somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘স্বপ্নের সৈকতে এঁকে যাই পদচিহ্ন’ পর্ব ২

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





পাখির কিচিরমিচিরে ঘুম ভাঙ্গে। সকালের সোনা রোদ তাবু ভেদ করে ভিতরে ঢুকতে পারছে না ঠিকই তবে আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে সম্পূর্ণ তাবুর ভিতরটা। তাবু থেকে মুখ বের করতেই দেখা হয়ে গেল সূর্যের সাথে। মুচকি মুচকি হাসছে। অতি আদিম ও অকতৃম সে হাসি। এতো পবিত্র সূর্য নগর জীবনে খুঁজে পাওয়া যাবে না।


আজ বিচ হাইকিং এর দ্বিতীয় দিন। হিসাব মতে আজকে হাঁটতে হবে ৪০ কিলোমিটার এর মত। তাই টুটু ভাই সকাল থেকেই তাড়া দিচ্ছেন তাড়াতাড়ি রেডি হওয়ার জন্য। আজকের সকালের মেন্যু ডিম খিচুড়ি আর আঁচার। দুপুরের জন্য ফ্রাইড রাইস। টুটু ভাই, আমি, সেবা আপু, ইয়াসমিন আপু, ঊর্মি মিলে আমরা দুপুরের খাবার বাটি গুলো রেডি করে যার যার হাতে বুঝিয়ে দিলাম। চা পর্ব শেষ করেই সবাই বসে গেল অফিসিয়াল ছবি তোলার জন্য। এই ইভেন্টে ফেরদৌস ভাই আমাদের অফিসিয়াল ফটোগ্রাফার। গ্রুপ ছবি তোলার চেয়ে ভাবীর ছবি তোলায় তার মনোযোগ বেশি।



সকাল ৭.৩০ নাগাদ টিম রওনা হয়ে গেল। ক্যাম্প গুটিয়ে টু টু ভাইও রওনা হলেন ইনানিতে। সকালের সোনা রোদ গায়ে মাখিয়ে, বুক ভরে সাগরের নোনতা বাতাসে শ্বাস নিয়ে গুটি গুটি পায়ে দল এগিয়ে চলেছে। আজ সবার মাঝে উৎসবের আমেজ। ৬০ বছরের চির তরুন হাসনু ভাই আজ পতাকাবাহী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যার যার ক্যামেরাতে সবাই ধরে রাখছে সুন্দর মুহূর্তগুলো। আজ সারা দিন মাছ ধরা নৌকার ছড়াছড়ি। আব্দুস সাত্তার দরিয়া থেকে ফিরেছে একটু আগে। তার নিজের সাম্পান নেই। দাদন নিয়ে মাছ ধরে গভীর সমুদ্রে। ফিরে এসে মাহাজনের কাছে সব মাছ বিক্রি করে দিতে হয় নাম মাত্র দামে। শাসক আর শোষিতের পার্থক্য আজও ঘুচেনি সাগর সংগ্রামী এই মানুষগুলোর জীবনে।


আস্তে আস্তে সূর্য তেজ ছড়াতে শুরু করেছে। রেগে মেগে একেবারে আগুন হয়ে আছে। কেউ সাহস করে তার দিকে তাকাতেই পারছে না। ১২ টা নাগাদ দল শ্যমলা বাজার চলে এলো। এখানে বেশ কয়েকশ সাম্পান চোখে পড়লো। আজকের মত মাছ ধরা শেষ করে ফিরে এসেছে সবাই। এটি মূলত একটি মাছ-গঞ্জ। নানান কাজে অনেক মানুষ এখানে আসেন। বেশ কিছু মাছের আড়ত চোখে পড়লো। লইটা, পোয়া, রূপচাঁদা, ফোঁকা, চিংড়ি, কাঁকড়ার ছড়াছড়ি আড়তগুলোতে।


