(এই পোস্টটা একজন অপদার্থের পদার্থবিজ্ঞানী হওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা মাত্র। তাই সবাই ভুল-ত্রুটি মার্জনা করবেন। যে সব ব্লগার এই বিষয়ে জ্ঞান রাখেন তারা তাদের মূল্যবান মতামত দিয়ে পোস্টটাকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারেন।)
নাসার ( NASA) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আছে যেটার নাম Starchild Star Child (NASA) । এই ওয়েব সাইটে কিশোর- কিশোরীদের বিজ্ঞান সংক্রান্ত জ্ঞান আহরণের জন্য বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়। এই সাইটে মহাকর্ষ সম্পর্কে একটা প্রশ্ন ও তার জবাব ছিল নিম্নরুপ;
Question:
What is gravity?
Answer:
We don't really know. We can define what it is as a field of influence, because we know how it operates in the universe. And some scientists think that it is made up of particles called gravitons which travel at the speed of light. However, if we are to be honest, we do not know what gravity "is" in any fundamental way - we only know how it behaves.
(প্রশ্ন – মহাকর্ষ কি?
উত্তর - প্রকৃতপক্ষে আমরা জানি না। আমরা এটাকে প্রভাব সংক্রান্ত একটা ক্ষেত্র হিসাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি, যেহেতু আমরা জানি কিভাবে এটা মহাবিশ্বে কাজ করে যাচ্ছে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন এটা গ্র্যাভিটন নামক একটি কণা দ্বারা তৈরি যা আলোর গতিতে চলতে পারে। যাই হোক, সত্যি কথা বলতে, মৌলিকভাবে আমরা জানি না মহাকর্ষ কি – আমরা শুধু জানি কিভাবে এটা আচরণ করে।)
ওয়াশিংটন পোস্টের এই লেখাতেও অনেকটা একইভাবে বলা হয়েছে Everything you thought you knew about gravity is wrong
এই লেখার শিরোনাম হোল Everything you thought you knew about gravity is wrong ( এটা আপনার ভুল ধারণা যে আপনি ভেবেছেন মহাকর্ষ সম্পর্কে আপনি সব কিছু জানেন)
লেখার শুরুতেই লেখক, যিনি একজন গবেষক, লিখেছেন যে ‘We don’t know what gravity is.” ( আমরা জানি না মহাকর্ষ কি)
আসলে উপরের দুইটি লেখায় বিজ্ঞানীরা বলতে চাচ্ছেন যে মহাকর্ষকে এখনও আমরা ভালোভাবে বুঝি না এবং মহাকর্ষকে বল বিদ্যার সকল শাখায় একইভাবে প্রয়োগ এবং কি কারণে মহাকর্ষ ঘটে এই ব্যাপারে আমাদের আরও জানার বাকি আছে।
উইকিপিডিয়াতে পদার্থ বিজ্ঞানে অ-সমাধানকৃত সমস্যার একটা বড় তালিকা আছে। List of unsolved problems in physics এই তালিকাতে কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটিরও (কোয়ান্টাম মহাকর্ষ) উল্লেখ আছে। ‘কোয়ান্টাম মহাকর্ষ’ বলবিদ্যার একটি অসম্পূর্ণ উদ্যোগ যার সমাধানের চেষ্টা এখনও চলছে। