রবিন, চেহারায় শঙ্কা আর একটা পরাজিত ভাব নিয়ে BRTC বাসের জানালার পাশের সিটে বসে আছে। লাল চোখে পানি টলটল, কিন্তু সেটা গড়িয়ে ফেলতে পারছে না। এয়ারপোর্ট পেরিয়ে দ্রুতই সামনে এগিয়ে চলছে বাস, কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছে কি করবে সেটা মাথায় কাজ করছে না তার। মাত্র এক ব্যাগ রক্তের জন্যে কি তাহলে বাবার অপারেশনটা করাতে পারবে না? উত্তরা পর্যন্ত আসলো রক্তের জন্যে, কিন্তু এখানেও তাদের কাছে রক্ত নেই। আজ বিকেলের মধ্যে যে করেই হোক রক্ত যোগাড় করতে বলেছিল ডাক্তার। দুপুর তো শেষ প্রায় এখন কি করবে? প্রয়োজনে টাকা দিয়েই কিনবে সে রক্ত, কিন্তু আগে পেতে তো হবে আগে।
পাশে বসা তরুণ হঠাৎ করেই জিজ্ঞাস করলো-
- ভাই কোন সমস্যা
- না ভাই, বাবাকে বিদায় জানাতে যাচ্ছি হসপিটালে। এক ব্যাগ রক্তের জন্যে বিদায় জানাবো। কোন সমস্যা নেই ভাই, কোন সমস্যাই নেই..
- কি বলছেন? এক মাত্র ব্যাগ রক্ত, ব্লাড ব্যাংকে যোগাযোগ করেছেন?
- করেছি ভাই, উত্তরার একটা হসপিটালে থাকতে পারে জানালো। এখন সেখান থেকেই আসছি, নেই তাদের স্টকে।
- কি গ্রুপের রক্ত?
- AB নেগেটিভ।
- কখন লাগবে ভাই?
- আজ বিকেলের মধ্যে যোগাড় করতে বলেছিল।
- চলেন তাহলে
- কোথায়? আপনার জানাশোনায় কোথাও পাওয়া যাবে?
- হ্যাঁ, আমিই দিবো। চলেন
হ্যাঁ, উপরের লিখাটা নিছকই গল্প। তবে এমন যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কিছু সময় কাটালে রোগীদের রক্তের জন্যে হাহাকার কিছুটা নজরে পড়বে আপনার। এমন কি বিভিন্ন ব্লাড-ব্যাংক আর ছোটখাটো ক্লিনিক সেন্টার গুলতেও একই চিত্র দেখতে পারবেন একটু খেয়াল করলে। ভাবতেই কষ্ট লাগে রক্তের অভাবে রোগী মারা যায়। টাকা নিয়ে দাড়িয়ে থেকেও কোন কিছু করতে পারে না আত্মীয়-স্বজনেরা। অথচ এই জীবন বাঁচানো রক্ত গায়ে নিয়ে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি আমরা। এই পরাজিত মুখগুলির পাশে বসেই হয়তো আড্ডা দিচ্ছি কোথাও কোথাও।
একটু সচেতন হলেই আমরা মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়ানো এমন হাজারো মানুষকে জীবনের আলোর পথ দেখাতে পারি। তাহলেই উপরের গল্পটার মত করে জীবনের গল্পেও পাব "Happy ending"

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