সাম্পানের ছায়াতে বসে সাথে করে আনা খাবার খেয়ে মেরিন ড্রাইভ ধরে হাঁটা শুরু হল আবার। সমুদ্রের চির চেনা দৃশ্যপট বার বার নতুন করে ধরা দিচ্ছিল আমাদের সামনে। আর একটি পুরনো জিনিষ আমাদের পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। লাল কাঁকড়ার সাম্রাজ্য।


আমার হাঁটছি তো হাঁটছি। কিছুটা ক্লান্ত। পা বিদ্রোহ শুরু করে দিয়েছে। ধীরে ধীরে চোখে পড়তে শুরু করল ঘরবাড়ি, ইটের দালান। ইনানি আর বেশি দূরে নয়।
বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে পত পত করে। চারদিকে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১০ টি তাবু। চারদিকে গোল হয়ে বসেছি আমরা। চা আর ঝালমুড়ির সাথে জমে উঠেছে আড্ডা। সবই এই দুই দিনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছে। পাশে চলছে বার-বি-কিউ। চারদিকে মৌ মৌ গন্ধে ক্ষুধা বেড়ে গেছে বহুগুণ। বার-বি-কিউ পর্ব শেষ করে আমরা চলে এলাম সমুদ্র পারে। কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে আমরা আবার ফিরে এলাম ক্যাম্পে। ফায়ার ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে বসে গান, জোকস, আড্ডা চলল প্রায় ১২ টা পর্যন্ত। কিছুক্ষন পর যার যার তাবুর ভিতর থেকে ভেসে আস্তে লাগলো হাসির শব্দ। কেউ কেউ আবার প্রতিযোগিতা করে নাক ডাকছে !! আরও ঘণ্টা খানেক পর পুরো ক্যাম্প চুপ হয়ে গেল। সাগর ভয় দেখিয়ে কোন ভাবেই ঘুমের ডিস্টার্ব করতে পারেনি।



পরদিনের সকালটা এক কথায় অসাধারণ। আজ টিমের অনেকেই হাঁটবে না। ইনানি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রাস্তাটি গত দুই দিনের মত সুন্দর নয়। বেশ অনেক জায়গাতে কাঁদা। ইনানি থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে বেশ বড়সড় এক খাল। রেজু খাল। এটা বেশ বড়। অনেকটা নদীর মত। খালের উপর ব্রিজ আছে। আজ আবার পতাকাবাহী দলে আছেন শাহাদাত ভাই ও জায়েদ ভাই। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাঁতরে পার হবেন এই খাল। যেই ভাবা সেই কাজ। পতাকা মাথায় বেঁধে তারা সাঁতরাতে শুরু করলেন। খাল পেরিয়ে আবার হাঁটা শুরু করেছেন তারা। বাকিরা ব্রিজ পেরিয়ে কিছু দূর সামনে এগিয়ে আবার বীচে নেমে গেলেন। একটা পর্যায়ে হিমছড়ি সী-বীচ চোখে পড়লো। কলাতলি আর মাত্র ৮ কিলোমিটার!! একেবারে বীচ ধরে হাঁটা দুরহ হয়ে পরেছে। মাছের হ্যাচারি, বেশ কিছু হোটেলের দেয়াল একেবারে সমুদ্র ঘেঁষে হওয়াতে হাঁটতে বেশ সমস্যা হলেও শাহদাত ও জায়েদ ভাই ঠিকই বীচ ধরেই হেঁটে লাবনী পয়েন্টে এসে পৌঁছলেন। স্বপ্নের সৈকতে পদচিহ্ন এঁকে যাওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ হল তাদের। বাকিরাও খুব বেশি দূরে নেই। একে একে সবাই পৌঁছে গেলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সৈকতে নিজের পায়ের ছাপ ফেলে। স্বপ্ন পুরনের আনন্দে সবার মন নেচেছে সেদিন। সাক্ষী ছিল সূর্য আর সমুদ্রের লক্ষ লক্ষ ঢেউ।



সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫২
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×