প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, আমি পার্লামেন্টকে আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই যে, বিদ্যমান বাস্তবতায় এবং বাংলাদেশ সরকারের ক্রমাগত অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমরা আশা করছি, আরও অনেক দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং বাংলাদেশ জাতিসমূহের পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য হবে। ভারতের স্বীকৃতির দিনেই মুক্ত হয় যশোর শহর। সিদ্দিক সালিক 'উইটনেস টু সারেন্ডার' গ্রন্থে লিখেছেন, ৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টায় যশোর ক্যান্টনমেন্ট পরিত্যাগ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। শত্রুর আক্রমণ মোকাবেলায় একটি গোলাও ছোড়া হয়নি। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এমনকি প্রচুর গোলাগুলির ভাণ্ডারটিও ধ্বংস করেনি। শত্রুপক্ষ যশোর দখলের লড়াইয়ে প্রচুর রক্তক্ষয়ের আশঙ্কা করছিল। এ কারণে তারা পরদিন সকাল ১১টা পর্যন্ত ক্যান্টনমেন্টের দখল নেয়নি। যশোরের পতন হওয়ার দু'দিন পরও পাকিস্তানের ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর থেকে দাবি করা হচ্ছিল_ সেখানে তুমুল লড়াই চলছে। ভারতের সেনাবাহিনীর সঙ্গে অনেক বিদেশি সাংবাদিক যশোরে প্রবেশ করেন। তারা কেউ কেউ ঢাকাতেও চলে আসেন এবং যশোর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে_ আমাদের এ দাবির জন্য উপহাস-বিদ্রূপ করতে থাকেন। তারা বলেন, ক্যান্টনমেন্টে যে টাইপিস্ট টাইপ করছিল সেও পালানোর সময় টাইপরাইটারের কাগজটি ছিঁড়ে আসার সময় পায়নি।
যশোরে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ছিলেন নিউইয়র্ক টাইমসের সিডনি শানবার্গ। যশোর মুক্ত হওয়ার পর তার পাঠানো প্রতিবেদনটি ছিল নিম্নরূপ :বাঙালিরা নাচছে বাসের ছাদের ওপর। রাস্তায় তারা স্বাধীনতার স্লোগান দিচ্ছে। তারা পরস্পরকে জড়িয়ে আনন্দ করছে। অন্য দেশ থেকে আসা অতিথিদের সঙ্গে পরম আবেগে করমর্দন করছে। তিনি লেখেন, আজ যশোর মুক্ত হওয়ার দিন। আট মাস ধরে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক বিবেচনায় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এ শহরটি গতকাল পর্যন্তও ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের দখলে, যারা গত বসন্তে এসেছিল বাঙালিদের বিদ্রোহ দমনের জন্য। তিনি লেখেন, বিদেশি সাংবাদিকদের বহন করা একটি জিপ ঝিকরগাছা থেকে যশোরের দিকে এগিয়ে চলেছে, রাস্তার দু'পাশের গ্রামবাসীরা সোৎসাহে স্লোগান তুলছে_ জয় বাংলা। যশোর শহরের পরিস্থিতি আরও প্রাণোচ্ছল ও উৎসবমুখর। ঘরবাড়ির ছাদে উঠছিল সবুজ, লাল ও সোনালি রঙের বাংলাদেশের পতাকা। কিন্তু এত আনন্দধ্বনির মধ্যেও মিশে ছিল শোক আর বেদনা। রাস্তায় সমবেতরা শহরের যুদ্ধপূর্ব লোকসংখ্যার সামান্য অংশই ছিল। যারা এখানে উপস্থিত নেই, তাদের অনেকে শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং হয়তো অচিরেই ফিরে আসবেন। আরেক দল কখনও ফিরবে না। তারা স্বাধীনতার জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন।
আমি খুলনাতে বাসায় বসে বিমান যুদ্ধ দেখি আর ছোট একটি ডায়রিতে যৌথ বাহিনী কতদুর এগুলো তা লিখি। একটা বিষয় পরিস্কার হয়ে গেলাম যে বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র পৃথিবীর খেরোখাতায় নাম লেখাতে যাচ্ছে। কি আনন্দ হচ্ছিলো বলে বোঝাতে পারবনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১৭