somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক

২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০১

বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী এবং পরিবারের মানসিক প্রস্তুতি থাকা জরুরী

বিয়ে একটি নব পরিবারের সূচনা সিড়ি। একটি ছেলে একটি মেয়ের একত্রে বসবাসের যে সুখময় সংসার, তার আবশ্যক পূর্বশর্ত বিয়ে। আর নিছক ভোগচাহিদা পূরণের জন্য তো বিয়ে নয় বরং এ এক অমূল বন্ধন। বিয়ে পরবর্তী জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সুন্নতি মধুময় সম্পর্ক অটুট রাখার ক্ষেত্রে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এখনকার পরিবার গুলো ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিতে একপায়ে রাজি থাকে কিন্তু কার হক্ব কতটুকু তা বেশির ভাগই বেখবর। যার দরুন দিনদিন পারিবারিক অশান্তি ক্রমান্বয়ে বৃদ্বি পাচ্ছে। সংসার ভাঙ্গনের হার এখন মুসলিম দেশ গুলোতেও ব্যাপক আকার ধারন করেছে। যেটা প্রকৃত মুসলমানের কখনও কাম্য নয়। সাধারন মানুষ তো দুরে থাক, বর্তমানে মাওলানা, মুফতি, ইমাম-খতিব তাদের মধ্যেও পারিবারিক বিভিন্ন ইলমের ঘাটতি থাকায় সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে। সবাইকে জানতে হবে, সচেতন হতে হবে এ অমূল্য বন্ধন সম্পর্কে। কেননা বিয়ে মুষ্টিমেয় কয়েকটি দিন বা বছরের জন্য নয়। সারাজীবনের প্রশ্ন এখানে।

বিবাহ পরবর্তী সুখময় মধুর সম্পর্ক নিজেকে আল্লাহওয়ালা বা আল্লাহওয়ালী হতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। অপরদিকে আল্লাহ পাক না করুন কারও যদি অশান্তি সৃষ্টি হয় তাহলে আল্লাহওয়ালা বা আল্লাহওয়ালী হওয়া তো দুরের কথা নিজেকে জমিনে ঠিকিয়ে রাখা কঠিন কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। আর কারও যদি অশান্তি অবস্থায় সংসার টিকে থাকে তবে সন্তান-সন্তুতি ভালোভাবে বেড়ে উঠা কষ্টকার হয়ে যায়। সামান্য অজানা বা অসচেতন পুরো জীবনকে জাহান্নাম বানিয়ে রাখে।

বিয়ের পূর্বেই পাত্র-পাত্রী বা তাদের পরিবারগুলোকে মানসিক প্রস্তুতি ব্যাপকভাবে নিতে হবে। বিয়ের পর কোনও ঝামেলা হলে ছেলে বা মেয়ে ডিরেক্টলি তার মা-বাবাকে জানিয়ে দেয়, আমি তো এখন প্রস্তুত ছিলাম না। তোমরা বিয়ে দিয়েছে তোমরা দেখে নাও। তখন ফিৎনা দিন দিন বাড়তে থাকে। একসময় তালাকও দিয়ে ফেলে। অথচ দেখে যায় ফিৎনার বিষয়টা তেমন কিছু কঠিন বিষয় না। ছেলেটা বা মেয়েটা একটু সচেতন হলেই যথেষ্ট ছিলো। মুলত এখনকার পারিবারিক ফিৎনাগুলো সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করেই বেশি সৃষ্টি হয়।

অতএব পারিবারিক সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্য বিয়ের পূর্বেই মানসিক প্রস্তুতি নেয়া জরুরী। কেননা হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “ প্রতিটি ভালো কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল”।বুখারী শরীফ। অর্থাৎ মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া জরুরী।

পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০২

বিবাহের পূর্বে নব সংসারের জন্য সুন্নতী পরিবেশ আলাদাভাবে ব্যবস্থা করতে হবে। যেন পরিবারের সদস্যদের সাথে সাংঘাষিক বা বেপদার জায়গা না হয়।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে একটি বৃহৎ এবং পূর্ণাঙ্গ সূরার নাম আল্লাহ পাক নারীদের (সূরা নিসা) নামে রেখেছেন। ইসলামই সর্বপ্রথম শিখিয়েছেন, নারী কোনো পণ্য নয়। ভোগের বৃত্ত থেকে নারীকে মুক্ত করেছেন ইসলাম। করুণার দৃষ্টি থেকে রেহাই দিয়ে নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নারীদের সবচেয়ে সম্মানিত অবস্থানে বসিয়েছেন। কাজেই পাত্রী এনে যেন কোনোভাবেই তার অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা সচেতন মুসলমানের দায়িত্ব-কর্তব্য।

পরিবারের সদস্যদের সাথে সাংঘার্ষিক হয় এমন পরিবেশে রাখলে, তারপর জীবনভর দু’জনের সংসারে লেগে থাকা মনোমালিন্যের দায়ভার পরিবারের কর্তা বা পাত্র কীভাবে এড়িয়ে যাবেন! মেয়ের মুখ বুঁজে সব সয়ে যাওয়া মানে আল্লাহ পাক উনার কাছে পার পাওয়া নয়। সে হিসেব বড়ই কঠিন এবং শক্ত। কেননা পর্দার জন্য এবং ফিৎনামুক্ত উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা কুরআন শরীফ-হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ফরয। এ বিষয়ে পুরুষকে সহনীয় ভূমিকা রাখতে হবে। দায় এড়ানোর সুজোগ ইসলাম কাউকে দেননি।

আমরা মুসলমান। কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নারীদেরকে যে অভাবনীয় সম্মান দিয়েছেন, সেটা রক্ষা করতে হবে। নব পরিবারে ফিৎনা সৃষ্টি হবে এমন কোনও কাজ বা পরিবেশ রাখা যাবেনা। একটা মেয়ে সমস্ত কিছু ত্যাগ করে স্বামীর খেদমতে চলে আসেন। এখানে থাকেনা তার নিজস্ব পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা আত্বীয়-স্বজন। একান্তই একটা অপরিচত জায়গায় তার আগমন ঘটে। আর একটা নতুন জায়গায় একটা মানুষ প্রথম আসলে তার অনেক কিছু বুঝতে বাকি থেকে যায়।

অতএব পরিবারে মধুময় সুখের সুন্নতি সংসারের জন্য ফিৎনামুক্ত এবং পর্দাবেষ্টিত পরিবেশ নিশ্চিত করা পুরুষের জন্য অবশ্যই দায়িত্ব-কর্তব্য।কেননা কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ‘‘নারীদের তাদের পরিবারের অনুমতি নিয়েই তোমরা বিবাহ করো এবং তাদের অধিকারটুকু ভালোভাবে আদায় করে দাও।’’ (সূরা নিসা-২৫)

পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০৩

পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলাম উনার দৃষ্টিতে বিশেষ একটি গুণ দ্বীনদারী বা পরহেজগারী যাচাই করে দেখা আবশ্যক।

বিবাহের একটি অন্যতম গুণ হচ্ছে, ‘বর-কনের দ্বীনদার ও ধার্মিক হওয়া’। এ সম্পর্কে নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘চারটি গুণের কারণে একটি মেয়েকে(বা ছেলেকে) বিবাহ করার কথা বিবেচনা করা হয়। তার ধন-সম্পদ, তার বংশ গৌরব-সামাজিক মান-মর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য এবং দ্বীনদারী। কিন্তু তোমরা দ্বীনদার মেয়েকে(বা ছেলেকে) বিবাহ করে সফলতা অর্জন কর।’(বুখারী শরীফ)

উল্লেখিত হাদীস শরীফে চারটি গুণের মাঝে সর্বশেষ গুণটাই মূখ্য। প্রথম তিনটি গুণ বিদ্যমান থাকার পরেও যদি শেষের গুণ-দ্বীনদারী তথা পরহেজগারী না থাকে, তাহলে প্রথমোক্ত তিনটি গুণ মূল্যহীন হয়ে যাবে। অর্থাৎ বর-কনের মধ্যে অবশ্যই দ্বীনদারী তথা পরহেজগারী থাকতে হবে। যদি বরের দ্বীনদারী না থাকে তাহলে পিতার কখনই ঠিক হবেনা মেয়ে দেয়া, আর যদি মেয়ের পরহেজগারী না থাকে তাহলে ছেলের উচিত হবেনা মেয়েকে গ্রহন করা। উভয় পরিবারকে মধুময় সুন্নতি সংসারের জন্য এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা লক্ষ রাখতে হবে। কোনও ভাবেই হালকা করে দেখার এতটুকু সুযোগ দেয়নি ইসলাম-এটা মনে রাখতে হবে।

আরো হাদীস শরীফ উনার মধ্যে নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,- ‘তোমরা মেয়েদের (বা ছেলেদের) কেবল তাদের রূপ-সৌন্দর্য দেখেই বিয়ে করো না। কেননা, এ রূপ-সৌন্দর্য অনেক সময় তাদের ধ্বংসের কারণ হতে পারে। তাদের ধন-সম্পদের লোভে পড়েও বিয়ে করবে না। কেননা এ ধন-সম্পদ তাদের বিদ্রোহী ও অনমনীয় বানাতে পারে। বরং তাদের দ্বীনদারীর গুণ দেখেই তবে বিয়ে করবে। বস্ত্তত একজন দ্বীনদার দাসীও(দাসও) অনেক ভাল। (ইবনে মাযাহ শরীফ)।

