ক্যাপিটালিজমের চোখে সবচেয়ে মূল্যবান কমোডিটি কোনটি...? অর্থাৎ কোন জিনিসটা দিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করছে পুঁজিবাদ..?
স্বর্ণ.., রূপা..., ডায়মন্ড..নাকি প্যাট্রোল..?
সম্ভাব্য সার্পাইজিং উত্তরটা হচ্ছে- ফিমেল বডি..বা নারী দেহ।
৩ হাজার বিলিয়ন ডলারের গ্লোবাল ফ্যাশন ও মডেলিং ইন্ডাস্ট্রির কথাই ধরুন, এর প্রাণ ভোমরা হচ্ছে নারী দেহের অবজেক্টিফিকেশন।
হলিউড-বলিউড থেকে নিয়ে গোটা পৃথিবীর বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির বেলায় আসুন, এর সবচেয়ে শক্তিশালী নেয়ামক হচ্ছে নারী দেহ। বিশদ ব্যখ্যায় না গেলাম।
এরপর বিপণন ও বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রিতে আসুন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী মূলমন্ত্রই হচ্ছে 'sex sells', অর্থাৎ যৌনতা বিক্রি বাড়ায়।
দেখা যায় যে এয়ারলাইনস কোম্পানীগুলোতে বিমানবালা বেশি গ্ল্যামারাস, যাত্রীরা অবচেতন মনে সেখানেই বেশি ওঠে। যে ব্যাংকের ফিমেল স্টাফরা বেশি সুদর্শন, সেখানে গ্রাহকও বেশি টানে।
এমনকি স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রেও দেখবেন নারী খেলোয়াড়দের ড্রেসকোড প্রয়োজন ছাড়াই সংক্ষিপ্ত রাখা হয়, কারণ পরিসংখ্যান বলে এতে পুরুষ দর্শকরা অবচেতন মনে আকৃষ্ট হয়। (এ সংক্ষিপ্ত পোশাক রেভেনিউ ও টিআরপির প্রয়োজনে করা, নারী স্বাধীনতার প্রয়োজনে না।)
আজকাল টুরিজম ইন্ডাস্ট্রিতে আজকাল স্থানীয় এস্কর্ট গার্লদের গ্ল্যামার অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।
বর্তমান সভ্যতার গোটা অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে 'কনজিউমার ক্যাপিটালিজম' এর উপর। আর কনজিউমার ক্যাপিটালিজমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুপ্রবিষ্ট হয়ে আছে 'সেক্স & সেন্সুয়াল প্লেজার'। এই কনজিউমার ক্যাপিটালিজম আছে বলেই আমাদের উদ্বৃত্ত জিডিপি দিয়ে আমরা মঙ্গলে হাজার কোটি টাকায় মিশন পাঠাতে পারি, চাঁদে ল্যান্ড করতে পারি।
মুসলমানদের পর্দা ও হিজাব নিয়ে নিওলিব্রেল ওয়ার্ল্ড অর্ডারের মূল আপত্তিটা এখানেই। ইউরোপের দেশগুলোতে কেন একের পর এক স্কুল কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ করা হচ্ছে...?
হিজাব নিষিদ্ধ করার বেলায় সবচেয়ে প্রাগ্রসর হচ্ছে ফ্রান্স, আর বলা হয়ে থাকে যে ফরাসিরা চিন্তা জগতে পৃথিবীর চেয়ে ১০০ বছর এগিয়ে।
তাই হিজাবের উপর ফ্রান্সের এই খড়গ গ্রস্ত হবার বাসনাকে যারা কেবল তথাকথিত উগ্রবাদ মোলাবিলার চশমা দিয়ে দেখেন তারা ভুল করেন। ফ্রান্সের এই আচরণে সভ্যতা ও মূল্যবোধের গভীর সমীকরণ জড়িত।
কারণ ফ্রান্স ভাল করেই বোঝে 'হিজাব' গোটা ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশ্যনের আঁতে আঘাত করে। নারী তার দেহ ও সেক্সুয়্যালিটিকে প্রাইভেটাইজ করতে চায়, এটা কনজিমার ক্যাপিটালিজমের জন্য বিরাট হুমকি। আর কনজিউমার ক্যাপিটালিজম ছাড়া ওয়েস্টার্ট আধিপত্য পুরোপুরি কলাপ্স করবে এটা তারা ভাল করেই জানে।
এছাড়া নারীকে নগ্ন করার মধ্যে মানুষকে ডি-ট্রাডিশনালাইজ করার ক্ষমতা থাকে, সেটাও নিওলিবারেলিজমের অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। সেটার আলাপ এই স্ট্যাটাসে বরং না করি।
তো তালিবা*দের পশ্চিমা মোড়লরা কেন তাদের নিওলিব্রেল ওয়ার্ল্ড অর্ডারের জন্য হুমকি মনে করে, তার অনেকগুলো কারণের এটি একটি।
আপনারা যারা মনে করেন শুধু ব্যক্তি স্বাধিনতা ও ফ্রিডম রক্ষার জন্য পশ্চিম এত উদ্বেগ দেখায়, আপনারা আসলে বৈশ্বিক অর্ডারের ম্যাটা-ন্যারেটিভসগুলো থেকে বের হতে পারেন নাই।
তবে নারীরা নিজেদের দেহ ও যৌনতার এই পণ্যায়ণকে সাধারণত সাদুবাদ জানায় বেশকিছু কারণে.. কারণে নারীরা সাধারণত ট্রেডিশনাল সমাজে self-expression স্বাধীনতা হতে বঞ্চিত থাকে। ফলে নগ্ন হবার ভেতর একধরণের মুক্তির আনন্দ থাকে। এছাড়া যৌনতার বাজারকরণ প্রক্রিয়ায় নারীরা নিজেও মুনাফা ভোগী হয়, যেমন কিম বিখ্যাত মডেলরা কেবল নিজের নিতম্ব দেখিয়ে মিলিয়নারি হয়ে যায়। আর পুঁজির সমাজে টাকার চেয়ে অধিক এম্পাওয়ারিং কিছু নেই।
N Hasan
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:৫১