বাংলাদেশের রাজনীতি এখনও চর দখলের স্তরেই থেকে গেছে। এখানে হার্ড পাওয়ার মানেই সন্ত্রাসের সক্ষমতা, রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পর্যাপ্ত সন্ত্রাস করার সক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কী এলিমেন্ট। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানিক রাজনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও ফ্রেজাইল স্টেট বা ভঙ্গুর রাষ্ট্র। কোন ভনিতা ছাড়াই বলা যায়, আজকে বিএনপি পর্যাপ্ত সন্ত্রাস করার সক্ষমতা হারিয়েছে বলেই সে ক্ষমতার বাইরে এবং বিপরীতে আওয়ামীলীগ নিজে ও রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে যৌথভাবে সর্বোচ্চ স্তরের সন্ত্রাস করার, গুম-খুনের সক্ষমতা আছে বলেই সে জবাবদিহিহীন এবং নির্বাচনহীন একক ক্ষমতা উপভোগ করছে।
কিন্তু মূল কথা হচ্ছে আমরা চাই না, বিএনপি সে পথে হেঁটে ক্ষমতায় যাক, কারন দেশটাকে রূপান্তরের স্বপ্ন দেখি আমরা। এই জার্নিটা দীর্ঘ হোক, তথাপি টেকসই হোক! অর্থাৎ বিএনপি সহ অপরাপর বিরোধীদল এবং জাতীয় রাজনীতিতে কাঠামোগত সংস্কার, ক্ষমতা বেকেন্দ্রীকরন, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং প্রাতিষ্ঠানিক শাসন পুশ করা আমাদের দায়িত্ব। সেজন্যই বিএনপির আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রাখার তাগাদা দেই প্রায়ই এবং এতে অনেকেই আপত্তি করেন।
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে বাংলাদেশ যে একটা ভঙ্গুর রাষ্ট্র তার প্রমাণ আমি খুঁজি ক্ষমতাসীনদের আসন ভাগাভাগি কিংবা আসন ছেড়ে দেয়ার হাইপোথিসিসে। একটা ভঙ্গুর রাষ্ট্রে সরকারি দলের কৌশলগত সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় মিত্রকে স্থানীয় আসন ছেড়ে দেয়ার পলিসি কাজ করে না। বিষয়টি আমি অনেকদিন ধরেই অব্জার্ভ করছি। কারণ 'সেট এরেঞ্জমেন্টে' আওয়ামীলীগ যদি তার বিবাদমান গ্রুপের এক পক্ষের কোন ক্ষমতাসীন নেতাকে মননোয়ন না দেয়, তখন আসলে ঐ নেতার রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটে। এই ''অবধারিত রাজনৈতিক মৃত্যু'' ঠেকাতে সে তার অবৈধভাবে অর্জিত সব সম্পদ ও শক্তির সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করে।
আজকে শেখ পরিবারের বরিশালের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ভোট দিতেও বরিশাল যায়নি। সে জেনে গেছে খেলাটা সে হেরে গেছে এবং হারা খেলা জিতার ব্যর্থ চেষ্টাটা সে করেনি। একই কারণে শেখ পরিবারের অপর সদস্য বরিশালের রাজনীতির ঠিকাদারি পীরসাবের হাতে তুলে দেয়নি, ভোটের শুরু থেকে পর্যাপ্ত সফট ও হার্ড সন্ত্রাস করে, এইভিএম জালিয়াতি করে 'রাজনৈতিক ক্যারিয়ার' রক্ষা করেছে।
(জেতার সক্ষমতা না থাকুক, অন্তত মনে করার কোন কারন নেই যে, পীর সাহেব নিজের শহরে মাত্র ৩৩ হাজার ভোট পেয়েছেন!)
