somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউক্রেনের মুসলিমরা কেমন আছেন !!

১১ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৪:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





ইউক্রেনের জনগণের খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ মুসলিম, বেসরকারি হিসেবে অনুমান করা হয়, মুসলিমদের সংখ্যা হয়তো এক শতাংশের কাছাকাছি হবে। গত দুটি রমজানে তারা কোভিড মহামারির কারণে সেভাবে কোন উৎসব করতে পারেননি। তাই এবার খুব আগ্রহ নিয়ে রমজানের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু এবার যুদ্ধের কারণে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
সবচেয়ে কঠিন ব্যাপারটা হচ্ছে নিজেকে নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক-ভাবে প্রস্তুত করা। আমার আরও বেশি করে কোরআন পাঠ করা দরকার, আরও বেশি সময় ধরে নামাজ পড়া দরকার। কিন্তু এখন ইবাদতে মন দেয়া খুব কঠিন, কারণ আমরা যেরকম মানসিক চাপ আর অবসাদের মধ্যে আছি, বলছেন ভিক্টোরিয়া।
নিয়ারা তার শিশু কন্যাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, সে কারণে তিনি রোজা রাখছেন না। তবে ভিক্টোরিয়া রোজা রাখছেন। কিন্তু দুজনেই এবারের রমজানে ধর্মকর্মে মন দিতে বেশ সমস্যায় পড়ছেন।






আমরা নামাজ পড়ার জন্য হয়তো সময় ঠিকই বের করে নিচ্ছি। যুদ্ধের কারণে এক্ষেত্রে আমাদের জন্য কিছুটা মাফ আছে। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যদি পড়তে না পারি, সেটা হয়তো পরে কাজা করা যায়, দিনেরটা সন্ধ্যায়, বা সন্ধ্যারটা রাতে আদায় করতে পারি। এভাবে আমরা আমাদের ধর্মীয় ফরজ অন্তত রক্ষা করতে পারি, বলছেন তিনি। গত আট বছর ধরে নিয়ারা ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় যাপোরিঝিয়া শহরে থাকেন। সেখানে তিনি একটি এনজিও চালান, যেটি পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো বা মুসলিমদের ব্যাপারে গৎবাঁধা ভুল ধারণা দূর করতে নানা ধরণের কর্মসূচি নিয়েছে।তার চতুর্থ সন্তানের জন্ম হওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহ পরেই পুরো-দমে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। নিয়ারা এবং তার পরিবার তখন রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে সাজানোর কথা ভাবছিলেন।আমরা একটা বিরাট ধাক্কা খেয়েছিলাম। বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ছিল, তেলের গুদামে আগুন জ্বলছিল.. রুশ সেনারা শহরের খুব কাছে চলে আসছিল। তখন আমরা সেখান থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।রাশিয়া যখন ক্রাইমিয়া দখল করে নিয়েছিল, তখন সেটা প্রায় রক্তপাতহীন ভাবেই করতে পেরেছিল। কিন্তু এবারের অভিযান একেবারে নির্মম, চারিদিকে রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে।





কাজেই এবার তাদের আবার ঘর ছেড়ে পথে নামতে হলো। এবার তারা চলে গেলেন পশ্চিম ইউক্রেনের চেরনিভিটসিতে। এই বিষয়টি তার সন্তানদের ওপর বেশ মানসিক চাপ তৈরি করেছিল।
আমার ছেলে-মেয়েরা ওদের বন্ধুদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ওদের নিজের বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। আমরা এমনকি এই শহরেও নিরাপদ নই। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমা যে কোন সময় ইউক্রেনের যে কোন শহরে এসে পড়তে পারে।প্রথমে তারা এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন একটি মসজিদে। পরে অবশ্য তারা একটি আলাদা বাসা ভাড়া নিতে পেরেছেন। রমজানের পুরোনো স্মৃতি যখন তার মনে পড়ছিল, তখন বুঝতে পারছিলেন, কী হারিয়েছেন তিনি।
পুরো পরিবার একসঙ্গে রোজা রাখতো, নামাজ পড়তো, এক সঙ্গে ইফতার করে রোজা ভাঙ্গতো। এখন তো আমাদের পরিবারও বিচ্ছিন্ন, যুদ্ধের কারণ একেকজন একেক জায়গায়। অনেকে দেশ ছেড়ে চলে গেছে, একেকজন একেক দেশে। আমরা মোটেই সুখে নেই, বলছেন নিয়ারা।





