somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিশোর মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প

১৯ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১০ বছরের কিশোর ছেলেও মুক্তিযুদ্ধ করেছে। ১৪-১৫ বছর বয়সের কিশোরী মুক্তিযুদ্ধ করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছে বা মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচিয়েছে এই রকম ঘটনাও আছে। অল্প বয়সী (১২ থেকে ১৫ বছরের) মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা খুব বেশী হয়তো হবে না সেই কারণেই বোধ হয় তাদের সম্পর্কে তেমন লেখালেখি হয় না। এতো কম বয়সী কিশোর বা কিশোরীদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়াটা তাদের বয়সের কারণেই আমাদের মনে আলাদা একটা শ্রদ্ধা বা ভালোবাসার জন্ম দিয়েছে। আমাদের সামু ব্লগে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন যেমন ব্লগার ডঃ এম এ আলী, ব্লগার আহমেদ জি এস, ব্লগার কামাল১৮, ব্লগার সোনাগাজী প্রমুখ। ওনারা হয়তো কিশোর ছিলেন না ঐ সময় তারপরও মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য ওনাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় বা ব্লগে কিশোর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে কিছু লেখা এসেছে। সেই সূত্রগুলি থেকে আমি অনেক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে থেকে মাত্র কয়েকজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধার কথা নীচে সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

১। কিশোর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ূন কবির (সামুর ব্লগার জুলভার্ন ভাই)
জুল ভার্ন ভাইয়ের আসল নাম সম্ভবত হুমায়ূন কবির। উনি এই ব্লগের একজন পুরানো, শ্রদ্ধেয় এবং গুণী ব্লগার। যারা অনেক দিন সামুতে আছেন তারা ওনার সম্পর্কে ভালো করেই জানেন। আমিও ওনার মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ সম্পর্কে সামু ব্লগে ওনার পোস্টগুলি থেকেই জেনেছি। সম্প্রতি উনি ওনার সব পোস্ট ড্রাফ্টে নিয়ে গেছেন। যার কারণে আমি স্মরণ শক্তির সাহায্য নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি। তবে স্মরণ শক্তির দুর্বলতার কারণে কিছু ভুল হয়ে যেতে পারে। ১৯৭১ সালে তিনি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে অষ্টম শ্রেণী ছাত্র ছিলেন। একই কলেজে উঁচু ক্লাসে ওনার একাধিক কাজিন ছিলেন। তখন পূর্ব পাকিস্তানে ৪ টা ক্যাডেট কলেজ ছিল - ফৌজদারহাট, ঝিনাইদহ, রাজশাহী এবং মোমেনশাহী (পরবর্তীতে মোমেনশাহীর নাম রাখা হয় মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন ক্যাডেট কলেজগুলির ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের উল্লেখযোগ্য ভুমিকা ছিল। অনেকে শহীদ হয়েছেন।

হুমায়ূন ভাই (ব্লগার জুল ভার্ন) ১৯৭১ সালে কলেজের বড় ভাইদের সাথে (যার মধ্যে ওনার এক বা একাধিক কাজিনও ছিল) মুক্তিযুদ্ধে চলে যান। ওনার বয়স তখন বেশী ছিল না। মাত্র অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। বয়স কম হওয়ার কারণে উনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতেন। যেমন রেকি করা, অস্ত্র এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া, গোপনে পাক সেনা, রাজাকার, আলবদরদের খবর সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া ইত্যাদি। ওনাদের বৃহত্তর পরিবারে ঐ সময়েই বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। এছাড়া কয়েকজন কাজিন ক্যাডেট কলেজে পড়তেন।

জুল ভার্ন ভাইয়ের আপন কোন ভাই নেই। একজন বড় বোন ছিলেন যাকে উনি বুবু বলতেন। তিনিও কম বয়সে মারা যান। জুল ভার্ন ভাইয়ের জন্মের সময়েই ওনার মা প্রসব পরবর্তী খিচুনির (একলামশিয়ায়) কারণে মারা যান। তাই জন্ম থেকেই তিনি মাতৃস্নেহ বঞ্চিত ছিলেন। ওনার বিভিন্ন লেখা এবং মন্তব্যে ওনার মা হারানোর কষ্ট ফুটে উঠেছে। যার কারণে ওনার এই বুবুকে উনি ভীষণ ভালোবাসতেন। ওনার সম্ভবত আরও সৎ ভাই বা বোন আছে। ওনার দেশের বাড়ি বৃহত্তর বরিশালে (সম্ভবত পটুয়াখালী)। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক এডমিনিসট্রেশনের ছাত্র ছিলেন। প্রথম জীবনে বড় প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করতেন। এখন সম্ভবত ইন্ডেটিং ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক রোষানলে পড়েছেন এবং নিপীড়িত হয়েছেন।