পবিত্র কুরআন শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে খুব ভাল ব্যবহার(সুন্নতি আচরন) ও সৎভাবে তথা দ্বীনদারীর সাথে বসবাস করো। তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কর, তাহলে হতে পারে যে, তোমরা একটা জিনিসকে অপছন্দ করছ, অথচ আল্লাহ পাক তার মধ্যে বিপুল কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। (সূরা ৪ নিসা, আয়াত শরীফ-১৯)

এখানে বর-কনে উভায়কে দ্বীনদারী বা শরীয়ত সম্মত বিধিবদ্ধ জীবন-যাপনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ জান্নাতের ছোয়ায় থাকতে চাইলে পৃথিবীতে নিয়ম-মাফিক শরীয়ত সম্মত জীবন-যাপন করতে হবে। তবেই না বাধাহীন চির সুখের সুন্নতী মধূময় সংসার পাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা এখন বিবাহ দেয় টাকা-পয়সা বা রুপ দেখে। ফলে আজকের সংসারে সুন্নতের কোনও প্রতিফলন ঘটছে না। সঙ্গতকারনেই সেই সংসার গুলো ফিৎনায় পূর্ণ থাকছে । ছেলেমেয়ে কখনও নেক সন্তান হয়না। পিতা-মাতার কথা সন্তানরা ঠিকমত শুনেনা, যেমন পিতা-মাতা নিজেরাই এক অপরের কথাই আনুগত্য রাখেনা। আর একমাত্র দ্বীনদারী বা পরহেজগারী দ্বারাই সুখকর,জান্নাতি,মধুময়,শান্তির নীড় হবে নব দম্পত্তির সংসার। অন্যকোনও ভাবে কল্পনা করা যেতে পারে কিন্তু বাস্তবে সুখের হবেনা, হবে দু:খের নীড়।

অতএব বিয়ের আগে বর কনের দ্বীনদারী তথা পরহেজগারীতা দেখেই বিয়ে ঠিক করতে হবে। নইলে নই।

পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০৪

‘মোহরে ফাতেমি’ বা ’যাহরা ই মোহর’ হচ্ছে খাছ সুন্নত। বিয়ের আগে এটা নিয়ে তথা মোহরানা নিয়ে ফয়সালা হওয়া অবশ্যই কর্তব্য

মানুষ সামাজিক জীব। ঘর-সংসারে যে মায়া ও ভালোবাসার বন্ধনে আমাদের বসবাস তা পরম করুণাময় আল্লাহ পাক উনার অসংখ্য নেয়ামতের অন্যতম একটি।

সৃষ্টির সূচনা থেকে তিনি নারী ও পুরুষের মধ্যে বন্ধন তৈরি করেছেন। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারী আবদ্ধ হয় বিবাহবন্ধনে এবং তৈরি হয় সুখময় সংসার, তারপর সন্তান-সন্ততি। এভাবেই এগিয়ে চলেছে পৃথিবী।

যে মহান দয়াময় অদৃশ্য থেকে এসব সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাদের এ নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পবিত্র কুরআন শরীফে। আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন , ‘‘এই যে তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন- যাদের কাছে তোমরা প্রশান্তির আশ্রয় নাও। তিনিই তো তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা এবং মায়া গেঁথে দিয়েছেন, এটা তো উনারই নিদর্শন।’’ (সূরা রূম-২১)

এ বৈবাহিক সম্পর্কের সূচনায় মহান আল্লাহ পাক নারীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে নারীর জন্য মোহরানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যা আদায় করা পুরুষের জন্য আবশ্যক। ইসলাম উনার পরিভাষায় দেনমোহর বা মোহরানা একান্তই কনের অধিকার ও প্রাপ্য, যা আদায় করা বরের জন্য ফরজ। প্রতিটি বিবাহিত পুরুষের ওপর অবশ্য আদায়যোগ্য আমল। হোক তা নগদ কিংবা বাকি। আজ কিংবা কাল।

মোহর মূলত একটি সম্মানী যা স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে থাকে। এটা নারীর মূল্য নয় যে তা পরিশোধ করার পর মনে করতে হবে, এ নারী এখন স্বামীর কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। আবার তেমনিভাবে তা শুধু কথার কথাও নয়, যে শুধু মুখে মুখে নির্ধারণ করা হলো কিন্তু জীবনভর তা দেওয়ার কোনো তাগিদ থাকলো না। বরং স্ত্রীকে নিজের ঘরে আনার সময় উপহার হিসেবে তাকে এ মোহর দিতে হবে এবং সম্মান জানিয়ে তাকে নিজের ঘরে তুলতে হবে।

এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফে বেশ কয়েক জায়গায় স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘‘আর তোমরা নারীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও স্বেচ্ছায়, তবে তারা যদি তা থেকে কোনো অংশ মাফ করে দেয়, তখন তা তোমরা ভোগ করতে পার।’’
আল্লাহ পাক তিনি আরও ইরশাদ মুবারক করেন , ‘‘নারীদের তাদের পরিবারের অনুমতি নিয়েই তোমরা বিবাহ করো এবং তাদের অধিকারটুকু ভালোভাবে আদায় করে দাও।’’ (সূরা নিসা-২৫)

একই প্রসঙ্গ মহান আল্লাহ পাক আরও উল্লেখ করেছেন সূরা মুমতাহিনার ১০ নং আয়াত শরীফে এবং আরও কয়েক জায়গায়। বারবার তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন নারীর অধিকার ও সম্মান যেন আদায় করা হয়।
বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে মোহর আদায় করা উচিত। তবে কারণবশত তখন অপারগ হলে কবে আদায় করবে- তা নির্ধারণ করতে হবে। নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জাহিরীভাবে অবস্থানের সময় এবং সাহাবা ই ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সময়েও সাধারনত কেউ নারীর মোহরানা বাকি রেখে বিয়ে করতেন না। নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ হাত মুবারকে যেসব বিয়ে দিয়েছেন, হাদীস শরীফ উনার কিতাবসমূহে সেসবের বিবরণে দেখা যায়, তিনি নগদ মোহরানার বিনিময়ে বিয়ে করিয়েছেন- হোক তা লোহার আংটি কিংবা যুদ্ধে ব্যবহৃত বর্ম। বাকিতে মোহরানা দেওয়ার প্রচলন তখন তেমন ছিলনা।

অপ্রিয় হলেও সত্য, এ মোহরানা আদায়ের বেলায় আমাদের সমাজের পুরুষ ব্যাক্তিরা নানান ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে থাকে। বিয়ের মজলিসে হয়তো সবাইকে শোনানোর জন্য মোহরানা ধরা হয় লাখ টাকা- অথচ সারা জীবন স্ত্রীর হাতে এর অর্ধেকও তুলে দেওয়ার সৎসাহসটুকু তারা দেখাতে পারেন না। অনেকে আবার কৌশলে মাফ চেয়ে নেন। এর সঙ্গে উল্টো যোগ হয়েছে লোভ লালসায় ঘেরা আজকের এ সভ্যতার নতুন অভিশাপ ‘যৌতুক’। মেয়ের বাবার কাছে ‘জামাই’কে খুশি করার জন্য উপঢৌকনের নামে ‘যৌতুক’ দাবি করে বরপক্ষ। আর এ অভিশাপে বিষাক্ত হচ্ছে কতো সুখের সংসার। আমাদের নীচু মানসিকতার এ বহিঃপ্রকাশ শুধু দুঃখজনক নয়, চরম অপরাধও।

যেসব বিবাহিত পুরুষ আজও নিজেদের জীবনসঙ্গিনীর দেনমোহর আদায় করতে পারেননি কিংবা আদৌ তা পরিশোধের ইচ্ছা নেই, তাদের ব্যাপারে বায়হাকী শরীফে রয়েছে, নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে পুরুষ বিয়ে করলো এবং মৃত্যু পর্যন্ত সে স্ত্রীর মোহরানা আদায়ের ইচ্ছাও করেনি, তবে সে অবৈধ ব্যভিচারকারী (ধর্ষণকারী) হিসেবে গণ্য হবে।

ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় এসেছে, নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, মোহর আদায় করার নিয়ত ছাড়া যে ব্যক্তি কোনো নারীকে বিয়ে করে আর আল্লাহ পাক তো ভালো করেই জানেন যে তার মনে মোহরের নিয়ত নেই, তবে এই লোক যেন আল্লাহ পাক উনাকে ধোঁকা দেওয়ার স্পর্ধা দেখালো এবং অন্যায়ভাবে তার স্ত্রীকে ভোগ করলো। কিয়ামতের দিন সে ব্যভিচারকারী পুরুষ হিসেবে উপস্থিত হবে।

ফক্বীহ উলামায়ে ক্বিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সর্বসম্মত মত হলো, যে পুরুষ তার জীবদ্দশায় এ মোহরানা আদায় করেনি, মৃত্যুর পরও তা অন্যান্য ঋণের মতো তার কাঁধে রয়ে যাবে। ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং অন্যান্য ফক্বীহ উনারা এমনও রায় দিয়েছেন, মোহরানা না পাওয়ার কারণে স্বামীর কাছে যেতে অস্বীকার করা কিংবা তাকে স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অথবা তার সঙ্গে কোথাও যেতে না চাওয়ার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে। এমন অবস্থায়ও তার খরচাদি স্বামীর ওপরই বর্তাবে। কারণ মোহরানা এবং নিজের ভরণপোষণ দাবি করা স্ত্রীর অধিকার। যে কোনোভাবেই স্ত্রী তা চাইতে পারে। (দুররে মুখতার)

এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, পাত্রীদের পক্ষ থেকে যদি পাত্রের সাধ্য অনুযায়ী মোহরানা ধরা হয়, তবে তা সবচেয়ে উত্তম। একথাও সত্য যে, মোহরানার ব্যাপারে ইসলাম সর্বনিম্ন কিংবা সর্বোচ্চ অংক বেঁধে দেয়নি। বরং তা সুন্নত এবং সাধ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এটাও বলেছেন যে, সাধারণ আয়োজনের বিয়েই সর্বোত্তম বরকতময়।

তার মানে এই নয় যে এতো সামান্য পরিমাণ মোহর ধরা হলো, যা স্ত্রীর সম্মান উপযোগী নয় কিংবা এতো চড়াও নয় যা স্বামীর সাধ্যের বাইরে।

ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হচ্ছে দশ দিরহাম বা ৩০ গ্রাম রূপার সমমূল্য।

নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিজের মেয়ে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম এবং উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেলায়ও যে মোহরানা ধরেছিলেন তার পরিমাণ পাঁচশ’ দিরহাম বা ১৩১ তোলা ৩ মাশা রূপার সমমূল্য। (ইবনে মাজাহ-১৫৩২)

নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেলায়ও এ পরিমাণ মোহরানা আদায় করেছেন। তবে উম্মে হাবিবা আলাইহাস সালাম উনার বেলায় এর পরিমাণ ছিল চার হাজার দিরহাম। (আরও বিস্তারিত জানতে মুসলিম শরীফ-১৪২৬, আবু দাউদ-২১০৫, নাসায়ী-৬/১১৬-১১১৯)

মনে রাখা প্রয়োজন, ‘মোহরে ফাতেমি’ বা ’যাহরা ই মোহর’ হচ্ছে খাছ সুন্নত।যা পাঁচশ’ দিরহাম বা ১৩১ তোলা ৩ মাশা রূপার সমমূল্য। আর এ পরিমাণকে বরকতময় মনে করে তা হিসাব করা অবশ্যই জরুরী। এই মোহরের জন্য রয়েছে আলাদা রহমত ও বরকত। এটা সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
আরেকটি বিষয় সবার জানা থাকা প্রয়োজন, বিয়ের সময় নববধূকে যেসব গহনা দেওয়া হয় তা যদি তাকে সম্পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে যেন স্ত্রী চাইলে তা বিক্রি কিংবা কাউকে উপহার অথবা যা খুশি করতে পারেন এবং স্বামী তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, আমি তোমাকে এগুলো মোহর হিসেবে দিচ্ছি- তবে তা মোহরানা হিসেবে ধরা যাবে এবং কখনোই তা স্ত্রীর কাছে ফেরত চাওয়া যাবে না, এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদের পরও নয়। নতুবা যদি তা তাকে শুধু ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়, তবে তা মোহরানা হিসেবে আদায় ধরা হবে না। মোহরানা নারীর একচ্ছত্র অধিকার, তিনি এ দিয়ে যা খুশি তা করতে পারেন। স্বামী, বাবা কিংবা অন্য কারোর এ থেকে কিছু নেওয়ার অধিকার নেই। সমাজে প্রচলিত যেসব রীতিনীতি রয়েছে, সেসবের ফাঁক ফোকরে যেন মোহরের অধিকার থেকে স্ত্রী বঞ্চিত না হন, তা খেয়াল করা সব সচেতন মুমিন পুরুষের অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য।

জীবনভর যে নারীর ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে সুখী ও নিশ্চিন্ত জীবন পার করে দিচ্ছেন স্বামীরা, এমন ভালোবাসার মেয়েটিকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে কিয়ামতের মাঠে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে ‘ব্যভিচারকারীদের’ সঙ্গে উপস্থিত হওয়া নিশ্চয়ই কারো কাম্য নয়।

পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০৫

হে আমার ছেলে, প্রথমেই আমি আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করছি এ জন্য যে তিনি আমার জীবনটাকে এতটুকু প্রলম্বিত করেছেন যে আমি তোমার বিয়ের রাত দেখতে পাচ্ছি। তোমাকে আল্লাহ পাক তোমার পুরুষত্বের পূর্ণতায় পৌঁছেছেন। আজ তুমি তোমার দীনের অর্ধেক পুরো করতে যাচ্ছো। হ্যাঁ, এখন তুমি সেই জীবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছো যেখানে তুমি একটি মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছিলে। কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়া যা ইচ্ছে তা-ই করেছো এতদিন। কোনো চিন্তা ছাড়াই সমুদ্রে গিয়ে লাফিয়ে পড়েছো। সেখান থেকে তুমি যাচ্ছো এখন এক কর্তব্যপরায়ণতা ও পূর্ণতার জগতে।

একজন পিতা সেদিন নিজেকে সুখী মনে করেন যেদিন তিনি নিজের সন্তানকে পুরুষ হয়ে উঠতে দেখেন। তুমি এক নব্য জগতে এবং এক নতুন জীবনে পা রাখতে যাচ্ছ। তাতে অনেক কল্যাণ ও সৌন্দর্য রয়েছে, সুন্দরভাবে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করতে পারলে তুমি তা দেখতে পাবে। আবার তাতে অনেক অপ্রিয় ও তিক্ত দিক রয়েছে যা তোমার জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। তাই তোমাকে যথাযথ পরিচালনা ও উত্তরোত্তর উন্নতি করতে শিখতে হবে।এক্ষেত্রে একমাত্র ইসলামী জীবন তথা সুন্নতি সংসার ই তোমাকে যথাযথ পরিচালনা করতে শিখাবে। সুন্নতি জীবনেই আছে একমাত্র কল্যান। আর অবশ্যই তোমাকে জীবন সঙ্গীনি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তুমি দশটি বিষয়ে লক্ষ্য না রাখলে নিজ ঘরে শান্তি পাবে না। নিজের স্ত্রীর জন্য তুমি এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখবে। অতএব কথাগুলো মনে রেখ এবং এসব অর্জনে সচেষ্ট থেকো :

প্রথম বিষয় হলো : কখনই সুন্নতের বাইরে স্ত্রীর কাছে কিছু আসা করবে না। সব সময় সুন্নতকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়ে মেনে চলবে। স্ত্রীকেও সুন্নত অনুযায়ী চলার গুরুত্ব বুঝাবে। সুন্নতের মধ্যেই প্রকৃত সুখী সংসার। তাছাড়া সাব ভন্ডামী।

দ্বিতীয় বিষয় হলো : স্ত্রীরা প্রেম ও ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ পছন্দ করে। এবং তারা চায় ভালোবাসার সুস্পষ্ট উচ্চারণ শুনতে চায়। অতএব তোমার স্ত্রীর সাথে এ ব্যাপারে কার্পণ্য দেখাবে না। এ ব্যাপারে যদি কার্পণ্য করো, তবে তুমি তার ও নিজের মধ্যে নির্দয়তার দেয়াল টেনে দিলে। স্বামী-স্ত্রীর নির্মল ভালোবাসার ব্যকরণে ভুল করলে।

তৃতীয় বিষয় হলো : স্ত্রীরা কঠোর ও অনড় স্বভাবের পুরুষদের অপছন্দ করে, আর দুর্বল ও কোমল চিত্তধারী পুরুষদের ব্যবহার করে। অতএব প্রতিটি গুণকে স্বস্থানে রাখবে। কারণ এটি ভালোবাসা ডেকে আনে এবং প্রশান্তি ত্বরান্বিত করে।

চতুর্থ বিষয় হলো : মেয়েরা স্বামীর কাছে তা-ই প্রত্যাশা করে স্বামীরা স্ত্রীর কাছে যা প্রত্যাশা করে। যেমন : ভদ্রোচিত কথা, সুন্দর চেহারা, পরিচ্ছন্ন বসন ও সুগন্ধি। অতএব তোমার প্রতিটি অবস্থায় এসবের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। স্ত্রীকে নিজের মতো করে কাছে পেতে তার কাছে এমন অবস্থায় ঘেঁষবে না যখন তোমার শরীর ঘামে জবজবে। তোমার কাপড় ময়লা। কারণ, তুমি তা করলে যদিও সে তোমার আনুগত্য দেখাবে; কিন্তু তার অন্তরে তুমি এক ধরনের বিতৃষ্ণা তৈরি করে দিলে। ফলে তার শরীরই তোমার ডাকে সাড়া দেবে। তবে অন্তর তার পালিয়ে বেড়াবে তোমার থেকে।

পঞ্চম বিষয় হলো :ঘর হলো নারীদের রাজত্ব। ঘরের মধ্যে তারা নিজেকে নিজের আসনে সমাসীন ভাবে। নিজেকে সেখানকার নেতা মনে করে। অতএব তার সাজানো এই প্রশান্তির রাজ্যটিকে তুমি তছনছ করতে যাবে না। এ আসন থেকে তাকে নামাবার চেষ্টাও করবে না। তুমি যদি তা-ই করো, তবে তাকে যেন তার রাজত্ব থেকে উচ্ছেদ করলে। আর কোনো রাজার জন্য তার চেয়ে বড় শত্রু আর কেউ হতে পারে না যে কি-না তার রাজত্ব নিয়ে টানাটানি করে। যদিও সে প্রকাশ্যে তোমাকে হয়তো কিছু বলবে না। কিন্তু এতে করে পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভালোবাসার পরিবেশ দূষিত হবে।