নিয়ারার স্বামী একজন ইমাম হিসেবে কাজ করেন একটি মসজিদে। এটিকে মসজিদ বলা ঠিক হবে না, একটা ঘরকে ঠিকঠাক করা হয়েছে নামাজ পড়ার জন্য। চেরনিভিটসিতে এখন রাতে কারফিউ জারি থাকে। ফলে অনেক সময় তার স্বামীর দেরি হলে তাকে রাতে মসজিদেই থেকে যেতে হয়। তবে এই নতুন অচেনা জায়গাতেও কিছু মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে নিয়ারার।
আমরা এখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্য মানুষদের সঙ্গে একসাথে ইফতার করি। আমরা পরস্পরকে সাহায্য করি। আমরা ধনী মুসলিমদের প্রতি আবেদনও জানাচ্ছি যেন তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া লোকজনকে খাবার দিয়ে সাহায্য করেন।আমরা সচরাচর যে ধরনের খাবার খাই, সেরকম খাবারই রান্না করার চেষ্টা করি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখানে হালাল মাংস পাওয়া যায় না। মাঝে মধ্যে কিছু হালাল মুরগী পাওয়া যায়," বলছেন নিয়ারা।
তিনি জানান, তুরস্কের মতো কিছু দেশের মুসলিম ত্রাণ সংস্থাগুলো কিছু প্রয়োজনীয় খাদ্য সাহায্য পাঠায়। এর পাশাপাশি স্থানীয় মুসলিমরা কিছু রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন দিয়ে সাহায্য করে।
ভিক্টোরিয়া অবশ্য হিমায়িত মাংস এবং মাছ দিয়ে কোন রকমে রান্না চালিয়ে যাচ্ছেন।আমরা হালাল খাবারই দেয়ার চেষ্টা করি। তবে হালাল মাংসের সরবরাহ নেই, তাই আমরা সমস্যায় আছি। যেসব মুসলিম দুর্গম বা বিচ্ছিন্ন এলাকায় আছেন, তারা হিমায়িত হালাল মাংসও পাচ্ছেন না।
হালাল সার্টিফিকেট দেয় কিয়েভের যে সংস্থা, যুদ্ধ শুরুর আগে ভিক্টোরিয়া সেখানে পরিচালক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি আশা করছেন হালাল মাংসের সমস্যার মোকাবেলা শীঘ্রই করা যাবে।অনেক মুসলিম নারী-পুরুষ ইউক্রেনের নিয়মিত সেনাবাহিনীতে এবং আধা সামরিক বাহিনীতে কাজ করেন। কেউ কেউ সম্প্রতি তৈরি হওয়া সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে যোগ দিয়েছে।
আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু রুশদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, বলছেন ভিক্টোরিয়া।কিয়েভের যেটা প্রধান মসজিদ, সেখানে স্বাভাবিক সময়ে যত মানুষ নামাজ পড়তে আসে, এখন আসছে তার মাত্র ৫ শতাংশ। এই বিষয়টা ভিক্টোরিয়াকে বেশ পীড়া দেয়।ভিক্টোরিয়া মনে করেন, অনেক মুসলিম হয়তো এখনো শহরে আছে। তবে তারা অত্যাবশ্যকীয় নানা সেবা দেয়ার কাজে বা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কাজে ব্যস্ত, সেজন্যে তারা হয়তো নামাজ পড়তে মসজিদে আসতে পারছেন না। তবে এই কাজ যে জরুরি সেটা তিনি বুঝতে পারেন।
আমাদের লোকজনকে সাহায্য করার জন্য যতটা সম্ভব আমাকে কাজ করে যেতে হবে। দেশপ্রেমিক হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। ইউক্রেনের জনগণের মূল শক্তি হচ্ছে এর জনগণের ঐক্য। আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে থাকতে হবে, একে অপরকে সাহায্য করতে হবে। তখনই কেবল আমরা শত্রুকে পরাজিত করতে পারবো।নিয়ারা বিশ্বাস করেন, আল্লাহ তাকে এই সংকট উত্তরণে সাহায্য করবেন।

আমরা বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি, আমরা শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি, শান্তির অপেক্ষায় আছি, বলছেন তিনি।







বিবিসি থেকে সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৪:৪৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?



পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশ ও অঞ্চলে বছরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×