somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পূর্ণিমাতিথি

১৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মৃনালীর ঘরের দরজায় টুক টুক করে দুবার টোকা পড়ল ।
মৃনালী চাদরে মুখ ঢেকে ছিল, চাদরের ভেতর থেকেই বলল- কে? মৃনালীর মা দরজার বাইরে থেকে বললেন এত বেলা করে ঘুমোচ্ছিস কেন ওঠ । মৃনালী চাদরের ভেতর থেকে বের হল না দরজা খুলল না। শুধু বলল আমি এখন দরজা খুলব না মা ,সারা রাত আমার ঘুম হয়নি, আমি এখন ঘুমুচ্ছি ।
বিমলা উদ্বিগ্ন বোধ করছেন, কথা বলার সময় তার মেয়ের গলা কি ভারী শোনাল, গলাটা কি কাদোঁ কাদোঁ শুনিয়েছে ? তিনি চিন্তিত মুখে ফিরে গেলেন। কেননা, মাতা পুত্র অপেক্ষা কন্যাকে নিজের অংশরূপে দেখেন – কন্যার অসম্পূর্ণতা তাকে খুবই ব্যথিত করে ।
তের বছর বয়সে বড় ঘর দেখে মৃনালীর বিয়ে হয়েছিল । বড় ঘর তাই তেমন খোজ খবর না করেই সবাই রাজী,ভাবল মেয়ের রূপের জন্যই তারা প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। কিন্তু, সেই রূপের গুমর তো মৃনালীর মধ্যে নেই, তার মনে হতো যে তাকে যে দামই দেবে সেই তার দাম । নিজের রুপ নিয়ে সে এমনই অনুভব করত ।
কিন্তু দেখা গেল ছেলে পাগল, ছেলের বাবার এই বিবাহে মত ছিল না। কিন্তু, তিনি মৃনালীর শাশুড়িকে যমের মতো ভয় করেন। তাই বিবাহের পূর্বেই তিনি তীর্থে চলে গেছেন। মৃনালীর শাশুড়ি জেদ করে তাঁর ছেলের বিয়ে দিয়েছেন।
বিধি বাম- বছর না ঘুরতেই মৃনালীর পতি ওলাওঠায়(কলেরা) মারা গেল। যম যদি মৃনালীকে ধরে টান দিত তা হলে আলগা মাটি থেকে যেমন অতি সহজে ঘাসের চাপড়া উঠে আসে সমস্ত শিকড়সুদ্ধ, মৃনালীও তেমনি করে উঠে আসত। বিধবা মৃনালী ফিরে আসল বাবার বাড়ী। মৃনালী কখনও কাঁদত না, কিন্তু তার সুদীর্ঘপল্লববিশিষ্ট বড়ো বড়ো দুটি কালো চোখ যেন সব বলে দিত, তার চোখের ভাষা ছিল অসীম উদার এবং অতলস্পর্শ গভীর।

ছেলেটির নাম রইসউদ্দিন সবাই রাসু বলেই ডাকে, মৃনালীদের পাশেই বাড়ী। তার পিতার প্রায় বৃদ্ধবয়সে রাসুর জম্ন, জম্নের সময়ই তার মা মারা যায়। রাসুর বয়স যখন দুই বছর তখন তার পিতা কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, পিতার মৃত্যুর পর নাবালক ছেলেটির প্রতিপালনের ভার পড়ে তার ভাইদের উপর। পরের অনিচ্ছাতে আশ্রয় নেওয়া, সে যে কতবড়ো অপমান। নিজ বাড়ীতে আশ্রিত, দায়ে পড়ে সেও রাসুকে স্বীকার করতে হল ।
তাই সংসারে বিনে পয়সার চাকরের মত রাসু মানুষ হতে লাগল। রাসু মৃনালীর চেয়ে প্রায় বছর পাচেক ছোট হবে। অনাথ রসুর প্রতি ভাইদের এই র্নিদয় আচারন দেখে মৃনালীর বড় কষ্ট হয়, তাই একদিন রাসুকে ডেকে ওর ঘরে যে রাসুর একটুখানি জায়গা আছে, সেই কথাটি মৃনালী অনেক আদর করে তাকে বুঝিয়ে দেয়।
রাসু মৃনালীকে এমনি ভালোবাসতে শুরু করল যে মৃনালীর মনে ভয় ধরিয়ে দিল। ভালোবাসার এরকম মূর্তি সংসারে মৃনালী কোনোদিন দেখি নি। মৃনালীর যে রূপ ছিল সে কথা মৃনালী প্রায় ভূলেই গিয়েছিল, মনে করার কোনো কারণ বহুকাল ঘটে নি, এতদিন পরে সেই রূপটা নিয়ে পড়ল রাসু। মৃনালীর মুখ দেখে তার চোখের আশ যেন মিটত না। বলত, “দিদি, তোমার এই মুখখানি আমি ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় নি”।