ষষ্ঠ বিষয় হলো :নারী যেমন চায় তার স্বামীকে পেতে; তেমনি তার পরিবারকেও সে হারাতে চায় না। অতএব তুমি কিন্তু তার পরিবারের সঙ্গে নিজেকে এক পাল্লায় মাপতে যাবে না। যদি এমন চাও যে সে হয়তো তোমার হবে; নয়তো পরিবারের। তবে সে যদিও তোমাকেই অগ্রাধিকার দেবে। কিন্তু মনে মনে ঠিকই বিষণ্ন হবে। যার ভার সে তোমার দৈনন্দিন জীবন পর্যন্ত বয়ে আনবে।

সপ্তম বিষয় হলো : নিশ্চয় নারীকে সবচেয়ে বাঁকা হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি তার দোষ নয়। বরং এ তার সৌন্দর্যের রহস্য। তার আকর্ষণের চাবিকাঠি। যেমন ভ্রুর সৌন্দর্য তার বক্রতায়। অতএব সে কোনো ভুল করলে তার ওপর এমন হামলা চালাবেনা যাতে কোনো সহমর্মিতা বা সদয়তা নেই। বাঁকাকে সোজা করতে গেলে তুমি তা ভেঙ্গেই ফেলবে। এ ক্ষেত্রে তা হলো তাকে তালাক প্রদান। পক্ষান্তরে ভুলগুলোয় প্রশ্রয় দিলে তবে তার বক্রতা বেড়েই যাবে। সে নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নেবে। ফলে সে তোমার জন্য যেমন নরম হবে না। তেমনি শুনবে না তোমার কথা।

অষ্টম বিষয় হলো : নারীদের সৃষ্টিই করা হয়েছে স্বামীর অকৃতজ্ঞতা এবং উপকার অস্বীকারের স্বাধীনতা দিয়ে। তুমি যদি যুগযুগ ধরে তাদের কারো প্রতি সহৃদয়তা ও সদাচার দেখাও তারপর শুধু একটিবার তার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার কর তবে সে বলবে, তোমার কাছে আমি জীবনে ভালো কিছুই পেলাম না। অতএব তাদের এ বৈশিষ্ট্য যেন তোমায় তাকে অপছন্দ বা ঘৃণায় প্ররোচিত না করে। কারণ, তোমার কাছে তার এ বৈশিষ্ট্যটি খারাপ লাগলেও অনেক গুণ দেখবে তার ভালো লাগার মতো।

নবম বিষয় হলো : নানাবিধ শারীরিক দুর্বলতা ও মানসিক ক্লান্তির মাঝ দিয়ে নারী জীবন বয়ে চলে। এ দিকে লক্ষ্য রেখেই আল্লাহ পাক তিনি তাদের জন্য কিছু ফরয পর্যন্ত ক্ষমা করে দিয়েছেন যা এ সময় কর্তব্য ছিল। যেমন রক্তস্রাব ও সন্তান প্রসবকালে তার জন্য পুরোপুরিভাবে সালাত মাফ করে দিয়েছেন। এ সময়দুটোয় রোজা পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। যতক্ষণ না তার শরীরিক সুস্থতা ফিরে আসে এবং তার মেজাজ স্বাভাবিক হয়ে যায়। অতএব এ সময়গুলোয় তুমি আল্লাহ পাক ও ইবাদতমুখী হয়ে যাবে। কারণ, তার জন্য আল্লাহ পাক যেমন ফরযকে হালকা করে দিয়েছেন তেমনি তার থেকে তোমার চাহিদা ও নির্দেশও হালকা করে দিয়েছেন।

দশম বিষয় হলো : মনে রাখবে স্ত্রী কিন্তু তোমার কাছে একজন বন্দিনীর মতো। অতএব তার বন্দিত্বের প্রতি সদয় থাকবে এবং তার দুর্বলতাগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। তাহলে সে হবে তোমার জন্য সর্বোত্তম সম্পদ। সে তোমার সর্বোত্কৃষ্ট সঙ্গী হবে। আল্লাহ পাক তোমার কল্যাণ করুন।

পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০৬

বিয়ের সময় মেয়েকে নসীহত করতে হবে ।যেন ছেলের প্রতি আনুগত্যের খিলাফ করে সংসার না হারায়

আদরের নন্দিনী মেয়েকে চিরতরে একজনের কাছে তুলে দিতে একজন মায়ের কী কষ্ট লাগে, মমতাময়ী মায়ের তখন কী আবেগের ঢেউ খেলে যায়, উনার চোখে তখন কত আনন্দ-বেদনার ভাবনা ভীড় করে তা একমাত্র ওই মা জননীই জানেন। কিন্তু শুধু চোখের পানি ফেলে কলিজার টুকরা মেয়েকে শুধু বিদায় জানানোই নয়, তখন যদি তাকে এমন কিছু উপদেশ শুনিয়ে দেয়া যায় যা তার সারা জীবনের সম্বল হবে, যা তার আগামীর দিনগুলোকে উজ্জ্বল সুখময় করবে তবে তা বড্ড ভালো হয়। সে থেকেই নিচের এই অমূল্য রত্নতুল্য উপদেশগুলো সংগ্রহ করে তুলে ধরা হলো। আল্লাহ পাক আমাদের প্রতিটি বোনের এবং মেয়ের জীবনকে করুন বর্ণিল ও সুখময় সুন্নতি চাদরে ঢাকা একটি সংসারের রাজরানী।

হে আমার মেয়ে, তুমি তোমার বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছো। আরও ছেড়ে যাচ্ছো যেখানে তুমি জন্মেছিলে এবং যে বাসস্থানে তুমি প্রতিপালিত হয়েছো। যাচ্ছো এমন পরিবেশে যার সঙ্গে তুমি মোটেও পরিচিত নও। মিলিত হবে এমন সঙ্গীদের সঙ্গে যাদের তুমি চেনো না।

অতএব তুমি তার প্রতি নরম হয়ে যাও। সে তোমার প্রতি নরম হয়ে যাবে। আর তার জন্য তুমি ১০টি বৈশিষ্ট্য ধারণ করো, তবে সে তোমার জন্য সঞ্চিত ধন হয়ে যাবে।

প্রথমটি হলো: কখনই সুন্নতের বাইরে স্বামীর কাছে কিছু আসা করবে না। সব সময় সুন্নতকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়ে মেনে চলবে। স্বমীকেও সুন্নত অনুযায়ী চলার গুরুত্ব বুঝাবে। সুন্নতের মধ্যেই প্রকৃত সুখী সংসার। তাছাড়া সব ভন্ডামী। আজীবন মনে রাখবে।

দ্বিতীয়টি হলো : স্বামীর সঙ্গে থাকবে অল্পে তুষ্টির সঙ্গে। এবং জীবনযাপন করবে আনুগত্য ও মান্যতার ভেতর দিয়ে।

তৃতীয় হলো: স্বামীর নজরে পড়ার জায়গাগুলো দেখাশোনা করবে।তার দুই চোখ যেন তোমার কুৎসিত কিছুর প্রতি পতিত না হয়। সুপ্রসিদ্ধ সুন্দরের সর্বোত্তম হলো চোখের সুরমা।

চতুর্থটি হলো : তোমার স্বামী উনার নাকে লাগার স্থানগুলো খুঁজে ফিরবে। আর সুবাস ছাড়া তোমার কাছে যেন কোনো গন্ধ না পায়। আর পবিত্র সুবাসগুলোর আদি ও সেরা হলো সাবান ও পানি।

পঞ্চমটি হলো: স্বামীকে খাওয়াবার সুযোগ তালাশ করবে। কারণ ক্ষুধার তাপ মানুষকে তাতিয়ে দেয়।

ষষ্ঠটি হলো : তোমার স্বামীর নিদ্রার সময় নিরব থাকবে। কেননা ঘুম থেকে কেঁপে ওঠা তাকে ক্ষেপিয়ে দেয়।

সপ্তম ও অষ্টম হলো :স্বামীর বাসা ও সম্পদের যত্ন নেবে। এবং উনার ও উনার পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। পরিপাটি যেন থাকে সবকিছু।

নবম ও দশম হলো : স্বামীর কোনো নির্দেশ অমান্য করবে না। এবং তার কোনো দোষ খুঁজে বের করবে না। কারণ, তুমি তার নির্দেশের অবাধ্য হলে অর্থ তার মনটাকে চটিয়ে দিলে। যদি তার কোনো দোষ প্রকাশ করলে তো তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করায় অনিরাপদ হয়ে গেলে। বরং স্বামীর খারাপ কিছু দেখলে সুবিধা সময়ে বুঝিয়ে বলবে। রাগারাগি করবে না।

এরপর আরও মনে রাখবে, উনার বিষণ্নতার সময় আনন্দ প্রকাশ করবে না। আবার উনার আনন্দের সময় বিষণ্নতা প্রকাশ করবে না। কারণ প্রথমটি তার কাছে অবহেলা মনে হবে এবং দ্বিতীয়টি তাকে বিরক্ত করবে। তাকে সবচে মর্যাদা তুমি তখনই দেবে যখন উনাকে সবচে বেশি সম্মান করবে।

আর এ অবস্থায় তুমি ততোখন পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না, যতখন না তোমার পছন্দ বা অপছন্দের বিষয়ে তোমার স্বামীর সন্তুষ্টিকে তোমার সন্তুষ্টির ওপর এবং উনার চাওয়াকে তোমার চাওয়ার ওপর অগ্রাধিকার না দাও। অবশেষে দুয়া করি, আল্লাহ পাক তোমার সার্বিক কল্যাণ করুন। তোমাদের দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করুন। আমীন।

পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০৭

যৌতুক নেয়া বা দেয়া সম্পূর্ণ হারাম। মেয়ের থেকে বরপক্ষকে এ হিন্দুয়ানী কু-প্রথা ও হারাম থেকে বের হয়ে আসার সর্বাগ্রে চিন্তা করতে হবে।



যৌতুকের পরিচয়:

যৌতুক বাংলা শব্দ। এর প্রতিশব্দ পণ। দু’টোই সংস্কৃত থেকে এসেছে। হিন্দীতে বলে দহীজ (উবযরল) ইংরেজিতে Dowry (ডাওয়ারি)।

ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে-

`Dowry’ : The Property that a wife or a wifes family give to her husband upon marriage. যৌতুক হল বিবাহ উপলক্ষে কন্যা বা কন্যার পরিবারের পক্ষ থেকে বরকে প্রদেয় সম্পদ। (The New Encyclopedia Britannica V. 4, P. 205)

যৌতুকের উৎপত্তি:

যৌতুকের উৎপত্তি প্রাচীন হিন্দুসমাজে , এটি প্রায় স্বীকৃত। যৌতুক প্রথার উৎপত্তি হিসাবে ‘কন্যাদান’ অথবা ‘স্ত্রীদান’ নামক বৈদিক যুগের একটি ধর্মীয় রীতিকে গণ্য করা হয়। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী পিতার সম্পত্তিতে কন্যার কোন অধিকার নেই। বিয়ের পর থেকে কন্যার দায়-দায়িত্ব আর পিতার থাকে না, যা কন্যার স্বামীর উপরে বর্তায়। এজন্য বিয়ের সময় পিতা কন্যাদান রীতির মাধ্যমে কন্যার স্বামীকে খুশী হয়ে কিছু উপহার বা দক্ষিনা দেয় (সামর্থ অনুযায়ী)। আবার পিতার দক্ষিনা ছাড়া কন্যাদান তথা বিবাহ ধর্মীয়ভাবে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বৈদিক সময়ের সামর্থ্যানুযায়ী দক্ষিনাই কালাতিক্রমে বর্তমানে বাধ্যতামূলক ও সাধ্যাতিরিক্ত যৌতুকে বিবর্তিত হয়েছে । শুরুর দিকে কন্যাদান উচ্চবর্ণের হিন্দু তথা ব্রাহ্মণ সমাজেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে নিম্নতর বর্ণের হিন্দুরাও তা অনুসরণ করা শুরু করে। প্রসংগত হিন্দু ধর্মে বিয়ে হয় চিরজীবনের জন্য। এজন্য ধর্মীয়ভাবে বিবাহবিচ্ছেদ ও পুনঃবিবাহের প্রচলন নেই। বিবিসি’র রিপোর্টে দেখা যায় ভারতে প্রায় ৪০ মিলিয়ন বিধবা মানবেতর জীবনযাপন করে। অনেক গবেষকের মতে যৌতুক প্রথার সাথে এই বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ।

এক গবেষণায় দেখা যায় ১৯৬০ সালে ভারতে যৌতুকের হার ছিল ৯৪% । অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার টিভির ডকুমেন্টারীর তথ্য অনুযায়ী ভারতের ৯৯% পুরুষ বিয়েতে যৌতুক নিয়ে থাকে। বর্তমানে ছেলে পক্ষের বিত্তশালী হওয়ার সহজ মাধ্যম হচ্ছে যৌতুক। এটা রীতিমতো ব্যবসায় পরিণত হয়েছে, যা আর শুধু বিয়েতে সীমাবদ্ধ নেই। বাচ্চা গর্ভধারণ, বাচ্চা প্রসব, প্রতিটি পূজা-পার্বনেও যৌতুক দিতে হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের এক কন্যাকে বিয়ে দিতেই পুরো পরিবারকে হতে হয় নিঃস্ব ও সহায়-সম্বলহীন। গবেষণায় দেখা যায়, গড়ে যৌতুকে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ হচ্ছে এক পরিবারের সমস্ত অর্থের ৬৮% অথবা ছয় বছরের বাৎসরিক আয়ের সমান । শিক্ষিত সমাজে উচ্চ হারে যৌতুক নেয়ার প্রবণতা বেশী লক্ষ্য করা যায় ( Dowry Market)। সমাজের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে যৌতুক ক্যালকুলেটর (Dowry Calculator) এর মাধ্যমে।

হিন্দুসমাজের কালক্রমে বরপণে রূপান্তরিত হওয়ার পিছনে যেসব কারণ রয়েছে তা হল :

শ্রেণীবৈষম্য বা কুলিনত্ব:

প্রাচীনকালে অনার্যরা সমাজে মর্যাদা পাওয়ার আশায় আর্যদের নিকট তাদের কন্যা সম্পাদন করত। বিনিময়ে মোটা অংকের সম্পদ দিত। তখন থেকেই যৌতুক প্রথা কালক্রমে একটি সামাজিক রূপ নেয়। (ইসলাম ও যৌতুক, প্রাগুক্ত)

হিন্দুসমাজের এই শ্রেণীবৈষম্য বা কুলিনত্বের কারণে হিন্দুসমাজে আজো যৌতুক প্রথা বেশি। বিশেষ করে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের মাঝে এর প্রচলন অনেক। উনবিংশ শতাব্দিতে দেখা যায়, উচ্চবর্ণের বাহ্মণরা প্রচুর যৌতুক পাওয়ার আশায় শতাধিক বিবাহ করত। এসব স্ত্রী তাদের পিতৃগৃহেই থাকত। স্বামীরা বছরে একবার দেখা করতে আসত এবং প্রচুর আতিথেয়তা ভোগ করে যাওয়ার সময় অনেক যৌতুক নিয়ে যেত। (বাংলা পিডিয়া ৮/৪৫৫)

শ্রেণীবৈষম্য বা কুলিনত্বে নতুন মাত্রার সংযোজন:

উনবিংশ শতাব্দী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিও কুলিনত্বের মর্যাদা লাভ করে। তখন হিন্দুসমাজে একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্ম হয়। তারা ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করে ডিগ্রী অর্জন করে। এতে চাকুরির বাজারে তাদের দাম বেড়ে যায় এবং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। তখন কন্যাপক্ষ বিভিন্ন উপহার-উপঢৌকন দিয়ে বরপক্ষকে আকর্ষণের চেষ্টা করত। তাদের উপহারের মান ও পরিমাণের উপর নির্ভর করত পাত্রের পিতা-মাতার সন্তুষ্টি। এককথায় এটি দাবি করে নেওয়ার পর্যায়ে চলে যায়।

আশা ছিল শিক্ষার ফলে কুলিনত্বের ক্ষতিকর দিকগুলো দূরিভূত হবে। কিন্তু তা না হয়ে বরং শ্রেণীবৈষম্য বা কুলিনত্ব আরো শক্তিশালী হয়েছে। (বাংলা পিডিয়া ৮/৪৮৮; ইসলাম ও যৌতুক পৃ. ৮৬, ৫২)

হিন্দুসমাজের উত্তরাধিকার আইন:

একে যৌতুক প্রথার উৎপত্তির একটি মৌলিক কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। হিন্দু-আইনের মিতাক্ষারা ও দায়ভাগ উভয় মতবাদের আলোকেই সাধারণত কন্যা পিতার সম্পত্তি পায় না। বিশেষ করে দায়ভাগ মতবাদ অনুযায়ী সম্পত্তিতে বিবাহিতা কন্যার অংশিদারত্ব অনিশ্চিত।

হিন্দু আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, বা বিধবা থাকতে কন্যা পিতার পরিত্যক্ত সম্পদ লাভ করতে পারে না এবং অবিবাহিতা কন্যা বিবাহিতা কন্যার উপর প্রাধান্য পায়। কন্যা কখনো এই সম্পত্তি পেলে তা শুধু ভোগের অধিকার থাকে। তাতে স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় না। (হিন্দু আইন, পৃ. ৩৫)

হিন্দু আইনে এ সম্পত্তিকে নারীর মূল সম্পত্তি বা স্ত্রীধন বলা হয় না। নারীর স্ত্রীধন বলতে বুঝায়, যাতে তার স্বত্বও প্রতিষ্ঠিত হয় তা হল, পিতামাতা, বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য আত্মীয়ের দান এবং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল যৌতুক। (হিন্দু আইন, পৃ. ৫৮-৬৯)

হিন্দুসমাজে নারীরা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দিক থেকে নির্যাতিত। উত্তরাধিকারের বিষয়েও তারা চরমভাবে বঞ্চিত হয়েছে। বৌদ্ধায়নের শাস্ত্রে লেখা আছে, স্ত্রী লোকেরা বুদ্ধিহীন, তাহাদের কোন বিচারশক্তি নাই, তাহারা উত্তরাধিকার লাভের অযোগ্য। (হিন্দু আইন, পৃ. ৫১)

হিন্দু আইনে উত্তরাধিকার সূত্রে নারীরা কোন স্ত্রীধন (যে সম্পদে নারীর স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়) পায় না। তাই বিয়ের সময় যৌতুক দেওয়ার নামে তাদের স্ত্রীধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। (হিন্দু আইন, পৃ. ৫৮-৬৯)

