদের দেহে রুহ (soul) প্রবেশ করে বা বের হয়ে যায় এমন কোন বর্ণনা কোরআন বা হাদিসে পাওয়া যায় না। আবার বিজ্ঞান প্রাণের যে সংজ্ঞা দেয় তা ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিজ্ঞান যে প্রাণের কথা বলে তার মধ্যে কোন রুহ (soul) এর অস্তিত্ব নেই। ফলে ইসলামের প্রাণের সঞ্চার আর বিজ্ঞানের প্রাণের সঞ্চার এক জিনিস না।

উইকিপিডিয়া অনুযায়ী বিজ্ঞান বলে যে,
‘জীবন বা প্রাণ এমন একটি অবস্থা, যা একটি জীবকে জড় পদার্থ (প্রাণহীন) ও মৃত অবস্থা থেকে পৃথক করে। খাদ্য গ্রহণ, বিপাক, বংশবৃদ্ধি, পরিচলন ইত্যাদি কর্মকান্ড জীবনের উপস্থিতি নির্দেশ করে। জীবন বা প্রাণ বিষয়ক শিক্ষা জীববিজ্ঞানে আলোচিত হয়। প্রোটোপ্লাজমের ক্রিয়াকলাপকে জীবন বলা হয়।
জীবন হল সেই সকল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা জৈবিক প্রক্রিয়াসম্পন্ন ভৌত সত্তাগুলোকে আলাদা করে চিহ্নিত করে, যেমন, কোষীয় সংকেত এবং স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকার প্রক্রিয়া, যেসব বস্তুগুলোর এই গুণাবলিগুলো নেই, হয় এইসব গুণগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, নয় তো বা তাদের এই গুণগুলো কোনদিন ছিলই না, সাধারণত এগুলোকে জড় বস্তু হিসাবে শ্রেণীবিভক্ত করা হয়। জীবন বিভিন্ন রূপে বিদ্যমান, যেমন উদ্ভিদ, প্রাণী, ছত্রাক, প্রোটিস্ট, আর্কিয়া এবং ব্যাকটেরিয়া।'

বিজ্ঞান মনে করে রুহ (soul) বলে কিছু নেই। মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদের দেহের কোষগুলি যখন এমনভাবে অকেজো হয়ে যায় যে তাদের আর উপরের সংজ্ঞার আলোকে জীবিত বলা যায় না তখন ঐ মানুষ, প্রাণী বা উদ্ভিদের মৃত্যু ঘটে। ফলে বিজ্ঞানের প্রাণের সংজ্ঞা আর ইসলামের প্রাণের সংজ্ঞা এক না।

বিজ্ঞান যখন বলে যে উদ্ভিদেরও প্রাণীর মত সজীব কোষ আছে তার মানে এই না যে বিজ্ঞান উদ্ভিদ বা প্রাণীর আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করে। পক্ষান্তরে ইসলাম প্রান বলতে আত্মার অস্তিত্বকে নির্দেশ করে। আত্মা না থাকলে ইসলামে তাকে প্রাণী বলে না। তাই যাদের আত্মা (soul) আছে তাদের ছবি আঁকা যাবে না। কারণ উপরের হাদিসের সারমর্ম হোল যে যারা আত্মাবিশিষ্ট কোনও কিছুর ছবি আকবে তাদেরকে এগুলির মধ্যে প্রান (রুহ বা আত্মা) সঞ্চারের নির্দেশ দেয়া হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে। বিজ্ঞান আত্মায় বিশ্বাস করে না। তাই বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে উদ্ভিদ বা প্রাণী কারোরই আত্মা (soul) নেই। উদ্ভিদের আত্মা আছে এমন কোনও তথ্য হাদিস বা কোরআনে পাওয়া যায় না। বিজ্ঞানও এই ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করতে পারবে না। কারণ বিজ্ঞান আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না।

এইসব কারণে প্রথমে উল্লেখিত হাদিসের নির্দেশনা উদ্ভিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়
ছবি সুত্র - nationalgeographic.org
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৪৪
৩২টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×