somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এগুলান পুলাপাইন! আপনার ছুডো বেলার খেলনা পুতুল না। (রিপোষ্ট)

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- আপা আর বলবেন না। আমার ছেলেটা যা শয়তান হয়েছে, পড়তেই চায় না। আচ্ছা বলেন, মাত্র ৪টা টিচারের কাছে পড়ে আর গানের এবং আর্টের ক্লাস। এতেই যদি এমন করে।
- আরে আপা, আপনি কাকে কি বলছেন? আপনার ছেলে আর কি, আমার ছেলে তো আরও বড় বদ। স্যারদের দেখলেই ঘুমায়। স্যার চলে গেলে কম্পিউটারের সামনে বসায় দেন, আর ঘুম আসবে না। একেবারে বাপের লাইনে গেছে। কি কপাল নিয়ে যে এই ছেলের জন্ম দিয়েছিলাম।

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে হয়ত বুঝে গিয়েছেন কি বিষয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। উপরের কথপোকথন কোন কাল্পনিক বিষয় না। এখন এর থেকেও খারাপ অবস্থা আমাদের চারিদিকে। বিষেশ করে ঢাকার মধ্যবিত্য থেকে শুরু করে যত উপরে উঠা যায়।

রাস্তায় দেখবেন একটি বাচ্চাকে, পিছেই তার মা তার থেকে বড় সাইজের একটা ব্যাগ নিয়ে ছুটছে। শিশু কিশোরদের শৈশব নাই বললেই চলে।

একটা ঘটনা বলি। এটা ২০০৯ এর।

আমার এক দুঃসম্পর্কের আপা হঠাৎ আমাকে ফোন দিলেন, আমি ঢাকায় থাকছি শুনেই এই ফোন। তিনি তার ছেলেকে পড়াবার দ্বায়িত্ব আমাকে দিতে চান। তখন রেগুলার ইনকাম নাই বললেই চলে। ওয়েব ডিজাইনে কেবল হাতে খড়ি দিয়েছি। যা কাজ পাই তাতে কোন রকম হাত খরচ চলে আরকি। তো ভাবলাম এর সাথে টিউশনি করে যদি কিছু টাকা আসে তাতে মন্দ কি? নিলাম দ্বায়িত্ব। কিন্তু এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই বুঝতে পারলাম যে ছাত্রের রেজাল্ট লাগাতা খারাপ হবার কারন তার ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলা।

প্রথম কয়েকদিন বকাঝকা করলাম, তারপর একদিন তার মা ধরে আচ্ছা করে মারল। খুব খারাপ লাগছিল সেইদিন। কেন যেন তার কাছে প্রশ্ন করলাম যে সে এমন কেন করে। তখন সে আমাকে তার রুটিনের যেই বিবরণ দিল তা শুনে আমি চেয়ার থেকে পড়ি পড়ি অবস্থা। সকালে ঘুম থেকে উঠেই পড়ে হুজুরের কাছে, তারপর স্কুল, তারপর কোচিং। কোচিং থেকে ফিরে আধ ঘন্টা রেষ্ট নিয়েই আবার এক স্যার। তার কাছে পড়া শেষ করে ১৫ মিনিটের বিরতি নিয়ে আবার এক স্যার। তারপর ৩০ মিনিটের বিরত, এবং তারপর আমি। আমি যেই দিন না আসি, সেই দিন হয় গানের টিচার, না হয় আর্টের টিচার। কিন্তু এই দুই বিষয়ের কোনটাতেই তার আগ্রহ নাই। জিজ্ঞাসা করলাম শুক্রবার কি কর? তার সরল উত্তর, কোচিং এবং ২জন স্যারের পরীক্ষা থাকে।

কাঁদব না হাসব বুঝতে পারলাম না। আমি যখন তার দ্বায়িত্ব নেই, তখন তার ২য় সাময়িক পরীক্ষা শেষ। হাতে মাত্র ২টা মাস আছে। তার ২য় সাময়িক পরীক্ষা পর্যন্ত এতই খারাপ রেজাল্ট যে তার মা আমাকে রাখতে বাধ্য হয়েছেন।

তার কাছে তার সব সমস্যা শোনার পর বুঝলাম যে এর এত টিচার না, দরকার বিশ্রাম এবং মানসিক শান্তি। আমি আপুকে বললাম যে শুধু মাত্র ইংরেজির শিক্ষক কে রেখে বাকি সবাইকে ছাড়িয়ে দিতে। আমি দ্বায়িত্ব নিয়ে পড়াব এবং ইনশাআল্লাহ সে ভাল রেজাল্ট করবে। তাকে বুঝান দায় হয়ে পড়লে আমি তার হাজবেন্ডের সাথে কথা বললাম। তিনি রাজি হলেন।