এটিই পরবর্তীতে বর্তমান সর্বগ্রাসী যৌতুকের রূপ লাভ করেছে।

আরো লক্ষণীয় হল, হিন্দু আইনে স্বামীর সম্পত্তিতে বিধবার অংশগ্রহণ প্রায় অনিশ্চিত। কারণ পুত্র, পৌত্র অথবা প্রপৌত্রের মধ্যে কেউ জীবিত থাকলে বিধবা তার স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির কিছুই পায় না। ওরা না থাকলে যদি কখনো পায় তবে তা শুধু ভোগস্বত্ব। এজন্য বিধবার মৃত্যুর পর স্বামী থেকে প্রাপ্ত সম্পদে তার পরবর্তী ওয়ারিসরা উত্তরাধিকার না হয়ে তার মৃত স্বামীর ওয়ারিশরা উত্তরাধিকার হয়। (হিন্দু আইন, পৃ. ৩৪)

বিধবার একমাত্র স্ত্রীধন হচ্ছে বিভিন্ন দান ও বিয়ের সময় প্রাপ্ত যৌতুক। ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় বিষয়টি এভাবে বলা হয়েছে।

Another function of a dowry in some societies has been to provide the wife which a means of support in case of her husband’s death. In this latter case the dowry is a substitute for a compulsory share in the succession or the inheritance of the husband’s landed property. (The New Encyclopaedia Britannica, V. : 4, P. : 204)

মোদ্দাকথা হিন্দু সমাজের বিভিন্ন রীতিই বর্তমান ভয়াবহ যৌতুক প্রথার উৎপত্তির মূল কারণ। ১৯ শতক থেকে ২০ শতকের মধ্যে ইউরোপেও এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। (ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা, প্রাগুক্ত)

বাংলাদেশে কখন ও কীভাবে যৌতুক প্রথার প্রচলন শুরু হয়

মুসলিম নিয়ম অনুযায়ী পাত্রীকে মোহরানা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে উল্টো পাত্রী পক্ষকে যৌতুক দিতে বাধ্য করা হচ্ছে! ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যৌতুক নামক প্রথা অপরিচিত ছিল। সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৯৪৫-১৯৬০ সালে যৌতুকের হার ছিল ৩%। ১৯৮০ সালে আইনগতভাবে যৌতুক নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তারপর থেকে যৌতুকের হার অনেকাংশে বেড়েছে, যা ২০০৩ সালে ছিল ৭৬% । সাম্প্রতিক ব্র্যাক ও আমেরিকার পপুলেশন কাউন্সিলের সমীক্ষা অনুযারী বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ভেদে যৌতুকের হার হচ্ছে ২০% থেকে ৮০% ।

কিন্তু প্রাচীন মুসলিম সামজে যৌতুকের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। ইতিহাসেও পাওয়া যায় না।

ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকায় এর ইতিহাস আলোচনা করতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

বিংশ শতকের শুরুতে হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজকে যখন যৌতুক প্রথা অস্থির করে তুলেছিল তখন মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজ নিশ্চিন্ত ও দুশ্চিন্তামুক্ত ছিল। শুধু তাই নয়, মুসলিম সমাজের মেয়েদের কদরও ছিল অনেক বেশি।

দীর্ঘদিন যাবৎ হিন্দু সমাজ ও মুসলিম সমাজ একত্রে বসবাসের কারণে সাম্প্রতিককালে আরো বিভিন্ন কুপ্রথার মতো এই যৌতুক কুপ্রথাটিও মুসলিম সমাজে সংক্রমিত হয়। (ইসলামের বৈধ ও নৈতিক প্রেক্ষাপট, তমিজুল হক, ব্যরিস্টার এট ল., পৃ. ৫২৮)

বাংলাদেশে যৌতুক প্রথা প্রচলনের কিছু কারণ:

১. ইসলাম থেকে সরে যাওয়া যৌতুক প্রথা বাংলাদেশে চালু হওয়ার মূল কারণ।

২. দীর্ঘদিন যাবৎ হিন্দু সমাজ ও মুসলিম সমাজ একত্রে বসবাসের কারণে।

৩. সমাজ বিজ্ঞানীর মতে হিন্দু সংস্কৃতির প্রভাব বাংলাদেশে যৌতুক প্রথা প্রতিষ্ঠিত করতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে ।
৪. হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী আমাদের দেশে যৌতুক প্রথা প্রতিষ্ঠার পেছনে মুসলিম বিবাহ সংক্রান্ত আইন-কানুন পরিবর্তন (দ্বিতীয় বিবাহে অত্যন্ত কঠোরতা ও বিবাহ-বিচ্ছেদ আইনত ঝামেলাপূর্ণ) ও বাকীতে মোহরানা (deferred bride price) দেওয়ার প্রবণতাকেও দায়ী করা হয়েছে ।
৫. কন্যার বৈবাহিক জীবনের নিশ্চয়তার লক্ষ্যে ‘সিকিউরিটি মানি’ (Security money) হিসেবে যৌতুক দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। অন্যদিকে পাত্ররাও মোহরানা বাকীতে পরিশোধ করতে চায়। এজন্য কন্যার অবিভাবকেরাও বড় অংকের মোহরানা ধার্য করে যা বেশীর ভাগ পাত্রই পরিশোধ করার সমর্থ রাখে না। কিন্তু আইন অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদ হলে ঐ মোহরানা আদায় করা হয়। যার ফলে এতে বিবাহ বিচ্ছেদের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমবে বলে ধরে নেয়া হয় ।
৬. যৌতুক গ্রহণে মানুষের লোভ অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে তরুন সমাজের বেশীর ভাগ যৌতুককে খারাপ দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে। কিন্তু দূর্মূল্যের বাজারে ফাও (Free, বিনা পরিশ্রমে) পেতে সবারই থাকে প্রচণ্ড আকাংখা ।

যারা যৌতুক নেন না, তারাও কি যৌতুক থেকে মুক্ত?

শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারে যৌতুক প্রথা সাধারণত পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু অন্যভাবে(খুশি নামে) কন্যার পরিবারকে চাপের মধ্যে রাখা হয়, যেটা যৌতুকের অন্তর্ভূক্ত।

বিয়ের পর অনেক ছেলের চাপে মেয়ের পরিবার নি:স্ব হওয়ার মত অবস্থা হয়। যারা চক্ষুলোজ্জার ভয়ে যৌতুক নেয়নি, তারা বিয়ের পর হাজারো জিনিস চেয়ে বসে মেয়ের পরিবারের কাছে। আর যদি মেয়ের পরিবার না দিতে পারে, তাহলে মেয়ের উপর নির্যাতন শুরু হয়। মাওলানা,মুফতি,ছুফি নামধারীরাও এর থেকে পিছিয়ে নেই। মূলত এরাই এগুলো কাজ বেশি করে।

সলামিক ভাবধারা মতে কন্যার পরিবারকে বিয়ের সামাজিক অনুষ্ঠান পালনে নিরুৎসাহি করা হয়েছে। তবে পাত্র পক্ষকে সামর্থানুযায়ী বউভাত (ওলিমা) করতে উৎসাহি করা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সামাজিক ও বরপক্ষের চাপে কন্যাপক্ষকে রীতিমতো ঘটা করে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হয়। বর্তমানে বিয়েতে আবার আমদানী করা হয়েছে ভিনদেশী নতুন নতুন অনুষ্ঠান । যার ফলে অনেক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবার মেয়ে বিয়ে দেওয়ার সময় দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়। অন্যদিকে পাত্রকে সমাজের মুখ রক্ষা করতে গিয়ে সামর্থের অধিক খরচ করতে বাধ্য করা হয়। আর এর প্রভাব পড়ে নব-দম্পতির পারিবারিক জীবনে। অভাব-অনটন দিয়ে শুরু হয় নতুন পরিবারের যাত্রা।

মোহরানা নিয়ে অত্যন্ত বিদ্বেষপূর্ণ অপপ্রচার

মুসলিম সমাজে মোহরানা দেয়ার নিয়ম থাকলেও এই প্রথার কারণে কোন প্রকার হত্যা কিংবা নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা ঘটে না। যেখানে যৌতুক প্রথার কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার নারী হত্যার শিকার সহ লক্ষ লক্ষ নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, সেখানে ইসলাম-বিদ্বেষী একটি চক্র যৌতুক প্রথার ভয়াবহতাকে চেপে যেয়ে মুসলিম সমাজে মোহরানার উপর ভিত্তি করে স্ত্রীকে “স্বামীর যৌনদাসী” হিসেবে প্রচার চালাচ্ছে।



যৌতুকের তথ্যচিত্র:

যৌতুকই হচ্ছে বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের অন্যতম কারণ। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায় গৃহ-বিবাদের ২০ থেকে ৫০ ভাগের জন্য দায়ী হচ্ছে যৌতুক । যৌতুকের জন্য নারীরা স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে মানসিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অত্যাচারের শিকার। ২০১০ সালে Bangladesh Society for the Enforcement of Human Rights (BSEHR)’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুধুমাত্র যৌতুকের জন্য বলি হয় ২৪৯ জন বিবাহিতা নারীর জীবন। যৌতুকের কারণে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতি ঘন্টায় ১২ জন নারীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। Harvard ও Johns Hopkins বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় দেখা যায় প্রতি বছর ভারতে এক লক্ষ নারীকে পুড়িয়ে মারা হয়, যা সরকারী হিসাবের চেয়ে অন্তত ৫/৬ গুণ বেশী। এই গবেষণালব্ধ ফলাফল পপুলেশন রিসার্চের জার্নাল Lancet-এ প্রকাশিত হয়। ভারতে গত দশ বছরে ১২ মিলিয়ন গর্ভস্থ কন্যাশিশু হত্যার জন্য যৌতুক প্রথাকেই দায়ী করা হয়।

