'আমার আপন আধার' বইয়ে হুমায়ূন আহমেদ তার জীবনের একটা জীনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লিখেছেন। একবার কলেজের ছাত্রদের ভাইভা নেয়ার জন্য একটা মফস্বল শহরে এক শিক্ষকের বাসায় রাতে ছিলেন। ঐ শিক্ষকের স্ত্রী বাড়িতে ছিল না এবং সে নিজেও তাস খেলতে বাইরে চলে যায় রাতের বেলায়। বাড়িতে হুমায়ূন আহমেদ একা ছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন;
‘রাত দু’টার সময় শুরু হল ভুতের উপদ্রব। কলঘরে পানি পড়বার শব্দ হচ্ছে। রান্না ঘরে হাড়ি-কুড়ি নড়ছে। ঝপাং করে বাড়ির টিনের ছাদে কি যেন লাফিয়ে পড়লো। সারা বাড়ি কেঁপে উঠল। নিজেকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম ছাদে ঝাপ দিয়ে যা পড়েছে – তা আর কিছুই না, বানর। কিছুক্ষন পর স্পষ্ট শুনলাম বারান্দায় চটি পায়ে কে যেন হাঁটছে। একবার এ মাথায় যাচ্ছে, আরেকবার ও মাথায়। ঘরের বাটি জ্বালিয়ে বিছানায় বসে রইলাম। প্রচণ্ড বাথরুম পেয়েছে, বাথরুমে যাবার সাহস নেই। সেখানে কল থেকে পানি পড়ছে, পানি পড়া বন্ধ হচ্ছে। আবারও পানি পড়ছে। ঘড়িতে রাত বাজে ৩ টা। এত ভয় জীবনে পাইনি।
শিক্ষক ভদ্রলোক রাত ৩ টার দিকে নির্দোষ আনন্দ শেষ করে ফিরলেন। আমি তাকে ঘটনা বললাম, তিনি নিতান্তই স্বাভাবিকভাবে বললেন, ও কিছু না, জীন।
আমি বললাম, জীন মানে?
এ বাড়িতে একটা জীন থাকে। দুষ্ট প্রকৃতির।
হুমায়ুদ আহমেদের ছোট ভাইয়ের স্মৃতিচারণ মুলক লেখাতেও জীনের কথা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একবার ডঃ জাফর ইকবাল প্ল্যানচেট করার সময়ে তার এক বন্ধুকে মিডিয়াম বানান। কিন্তু কিছু একটা উল্টা পাল্টা হয়ে যাওয়ার কারণে সেই বন্ধু জ্ঞান হারায়। পরে অন্য বন্ধুদের পরামর্শে কাছের একটা মসজিদের হুজুরকে ডেকে দোয়া দরুদ পড়ানোর পরে সেই বন্ধুর জ্ঞান ফেরে। অনেক আগে বইটা পড়েছিলাম তাই বর্ণনায় একটু এদিক ওদিক হতে পারে।
আসলে সারা পৃথিবীতেই বিভিন্ন জাতির মধ্যে প্ল্যানচেট, ব্ল্যাক ম্যাজিক বা জীনের খেলা আছে। জীন নামের একটা জীব আমাদের আসে পাশেই আছে। এরা যে কোন প্রাণী বা মানুষের আকৃতি ধারণ করতে পারে। এরা বিদ্যুতের গতিতে যে কোন জায়গায় যেতে পারে।
শয়তান জীনদের সাহায্য নিয়ে এই সব প্ল্যানচেট, ব্ল্যাক ম্যাজিক এবং অন্যান্য জাদুকরী কাজগুলি করা হয়ে থাকে।
বাটি চালান দিয়ে তাবিজ বা হারিয়ে যাওয়া জিনিস খোঁজার কথা অনেকে হয়তো শুনে থাকবেন। এই বাটি চালানেও শয়তান জীনদের সাহায্য নেয়া হয়ে থাকে। এই জীনেরা অনেক সময় সত্যি তথ্য দিতে পারে অনেক সময় মিথ্যে কথা বলে।
মেয়ে জীনদের বলে পরী। অনেক সময় মেয়ে জীনেরা (পরীরা) কোন ছেলেকে পছন্দ হলে তুলে তাদের দেশে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে ঘর সংসার করে। আমার পরিচিত গ্রামের একটা ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। কয়েক মাস পরে একটা ঘরের চালের উপরে ধপাস করে ফেলে দিয়েছিল। আমার এক চাচির সাথে জীন ছিল। আমার দুলাভাইয়ের সাথে বহু বছর ধরে একটা ভালো জীন ছিল। মনে হয় এখনও আছে। সেই জীনের সাহায্যে সে অনেক অবিশ্বাস রকমের তাসের খেলা দেখাতে পারেন। অল্প সময়ে দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা পার হয়েছে সে জীনের সাহায্যে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে যেটা অসম্ভব। তার কলিগ বা সহকর্মীরাও ব্যাপারটা পরীক্ষা করে সত্যতা পেয়েছে।
তবে জীনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা ঠিক না। কারণে সাধারণত খারাপ জীনেরা যোগাযোগ করে। পরবর্তীতে এরা ক্ষতি করতে পারে। তবে জীন ছাড়ানোর জন্য দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হুজুর দিয়ে দোয়া দরুদ করা যেতে পারে। ব্লগারদের অনুরোধ করবো তারা যেন জীন বন্দি করা বা বশ করার চেষ্টা না করে নিজে নিজে। এটা গুরুমুখী একটা বিদ্যা। ভালো কোন হুজুরের কাছে থেকে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া এই কাজে নামা বিপদজনক।
ছবি - নয়া শতাব্দী
সূত্র - ইউটিউব
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৩৫