somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোটা ব্যবস্হার সংস্কার চাই।

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেয়ার ইচ্ছে ছিল। কোটা ব্যবস্হা কেন সংস্কার হওয়া প্রয়োজন তা নিয়ে সু-চিন্তিত মত দেয়ার তাগাদা ছিলো। কিন্তু একটু ব্যস্ত থাকার কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না, তবে এখানে দু' চারটি কথা বলতে চাই। কোটা ব্যবস্হার খুঁটিনাটি বিষয়ে অনেকে অনেক কিছু লিখছেন। কোটা ব্যবস্হার সংস্কারের যৌক্তিকতা নিয়ে নানাজনে নানান মত দিচ্ছেন। যারা কোটা ব্যবস্হার সংস্কার চান তাদের সাথে একাত্ম ঘোষণা করছি। আমারো সখ একদিন সরকারী চাকুরী করব। প্রাইভেট কোম্পানিতে জি-স্যার, ইয়েস স্যার করতে আর ভালো লাগেনা। সরকারী চাকুরী আমার না হলেও কোন আফসোস নেই। যদি কোটা ব্যবস্হা সংস্কার হয়, এতে যদি সাধারণ পরিবারের মেধাবী ছেলেরা আরো বেশি সংখ্যক সরকারী চাকুরীতে প্রবেশ করতে পারে, তাহলে অনেক ছেলের স্বপ্ন পূরণ হবে। অনেক গরীব মায়ের মুখে হাসি ফুটবে। এই সমস্ত মেধাবী অথচ গরীব ঘরের সন্তানেরা কিছুটা হলেও সামনের সারিতে আসতে পারবে। কোটা ব্যবস্হা সংস্কার হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। তাছাড়া সোনার বাংলাদেশ গঠনে আমরা কিছুটা হলেও এগিয়ে যেতে পারব।

কোটা ব্যবস্হা সংস্কার হওয়ার প্রয়োজন আছে। কেননা, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে চাকুরীর বাজারে প্রবেশ করছে। চাকুরীর বাজারের প্রবেশ করার কারণে তাদের চোখ দিব্বি খুলে যাচ্ছে। আবেদন করার পর প্রথম যে জিনিষটি তাদের সামনে চলে আসে তাহলো তদবির- লবিং। দু’একজনের মামু খালু থাকার কারণে তারা হয়ত ভাবে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাদের জন্য লবিং করা সহজ হবে। কিন্তু অধিকাংশ পরীক্ষার্থীদের তদবির করার লোক নেই। ফলে তারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও চাকুরীর বাজারে প্রবেশ করতে পারছেন না। তাদের স্বপ্ন তদবির, লবিং এর জায়গায় এসে থেমে যাচ্ছে। অর্থাৎ তদবির, লবিং সরকারী চাকুরী বাজারে প্রতিনিয়ত প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করছে।

যারা কোন রকম এদিক- সেদিক করে তদবির লবিং যোগার করতে পারে তাদের সামনে ঘুষের বাণিজ্য চলে আসে। খবরে জানা যায়, এদেশে তৃতীয় শ্রেণির চাকুরীতে তিন থেকে ছয় লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য হয়। অন্যান্য শ্রেণির কথা নাই বললাম। যার পিতার সামান্য জায়গা জমি, ঘর ভিটা আছে সে হয়ত সেগুলো বিক্রি করে ঘুষের মাধ্যমে চাকুরীতে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু যার বাবার সহায় সম্পত্তি নেই তার কি অবস্থা তৈরি হতে পারে? একবার ভেবে দেখুনতো, যারা লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষায় ভালো করার পরেও ঘুষের কারণে চাকুরীতে প্রবেশ করতে পারছেনা তাদের মনে কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়"