জুল ভার্ন সামু ব্লগে প্রচুর পোস্ট দিয়েছেন। ওনার পোস্টগুলি বেশ উন্নত মানের ছিল। জুল ভার্ন ভাই দুই মাস আগে সামু ব্লগে ওনার সব পোস্ট ড্রাফ্টে করে ফেলেছেন। কোন কারণে রাগ করে উনি এই কাজ করেছেন বলে মনে হয়। আমরা আশা করবো উনি রাগ ভুলে আমাদের টানে আবার ব্লগে লেখা শুরু করবেন।

কিশোর বাংলা ডট কমের সুত্রে আরও কয়েকজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী প্রায় সরাসরি পত্রিকা থেকে নীচে দেয়া হোলঃ

কিশোরী মুক্তিযোদ্ধা পুতুল
রাজশাহী অঞ্চলে পুতুল নামের ১৪ বছরের গ্রাম্য কিশোরী, ওদের বাড়িতে মাঝে মাঝে বিভিন্ন অস্ত্র রাখা হতো। মাঝে মাঝে মেয়েটি অস্ত্রগুলোতে লেগে থাকা কাদা পরিষ্কার করে দিত। এক মুক্তিযোদ্ধা মেয়েটিকে শিখিয়েছিল কিভাবে গ্রেনেড চার্জ করতে হয়। একদিন সেই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা। হঠাৎই পাকবাহিনী ও এ দেশীয় দোসর রাজাকার আক্রমণ করে ওই বাড়িতে। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষার্থে মেয়েটি ঘরের দোতলা থেকে পরপর দুটি গ্রেন্ড চার্জ করে বসে!

ততক্ষণে মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত হয়ে সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল। অসম সাহসীকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিলেন কিশোর রমজান, নুর মোহাম্মদ, শশীলাল, বলাইদের মতো অনেক কিশোর।

কিশোর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম লালু


বীরপ্রতীক খেতাব পাওয়া এমনি আরেক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা লালু। উপরের ছবিতে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধা লালুকে কোলে নিয়েছেন দেখা যাচ্ছে। পুরো নাম শহীদুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। টাঙ্গাইলের দামাল কিশোর। অসীম সাহসের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের নানা রকম সাহায্য-সহযোগিতা করেন। লড়াই করেন গোপালপুর, ভুঞাপুর, মধুপুর ও নাগরপুরের বেশ কয়েকটি রণাঙ্গনে। অথচ মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে দলেই নিতে চাননি প্রথমে। ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন আর পাকিস্তানী বাহিনীর গোপন খবর এনে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের। অনেক সময় তাঁর আনা তথ্য দিয়েই সাজানো হতো মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশন পরিকল্পনা। সবচেয়ে কমবয়সী বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছিলেন তিনিই। কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্য লালু ছিলেন একেবারে পুঁচকে এক মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি। টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী স্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র জমা দেয়ার অনুষ্ঠান। রাষ্ট্রপতির কাছে অস্ত্র জমা দিতে এলেন লালুও। কিন্তু ওই ক্ষুদে মুক্তিযোদ্ধাকে দেখে তো রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ভীষণ অবাক। মঞ্চ থেকে নেমে ক্ষুদে লালুকে কোলে নিয়ে মঞ্চে বসালেন রাষ্ট্রপতি। আহা! কত ক্ষুদেই না ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা লালু।

কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আবু সালেক
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উচ্চ বিদ্যালয়। এই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে আবু সালেক। এমন সময় শুরু হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধ। কে ঠেকায় আবু সালেককে! সীমানা পেরিয়ে চলে গেল ভারতের আগরতলায়। সেখানে তখন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য লোক বাছাই চলছিল। কিন্তু ও তো একদম ছোট, বাচ্চা! ওকে কেউ-ই নিতে চাইল না। আর তাই শুনে ও তো একেবারে কান্নায় ভেঙে পড়ল। ওর কান্না দেখে ওকে আর বাদ দিতে পারলেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররা। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম লেখাল ছোট্ট আবু সালেক।