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বহু বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছেন কোয়ান্টাম বলবিদ্যার আলোকে মহাকর্ষকে সংজ্ঞায়িত করতে ও তা প্রয়োগ করতে। আইনস্টাইন যেভাবে মহাকর্ষকে বর্ণনা করেছেন তার আপেক্ষিকতার থিউরিগুলিতে সেই মহাকর্ষকে বিজ্ঞানীরা কিভাবে কোয়ান্টাম জগতে প্রয়োগ করবেন তা নিয়ে তারা এক ধরণের ধাঁধাঁর মধ্যে আছেন। আইনস্টাইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী মহাকর্ষকে কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় প্রয়োগ করা যাবে কি না এই ব্যাপারেও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত না। তাই তারা ‘কোয়ান্টাম মহাকর্ষ’ নামক একটা নতুন টার্ম তৈরি করার চেষ্টা করছেন। এটার চরিত্র আইনস্টাইনের মহাকর্ষের মত না ও হতে পারে। এই কোয়ান্টাম মহাকর্ষে বিজ্ঞানীরা একটা কোয়ান্টাম কণার কথা কল্পনা করছেন যার নাম তারা দিয়েছেন গ্র্যাভিটন। যদিও এই কণার বাস্তব অস্তিত্ব এখনও পাওয়া যায় নাই।Graviton
আপেল গাছ থেকে নীচে পড়ে কিংবা গ্রহগুলি সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিন করে, দৈনন্দিন জীবনের এই জাতীয় বহু ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে মহাকর্ষ বলে একটা কিছু আছে। কিন্তু মহাকর্ষের কোন সার্বজনীন সংজ্ঞা বিজ্ঞানীরা এখনও আবিষ্কার করতে পারেন নি। সার্বজনীন বলতে বুঝাচ্ছে যে সংজ্ঞা একইভাবে বস্তুর পারমানবিক কণার ক্ষেত্রে যেমন কাজ করবে আবার আমাদের জীবনের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডেও কাজ করবে ( নিউটনের ল যে পরিবেশকে বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠিত) এমন কি বৃহৎ নক্ষত্র, গালাক্সি, ব্ল্যাক হোলের ক্ষেত্রেও কাজ করবে (আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্রগুলির সাথে মিল রেখে)।
বিজ্ঞানী নিউটনের মতে মহাকর্ষ একটা বল যা যে কোন দুইটা বস্তুর মধ্যে কাজ করে। ফলে একে অন্যকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এই বল বস্তু দুইটার ভরের গুনফলের সমানুপাতিক এবং উভয়ের মধ্যের দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। সুত্রে একটা ধ্রুব সংখ্যা (G) ব্যবহার করা হয় যাকে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলে। নিউটনের সূত্র স্পেসটাইমকে (স্পেস ও টাইমের সমন্বয়ে একটি টার্ম ) গণনায় আনে না ফলে এই সূত্র শুধু অপেক্ষাকৃত কম গতির (আলোর গতির চেয়ে অনেক অনেক কম গতি যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে দেখে থাকি) ও অপেক্ষাকৃত কম ভরের ( বৃহৎ নক্ষত্র, গালাক্সি ইত্যাদি ব্যতীত অন্যান্য অপেক্ষাকৃত ছোট বস্তু) বস্তুর ক্ষেত্রে মহাকর্ষের একটা হিসাব দেয় যা প্রকৃত হিসাবের মোটামুটি কাছাকাছি।
কিন্তু আইনস্টাইন তার বিশেষ আপেক্ষিকতার থিউরিতে মহাকর্ষকে অন্যভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। আইনস্টাইন তার বিশেষ আপেক্ষিকতা থিউরিতে বলেছেন যে মহাকর্ষ কোন বল ( force) না বরং এটি হোল বস্তুর ভরের কারণে সৃষ্ট একটা ঘটনা যা স্পেসটাইমকে (Spacetime) প্রভাবিত করে। স্পেস ও টাইমের সমন্বয়ে ‘স্পেসটাইম’ নামক এই টার্মটা প্রথম প্রচলন করেন আইনস্টাইনের একজন শিক্ষক যার নাম ছিল মিনকোভস্কি। আইনস্টাইন এই টার্মটা তার থিউরিতে ব্যবহার করেন। আইনস্টাইন বলেন যে মহাকর্ষ হোল স্পেসটাইমের জ্যামিতিক ক্ষেত্র সংক্রান্ত ঘটনার বহিঃপ্রকাশ। আইনস্টাইন এই ঘটনাকে স্পেসটাইম জ্যামিতিক ক্ষেত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন।
