ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী না হলে আজ আমরা একটা প্যারাসিটামল ২০/- টাকায় কিনে খেতাম!!!
প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিলেন। ডাক্তার চৌধুরীর বিরুদ্ধে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা এনে তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। রাষ্ট্রপতি এরশাদ ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করতেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ক্রমাগত বিদেশী দূতাবাসের চাপ আসতে থাকে।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র অফিসাররা বেশির ভাগই তখন সিএসপি অফিসার। এরা সবাই ষাটের দশকের তরুন। তাদের বেশিরভাগই বামপন্থী চিন্তার ধারক ও বাহক। তাদের মাঝে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এক ধরনের জনপ্রিয়তা রয়েছে। অদৃশ্য শক্তি ডাক্তার চৌধুরীকে সাইজ করার জন্য উপযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তা খুঁজছিলেন। তারা খুঁজছিলেন একজন দাঁড়িওয়ালা-টুপিওয়ালা তদন্ত কর্মকর্তা।
নানামুখী চাপে তৎকালীন সংস্থাপন সচিব ৬২ ব্যাচের সিএসপি অফিসার এ জেড এম শামসুল আলম কে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেন...
তদন্তের নির্দেশনা পেয়ে এ জেড এম শামসুল আলম সংস্থাপন সচিবের কাছে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি বলেন- "ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন বামপন্থী সমাজকর্মী। আর আমি একজন ডানপন্থী সরকারি কর্মকর্তা। তার মতো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমার তদন্ত রিপোর্ট প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। আমি তদন্ত কর্মকর্তা থেকে অব্যাহতি চাই।''
এদিকে ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার তদন্ত কর্মকর্তা সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে থাকেন। নানামুখী খোঁজ শেষে তিনি সংস্থাপন সচিবের নিকট একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী উল্লেখ করেন- "এ জেড এম শামসুল আলম যদি আমার তদন্ত কর্মকর্তা হয়ে থাকেন! তাহলে এই তদন্তে আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এখানে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করলে আমি যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব।"
তদন্ত কাজ শেষ হলো। তদন্ত কর্মকর্তা গোপনে রুমের দরজা বন্ধ করে তার তদন্ত রিপোর্ট লিখছেন। চারিদিক থেকে তদন্ত কর্মকর্তার উপর নজরদারি। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে বলাবলি হচ্ছিল এইবার ডাক্তার জাফরুল্লাহর আর রক্ষা নেই।
তদন্ত রিপোর্ট চূড়ান্ত করার এক পর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে একটু দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। বঙ্গভবন থেকে তদন্ত কর্মকর্তাকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করার অনুমতি দেয়া হলো।
তদন্ত কর্মকর্তা প্রায় ঘন্টাখানেক মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে তদন্তের বিভিন্ন দিক অবহিত করলেন। এরপর রাষ্ট্রপতির হাতে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করলেন...
আশ্চর্য বিষয়! ডাক্তার জাফর উল্লাহ চৌধুরী শাস্তির পরিবর্তে কয়েকদিন পরে উল্টো মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হয়ে গেলেন!
জানা গেছে তদন্ত কর্মকর্তা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছেন যে ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক । তিনি বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলোর ষড়যন্ত্রের শিকার। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নিন্মমানের ঔষধ বানিয়ে সীমাহীন মুনাফা করছিলেন। তারা ঔষধ তৈরি করে এদেশের মানুষকে গিনিপিগ বানিয়ে ঔষধের প্রাথমিক পরীক্ষা করছিলেন । এ বিষয়ে জাফরউল্লা চৌধুরী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছিলেন। ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে শায়েস্তা করার জন্য সব ঔষধ কোম্পানিগুলো একজোট হয়ে মাঠে নেমেছেন। আর তাতে বিদেশি দূতাবাসগুলোকেও কাজে লাগানো হচ্ছিল।
ডাক্তার জাফর উল্লাহ চৌধুরী পরপারে চলে গেছেন। এ জেড এম শামসুল আলম আজও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন। তিনি রাজধানীর টিকাটুলি এলাকায় একটি ফ্লাটে বসবাস করছেন।
বামপন্থী এবং ডানপন্থী দুই ঘরানার দুই মহান দেশ প্রেমিকের বদান্যতায় আজ আমরা জাতীয় ঔষধনীতি পেয়েছি। আজ আমরা বিদেশে ঔষধ রপ্তানি করছি। বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানিগুলো একে একে পাততাড়ি গুটিয়ে এ দেশ থেকে চলে গেছে।
সেদিন এ জেড এম শামসুল আলম সঠিক দায়িত্ব পালন না করলে ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী হয়তো থেমে যেতেন। নব্য 'ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি' রূপী বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানিগুলো আজও আমাদের শোষণ করতো। একজন জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম না হলে আজ আমরা একটি প্যারাসিটামল ২০ টাকা দিয়ে কিনে খেতাম।
-------------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র : এ জেড এম শামসুল আলম, সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব, সাবেক ধর্ম সচিব ও সাবেক মহাপরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৫:০৯