somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন মার্কেটার কখনও নির্দিষ্ট বেতনে চাকরী করতে পারেন না!

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একজন মার্কেটার কখনও নির্দিষ্ট বেতনে চাকরী করতে পারেন না! এ কথাটা বলতেই আমাদের অফিসের মার্কেটিংএ চাকরী করা ভদ্রলোক বলে বসলেন, তাহলে কি আমি মার্কেটার না, নাকি আমি চাকরী করি না?



ইজিপশিয়ান এই ছেলেটার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক হওয়ায় বললাম, তুমি দামী ওউদ (খুবই দামী আতর, সৌদী ধনীদের পছন্দ), কিন্তু পড়েছো AXE বডিস্প্রের বোতলে!

---------------------------------------------

মার্কেটিং এ চাকরী আমাদের দেশের ছেলেপেলেরা তেমন একটা পছন্দ করে না। আদতে আমাদের দেশে মার্কেটিং সম্পর্কে বড় একটা ভুল ধারণা আছে।

মার্কেটিং এ চাকরী মানেই ব্যাগে স্যাম্পল নিয়ে এ দুয়ার থেকে ও দুয়ারে ঘুরে বেড়ানো, হাতে পায়ে ধরে কিছু গছিয়ে দেওয়া, ইত্যাদি ইত্যাদি। সাথে সাথে ক্রেডিট কার্ড ফেরিওয়ালা এবং 'মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ'দের দৃশ্যতো চোখে ভাসবেই।

-------------------------------------------

মার্কেটিং প্রচন্ড একটা ক্রিয়েটিভ জায়গা। সবাইকে দিয়ে মার্কেটিং হয় না। মার্কেটিং করতে গেলে প্রচন্ড ভাবে চোখ কান খোলা রেখে নিজের জ্ঞানকে বাড়াতে হয়।

------------------------------------------

স্টিভ জবস যখন আইপড বিক্রি করে, তার আইপডের থেকে ভালো কোয়ালিটির এমপিত্রি প্লেয়ার বাজারে ছিলো। তারা বিক্রি করতো ৫গিগা ধারণ ক্ষমতার ডিভাইস। স্টিভ জবস বললেন, আমাদের আইপডে এক হাজার গান ধরানো যাবে! মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। ৫গিগায় ১০০০ গান ধরে; আর ১হাজার গান ধরাতে ৫গিগা লাগে।

কিন্তু মানুষ ৫গিগার থেকে ১০০০ গান ভালো বুঝে।

-----------------------------------------

২০০৯ সালে একটা মেসে থাকতাম। উজ্জল ভাইয়ের মেস! উনি ঐ ফ্লাটে প্রায় ১৮বছর ধরে আছেন; এলাকার পোলাপাইন উনাকে এবং ঐ ফ্লাটকে ঐ ভাবেই চিনেন। উনার মেসে জায়গা পেতে বেশ কাঠ-খড় পোড়াতে হতো! আমি কোন কিছু না জেনেই জায়গা পেয়ে গিয়েছিলাম।

উনি বেতনের টাকা আমার বা সজল ভাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলতেন ঘর ভাড়া দিতে, বাজার করতে। এই টাকা শেষ হবার পর তারপর মেস সদস্যদের টাকায় বাকিটা মাস চলতো। উনি বেতন পেতেন মাত্র ৮হাজার টাকা।

উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার তাহলে চলে কি করে? উনি বললেন, কমিশনের টাকায়! এবং তখনই বললেন, একজন মার্কেটার কখনও নির্দিষ্ট বেতনে চাকরী করতে পারেন না!

উনার প্রতিষ্ঠান উনার সেলস থেকে উনাকে ৩% কমিশন দিতেন। এবং উনার ম্যানেজারকে (যার আন্ডারে এমন ২০জন কাজ করে) দিতেন ০.৫% কমিশন। উজ্জল ভাই মাসে প্রায় ৮০-৯০ হাজার টাকা কমিশন আনতেন।

---------------------------------------

আমার অফিসের ইজিপশিয়ান ছেলের কথায় ফেরৎ আসি। সে যে বেতন পায়, আমিও সেই বেতন পাই। আমার কাজ অনুযায়ী আমার বেতনে আমি সন্তুষ্ট। কিন্তু সে কিভাবে সন্তুষ্ট হয় এটা ভাবতে আমার কষ্ট লাগে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এত বড় মাল্টিন্যাশনাল কম্পানির মার্কেটিং এ কাজ তাকে একটা ভালো অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট দিবে; কিন্তু সে তো তার মার্কেটিং ক্যারিয়ারের ৩ বছর অলরেডি নষ্টই করে ফেলেছে। তার মার্কেটিং এ জ্ঞান বলতে তার বস যেভাবে ফেসবুক-গুগল সহ কিছু সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিতে বলে, সে সেভাবে দেয়। ব্যাস; এর বাইরে কিছু না!

-------------------------------------

আমাদের দেশের ছেলে-পেলেরা বিবিএ শেষ করে অফিসে চাকরী চায়। তারা বসে থাকতে চায় এসি দেওয়া ঘরে। সাদা ধবধবে সার্ট, কালো প্যান্ট, চাইলে গলায় একটা লাল টাই। এই নিয়ে অফিসে ঢুকবে; কি করবে তার ধারণা নাই, তারপর বের হয়ে যাবে। ৯টা-৫টা এর জায়গায় ৮টা-১০টা হলে হোক, আফসোস নাই। কিন্তু মার্কেটিং এর কাজ করা যাবে না।

আমার এক বন্ধু ফাঁদে পড়ে মার্কেটিং এর কাজ করতো। সে পছন্দ করতো না। তাকে নানান মোটিভেশন দেওয়ার পর এখন প্রায় ৫ বছর হতে চললো, সে মার্কেটিং আর ছাড়ে না। তবে হ্যাঁ, আগের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে নিজের প্রতিষ্ঠান করেছে। আগের অভিজ্ঞতা লাগিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠান বড় করেছে। কিন্তু মার্কেটিং সে ছাড়েনি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৪১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×