আগরতলা থেকে ওকে নিয়ে যাওয়া হলো মেলাগড় ক্যাম্পে। তারপর বড় যোদ্ধাদের সঙ্গে শুরু করল যুদ্ধ। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ, দেশকে স্বাধীন করার যুদ্ধ। এমনি একদিন ওরা যুদ্ধ করছিল চন্দ্রপুর গ্রামে। আবু সালেক সেই যুদ্ধে ছিল বাংকারে। সে এক ভীষণ যুদ্ধ। প্রচণ্ড গোলাগুলি চলছে। আর পাকবাহিনীও সেদিন ছিল সুবিধাজনক জায়গায়। আবু সালেকের দল তেমন একটা ভাল অবস্থানে নেই। একপর্যায়ে ওদের পক্ষ টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াল। এখন ওদের সামনে একটাই রাস্তা, পিছু হটতে হবে। কিন্তু চাইলেই কি আর পিছু হটা যায়, একজনকে তো ব্যাকআপ দিতে হবে। নইলে যে সবাই মারা পড়বে। এগিয়ে এলো সবার ছোট আবু সালেক। ছোট্ট কাঁধে তুলে নিল বিশাল এক দায়িত্ব। ক্রমাগত গুলি করতে লাগল পাকবাহিনীর ক্যাম্প লক্ষ্য করে। আর সেই অবসরে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেল অন্যরা। ও কিন্তু গুলি করা থামাল না। এক সময় পাকআর্মিরা মনে করল, মুক্তিযোদ্ধারা মনে হয় খুব সংগঠিতভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে। ফলে ওরাও পিছু হটে গেল। বাংকারে থেকে গেল শুধু আবু সালেক। একসময় রাত শেষ হয়ে সকাল হয়ে গেল। মুক্তিযোদ্ধারা ভেবেছিল, গোলাগুলি যখন থেমেছে, আবু সালেক নিশ্চয়ই শহীদ হয়েছে। কিন্তু বাংকারে গিয়ে তো ওরা অবাক! কিশোর আবু সালেক একা সেখানে বসে আছে। দেখে ওরা যে কী খুশি হলো!

কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাহিদ
আবু জাহিদ নাম তার। তবে কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধারা তাকে চিনতেন আবু নামে। পড়ত কুমিল্লা জিলা স্কুলে নবম শ্রেণীতে। খুব ইচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে যাবে। বাড়ি থেকে অনুমতি মিলল না। শেষে বাড়ি থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নাম লেখাল ও। সাঁতরে গোমতী নদী পার হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সোনামুড়া টিলার কাছে মুক্তি শিবিরে এসে হাজির হলো। সময়টা তখন ১৯৭১ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ। কম বয়সের কারণে অনেক মুক্তিযোদ্ধাই ওকে দলে নিতে চাননি। কিন্তু ওর অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মানলেন সেক্টর ইস্টার্ন জোনের কমান্ডার শেখ ফজলুল হক মনি। প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেন আবুকে। প্রশিক্ষণের পর অপারেশন। একাত্তরের ১২ সেপ্টেম্বর। নাজমুল হাসান পাখির নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার চারগাছ বাজারের এক অপারেশনে যায় আবু। ৯ জন মুক্তিযোদ্ধার দল রওনা হলেন নৌকায় করে। কিন্তু মাঝপথেই আলবদর বাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানী বাহিনী গুলি চালায় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে মারা যান দুই মুক্তিযোদ্ধা। দলের সবচেয়ে ছোট মুক্তিযোদ্ধা আবু গুলিবিদ্ধ হয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়। এরপর নদী থেকে উদ্ধার করা হয় আবুকে। ততক্ষণে দেশের মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করে ফেলেছে ও। হয়েছে শহীদ।

কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটো
কিশোর মুক্তিযোদ্ধা টিটোর কথাই ধরা যাক। পুরো নাম গোলাম দস্তগীর টিটো। বিজয় দিবসের মাত্র দু’দিন আগে, একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর এক অপারেশনে শহীদ হয় টিটো। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বে তখন লড়াই করছিল টিটো। লড়াইটা হয়েছিল সাভারের আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার কলমা গ্রামে। অসীম সাহসের সঙ্গে লড়াই করছিল তখন টিটো। শহীদ হওয়ার আগে টিটো বলেছিল, স্বাধীনতা দেখবে। কিন্তু স্বাধীনতা দেখে যেতে পারেনি।

কিশোর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক
পাকিস্তানী গভর্নর মোনায়েম খানের বাড়িতে মাত্র চার মিনিটে বিধ্বংসী অপারেশন চালিয়েছিল এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। ১৪ বছর বয়সের একজন কৃতী কিশোর মুক্তিযোদ্ধার নাম মোজাম্মেল হক ও তাঁর সহযোগী আর এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন যিনি তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের বাড়ির সশস্ত্র পাকিস্তানী সেনাদের কড়া প্রহরা এড়িয়ে বাড়ির প্রাচীর টপকিয়ে ড্রইং রুমে ঢুকে এক হাতে গ্রেনেড চার্জ অন্য হাতে স্টেনগানের ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করেছিলেন। এই অসম সাহসী অপারেশন সম্পন্ন করতে আনোয়ার হোসেন সময় নিয়েছিলেন মাত্র চার মিনিট!

