somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট কল্পগল্পঃমাইন্ড রিডিং

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)
একটা ছোট খাটো কক্ষ। চারেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কিছু জিনিসপত্র। কক্ষে একটি অতি উৎজ্জ্বল আলোর বাতি জ্বলছে।কক্ষের এক কোণে একটি টেবিল। টেবিলটা নীল কাপড় দিয়ে মুড়ানো।টেবিলের উপর বেশ কিছু কাগজ। কাগজের উপর উপুর হয়ে বেশ মনযোগ দিয়ে কিছু একটা মিলাতে চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানী রনি আহমেদ। কাগজ গুলোতে অদ্ভত সব লেখা ও আকিঁবুকি।সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় কি লিখা আছে এতে। আকিঁবুকিঁ গুলো দেখতে কোনো যন্ত্রের নকাশার মতো। আধুনিক যন্ত্রের চেয়ে কাগজকে নিরাপদ মনেহয় রনি আহমেদের কাছে।তিনি মনে করেন আধুনিক যুগের যন্ত্রপাতির চেয়ে সেকালের জিনিস গুলো বেশি বিশ্বস্ত। আধুনিক যন্ত্রপাতি তেমন পছন্দ না করলেও তিনি গবেষণা করছেন আধুনিক মাইন্ড রিডিং যন্ত্র নিয়ে। তার আগে এটা নিয়ে অনেক বিজ্ঞানী কাজ করলেও কেউ তেমন সফল হতে পারেনি। পৃথিবী যতই উন্নত হচ্ছে মানুষের নিরাপত্তাহীনতা ততই বেড়ে চলছে। মানুষের হাতে যদি মাইন্ড রিডিং এর ক্ষমতা থাকতো তাহলে এই নিরাপত্তাহীনতা অনেকংশে দমন করা সম্ভব হতো। যেকোনো জঙ্গি হামলা দমন করা একদম সহজ হয়ে যেতো।মানুষের কল্যানের কথা ভেবে রনি আহমেদ মাইন্ড রিডিং নিয়ে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়।এটা তার প্রথম কোনো বড় প্রজেক্ট। এর আগে ছোট খাটো বিষয় নিয়ে গবেষণা করলেও বিজ্ঞানে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারেনি।এটা তার প্রথম বড় গবেষণা হওয়াতে রাতদিন তিনি নিরালস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবং সফলতার প্রায় দ্বার প্রান্তে পৌছে গেছেন। আর কিছু দিন পর হয়তো বিশ্বে হইচই ফেলে দিতে পারবেন। পৃথিবীর কেউ জানেনা তার এই গবেষণার কথা।গোপনীয়তা রক্ষার জন্য গবেষণার সব ব্যয় তিনি নিজেই বহন করছেন। এক কথায় মানুষের কল্যানের জন্য রনির সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে এই মাইন্ড রিডিং নিয়ে গবেষণা।আর মাত্র কয়েকটা দিন তারপর পৃথিবীর সব অপরাধ জগতের ভীত ভূমিকম্পের ন্যায় নড়ে উঠবে।অনেকক্ষন কাগজের দিকে তাকিয়ে থাকার পর এবার তার মুখে ফুটে উঠেছে মৃদু হাসি।উত্তেজনায় কপালে জমে উঠছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।এতক্ষন পর রনি আহমেদ মিলাতে পেরেছেন গড়মিলটি তার মানে তিনি বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন।ধীর সুস্থে রনি আহমেদ তার এতোদিনের গবেষণার ফলাফল একটি ঝকঝকে সাদা কাগজে লিখে নিলো।তার এই ফলাফল অতি গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার সহিত বিজ্ঞান কেন্দ্রে পৌছে দিতে হবে।কোনরকমে যদি মাইন্ড রিডিং যন্ত্র তৈরীর খবর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কানে পৌছাই তাহলে নিজের জীবনটার সাথে কষ্টের ফসলটাও যাবে। বিজ্ঞান কেন্দ্র যোগাযোগের আগে সোহেল চৌধুরী সাথে যোগাযোগ করার দরকার।সোহেল চৌধুরী রনি আহমেদের পূর্বপরিচিত তিনি একজন বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী। বিজ্ঞান কেন্দ্রে উনার ভালো জানাশোনা রয়েছে।দ্রুত ফোনটা নিয়ে সোহেল চৌধুরীকে কল দিলেন।সোহেল নয় ওনার সেক্রেটারি ধরছে ফোনটা।উনি এখন গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে ব্যস্ত আছে।মিটিং শেষে হতে ঘন্টা দুয়েক লাগতে পারে।এতো সময় নেই রনি আহমেদের হাতে।যত দ্রুত সম্ভব বিজ্ঞান কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করার দরকার আর এর জন্যে সোহেল চৌধুরীর সহযোগিতাও প্রয়োজন।সেক্রেটারির কাছ থেকে সোহেল চৌধুরীর ঠিকানা জেনে নিলো রনি।দ্রুত কিছু কাগজ পত্র গুছিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন সেক্রেটারি দেওয়া ঠিকানায়।

