ঈদে বাড়ি ফিরছি। হয়ত কিছুক্ষণ পরে মা’কে ফোন করে বলব ‘মা আমি বাড়ি আসতেছি’ মা তখন বলবে, ঠিক ঠাক মত আছিস, মানুষে কিছু দিলে খাইস না’। মা’র ধারণা আমি এখনও আগের মত বোকা আছি। ছোট কালে যেমন ছিলাম। তবে বলে রাখা ভালো আমি ছোট কালে একটু বেশী বোকা টাইপের ছিলাম। এখন আছি তবে আগের চাইতে কিঞ্চিত উন্নতি হইছে। আমি জানি এই জগতে আমার তেমন কোন মূল্য নেই। আমার পক্ষে এই দেশ কিংবা জাতিকে দেওয়ার মত জ্ঞান যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু আমার মা-বাবার কাছে আমিই সেরা।
ঢাকা শহরে ছোট খাট একটি চাকরী করি আর এ বছর মাস্টার্স শেষ করব।অর্থাৎ পাট টাইম জব হোল্ডার। যা টাকা ইনকাম করি তাদের নিজের মোটা-মুটি ভালো চলে যায়। ফ্যামিলিকে সার্পোট করতে পারি না আর প্রয়োজনও পড়ে না। এতে মাঝে মাঝে মন খারাপ করলেও মা-বাবার হাসি-মাখা মুখ দেখলে আর খারাপ লাগে না। মা- সবার কাছে বলে বেড়ায় ‘আমার হাবা-গোবা ছেলেটা ঢাকা শহরে লেখা পড়া করি নিজের টাকা নিজেই ইনকাম করে এটা কম কিসে? আর বাবা আমাকে নিয়ে গর্ব করেন, তার পরিচিত জনদেন নিকট বলেন, আমার বোকা ছেলেটা ঢাকা শহরে নিজে চলতে শিখেছে। লেখা পড়া করে এবং পাশা-পাশি চাকরিও করে। এই কথা বলার সময় তার মুখ গর্বে উচু হয়ে হঠে। বাবা এক সময় আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন। এখনও করেন তবে আগের মত না।
এবার ঈদে বাড়ি যাচ্ছি, শপিং বলতে, নিজের জন্য প্যান্ট, শার্ট, শু, আর পাঞ্জাবি। মা’র জন্য শাড়ি, বাবার জন্য পাঞ্জাবী, ছোট ভাইয়ের জন্য জামা নিলাম। বর্তমান জমানায় এটা যদিও নগন্য কিন্তু এই অধমের জন্য বিশাল কিছু। বাড়িতে গিয়ে যখন মা’র হাতে তুলে দিব তখন বলবে কি দরকার ছিল এসব কেনার। তুই ঠিকমত চলতে পারিস ত’। তোর বাবা- আর বড় ভাইয়েরা ত’ অনেক মার্কেট করে রেখেছে। আমি তখন হয়ত মুখে হাসি দিয়ে মাথা নাড়াব। সেই সময় ছোট ভাই এসে আমাকে পচাতে থাকবে (সে মজা করে আমাকে সব সময় পচায়, সে বলবে এটা ভালো হয়নি, ওটা দেখতে ভালো না ইত্যাদি ইত্যাদি, আমি কেন জানি পারি না)। আবার দেখা যাবে ছোট ভাইটা ঈদের দিন তার পছন্দের কেনা জামা রেখে আমারটাই পড়েছে।
আর
বাবা! সে বলবে, ‘তোরে কে বলছে এসব কিনতে’। আমি তখন বোকার মত দাঁড়িয়ে থাকব। আসলে, আমারে কে বলছে এসব কিনতে। এর উত্তর নিজে নিজেই খুঁজতে থাকব। ততক্ষণে হয়ত মা আমার জন্য আরেকটি নতুন পাঞ্জাবী-পায়জামা নিয়ে হাজির। যেটি বাবা আমার জন্য আগেই কিনে রেখে ছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৮