বাংলাদেশে যৌতুক প্রথা নিরসনে কিছু কার্যকরি বিষয়:

১। যৌতুক রোধে ইসলামী শিক্ষা যথেষ্ট পজিটিভ ভূমিকা রাখে। সমীক্ষায় দেখা গেছে ইসলামে শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের যৌতুকহীন বিবাহ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। ইসলাম ছাড়া অন্যকোনও ভাবে এ হিন্দুয়ানী কু প্রথা রোধ সম্ভব নয়।

২। আমেরিকার পপুলেশন কাউন্সিলের সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে যেসব এলাকাগুলোতে ইসলামী মূল্যবোধ তুলনামূলকভাবে বেশী চর্চা করা হয় সেসব এলাকাগুলোতে যৌতুকের প্রবণতা কম পরিলক্ষিত হয়।

বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী মূল্যবোধ যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে কার্যকরী বলে স্পষ্টত প্রতীয়মান। বিভিন্ন সংস্থা (সরকারী এবং এনজিও) যৌতুক প্রথা নিরসনে মূলত নারীর শিক্ষা, প্রগতিশীলতা, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা এবং স্বাধীনতা তথা কাথত আধুনিকায়নের উপর বিশেষভাবে জোর দিয়ে থাকে। সামাজিক মূল্যবোধকে (যেমন মোহরানা) এ ক্ষেত্রে সাধারণত উপেক্ষা করা হয় বা তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না, কেননা আমাদের দেশের যৌতুক বিরোধী কর্মকাণ্ডে প্রাশ্চাত্যের মডেলকে অনুসরণ করা হয়। মনে রাখা দরকার, এই ভাবধারা বা মডেল অনুযায়ী পশ্চিমা সমাজ যেমন যৌতুক নামক সামাজিক ব্যাধি থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়েছে, তেমনি অন্য আরো নতুন নতুন সামাজিক অবক্ষয়েরও জন্ম দিয়েছে। নারীরাই মূলত এই অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছে। আর মেয়েদেরকে গড়ে তোলা হচ্ছে সেক্সুয়াল অবজেক্ট হিসেবে। যেটা যৌতুক থেকে মারাত্বক ক্ষতিকর।

মুসলিম সমাজের ‘একের অধিক বা বহু বিয়ে’ নিয়ে যারা উপহাস-বিদ্রূপ করে থাকে তারাই কিনা অবাধ ও বাছ-বিচারহীন যৌন ক্ষুধা মিটিয়ে থাকে। সেন্টার ফর ডিজীজ কন্ট্রোল (CDC)’র সমীক্ষায় দেখায় যায় আমেরিকার একজন পুরুষ অন্তত কমপক্ষে ৭ জন নারীর সজ্জাসংগী হয়। এদের প্রায় ৩০% রয়েছে ১৫ জনেরও বেশী সজ্জাসঙ্গিনী। ইউরোপে এই হার আরো বেশী। যেমন অস্ট্রিলিয়াতে প্রত্যেকে পুরুষ কমপক্ষে ২৯ জন নারীকে ভোগ করে। আর এই অবাধ মেলামেশাকে ‘প্রাকৃতিক’ বলে অভিহিত করে জাস্টিফাই করা হয় ডারউইনিয়ান বিবর্তনবাদ তত্ত্ব দিয়ে! যা হাস্যকর। আর এসব কারণে লক্ষ লক্ষ গর্ভস্থশিশুকে গর্ভপাতের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে বিবাহ-বিচ্ছেদের হারও আশংকাজনকভাবে বেশী। অবাধ যৌনাচার ও বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে মিলিয়ন মিলিয়ন শিশু বেড়ে উঠছে এককেন্দ্রিক পরিবারে (Single-parent)। বাবা অথবা মা’র অনুপস্থিতিতে শিশুদের মানসিক বৃদ্ধি যে চরম বাধাগ্রস্ত হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০০৬ সালের জরিপ অনুযায়ী আমেরিকার প্রায় ১৩ মিলিয়ন পরিবার এককেন্দ্রিক বা Single-parent. আমাদের দেশে ইসলামী মূল্যবোধকে বাদ দিয়ে সামাজিক মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দিয়ে যৌতুক প্রথা নিরসন করা হলেও নারীরা যে তাদের প্রাপ্য সন্মান ও অধিকার আদায় করতে পারবে – তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে?

যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে আইন:

১৯৮০ সালে বাংলাদেশে যৌতুক নিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়। তাতে আছে কেউ যৌতুক প্রদান বা গ্রহণ করিলে অথবা প্রদান বা গ্রহণে সহায়তা করলে সে ৫ বছর পর্যন্ত (এক বছরের কম নয়, আবার ৫ বছরের বেশি নয়) কারাদন্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়বিধ দন্ডে দন্ডণীয় হবে। (আরো দেখুন : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ ধারা ১১/(ক); ইসলামী আইনের ভাষ্য, গাজী শামসুর রহমান থেকে সংগৃহিত) । যদিও এ আইন যথেষ্ট না। শাস্তি বাড়াতে হবে।

নারী নির্যাতন মূলত যৌতুকের সাথে সম্পর্কিত যা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। যৌতুক সংশ্লিষ্ট বিয়েতে নারীরা বেশী বেশী নির্যাতিত হয়। অন্যদিকে যৌতুকহীন বিয়েতে মেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক সুখী জীবন যাপন করে।

অতএব বরপক্ষ নিজেকে মুসলমান দাবি করলে কাফিরদের এ প্রথা থেকে দুরে থাকবেন। আর মেয়েপক্ষকে আল্লাহপাক উনার প্রতি ভরসা রেখে আরজি করতে হবে। আল্লাহপাক অবশ্যই গায়েবী মদদ করবেন।

পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০৮

মেয়েরা সবচেয়ে বেশী চায়, স্বামীর সাথে একটি স্থায়ী ও সুখী সম্পর্ক। কিন্তু জবরদস্তীর কারণে পুরুষরা কি দিতে পারে?

স্বামীরা সাধারনত বিয়ে করে স্ত্রীর কাছে প্রশান্তি লাভের জন্য। যে সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন , ‘‘এই যে তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন- যাদের কাছে তোমরা প্রশান্তির আশ্রয় নাও। তিনিই তো তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা এবং মায়া গেঁথে দিয়েছেন, এটা তো উনারই নিদর্শন।’’ (সূরা রূম-২১)

কিন্তু নারীরা এটা ভেবে বিয়ে করে না যে ‘বিয়ে করে খুব মজা হবে।’ তারা বিয়ে করেন কারণ তারা একটি সুখী সংসার জীবন চান; এবং তারা আশায় থাকেন যে আপনি তাকে তা দেবেন। ধর্মীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যের পর এটাই একজন মুসলিমাহ নারীর প্রধান চাওয়া- একটি সুখী, স্থায়ী, মুসলিম পরিবার গড়ে তোলা। মজার কথা হল, এটা দেওয়া একজন পুরুয়ের জন্য খুবই সহজ কাজ। কিন্তু পুরুষরা গায়ের জোরে ইসলাম উনাকে অবমাননা করে এ সহজ কাজটাকে কঠিন করে তুলে। এক্ষেত্রে পুরুষকে কিছু দিক খেয়াল রাখতে হবে।

ক) বোধহীন মানুষের মতো আচরণ করবেন না। তার জন্য একজন ভালো স্বামী হন। তার প্রতি আপনার ভালোবাসা অন্তরের সাথে মুখেও প্রকাশ করুন। আপনার পরিবার তার সম্পর্কে অভিযোগ করলে চিন্তা করে এগানো উচিত। কারণ বর্তমান হিংসাবেষ্টিত পরিবেশে পিতা মাতা, ভাইবোন সবাই পড়ে যায়। কিন্তু অন্ততপক্ষে পিতা মাতা পড়ার কথা ছিল না। তারপরেও এখন উনারাই কেন জানি বেশি পড়ে যায়। নিজ বউমাকে নিজ মেয়ের মত ভাবতে পারেন না। সত্যি কথা বলতে গেলে বর্তমানে আমাদের সমাজে একটি মেয়েকে তার শাশুড়ি দাসীর মত ব্যবহার করে। যা খুবই দু:খের বিষয়। ফলে বর্তমানে বেশিরভাগ সংসার ভেঙে যাচ্ছে। এখানে ছেলেকে কঠিন কৌশল খাটাতে হবে, না হলে পরিবারের ফাদে পড়ে নিজ সংসার টিকাতে পারবে না।

পুরুষকে এবং তার পরিবারকে মনে রাখতে হবে যে মেয়েটা দাসী না। দাসী করা হচ্ছে। আর নিজ স্ত্রীকে দাসী করা কতটা খারাপ কাজ তা পুরুষ এ দুনিয়াতে না বুঝলেও পরকালে কড়াইগোন্ডায় কাফফারা আদায় করতে হবে। তার শাস্তি এতটুকু কমাতে পারবে না কেউ। এজন্য পিতামাতার সাথে একত্রে না থেকে আলাদা থাকাই উচিত। কেননা ইসলামে মেয়েকে শশুড়-শাশুড়ির খেদমত করা বাধ্য না। এখতিয়ার দেয়া আছে। ইচ্ছা করলে সে করবে, না হলে করবে না। আর যদি শশুড় কম বয়স্ক হয় তাহলে মেয়ের সামনে যাওয়াই ঠিক হবে না। তখন পর্দা করতে হবে। কিন্তু আমাদের সমাজে ছুফী-দরবেশ. মাওলানা-মুফতিসহ আম জনতা বিয়ে করে যেন, তার পিতা-মাতার খেদমত করে। যা সংসারে ফিৎনার মূল কারণ।