উনি উদাহরন হিসাবে বলছেন যে একটা বিছানার চাদরে একটা ফুটবল রাখলে চাদরটা দেবে যায়। একইভাবে অতিমাত্রার ভর বিশিষ্ট বস্তুর কারণে তার নিকটস্থ স্পেসটাইমও বক্র হয়ে যায়। একটা মার্বেল যদি এই বলটার কাছে যায় তখন সেটা চাদরের দেবে যাওয়া অংশে চলে যায়। এই ঘটনাই মহাকর্ষের কারণ। গ্রহ নক্ষত্রের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। বোঝা যাচ্ছে যে মহাকর্ষের সাথে স্পেস ও টাইমের সম্পর্ক আছে। এই স্পেসটাইম phenomenon ই বস্তুর মহাকর্ষের জন্য দায়ী।
কিন্তু যারা কোয়ান্টাম বলবিদ্যা নিয়ে কাজ করেন তারা আইনস্টাইনের মহাকর্ষের সংজ্ঞাকে তাদের থিউরিগুলিতে কিভাবে প্রয়োগ করবেন তা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছেন বহু বছর ধরে। বিজ্ঞানে চারটা মৌলিক ফোরস আছে। পঞ্চম একটা ফোরসের সম্ভবনার কথা বিজ্ঞানীরা অবশ্য এখন বলছেন, যেটার নাম বোসন এক্স দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই চারটা ফোরস হোল মহাকর্ষ বল, তড়িৎ চুম্বকীয় বল, সবল নিউক্লীয় বল এবং দুর্বল নিউক্লীয় বল। এই চারটা বলের মধ্যে মহাকর্ষ ছাড়া বাকি তিনটা ফোরসের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা প্রত্যেকটার জন্য পৃথক পৃথক ক্ষুদ্রতম কণার সন্ধান পেয়েছেন যে কণাগুলির সঞ্চালনের মাধ্যমে এই ফোরসগুলি কাজ করে। এই কণাগুলি মুলত কণার গ্রুপ ‘বোসন’ এরই বিভিন ধরণ বা প্রকৃতি। যেমন সবল নিউক্লীয় বলের কণার নাম গ্লুঅন (Gluon), তড়িৎ চুম্বকীয় বলের কণার নাম ফোটন এবং দুর্বল নিউক্লীয় বলের কণার নাম ডবলু এবং জেড বোসন।
বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষের ক্ষেত্রেও কোয়ান্টাম জগতের জন্য অনুরুপ কণার খোঁজ করছেন যার দ্বারা মহাকর্ষ সঞ্চালিত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত এই কণার সন্ধান তারা না পাচ্ছেন তাদের কোয়ান্টাম মহাকর্ষ থিউরিও পূর্ণতা পাচ্ছে না। তাই এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষ সম্পর্কে আসলে পরিষ্কার ধারণা অর্জন করতে পারেন নি যদিও মহাকর্ষের অস্তিত্ব ও তার প্রভাব আমরা দেখি ও অনুভব করি। মহাকর্ষের কারণ ও কিভাবে তা পদার্থ বিজ্ঞানের সকল শাখায় সমভাবে কাজ করবে এটা জানার জন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। কোয়ান্টাম জগতে যখন আমরা মহাকর্ষকে সফলভাবে চিহ্নিত ও প্রয়োগ করতে পারবো তখনই বলা যাবে যে মহাকর্ষের সকল রহস্য আমাদের জানা হয়েছে। আশা করি অচিরেই বিজ্ঞানীরা তাদের এই প্রচেষ্টায় সফল হবেন।
সূত্র -
Greatest Mysteries: What Causes Gravity?
What causes gravity?
What is gravitational force and what is gravity?
Fundamental Forces
What Is Gravity?
The 7 Biggest Unanswered Questions in Physics
bn.wikipedia.org/wiki
bn.vikaspedia.in/education/
ছবি - কোয়ান্টা ম্যাগাজিন
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ৯:২৪