somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাম্প্রতিক সময়ের অপরাধপ্রবণতা - কারণ কী? প্রতিকার কোথায়?

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, দুর্নীতি - যখনই এসব সম্পর্কে কোন খবর দেখি, তখন অবধারিতভাবে যে চিন্তাটা চলে আসে তা হলো - এগুলোর কারণ কী? এসব অপরাধ এত বেড়ে গেছে কেন?

ফ্রেন্ড লিস্টের একজনের স্ট্যাটাস থেকে জানতে পারলাম বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ১৯ টি ধর্ষণ হচ্ছে। এই তথ্য শুধু সেই ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে, যেগুলোতে মামলা করা হয়েছে। আরও কত ঘটনা চেপে যাওয়া হয়েছে তা কেউ জানে না।

চিন্তাভাবনা করলে প্রথম যে কারণটা মাথায় আসে সেটা হলো শিক্ষার অভাব।

ধর্ষক যখন ধর্ষণ করে, তখন সে তার ভিক্টিমকে মানুষ হিসাবে দেখে না, দেখে পণ্য হিসাবে, বিকৃত আনন্দের উৎস হিসাবে। মানুষে মানুষে সহমর্মীতার শিক্ষা যদি তাদের ছোটবেলা থেকে দেয়া হত তাহলে সে ধর্ষণ করার আগে ভিক্টিমের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে একবার হলেও চিন্তা করত। নিজেকে ভিক্টিমের জায়গায় কল্পনা করত। এরপর আর কোনভাবেই তার ধর্ষণের ইচ্ছা থাকত বলে আমার মনে হয় না। অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রেও একই কথা। শুধু ধর্ষণ নয়, প্রতিটি অপরাধেই কেউ না কেউ ভিক্টিমে পরিণত হয়। অপরাধী যদি ভিক্টিমের কথা চিন্তা করে, তাহলে তার অপরাধ করার ইচ্ছা চলে যেতে বাধ্য।

কিন্তু এরপরেও কিছু খটকা থেকে যায়। অনেক শিক্ষিত লোকজনও ধর্ষণ করে। সরকারের উঁচু পর্যায়ে যারা আছে, তারা প্রায় সবাই শিক্ষিত। অথচ দুর্নীতির হার সেখানে লজ্জাদায়ক রকমের বেশি। সেখানে তো শিক্ষার অভাবকে অপরাধের কারণ হিসাবে দায়ী করা যায় না। তাহলে?

এখানেই দ্বিতীয় কারণটা চলে আসে। সেটা হলো, বিচারহীনতা। যে অপরাধ করছে, সে জানে তার কোন শাস্তি হবে না। সামান্য কিছু টাকা খরচ করে সে পার পেয়ে যেতে পারবে। পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশেও যে অপরাধ হয় না তা নয়, সেখানেও হয়। কিন্তু তার পরিমাণ বাংলাদেশের তুলনায় বহু গুণে কম। কারণ সেখানে অপরাধীর পার পাওয়ার রাস্তা থাকছে না। যারা অপরাধ করছে তারা এটা জেনেই করছে যে পুলিশ তাকে ধরার জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখবে না, এবং আইনও তাকে শাস্তি দেয়ার সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত যাবে। যে কারণে অপরাধীর সংখ্যা সেখানে বানের পানির মত বাড়ছে না।

এই দুটো সমস্যাই বাংলাদেশকে ধ্বসিয়ে দিচ্ছে সর্ব ক্ষেত্রে। এবং এর পেছনে দায়ী কে?

সরকার।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি চুরমার করে দেয়া হয়েছে। যে গ্রেডিং সিস্টেমকে খুবই সুচারুভাবে ব্যবহার করা যেত, তাকে তামাশায় পরিণত করা হয়েছে। সকল নাগরিকের সুশিক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব, কারণ শিক্ষিত নাগরিক দেশের বোঝা নয়, দেশের সম্পদ। অথচ সে দিকে কারও কোন দৃষ্টি নেই। কিছু বলতে গেলেই অন্ধকে হাতি দেখানোর মত এক লক্ষ এ প্লাস দেখিয়ে দেয়া হয়। কুশিক্ষিত হওয়ার চাইতে অশিক্ষিত থাকা ভাল। সেই কুশিক্ষিত নাগরিকদের উদাহারণ খুঁজতে বেশি দূর যাওয়া লাগে না, ফেসবুকে একটু ঘুরে বেড়ালেই হাজারে হাজারে চোখে পড়ে। আর আইন বিচার এবং প্রশাসন? হা হা হা! কিছু বললাম না আর।

একটি দেশের সরকারের দায়িত্ব থাকে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের শিক্ষিত করা, আইনের শাসন জারী করা। অবশ্য তার জন্য দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আসতে হয়। "মানুষ আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে, আমাদের প্রতি বিশ্বাস রেখেছে, তাদের বিশ্বাসকে ভূলুণ্ঠিত হতে না দেয়া আমাদের কর্তব্য" এই চিন্তাটা থাকতে হয়।

কিন্তু বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থায় সেটা অসম্ভব। মানুষের মতামতে যারা ক্ষমতায় আসেনি, তারা মানুষের ভালমন্দের কথাও চিন্তা করবে না। দেশকে, দেশের মানুষকে তারা এবং তাদের পোষ্য বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের সম্পত্তিই মনে করবে। এটাই তো স্বাভাবিক, তাই না?

এ কারণে যখনই এ ধরনের অপরাধগুলোতে মানুষ বলে "আশা করব দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে/অপরাধীদের ফাঁসি চাই/নিরাপত্তা চাই" ইত্যাদি ইত্যাদি, তখন আমার হাসি পায়। আর খুব জানতে ইচ্ছা করে - ভাই, এগুলো চাচ্ছেন কার কাছে? কে শুনছে আপনার কথা?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৭
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×