একটা কথা মনে রাখতে হবে, ছেলের জন্য পিতা মাতার খেদমত করা ফরয কিন্তু বউমার জন্য তার শশুড়-শাশুড়ির খেদমত করা ফরয না। সুতরাং বউমাকে দিয়ে যদি জোর করে খেদমত নেই তাহলে চরম যুলুম হবে। যা বর্তমানে হাজার হাজার বউমা শশুড়-শাশুড়ির যুলুমের স্বীকার। আর স্বামী চেয়ে থাকে বোবা শয়তানের মত। এ বোবা শয়তানী থেকে বের হয়ে ইসলামী পরিবেশ দিতে হবে।

খ) কখনও তাকে তালাক বা আরেকটি বিয়ের ভয় দেখাবেন না। হ্যাঁ, আপনার তা করার অধিকার আছে। কিন্তু এই বিষয়গুলোকে নিয়ে ভীতি প্রদর্শন করা আপনাদের সাংসারিক জীবনের জন্য অনুপযোগী এবং ক্ষতিকারক। এরকম ভীতি দেখিয়ে কখনও কল্যাণ আশা করতে পারেন না। কারণ এধরনের ভীতি কখনই তার মনে আপনার জন্য শ্রদ্ধা বা ভালবাসা বাড়িয়ে দেবে না, বরং উল্টোটাই হবে।

গ) আল্লাহ্ পাক উনার উপর ভরসা রাখুন। শয়তানের প্রতারণার ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকুন। স্ত্রীর বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করুন। অন্য সবকিছুর চেয়ে, স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদে সবচেয়ে বেশী আনন্দিত হয় শয়তান।

পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০৯

নারী কোনো পণ্য নয়। ভোগের বৃত্ত থেকে নারীকে মুক্ত করেছে ইসলাম। কাজেই পাত্রী দেখার আয়োজনে যেন কোনোভাবেই তার অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা সচেতন মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।



হযরত মুগিরা বিন শোবা রদ্বিয়ালাল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গিয়ে এক নারীকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, আগে যাও, তাকে দেখে নাও(খোজ খবর নাও) । কারণ এ দেখাদেখি(খোজ খবর নেয়া) তোমাদের বন্ধনকে অটুট রাখতে সহায়ক হবে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

বিয়ের আগে প্রথমে পাত্রীর দ্বীনদারি জীবনযাপন সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে। এ ব্যাপারে আশানুরুপ সংবাদ পাওয়া গেলে তারপর মহান আল্লাহ পাক ও নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কাছে রহমত চেয়ে কনে দেখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।তবে যদি পাত্রী পক্ষ এ ছেলের ব্যাপারে নিজেদের সম্মতি প্রকাশ করে তাহলে দেখতে যাওয়া বৈধ হবে। নিজের বিশ্বস্ত কোনো নারী যেমন মা অথবা বোনের মাধ্যমে ওই মেয়ের চরিত্র এবং গঠন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেয়া দরকার। তারপর উভয়ে উভয়ের পছন্দ হলে বিয়ের প্রস্তাব এবং অতঃপর বিয়ে।

নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ” আল্লাহ পাক যখন কারো মনে কোনো নারীকে বিয়ের জন্য ইচ্ছা ঢেলে দেন, তখন ওই পুরুষের জন্য তার পাত্রীকে দেখে নেওয়ায় কোনো ক্ষতি নেই”। (ইবনে মাজাহ শরীফ)

ইসলামী শরীয়ত উনার উলামায়ে কেরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা পাত্রী দেখাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তবে কনের কোন কোন অংশ দেখা যাবে, তা নিয়ে সামান্য মতভেদ থাকলেও প্রায় সবাই একমত যে, পাত্রের জন্য পাত্রীর শুধু চেহারা এবং দু’হাত দেখা যাবে। তবে একাকী মেয়ে এবং ওই ছেলেকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার কোনও কথা ইসলাম উনার মধ্যে নেই। কারণ তখনও তারা একে অপরের জন্য বেগানা (গায়রে মাহরাম)। বরং দেখাদেখির সময় সঙ্গে মুরব্বি অথবা অল্পবয়সী কেউ উপস্থিত থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।

সবসময় কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তা হলো:

১. পাত্র-পাত্রী দু’জনই দু’জনের জন্য উপযুক্ত এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল হতে পারে- এমন সম্ভাবনা থাকলে তখনই কেবল পাত্রীকে দেখার প্রস্তাব দেওয়া যাবে। পাত্র কিংবা পাত্রী- কারো পক্ষ থেকে যদি কোনোই সম্ভাবনা না থাকে, তবে এমন ক্ষেত্রে পাত্রী দেখার আয়োজন করা উচিত নয়।

২. পাত্রী দেখার সময় পাত্র বা ছেলের মনে যেন কোনো কুধারণা কিংবা কামনা না থাকে। ছেলেরও এ ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি থাকা দরকার যে, মেয়েটিকে পছন্দ হলে সে তাকেই বিয়ে করবে। শুধু দেখার জন্য দেখা নয়, এটা মনে রেখে সামনে আগাতে হবে। বিড়ম্বনা যেন সা ঘটে।

৩. দেখার মজলিসে অন্য কোনো পুরুষ যার সঙ্গে মেয়ের দেখা সাক্ষাত জায়েজ নেই, এমন কেউ থাকা যাবে না। চাই সে ছেলের বাবা কিংবা মামা-চাচা যেই হোন না কেন। শুধুমাত্র ছেলে গ্রুপের মহিলারা থাকতে পারবে।

৪. পাত্রী মাথা নিচু করে বসে থাকবে আর পাত্র তাকে দেখবে- মুরব্বিরা তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করবে, পাত্রীকে হাঁটতে বলা হবে, হাসতে বলা হবে- এসব করা ঠিক হবে না । নারী বিয়ের পণ্য নয় যে তাকে এভাবে সবার সামনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। পাত্রী দেখার নামে পশুর মত আচরণ কখনই করা যাবে না। কোনও কিছু জানার থাকলে পরে খোজ নিতে হবে। তখন ছেলের সামনে মেয়ের সাথে বেশি কথা বলা উচিত নয়।

৫. ইচ্ছা করলে পাত্রীও তার পাত্রকে দেখে নিতে পারবে। তাই ছেলের চেহারা এবং গঠন দেখার অধিকার রয়েছে পাত্রীর। হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম তিনি বলতেন, বিয়ের আগে পুরুষের যেমন নারীর কিছু বিষয় দেখে নেওয়ার রয়েছে, তেমনি নারীরও অধিকার রয়েছে তার সঙ্গীকে দেখে বেছে নেওয়ার।

মনে রাখতে হবে, মেয়ের পরহেজগারীতা ও মেজাজ মর্জি সম্পর্কে জানতে হলে বাড়ির নারীদের মাধ্যমে আগে থেকেই খোঁজখবর নেওয়া ভালো। সবকিছু ঠিকঠাক হলে তারপর পাত্রী দেখার আয়োজন। এর আগে নয়। কারণ মেয়ে দেখা তো আর ছেলেখেলা নয়। তবে প্রথমবার দেখে আসার পরও যদি কোনো সন্দেহ কিংবা সংশয় অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সুরাহা করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে আবারও পাত্রীকে সামনাসামনি দেখার অবকাশ ইসলামে রয়েছে।

পাশাপাশি পাত্রীর আসল রং আড়াল করার উদ্দেশে অথবা অন্য কোনো দোষ ঢেকে রাখার জন্য অথবা অন্য একটি মেয়েকে দেখিয়ে ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়। মানুষ হিসেবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যেভাবে যাকে সৃষ্টি করেছেন, সেটিই তার যোগ্য। বিয়ের মজলিসে সামান্য লুকোচুরি পরবর্তী জীবনে অসামান্য বিবাদ ও অসহনীয় দ্বন্দ্ব বয়ে আনার কারণ হয়ে থাকে। এমনটি কারো দ্বারা যেন না ঘটে তা খেয়াল রাখতে হবে।

আরেকটি বিষয়ে নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ তোমাদের কেউ যেন অন্যের বিয়ের কথাবার্তা চলার সময় নতুন করে প্রস্তাব না পাঠায়।” ( বুখারি শরীফ)

পাত্রীকে দেখতে আসা উপলক্ষে মিষ্টিমুখ কিংবা কিছু খাবারের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে একে উপলক্ষ করে যেন নারী-পুরুষের বেপর্দা সমাগম না হয়, সেদিকেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

ইসলামই সর্বপ্রথম শিখিয়েছে, নারী কোনো পণ্য নয়। ভোগের বৃত্ত থেকে নারীকে মুক্ত করেছে ইসলাম। করুণার দৃষ্টি থেকে রেহাই দিয়ে নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নারীদের সবচেয়ে সম্মানিত অবস্থানে বসিয়েছেন। কাজেই পাত্রী দেখার আয়োজনে যেন কোনোভাবেই তার অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা সচেতন মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সূত্রঃ

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×