somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্প গল্পঃ চতুর্থ মাত্রা........

১১ ই জুন, ২০১৭ রাত ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জাহেদুর রহমান এসিসটেন্ট অব ডঃ লিলিয়ান অবশেষে সিন্ধান্ত নিয়েছে......

পরীক্ষার জন্য নিজেকেই স্পেসিমেন বানানো মানে জীবন সংশয়ের আশংকা। তবুও লিলিয়ানকে রক্ষা করার এটাই একমাত্র পথ। এইসব ভাবতে ভাবতে ল্যাবরেটরি থেকে বের হলাম। রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হল, ভালবাসা জিনিসটা ঐ তারাগুলির মতো, সমস্ত অন্ধকার লেপে রাখে না, মাঝে মাঝে ফাঁক রেখে দেয় । জীবনে কত ভুল করি, কত ভূল বুঝি, তবু তার ফাঁকে ফাঁকে স্বর্গ থেকে ভালবাসার আলো জ্বলে ওঠে। আকাশের তারাগুলি আজ যেন করুণা-বিগলিত চোখের জলের মতো জ্বল্জ্বল্ করছে । যে জীবন আজ বিদায় নেবার পথে এসে দাড়িয়েছে তাকে মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম— এবং সম্মুখে মৃত্যু এসে অন্ধকারের ভিতর হতে যে দক্ষিণ হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্নিগ্ধ বিশ্বাসের সাথে তার উপরে আপনার হাতটি রাখিতে আমার আমার রুদ্ধ আবেগ যেন এতোদিন ব্যকূল হয়ে ছিল।

ছাত্র হিসেবে দ্বিতীয় শ্রেনীর হওয়া সত্বেও লিলিয়ান কেন তাকে তার এসিসটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিলো এটা জাহেদের কাছে আজও রহস্য। শুধু তাই নয়, লিলিয়ান তার বিভিন্ন গবেষনা পত্রে সহ-লেখক হিসেবে জাহেদের নাম দিয়েছে যদিও সে সব গবেষনায় জাহেদের বিন্দুমাত্র অবদান নেই। এই টাইম মেশিন নিয়ে লিলিয়ান আর আমি রাত দিন কাজ করছি।আমার বুঝবার জন্য আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে লিলিয়ান এভাবে ব্যাখা করেছে—-
বুঝেছ জাহেদ, পরম সময় বা নিরপেক্ষ সময় বলে কিছু নেই, সময়ের কোনো আলাদা অস্তিত্ব নেই। স্থান এবং কাল একে অন্যের পরিপূরক। এই দুটি এক সাথে হয়ে তৈরি করে একটি একক সত্তা যাকে বলা হয় স্থান- কাল। একে আমরা বলতে পারি একই বস্তুর দুই দিক। স্থান ও কাল সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণের ফলাফল পর্যবেক্ষণের গতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই স্থান -কাল আমাদের তিন মাত্রার (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা) জগতের বাইরে আর একটি নতুন জগত তৈরি করে। দেখা গেল, গতির মত সময়ও আপেক্ষিক। অর্থাৎ আমার ঘড়িতে যে সময় দেখছি সেটা আমার সময় আর তোমার ঘড়িতে যে সময় তোমার সেটা তোমার সময়। মহাবিশ্বে এমন কোনো প্রমাণ ঘড়ি নেই যা সঙ্গে মিলিয়ে বলতে পারি এই বিশেষ মুহূর্তটি সবার জন্যে একই মুহূর্ত।

আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতের তিন মাত্রার পরে আরো যে একটা মাত্রা ধরে নেয়া হয়, সেটাই হচ্ছে কাল বা সময়। এই মাত্রা বাকি তিন মাত্রা হতে ইউনিক বা আলাদা। লিলিয়ান এই চতুর্থ মাত্রায় ভ্রমনের যন্ত্র আবিস্কার করেছে। কিন্তু আমার কেবলই মনে হচ্ছে এই চতুর্থ মাত্রা আসলে নিজ থেকেই চলে; এটাকে কেউ থামাতে পারে না বা এর গতি বাড়াতে বা কমাতেও পারে না। লিলিয়ান একটি ভুল সুত্রের উপর ভর করে টাইম মেশিন তৈরি করেছে। এবং নিজেই যন্ত্রটি পরীক্ষা করতে চাইছে। আমি তা হতে দিতে পারি না। কেননা যন্ত্রটিতে স্পেস টাইম বা চতুর্থ মাত্রায় ভ্রমন সম্ভব নয়। লিলিয়ান হিসেব করেছে পৃথিবী এক দিনে ১.৬ মিলিয়ন মাইল ভ্রমন করেছে, কিন্তু সূর্য আরও দ্রুত গতিতে প্রদক্ষিন করছে। তাই লিলিয়ান একদিন পেছনে সেট করা টাইম মেশিনে চড়ে বসলে সে স্পেসের একটি শুন্য স্থানে গিয়ে পড়বে। লিলিয়ানের প্রতি আমার মনের আবেগ কখনও প্রকাশ করিনি। কিন্তু মনের আবেগ পার্বতী নদীর মতো নিজের জন্মশিখরে আবদ্ধ হয়ে থাকে না। কোনো-একটা উপায় খুজে বের হতে চেষ্টা করে। অকৃতকার্য হলে সে কোন উপায়ান্তর না দেখে বক্ষের মধ্যে বেদনার সৃষ্টি করে।সৌন্দর্য সম্বন্ধে নানা লোকের নানা মত থাকিতে পারে ,তাই লিলিয়ানের সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা করা নিষ্প্রয়োজন মনে করি। শুধু তার শূন্যনিবিষ্ট দৃষ্টির মধ্যে সুদূরপ্রসারিত নিবিড় বেদনা দেখতে পাই। কেবলই মনে হয় চন্দ্রলোকে এখনো এতো উত্তাপ ! কই আগে কখনও দেখিনি তো। এখনো সমীরিত উষ্ণ নিশ্বাস।

লিলিয়ান সবার কাছে আমাকে একজন তরুন স্কলার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। এই অযাচিত সম্মান পেতে আমার বড়ই ভাল লাগে। লিলিয়ানের প্রতি আমার গভীরতম আবেগটিকে গোপনে নির্মল করে রেখেছিলাম। তবে মাঝে মাঝে ভাবি ভালো করে অনুসন্ধান করলে সকল সাধুই ধরা পড়ে। যতই তজবি জপুন, পৃথিবীতে আমার মতোই সব। সংসারে সাধু-অসাধু বলে কিছূ নেই। যদি থেকেই থাকে তবে দুইয়ের মধ্যে প্রভেদ এই যে, সাধুরা কপট আর অসাধুরা অকপট। দয়া ধর্ম মহত্ত্ব সমস্তই কাপট্য। তবে আজ ভালবাসার সাথে কৃতজ্ঞতার বোঝাও যেন কিছুটা হালকা মনে হচ্ছে। বড়ই শান্তি............


১১.০৬.২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ১১:৩১
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×