(২)
ছিমছাম পরিচ্ছন্ন একটি রুম।রুমের উত্তরে জানালায় নীল রঙের পর্দা টানানো ।রুমের এক পাশে আরাম কেদারায় বসে রয়েছে রনি আহমেদ।যুগান্তকারী আবিষ্কার নিয়ে অপেক্ষা করছেন মনোবিজ্ঞানী সোহেল চৌধুরীর জন্য।একটু বিরক্তি নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলেন সোহেল চৌধুরী।কুশল বিনিময়ের পর রনি আহমেদ উনাকে তার আবিষ্কার মাইন্ড রিডিং যন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত শোনালেন।সবকিছু শুনার পর সোহেল চৌধুরীর মুখ থেকে বিরক্তির চাপ উঠে গিয়ে সেখানে ভর করল চরম বিস্ময়।যে জিনিসটা আবিষ্কারে বিশ্বের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা অসফল।আর সেখানে এই অখ্যাত বিজ্ঞানী রিতিমতো অসাধ্য সাধন করছে।রনি আহমেদের কথা ঠিক যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গবেষণার ফলাফল দ্রুত বিজ্ঞান কেন্দ্র পৌছে দিতে হবে।তবে তার আগে তাকে একটি কাজ সেরে নিতে হবে।এই আবিষ্কার রনি আহমেদকে অমর করে রাখবে পৃথিবীতে।রনি আহমেদের চোখে মুখে আনন্দের উচ্ছাস।সোহেল চৌধুরীর মুখে হাসি ফুটতে গিয়ে ফুটলোনা!
হয়তো একজন অখ্যাতের বিখ্যাত হওয়ার ঈর্ষায়। সোহেল চৌধুরী সিদ্ধান্ত নিলেন আজ রাত রনি আহমেদ এখানে কাটাবে কালকে দুইজনে এক সাথে বিজ্ঞান কেন্দ্রের উদ্যেশে রওনা হবে। রনি আহমেদ চিন্তা ভাবনা ছাড়ায় এতে সম্মতি দিয়ে দেন।রনির সম্মতি পাওয়ার পর মুর্হুতে সোহেল চৌধুরীর মুখে ফুটে উঠলো এক অদ্ভুত হাসি। মনে মনে কিছু একটা মিলিয়ে নিলেন তিনি।

(৩)
নিস্তব্দ রাত সোহেল চৌধুরির বাগান বাড়ির একটি আধুনিক কক্ষে রনি আহমেদের থাকার ব্যবস্থা হলো।হাতছানি দেওয়া অজানা এক ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভাবতে রনি আহমেদ ঘুমিয়ে পড়লো নরম মখমলের বিছানায়। নিশুতি রাত পিন পতন নিরাবতা ভেঙ্গে দূরের পাখিরা ডেকে উঠলো করুন সুরে।এতো রাতে পাখিদের ডাকার কথা নয় তবুও পাখিগুলো ডেকে উঠলো কেনো? পাখিগুলো কী কোনো ভয়াবহ ভবিষ্যৎ টের পেয়েছে? হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো রনি আহমেদের।কে যেনো উপুর হয়ে আছে তার উপর।উপুর হওয়া ব্যাক্তির উপর চোখ পড়তেই চমকে উঠেন তিনি। নড়তে গিয়েও নড়তে পারলেন না।তাকে খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। কি হচ্ছে এসব?
অবাক,ভয় ও একরাশ বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রনি তাকিয়ে আছেন ইনজেকশন হাতে দাড়িয়ে থাকা সোহেল চৌধুরীর দিকে।মুচকি হাসলেন সোহেল।কোন রকমের ধস্তাধস্তি ছাড়াই রনি আহমেদকে ইনজেকশনটা পুশ করতে পেরেছেন তিনি।রশি দিয়ে বেঁধে রাখাতে কাজটা করতে সহজ হয়েছে।ইদনিং লোকটার পাগলামোর মাত্রা বেড়ে চলছে সারাদিন কিসব অদ্ভুত কর্মকান্ড করে বেড়ায়।ইনজেকশন দেয়াতে কয়েক মাস শান্তিতে থাকতে পারবেন এখন।রনি আহমেদ আবার ঘুমিয়ে পড়তেই একটি খালি ড্রাগের শিশি জানালা দিয়ে বাহিরে ফেলে দিয়ে কিছু কাগজ নিয়ে বের হয়ে আসলেন তিনি।অদ্ভুত লেখা আর নকাশায় ভরপুর কাগজ গুলোর একটিতে বড় বড় অক্ষরের লেখা মাইন্ড রিডিং বাক্যটির দিকে তাকিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি মনে মনে ঠিক করে নিলেন মনোবিজ্ঞানী সোহেল চৌধুরী
[সমাপ্ত]
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×