somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্প গল্পঃ নতুন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে ......

২৩ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কেউ কি কোথাও আছ, যে আমার কথাগুলি শুনবে। আমার পুরাতন কথা যদি শুনতে চাও , তবে চলে এসো এই বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে, আর মনোযোগ দিয়ে জলকল্লোলে কান পেতে থাকো, বহুদিনকার আমার কত বিস্মৃত কথা শুনতে পাবে।

আমার আর-একদিনের কথা মনে পড়ছে। সেও ঠিক এইরূপ দিন। আশ্বিন মাস পড়িতে আর দুই-চারি দিন বাকি আছে। ভোরের বেলায় অতি ঈষৎ মধুর নবীন শীতের বাতাস নিদ্রোত্থিতের দেহে যেন নূতন প্রাণ এনে দিয়েছে। তরু-পল্লব অমনি একটু একটু শিহরিয়া উঠিছে। ভরা বুড়িগঙ্গার উপরে শরৎ প্রভাতের যে রৌদ্র পড়েছে, তা যেন কাঁচা সোনার মতো রঙ, কিংবা চাঁপা ফুলের মতো রঙ। রৌদ্রের এমন রঙ আর কোনো সময়ে দেখা যায় না। চড়ার উপরে কাশবনের উপরে রৌদ্র পড়েছে। এখনো কাশফুল সব ফুটে নাই, ফুটতে আরম্ভ করেছে মাত্র।
পাখিরা যেমন আলোতে পাখা মেলে আনন্দে নীল আকাশে ওড়ে, আমার কাছে মনে হত ছোটো ছোটো নৌকাগুলি তেমনি ছোটো ছোটো পাল ফুলিয়ে সূর্যকিরণে যেন উড়ছে। আমার কাছে নৌকাগুলিকে পাখি বলে মনে হতো; তারা যেন রাজহাঁসের মতো জলে ভাসছে, কিন্তু আনন্দে পাখা দুটি আকাশে ছড়িয়ে দিয়াছে। যতবার এই বুড়িগঙ্গার পাড়ে এসে বসেছি, সবসময় আমার পাশে সুমনা থাকত। আজ শুধু রয়ে গেছে সুখময় কিছু কল্পনা ।
-চল উঠি সুমনা ।
-না ,উঠব না। সারারাত এখানেই থাকব । সারারাত নদীর পাড়ে বসে জোছনা দেখে, কাল সকালে আমরা বিয়ে করব ।
- কি বলছ, তোমার বাবা তো আমাকে খুন করে ফেলবে ।
- সুমনা আমার কথা শুনে খিল খিল করে হাসছে। হাসতে হাসতে তার চোখে পানি এসে গেল। তবু সে হাসছে। এমন অসাধারন দৃশ্য আমার জীবনে অভিনীত হয়েছে, এই কথাটা আজ কিছুতেই বিশ্বাস হতে চায় না। আজ মনে হয় ‘সুমনা’ নামে কোন তরুনীর সঙ্গে আমার কোনদিন পরিচয় ছিল না। সবই কল্পনা ।
হটাৎ কিছু পড়ার শব্দে চমকে তাকালাম---- হ্যাঁ ধ্বংস প্রায় বুড়িগঙ্গা সেতুর উপর থেকে কিছু একটা পড়ল। যাই দুপুরের খাবারের আয়োজন করা দরকার।


২০৭০ সন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে-----
ছোট একটা কনফারেন্স রুমে জাতিসংঘের গোপন একটা মিটিং এ ৩২ দেশের প্রতিনিধি হাজির। কথা হবে গোপন একটি প্রজেক্ট নিয়ে। প্রজেক্ট ফ্যাক্ট ফাইল ইতিমধ্যে সবার টেবিলে রাখা আছে। স্পিচ দেবেন, প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর। কিছু ক্ষনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে ওরাল সেসন। ধীরে ধীরে রুমের আলো কমতে থাকে। সদস্যরা নীরবে শুনতে থাকে...
জেনেটিক্স ইন্জিনিয়ার্ড ভাইরাস বা জীবানু অস্ত্রের প্রয়োগের ফলে পৃথীবী আজ বিপর্যস্ত। বিশেষ একটি ভাইরাস ছরিয়ে পরেছে, যার সক্রমনের কয়েক মিনিটের মধ্যেই আক্রান্তের মৃত্যু হয়। ভাইরাসটি পরাজিত হবে ভাবা হয়েছিল, সেই রকমটি হয়নি। ভাইরাসটির প্রতিরোধ ব্যবস্থার পরবর্তি সংস্করনের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। অন্যান্য প্রজাতিতে ছড়িয়ে পড়ার কোন ধরনের ডেটা পাওয়া যায়নি।


দীর্ঘদিন পারমানবিক গবেষনাগারে কাজ করায় আমার দেহে মাত্রাতিরিক্ত রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়েছে। হয়তো সে কারনেই আমার দেহে জেনেটিক্স ইন্জিনিয়ার্ড ভাইরাসটির মিউটেশান ঘটেছে। আক্রান্ত হবার পরও আমি বেচে আছি। আমি চিরদিন স্থির অবিচল, চিরদিন একই ভাবে আছি, কিন্তু তবুও আমার এক মুহূর্তের জন্যও বিশ্রাম নাই। এতটুকু বিশ্রাম নাই। আমার এতুটুকু সময় নাই যে, আমার শিয়রের কাছে অতি ক্ষুদ্র যে একটি নীলবর্ণের বনফুল ফুটিছে তাকে দেখতে পারি।

সুমনার কথামত সেদিন আমরা সত্যিই বিয়ে করেছিলাম। স্বাতী নামের আমাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে ছিল। স্বাতী তার ছোটো ছোটো হাতগুলি দিয়ে আমাকে মৃদু মৃদু আঘাত করিত। যেন সে পরম স্নেহে আমাকে ঘুম পাড়াইতে চায়। যেন তার অবচেতন বিমল হৃদয় আমার সাথে কথা কয়। হায় !!! এত স্নেহ পাইয়াও আমি তার কোন উত্তর দিতে পারি নাই ।

বিদায়কালে আমি সুমনা-কে কথা দিয়েছিলাম, আবার দেখা হবে। সে কথা কোন্‌খানে রক্ষা হয়েছে জানি না। শুধু রাতের আকাশে যখন তাকিয়ে থাকি, তখন তারাগুলোকে জিজ্ঞাসা করি, - কোটি কোটি যোজন দূরে থেকে তোমরা কি সত্যই মানুষের জীবনের সমস্ত কর্মসূত্র ও সম্বদ্ধসূত্র নিঃশব্দে বসে বসে বুনছ ........।





ছবি সুত্র : নেট

২৩.০৬.২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৭ রাত ১১:০০
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×