অনেকে সরকারী নিয়োগে লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষায় ভালো করার পরেও রিলেটিভ লিষ্টে এমপি, মন্ত্রী ও সচিব না থাকার কারণে প্রতি নিয়ত অন্যদের নিকট হেরে যান। এই হেরে যাওয়া দলে আপনি থাকলে কি করতেন? আপনি কি কোটার পক্ষে সাফাই গাইতেন? অবশ্যই না।

এবার আসা যাক কোটা ব্যবস্থায়। ধরুণ একই সাথে দুই বন্ধু লেখাপড়া করছে। প্রথম বন্ধু সেই প্রথম থেকে ভর্তি পরীক্ষায় কোটার থাকার কারণে ভালো একটি স্কুলে চান্স পেয়েছে। সে পঞ্চম শ্রেণিতে কোটা সুবিধা ভোগ করছে, অষ্টম শ্রেণিতে কোটা সুবিধা ভোগ করছে, নবম শ্রেণিতে কোটা সুবিধা ভোগ করছে, এভাবে প্রতিটি ভর্তি সেশনে কোটা সুবিধা ভোগ করে লেখাপড়া শেষ করার পর তার কোটা থাকার কারণে চাকুরীতে এক লাফে প্রবেশ করছেন। অপরপক্ষে 2য় বন্ধুটি নিজের চেষ্টা, অধ্যাবসায় এবং মেধার কারণে তার সাথে তাল মিলিয়ে একই সাথে লেখাপড়া শেষ করে চাকুরীতে একই পোষ্টে আবেদন করার পরেও নিয়োগপত্র হাতে পায়নি, অথচ সে লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষায় ভালো করেছিলো। তারপর সে এই রকম অনেকগুলো পরীক্ষা ফেস করেছে, কিন্তু চাকুরী নামক সোনার হরিনটি তার কাছে আজো অধরা থেকে গেল। ফলে তার পরিবারের স্বপ্ন দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। একবার এই ছেলের জায়গায় এবং তার পরিবারের জায়গায় নিজেকে ভাবুন তো, তাহলে বুঝতে পারবেন এদেশের চাকুরীর বাজার আজ কোথায় প্রবেশ করেছে!

উপরের এতো প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দু’একজন হয়ত চাকুরীতে প্রবেশ করতে পারছেন। তাদের কপাল ভালো, অথবা তাদের কপালে কালো টিপ পরিহিত। এই টিপ থাকার কারণে এদেশের ঘুষঘোর, চাকুরী বাণিজ্যকারী, তদবিরকারী আমলা, মন্ত্রীদের কালো চোখ তাদের কে দেখতে পায়নি বা পাচ্ছেনা। আর এই সমস্ত দুষ্ট মানুষরা তাদের কে দেখতে না পাওয়ার কারণে আমরা মেধাবীদের সাফল্যের খবর পত্রিকার, টিভিতে এবং অনলাইনে দেখতে পাচ্ছি।

জানি, সরকার এদেশের ঘুষ, দুর্ণীতি কখনো বন্ধ করতে পারবে না। ঘুষ, দুর্ণীতি বন্ধ করলে এদেশে দল চালানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু সরকার ইচ্ছে করলে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে অত্যন্ত কিছু গরীব ও অথচ মেধাবী সন্তানদের মুখে হাসি ফুটাতে পারে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, তারা যেন কোটা ব্যবস্থার যথাযথ সংস্কার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনের প্রতি সু-বিচার করেন।।

পরিশেষে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর জনগণের টাকায় পালিত পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। ছাত্রলীগ যেন আর পেশি শক্তি প্রদর্শণ না করে সে অনুরোধ থাকল। গ্রেফতারকৃত সব শিক্ষার্থীদের কে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি নিবেদন রইল।

পুনচ্ছ: পোষ্টে সন্মানিত ব্লগারদের আগ্রহ থাকার কারণে এখানে কিছু লাইন নতুন করে যোগ করলাম।

ছবি: শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া)।
মাধ্যম: ইলাস্ট্রেটর।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:০০
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×