somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১৭ এপ্রিল অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে মেহেরপুর জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বাগোয়ান ইউনিয়নের বৈদ্যনাথতলায় ভবেরপাড়া গ্রামে গঠিত হয়েছিল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সরকার। ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকার’ হিসেবে পরিচিত মুক্তিযুদ্ধকালীন এ সরকারের দক্ষ নেতৃত্ব ও পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের মধ্য দিয়ে জাতি লাভ করে স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। ‘মুজিবনগর সরকার’ খ্যাত প্রথম সরকার গঠিত হয়েছিল ১৯৭০-এর নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভকারী আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়ে বীর বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে সীমাহীন শক্তি আর সাহস নিয়ে। সেসময়ই ১৭ এপ্রিল গঠিত হয় বিপ্লবী সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা। সেদিন সেই আমবাগানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদসহ বাংলাদেশের প্রথম সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নিয়েছিলেন। সে সময়ই স্থানটিকে ‘মুজিবনগর’ নাম দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জনপ্রতিনিধিরা মুক্তাঞ্চলে এবং প্রতিবেশী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ১০ এপ্রিল প্রবাসে তারা জাতীয় পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন। এ অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন ও বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় হাজার হাজার মানুষের সামনে বিপ্লবী সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন। দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের সামনে বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র পাঠ ও মুক্তিবাহিনীর মার্চপাস্ট অনুষ্ঠিত হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এ উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন। প্রথম সরকার বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলে শপথ গ্রহণ ও আনুষ্ঠানিক যাত্রা করলেও পরবর্তীকালে কৌশলগত কারণে বিপ্লবী সরকারের কার্যালয় কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ভারত, তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুগোস্লাভিয়া, কিউবা, রোমানিয়া, পোল্যান্ডসহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নৈতিক সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করে। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে ‘আজকের মুজিবনগর’। আর সেই গৌরবময় স্মৃতির ধারক হিসেবে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে ২৩টি কংক্রিটের সফেদ দেয়াল আমাদের সংগ্রামী ঐতিহ্যের স্মৃতিসৌধ। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ৩১ আগস্ট বৈদ্যনাথতলার আমবাগানটিকে সংরক্ষণসহ ঐতিহাসিক স্থানে রূপান্তরের লিখিত নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গণপূর্ত অধিদফতর ঐতিহাসিক এ স্থানে জাদুঘর, স্মৃতিসৌধ ও অতিথি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৭৪ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে এসে ওই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের আমলে আবার উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই খাতে প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ১৯৮৮ সালে ১ কোটি ৯৩ লাখ ১১ হাজার ১৩৩ টাকা ব্যয়ে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ১৯৯৭ সালে ৬৬ একর জমির ওপর মুজিবনগর কমপ্লেক্স স্থাপনের কাজ শুরু করে। ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু এখনও চালু করা হয়নি এ প্রকল্প। ফলে প্রাণহীন এক ইটের নগরী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুধু সাক্ষী হয়ে। এজন্য সরকারের বিপুল ব্যয়ের এ প্রকল্প কোন কাজে আসছে না। ইতিমধ্যে প্রকল্পের অনেক কিছুই চুরি হয়ে গেছে। পানি সরবরাহের পাইপ লাইন দীর্ঘদিন পড়ে থেকে মরচে পড়ে গেছে। ব্যবহার না করাতে লাখ টাকার অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক জেনারেটর বিকল হয়ে গেছে। পর্যটন মোটেল থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, আধুনিক সব ফিটিংস গণপূর্ত বিভাগ খুলে রেখেছে। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকা স্মৃতিসৌধ এখন গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×