আমি অবাক হই, যখন বাম দল, নতুন গড়ে উঠা দল, ইসলামী আন্দোলন, জামায়াত বা বিএনপির কেউ কেউ এই 'হারা' খেলাটা খেলতে যায়। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের রাজনীতির বুঝাপড়াটা তাদের এখনও শেষ হয়নি।
আওয়ামীলীগের কোন নেতা স্বজ্ঞানে নিজের দলীয় এবং আ-দলীয় প্রতিপক্ষকে আসন ছেড়ে দিয়ে নিজের রাজনৈতিক মৃত্যু নিশ্চিত করবে না। ফলে প্রতিটা গ্রামে সে যে শত শত লাঠিয়াল ও ক্যাডার পোষে, স্থানীয় পুলিশ ও নির্বাচনী প্রসাশনে সে যে এজেন্সি পালে, তাকে সে সর্বোচ্চ ব্যবহারে পিছপা হয় না। ফলে কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েই কাউকে স্থানীয় নির্বাচনে বিকল্প 'বিরোধী দলকে' পাশ করানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। (বাই দ্য ওয়ে, ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঠিক পরপরই ঘটা গাজীপুর নির্বাচন ভিন্ন কেইস হলেও সত্যিকার অর্থেই জাহাঙ্গীর আজমতের চেয়ে বেশি কর্মী-লাঠিয়াল পোষে)
এরকম ঘটনা ২০১৮ জাতীয় নির্বাচনে হয়েছে বলে অভিযোগ ও অভিমত আছে। বলা হয়েছে, ঐক্যফ্রন্টকে ৭০-৮০টা আসন দেয়া হবে। কিন্তু স্থানীয় নেতারা ছেড়ে দেয়নি, বরং রাতেই জয় নিশ্চিত করেছে। মাফিয়াতন্ত্র এমন স্তরে পৌঁছেছে যে, এখানে কেন্দ্র স্থানীয় 'হার্ড পাওয়ার'কে অনেক ক্ষেত্রেই ডিক্টেট করতে ব্যর্থ হয়। এর বাইরে আছে ফরেন ফ্যাক্টর। চীন ও ভারত বাংলাদেশের অবৈধ আওয়ামীলীগ সরকারের কন্টিনিউয়েশান চায়, ফলে তারা সরকার ও সংসদকে ক্রমাগতভাবে বিরোধী হীন রাখতে তৎপর। এতে তাদের অবৈধ চাওয়া/আবদার/চুক্তি/বাণিজ্য স্বার্থ সুরক্ষিত হয়।
ফলে এক দেশের এজেন্সি যখন রাতে ২৫% ভোট কাস্টিং এর প্ল্যান করছে, অন্য দেশ সেটা ওভার-প্লে করে ৫০% করে দিসে। ৫ বছর পরে এসে আমরা দেখি উভয়ের স্বার্থই এই রেজিমকে সুরক্ষিত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হয়েছে। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস সংগঠনের সক্ষমতা, নিশ্চিত রাজনৈতিক মৃত্যুর বিপদ নয় শুধু বরং ডিপ্লোম্যাটিক সেটেলমেন্টও আসন ভাগাভাগি ও আসন ছাড়ার মেকানিজমের বিরুদ্ধে কাজ করে।
শেষ করি জি এম কাদেরকে দিয়ে। এই যে মিস্টার জিএম কাদের বললেন, 'আ.লীগ জামায়াতকে কিছু সিট দেবে, আমাদেরও বাড়িয়ে দেবে'। বাস্তবতা হচ্ছে , জামায়াত (যদি আদৌ আতত করে থাকে) বা ইসলামি আন্দোলন বা বিএনপির পদ বঞ্চিত অংশ অথবা অন্য কোন নতুন দলের যে কেউ লীগের সাথে নির্বাচন করে আসন ভাগাভাগির যতই সুখ স্বপ্ন দেখুক না কেন, যতই আওয়ামীলীগের সাথে আন্ডার টেবিল দরকষাকষি করুক না কেন, নির্বাচন শেষে তাদের বাটপারির ভিক্ষার ঝুলিটা খালিই থাকবে যাদি না তাদেরও পর্যাপ্ত পাল্টা সন্ত্রাস করার সক্ষমতা থাকে এবং প্রসাশনে হিউজ পেনিট্রেশান থাকে।
সাধু সাবধান!
কার্টেসী- ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০২৩ রাত ১১:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




