লেখক এবং নাট্যকার হুমায়ুন আহমেদের একটা নাটকে রাগ দমন করার কৌশল হিসাবে পানির গ্লাস ভাঙ্গার দৃশ্য দেখানো হয়েছিল। মনোবিজ্ঞানীদের মতে এই পদ্ধতি তাৎক্ষনিকভাবে রাগ কমানোর একটা ভালো এবং কার্যকরী কৌশল। কোন কারণে প্রচণ্ড রাগ উঠে গেলে একটা কাঁচের গ্লাস নিয়ে আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলবেন। দেখবেন যে রাগ একেবারে পানি হয়ে গেছে। একটা গ্লাসে কাজ না হলে আরও ২/৩ টা পর্যন্ত গ্লাস ভাঙ্গা যেতে পারে। তার চেয়ে বেশি ভাঙ্গা ঠিক হবে না। গ্লাস ভাঙ্গার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে কারও গায়ে যেন না লাগে। সবচেয়ে ভালো হয় বাসার বাইরে গিয়ে বাগানে/ উঠানে বা বাসার সামনের রাস্তায় গিয়ে গ্লাস ভাঙ্গা। এমন গ্লাস হাতের কাছে রাখবেন যেটা আছাড় মারলেই সহজে ভেঙ্গে যায়। অনেক গ্লাস আছে আছাড় দিলেও ভাঙতে চায় না। গ্লাস কেনার সময় দোকানদারের কাছে থেকে এই ব্যাপারে জেনে নিবেন।

যাদের মাথা বেশি গরম তাদের সব সময় উচিত বাড়িতে কিছু বাড়তি পানির গ্লাস রাখা। বিবাহিত ব্যক্তি হলে বাসায় আরও বেশি বাড়তি গ্লাস রাখার প্রয়োজন হতে পারে। যাদের মাথা বেশি গরম, তারা বাসার বাইরে গেলে ব্যাগে একটা কাঁচের গ্লাস রাখতে পারেন। বাজারে কম দামের কিছু পানির গ্লাস পাওয়া যায়। এগুলি কিনলে খরচ কম পড়বে। এই গ্লাস ভাঙ্গা ছাড়াও রাগ দূর করার আরও কিছু কার্যকর পদ্ধতি আছে। পদ্ধতিগুলি নীচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল।
১। একাকী গলা ছেড়ে চিৎকার করা – বাসায় থাকা অবস্থায় রাগলে বালিশে মুখ গুজে গলার সর্ব শক্তি দিয়ে চিৎকার করবেন। অফিসে বা বাইরে থাকলে গাড়িতে ঢুকে চিৎকার করবেন। চিৎকার করার সময় যদি কারও বাপ দাদা চৌদ্দগুষ্ঠির নাম নিয়ে গালি দিতে ইচ্ছে করে, তবে সেটাও করতে পারেন।
২। উচ্চ আওয়াজে হেভি মেটাল টাইপ গান শোনা – কিছু কিছু গানের মধ্যে রাগ এবং ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থাকে। এই ধরণের গান উচ্চ আওয়াজে শুনলে রাগ তাড়াতাড়ি কমে যাবে।
৩। মাইকেল জ্যাকসন টাইপ নাচা – যাদের নাচের অভ্যাস আছে তারা রেগে গেলে মাইকেল জ্যাকসন টাইপ নাচ শুরু করে দিলে রাগ দ্রুত কমে যাবে। মাইকেল জ্যাকসনের ‘বিট ইট’ বা ‘থ্রিলার’ গানটা রাগ কমানোর জন্য বেশ উপযোগী।

৪। বক্সিং, ক্যারাটে বা কুংফু – বেশি রেগে গেলে বক্সিং, ক্যারাটে বা কুংফু জাতিয় খেলাগুলি খেললে রাগ দ্রুত কমে যায়।
৫। রাগের কথাগুলি কাগজে লিখে ফেলা – এভাবে লিখলে রাগ কমে যায়। কাগজ না পেলে মোবাইলে ডিজিটালি টাইপ করলেও চলবে।
৬। ছবি আঁকা – রেগে গেলে আপনার যা মনে আসে সেটাই কোন কোন কাগজে বা ক্যানভাসে এঁকে ফেলুন। রাগ কমে যাবে।
৭। স্থান পরিবর্তন – যে স্থানে রাগ তৈরি হয়েছে সেই জায়গা ত্যাগ করুন। সেটা এমন কি পাশের রুমও হতে পারে অথবা বাসার বাইরের রাস্তা হতে পারে। ৫ মিনিটের জন্য জায়গা বদল করলেও ফল পাওয়া যাবে।
৮। কোন বার্তার কারণে রেগে গেলে সেটা ছিঁড়ে ফেলুন বা মুছে ফেলুন- কোন চিঠি, ই মেইল বা ম্যাসেজের কারণে আপনার মেজাজ তিরিক্ষি হলে সেটা তৎক্ষণাৎ ছিঁড়ে ফেলুন বা মুছে ফেলুন।
৯। একটা খালি চেয়ারের সামনে মনের রাগ ঝাড়া – যার উপরে রেগে আছেন, মনে করে সেই ব্যক্তি ঐ খালি চেয়ারে বসে আছে। সেই খালি চেয়ারকে উদ্দেশ্য করে মনের যাবতীয় রাগ ঝাড়ুন।
১০। দাড়িয়ে থাকলে বসে পড়ুন, বসে থাকলে শুয়ে পড়ুন আর শুয়ে থাকলে ঘুমিয়ে পড়ুন (অথবা ঘুমের অভিনয় করুন)।
১১। উপরের কোন পদ্ধতি কাজ না করলে যার উপরে রাগ তার নাকটা ঘুষি মেরে ফাটিয়ে দিতে পারলে নিশ্চিত রাগ নেমে যাবে। (এই মহা মূল্যবান উপদেশটা দিয়েছেন ব্লগার মিরোরডডল। সম্ভবত এই পদ্ধতি উনি বাস্তবে প্রয়োগ করে সফল হয়েছেন।)
এতো কিছু করার পরেও যদি আপনার রাগ না কমে তাহলে বুঝতে হবে রাগ আপনার চরিত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাই এটাকে মেনে নিতে শিখুন। শুধু খেয়াল রাখবেন বস বা বউয়ের সাথে রাগ দেখাবেন না। এই দুই জায়গায় রাগ না দেখানোই বুদ্ধিমানের কাজ। তখন শুধু মনে রাখবেন যে ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’। আপনাকে হারলে চলবে না। আর বউয়ের সামনে একটা পানির গ্লাস ভাংলে সে পাল্টা দুইটা ভাঙ্গবে। তাই বউয়ের সাথে রেগে গেলে সহজ পদ্ধতি হল হার মেনে আপোষ করে নেয়া।
সুত্র - mhanational.org/resources/10-healthy-ways-to-release-rage
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