এদিকে রাসুর বয়স ক্রমেই বেড়ে উঠছে, প্রতিনিয়তই সে যেন নিজেকে অনুভব করছে। যেন কোনো পূর্ণিমাতিথিতে কোনো একটা সমুদ্র হতে একটা জোয়ারের স্রোত এসে তার অন্তরাত্মাকে পূর্ন করে দিচ্ছে । সে মৃনালীকে নিয়ে ভাবছে,দেখছে ,নিজেকে প্রশ্ন করছে, কিন্তু বুঝতে পারছে না। পূর্ণিমারাতে মৃনালী রাসুকে নিয়ে পাহাড়ের ধারে বসে জোৎসনা দেখে। পূর্ণিমাতিথির সেই প্রকৃতিও যেন মৃনালীর মতো একাকিনী সুপ্ত জগতের উপর বসে-যৌবনের রহস্যে পুলকে পুলকিত, এক অসীম নির্জনতার একেবারে শেষ সীমা পর্যন্ত, কারও মুখে কোন কথা নেই। এই নিস্তব্ধ ব্যাকুল প্রকৃতির প্রান্তে একটি নিস্তব্ধ ব্যাকুল বালক আর একটি নিস্তব্ধ ব্যাকুল যুবতী দাঁড়িয়ে। সেই মুহুর্তে হঠাৎই যেন রাসু বালক হতে পুরুষ হয়ে গেল।
কয়েকদিন ধরে রাসুর সাথে মৃনালী দেখা করে না। ঘর থেকে রেরোয় না। একদিন রাসু মৃনালীকে একা পেয়ে পা জড়িয়ে ধরে লুটিয়ে পড়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল, বলল আমার ভূল হয়ে গেছে দিদি , আমাকে যা বলবে তাই করব,তোমার পায়ে পড়ি দিদি, কথা বল, আমাকে এমন করে ফেলে দিয়ো না।

ঘরের ভেতর একা আয়নার সামনে দারিয়ে, মৃনালী নিজেকে প্রশ্ন করে----
তুই তো কখনো বোকা ছিলি না মৃনালী, এরকম বোকার মত কাজ কি করে করলি ?
আমি বোকার মত কাজ করিনি।
রাসু মুসলমান, তুই বিধবা, যে ধাক্কা আসবে সেটা সামলাতে পারবি।
অবশেষে মৃনালী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কঠিন সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের কথা মৃনালী কেউকে জানাতে পারবে না।
কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পাহাড়টা বড় পিচ্ছিল হয়ে গেছে, এ অবস্থায় কেউ পাহাড় থেকে পা পিছলে পড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। পাহাড়ের নীচে পড়ে গেলে পাথরে মাথা ফেঁটে র্নিঘাত মৃত্যু। গ্রামের সবাই জানে রাসু প্রয়ই পাহাড়ে ফুল কুড়োতে যায়। মৃনালী রাসুকে নিয়ে সেই আগেকার মত পাহাড়ে উঠেছে। পাহাড়ের কিনারায় সেই গাছটার ধারে যেখানটায় তারা দাড়িয়ে র্পূনিমা দেখেছিল দাড়াল। রাসু র্পূণিমা দেখছিল, হঠাৎই পেছন থেকে এক মমতাময়ী র্স্পশে সে পা পিছলে পাহাড় থেকে পড়ে গেল।
শুধু দিদি দিদি বলে একটা চিৎকার শুনা গেল। মৃনালী একবার শুধু ফিরিয়া দূর হইতে নীরবে দু’ফোটা অশ্রু ফেলে বিদীর্ণহৃদয়ে নীরবে চলে গেল……….



১৯.০৩.২০১৭

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৩৭
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×