পরের দেড়মাস পড়ালাম আমি দ্বায়িত্ব নিয়ে। বিকাল বেলে দুইজনে ঘুরতে বের হতাম, মোহাম্মদপুর থাকার কারনে বেড়িবাধ এলাকায় সাইকেল নিয়েই বেশি বের হতাম। সন্ধায় বাড়ি ফিরে পড়াতাম, মাঝে মধ্যে পড়া বন্ধ করে কম্পিউটারে দুইজন মিলে গেইম খেলতাম। আপুর তো মাথায় হাত। ৪টা টিচার এবং একটা কোচিং এর থেকে ছাড়িয়ে এখন সাইকেল ভ্রমন, এবং কম্পিউটার গেইম। উনি যে হার্ট এটাক করেন নাই তাই কপাল।

পরীক্ষা হল, প্রতিদিনই সে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরত, একটুও ভাল হয়নি। তার আব্বা আমাকে ডেকে একটা মাইল্ড ঝাড়ি দিলেন। বললাম হতাশ হবেন না। দেখা যাক কি হয়।

যেই দিন রেজাল্ট হয়, সেইদিন আমি খুলনার পথে। দুপুর নাগাদ আপুর ফোন পেলাম, আপু আনন্দে কাদঁছেন। কারণ এই প্রথম বারের মত তার ছেলে সব সাবজেক্টে পাশ করেছে, শুধু পাশই নয়, সে প্রতি সাবজেক্টে ৬৫ এর উপরে মার্ক পেয়েছে। অন্যদের জন্য এটা খুব কম হলেও তার ক্ষেত্রে এটা অনেক বেশি, কারণ সে স্বাভাবিক ভাবে ৬০ এর উপরে মার্ক পায় না। ৪র্থ শ্রেণীতে থাকে সে একবার ইসলাম শিক্ষায় ৭০ পেয়েছিল, এটাই তার সর্বচ্চো মার্ক। আর এবার সে জীবনে প্রথমবারের মত অংকে ৮০+ পেয়েছে। তার খুশি কে দেখে।

পরের বছর আবার আমার নিয়মে পড়ান শুরু করলাম। কয়েকটি ক্লাস টেষ্ট হতেই তার ভাল করার ধারাবাহিকত বজায় থাকল। এর মধ্যে আবার পয়দা হল তার এক শুভাকাঙ্খি এবং বুদ্ধিদাত্রী মহিলা।

তার যুক্তি হল, গত বার্ষিক পরীক্ষার আগে সে আসলে অন্য সব টিচারের কাছে আগ থেকেই সব পড়ে শেষ করেছিল, বরং আমি যা করেছি, তাতে তার ক্ষতি হয়েছে। অবাক করা বিষয় হল আপুর নিজের মধ্যেও এই ধারণা গেথে গেল। তিনি আবার শুরু করালেন সেই ৪টা টিচার, ২টা কোচিং। আমি পড়ান ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম। ক্লাস ৭ এর একটা ছেলেকে অসহায়ের মত কাদঁতে দেখে তাকে পড়ান আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

বেশ সময় লাগল বুঝতে যে আমার মেথড তার জন্য ভাল ফল বয়ে আনলেও পরবর্তিতে তার জন্য তা খারাপ হয়েছে। কারন সে সেটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল, এবং পরবর্তিতে প্রেশার সহ্য করতে পারেনি। সে ক্লাস ৭ থেকে ৮ এ ওঠার পরীক্ষায় ৫ সাবজেক্টে ফেল করে আবার ক্লাস ৭ এই থেকে যায়।
==============================
আমাদের বাচ্চাদের কে তাদের মা বাবারা এখন কি মনে করেন জানিনা। নিজেরা যা করতে পারেননি তা তারা তাদের বাচ্চাদের দিয়ে করাতে চান।

মা-বাবাদের বলি, আপনার বাচ্চা আপনার হাতের বেন টেন এর ঘড়ি নয় যে সেটা অন্য একজন মা এর সাথে পাল্লা দিয়ে ইচ্ছা মত ব্যবহার করবেন।

নিজের সন্তানকে যদি ভাল নাই বাসতে পারেন, তাকে যদি তার মত বড় হতে না দিয়ে নিজের মন মত অত্যাচার করেন, তালে দয়া করে বাচ্চা জন্ম দিয়েন না। নিজের দিকে তাকান। আপনি কি এমন ভাবে পড়ালেখা করেছেন? আমি জানি আপনার উত্তর হবে "না"। তাহলে আমার প্রশ্ন, কেন আপনার বাচ্চাকে এভাবে অত্যাচার করছেন।

সে আসলেই পুলাপান, আপনার ছুডো বেলার খেলার পুতল নয় যে ইচ্চা মত ব্যবহার করবেন।

ধন্যবাদ সবাইকে কষ্ট করে পড়ার জন্য।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্যারাভান-ই-গজল - তালাত আজিজ

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৬:৩১


ভারতীয় অন্যতম গজল শিল্পীদের তালিকায় তালাত আজিজের নাম অবশ্যই থাকবে বলে আমার ধারনা। তার বেশ কিছু গান আমার শোনা হয়েছে অনেক আগেই। জগজিৎ সিং, পঙ্কজ উদাস ও গুলাম আলী সাহেবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×