somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনের শেষে একলা এই আমি....

১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শীত দরজার কড়া নাড়ছে জোরে জোরে। ইতোমধ্যে দখিনা হাওয়া বন্ধ হয়ে উত্তরের হিম শীতল বাতাস বইতে শুরু করেছে। দিনের সূর্যতাপ ইদানীং আর আগের মত পীড়া দেয় না। আর দুপুর গড়িয়ে কোন রকম বিকলে হলেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে যায় চারদিক থেকে।

হ্যাঁ শীত একেবারেই দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছে।
পুরাতন কাঁথা আছে, কিন্তু এইবার শীতের তীব্রতা মনে হয় আমার এই কাঁথাকেও সহ্য করবে না। এখুনি রীতিমতো কাঁথা হাঁপিয়ে উঠে আমাকে উষ্ণ রাখতে গিয়ে।

একটু বাইরে গিয়েছিলেম বিকেলের দিকে একটা কাজে। ফেরার পথে মোড়ের চা'য়ের স্টল থেকে এক কাপ চা খাওয়ার লোভে পেয়ে বসলো। আর তাই গিয়ে সিদ্দিক মিয়ার চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। শীতের আগমন আর হরতালের উত্তাপ মনে হয় বেচারার ব্যবসাকে একটু মিইয়ে দিয়েছে। আর তাই সে অন্য যেকোনো সন্ধ্যায় ব্যস্ততার এই সময়টাকে আজ টিভি দেখে পার করছে। আমি গিয়ে দাড়াতেই জিজ্ঞাস করলো
- কেমন আছেন? আজ এই সময়? কোন কাজে গিয়েছিলেন নাকি?
- হ্যাঁ, একটু বেরুতে হয়েছিল। কিন্তু হরতালের কারণে কাজটা আজ আর হলো না। তাই চলে এলাম দ্রুতই।
- বসেন, কি দিবো আপনাকে?
- আপাতত এক কাপ চা দিও।

সিদ্দিক মিয়া ধীরে সুস্থে চা বানাতে শুরু করলো। চা প্রস্তুত করাটাও একটা আর্ট। কাপ ধোয়া, তাতে চিনি আর কনডেস্ট মিল্ক দেয়া, ছাঁকুনি বসিয়ে তাতে কিছু আলাদা চা'পাতা দেয়া আর সব শেষে কেতলি থেকে গরম পানি ঐ ছাকনিতে ফেলা। ব্যাপারটা ঠিক এইভাবে মনোযোগ নিয়ে দেখিনি। আসলে সবসময় এত ব্যস্ততা থাকে যে, এইসব দেখার সময় কই থাকে হাতে?

সিদ্দিক মিয়া চা বানানো শেষ করে কাপটা এগিয়ে দিলো। আমি একটু আরাম করেই চা খাচ্ছি আর নিউজ চ্যানেল দেখছি সিদ্দিক মিয়ার দোকানের ভেতর দিকটায় বসে। রাজনীতির ব্যাপার স্যাপার নিয়ে কথা বলছে উপস্থাপক। এগুলি শুনতে শুনতে আর ভাল লাগে না। তাই সিদ্দিক মিয়াকে বললাম চ্যানেলটা পাল্টে দিতে। সে বললো কিছুক্ষণ পর নাকি কোন মন্ত্রী অনুষ্ঠানে আসবে। মন্ত্রী কি বলে সেটা শুনতে সে নাকি অনেকক্ষণ ধরে এই চ্যানেলটাই দেখছে। আমি আর কথা বাড়ালাম না। চা খেয়ে চারটা সিগারেট নিয়ে দাম পরিশোধ করে চলে আসলাম।

নাহ, সময় বাড়ার সাথে সাথে উত্তরের বাতাসটাও বাড়ছে। একেবারে কাবু করে দিতে চায়। বিকেলে যখন বেরিয়েছিল তখন এতটা ঠাণ্ডা লাগবে বুঝতে পারলে চাদরটা সাথে করে নিয়ে বেরুতাম। কিন্তু তখন এমন হবে সেটা একটিবারের জন্যেও মনে হয়নি। আর কাজটা তো আরও সময় লাগতো, একবার ভেবেই নিয়েছিলাম যে আজ আর হয়তো আসা হবে না।

এখন বাসায় যেতে হবে। ভাতের রান্না করতে হবে। আলুসিদ্ধ করতে হবে। তারপর আলুভর্তা বানিয়ে খেতে বসতে হবে। নাকি চাল ডাল একত্রে বসিয়ে দিয়ে যেটা হয় ঐটাই করবো চিন্তা করতে করতে মেসে চলে আসলাম। হরতালের কারণে আগেই অনেকে বাড়িতে চলে গিয়েছে। দুই একজন যারা আছে তারা এই মুহূর্তে মেসে নেই। একেবারেই ঠাণ্ডা লাগছে মেসের পরিবেশ। অন্য সময়টাতে কারো কারো রুমে গান শুনতে পারতাম। সাথে তাদের টাস খেলার উচ্চ আওয়াজ। কিন্তু এখন সব নিস্তব্ধের আওয়াজ দিয়ে পরিপূর্ণ।

রান্না ঘরে গিয়ে ভাত বসিয়ে দিয়ে আসলাম। রুমে এসে পত্রিকাটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ পড়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু এখন সব খবরেই ঐ একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা। এটা আর ভাল লাগে না। তাই পত্রিকা রেখে বাইরে আসলাম। মেসের বাইরে একটা ছোট্ট ফাকা জায়গা। প্রতিদিন বিকেলে কিছু ছেলে এখানে ক্রিকেট খেলতো। এখন ব্যাডমিন্টন খেলবে কিছুদিন পর থেকে। সেটাও দেখার মত বিষয়।

কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালালাম। ধুয়াটা ছাড়লাম উপরের দিকে তাকিয়ে। ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল। ছোট বেলায় শীতের সময় মুখ দিয়ে ধোয়া ছাড়ার চেষ্টার করতাম এখনকার এই সিগারেটের ধোয়ার মত করে।

আহ! সময় কত দ্রুত চলে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই কোথা থেকে কোথায় চলে এসেছি। এখনো মনে পড়ে এতিম খানাটার কথা। ছোট্ট জায়গা, খাবার হয়তো ভাল ছিল না। কিন্তু আমার ঐ জায়গাটাই ভাল লাগতো। যখন একত্রে কষ্ট করতাম আমার মত আরো কয়েকজন মিলে তখন কাউকে আলাদা করে কিছু বলতে হতো না। সবাই কিভাবে যেন ঠিকই বুঝে যেত সমস্যাটার কথা। নিজেরাই অন্য কোন একটা বিষয় নিয়ে আসতাম সমস্যাটাকে পেছনে ফেলে দিতে।

কিন্তু মেট্রিক পাশ করার পর তারা আর আমাকে কোন ভাবেই রাখতে চাইলো না। আর তারপর কিছুটা হোঁচট খেয়েই চলে এসেছি এতদূর। রাত বাড়ছে, ঠাণ্ডাটাও বাড়ছে। উপরে তাকিয়ে আকাশের তারা গুলিকে দেখলাম। আর হারাতে লাগলাম তরার মৃদু মনোমুগ্ধকর উজ্জ্বলতায়....
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২৬
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×