মুক্তিযুদ্ধে এই অসম সাহসীকতার জন্য মোজাম্মেল হক বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধে উল্লেখিত কিশোর মুক্তিযোদ্ধারা ছাড়াও দেশজুড়ে বেশির ভাগ স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম ইনফর্মার, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে তথ্য আদান প্রদান, শত্রুদের এলাকা রেকি করা, অস্ত্র গোলাবারুদ ও খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজে কিশোর-তরুণেরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।

এঁদের মতো অনেক ক্ষুদে মুক্তিযোদ্ধা লড়াই করেছেন। কেউ লড়াই করেছেন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি। কেউ গোপন খবর এনে দিয়েছেন। কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের নানা কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। যুদ্ধ করতে করতে কেউ শহীদ হয়েছেন। দেশের জন্য, দেশের প্রয়োজনে তারা দেশের হয়ে কাজ করেছেন, এটাই তাঁদের সবচেয়ে বড় পাওনা। এতেই তাঁরা খুশি। আর কিছুই তাঁরা চান না। তাঁদের মধ্যেই ছিল সত্যিকারের দেশপ্রেম। আর সত্যিকারের দেশপ্রেম যাঁদের মধ্যে আছে, তাঁদের চেয়ে বড় আর কেউ নন। লাখো শহীদের আত্মদানে আজ আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ, ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি কনায় কনায় লুকিয়ে আছে স্বাধীনতাকামী সেসব মানুষের বীরত্বগাথা।

দেশের জন্য তখন লড়াই করেছিল অসংখ্য শিশু-কিশোর। বয়সের কারণে মুক্তিবাহিনীতে ওদের জায়গা হয়নি সহজে। কিন্তু ওদের অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছেন অনেক বাঘা বাঘা মুক্তি কমান্ডারও। এমনও ঘটেছে, রাইফেলটাও ঠিক মতো তুলে ধরতে পারে না, তবু মুক্তিযুদ্ধে এসেছে। তবে শিশু-কিশোর মুক্তিযোদ্ধারা ছিল অসীম সাহসী। অসীম তাদের বুকের বল। এই কিশোর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সংবর্ধিত হয়ে তাঁর হাত থেকে তাঁরা সম্মাননা গ্রহণ করেছিলেন। বেশ কয়েকজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

সূত্র - কিশোর বাংলা ডট কম
ছবি - কিশোর বাংলা ডট কম এবং ডাকঘর ২৪।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০২৩ সকাল ৯:৫৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৈয়দ কুতুবের পোষ্ট: ভারতের করণীয় কি কি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৩



বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য ভারতের করণীয় কি কি?

০) শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো।
১) বর্ডার থেকে কাঁটাতারের ফেন্চ তুলে নেয়া।
২) রাতে যারা বর্ডার ক্রস করে, তাদেরকে গুলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বদেশ প্রত্যার্বতন : আমি আশাবাদী হতে চাই

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৩৪

স্বদেশ প্রত্যার্বতন : আমি আশাবাদী হতে চাই
আজ ২৫ তারিখ, ২৫শে ডিসেম্বর ২০২৫ সাল (প্রকৃতির এক অদ্ভূদ খেয়াল) ।



৬ হাজার ৩১৪ দিন পর তারেক জিয়া বীরের বেশে অসংখ্য মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

খাম্বার পরবর্তী অধ‍্যায় ,নাকি ১০% বদল হবে‼️অমি খোয়াব ভবনে ঘুমিয়ে , হাওয়া ভবনের আতঙ্কে আতঙ্কিত॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৮



খালেদা জিয়ার অসুস্থতার নাটক ছিল তারেক জিয়ার দেশে ফেরার রাজনৈতিক ট্রাম্পকার্ড। কথায় আছে,' দুষ্টু লোকের মিষ্টি ভাষা '। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দূর্নীতিবাজ ও মাফিয়া গডফাদার তারেক রহমানের দেশে ফেরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদার ১টি প্ল্যান ছিলো, মহা-ডাকাতের ১টি প্ল্যান আছে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:২৩



২০১৪ সালের ভোটের আগে খালাদা বলেছিলো যে, তার কাছে ১টা প্ল্যান আছে, যা ১ বছরের মাঝে বেকার সমস্যা ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করে দিবে। তিনি প্ল্যানটি প্রকাশ করেননি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

গুমের শিকার ব্যক্তিদের অতি ক্ষুদ্র কক্ষের ছবিটি বিবিসি ডটকম থেকে নেওয়া।

পরিচিতি

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×