জঙ্গিবাদের সমর্থক তালিবান আফগানিস্তানের সীমানা ছাড়িয়ে পাকিস্তান এবং কাশ্মীর পর্যন্ত তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে এখন নতুন পালক পেয়েছে , চীন , পৃথিবীর সবচে আগুয়ান রাষ্ট্র । তালিবান পেশোয়ারের একটি গ্রাম্য স্কুলের বেঞ্চিতে বসে সৃষ্টি এবং পরে সীমানা ছাড়িয়ে আফগানিস্তানে বিস্তার ও দখল । সবচে বড় আশ্রয় পেয়েছে কাতারের কাছে । এক সময় মাওবাদ নিষিদ্ধ ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে । মাওবাদী আর তালিবানের কাজকর্মে কোন তফাত নেই । একটিতে মাও সর্বেসর্বা আরেকটি আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাসী । উভয়েই রক্তপাতের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে চায় । চীনে মাওবাদ পাইনি এক মাওএর মওসেলিয়াম ছাড়া । এখন সেখানে তালিবান ঢুকে কার্যত শ্রীবৃদ্ধি করল , অবশ্য ব্যাপারটা থিয়ানজিন শহরে ঘটেছে বেইজিঙ্গে নয় । ওয়াং ই এবং আব্দুল গনি বারাদার এর যুগল ছবি সাড়া বিশ্বে সাড়া জাগিয়েছে । চীন আবদার করেছে তালিবানদের আরেক ভ্রাতা এটিম ETIM দের নিস্ক্রিয়তা কারন এরা বর্বরতায় এক কাঠি সরেস আর এরাই তাদের উইগুর ভাইদের জন্য চীনের পশ্চিম খণ্ডে আলাদা ইস্ট তুর্কমেনিস্তান রাষ্ট্রের জন্য জ্বিহাদ ঘোষণা করেছে । চীনের এখানেই আপত্তি । বারাদার মালপানি আর মেশিন গান হাতে পেলে চোখের পলকে এটিমদের এতিম করে দেবে । হটাত করেই চীন কেন এমন কাজ করতে গেল? তালেবান নেতার এই সফরের চারদিন আগে আফগান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করতে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমন্ত্রণ করেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশীকে। চেংডু শহরে দুই মন্ত্রীর দীর্ঘ বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয় যে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে চীন ও পাকিস্তান যৌথভাবে কাজ করবে। আফগানিস্তানে যেকোন অস্থিতিশীলতার প্রভাব প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানে সরাসরি গিয়ে পড়বে। ফলে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আফগানিস্তানে নতুন করে কোন গৃহযুদ্ধ যাতে শুরু না হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে এবং আফগান বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মীমাংসা আলোচনায় সাহায্যের জন্য পাঁচ-দফা একটি কর্মপরিকল্পনা চেংডুর ওই বৈঠক থেকে ঘোষণা হয়।
আগস্টের মধ্যেই মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণার পর আফগানিস্তান নিয়ে সমস্ত প্রতিবেশী দেশগুলো অনিশ্চয়তা-উদ্বেগে ভুগছে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে সবাই এখন সচেষ্ট।
তবে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে চীন।পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানকে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বি আর আই) প্রকল্পে যুক্ত করার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছে চীন। সেই সাথে, আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদের ওপর চীনের লোভ রয়েছে বলেই বিশ্বাস সবার । চীনের এখন প্রধান চিন্তা যে আফগানিস্তানে যেকোন অরাজকতা হয়তো পাকিস্তানে এবং ইরানে তাদের শত শত কোটি ডলারের প্রকল্প - যা ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বিকল্প একটি বাণিজ্য রুট – হুমকিতে ফেলতে পারে।সাগর তীরবর্তী গোয়াদার গভীর সমুদ্র বন্দর এবং সেখান থেকে চীন পর্যন্ত একটি জ্বালানি পাইপলাইন বসানোসহ পাকিস্তানে ডজন ডজন অবকাঠামো প্রকল্পে চীন ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০ বিলিয়ন (৬,০০০ কোটি) ডলার ব্যয় করবে।
সেই সাথে, চীন ইরানের সাথে একটি চুক্তি করেছে যার আওতায় তারা বন্দর আব্বাসের আধুনিকায়ন এবং সম্প্রসারণসহ সেদেশের একগাদা অবকাঠামো এবং জ্বালানি প্রকল্পে আগামী ২৫ বছরে ৪০০ বিলিয়ন (৪০,০০০ কোটি) ডলার বিনিয়োগ করবে।
উইগুর বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ইস্ট তুর্কেস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (এটিম) অনেক বছর ধরে এই সীমান্ত এলাকায় তৎপর। সীমান্ত পেরিয়ে তারা আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আশ্রয়-প্রশ্রয় পায়, এবং চীন বিশ্বাস করে পাকিস্তানে বিভিন্ন সময়ে চীনা নাগরিক এবং চীনা প্রকল্পে হামলার পেছনে এটিমের হাত রয়েছে।
মোল্লাহ বারাদার বৈঠকে চীনা মন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করে চীনের বিরুদ্ধে কাউকে কোনও তৎপরতা তালেবান চালাতে দেবে না।
মি. বারাদার এও বলেছেন আফগানিস্তানে শান্তি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তারা চীনের কাছ থেকে আরও ভূমিকা দেখতে উদগ্রীব। তালিবানরা যে দুর্ধর্ষ অজেয় শক্তি এটা মার্কিনীরা জানে এবং তাই তারা আঘাত আসার আগেই সরে পড়ছে । ঠিক একারনেই চীনারা তালেবানের সাথে আগ বাড়িয়ে ভাব ইশক মজবুত করে নিচ্ছে ।
আমার ধারনা এই অসামঞ্জস্য ইশক একসময় ভেঙ্গে যাবে স্বাধীন তুর্কমেনিস্থানের ইস্যুতে । এটিম যোদ্ধারা । ছবি বিবিসি ।।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:১৬