somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখন যদি এমন হতো

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসলিম শাসক হারুন আল রশীদের জীবন থেকে নেয়া।

ইউফ্রেটিস নদীর উত্তর দিকে অবস্থিত
সিরিয়ার একটি শহর রাকা।(Ar Raqqah) ।
সেখান থেকে খলিফা হারুন উর রশীদের
দরবারে একটি চিঠি আসলো। চিঠিতে
লিখা- শহরের বিচারক একমাস যাবত অসুস্থ।
বিচারকাজ স্থবির হয়ে আছে। খলীফা যেন
খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেন।
খলীফা ফেরত চিঠি পাঠালেন। আগামী
এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন বিচারক শহরে
আসছে।
ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যেই রাকা শহরে নতুন
বিচারক এসে কাজে যোগ দিলেন।
বিচার কাজ শুরু হয়েছে। প্রহরীরা একজন
বৃদ্ধা মহিলাকে হাজির করলো। মহিলার
অপরাধ-সে শহরের রেস্তোরা থেকে একঝুড়ি
রুটি আর এক শিশি মধু চুরি করতে গিয়ে
একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়েছে।
বুড়ি কি জানেনা , খলীফা হারুনের
রশীদের রাজ্যে চুরি করা কতবড় অন্যায়। এ
জন্য আইনত চোরের হাতকাটা যাবে,
জরিমানা হবে, জেলদন্ড হবে।
বিচারক জিগ্গাসা করলেন-
আপনি চুরি করেছেন?
জ্বি হুজুর আমি চুরি করেছি।
আপনি কি জানেন, চুরি করা কতবড় অপরাধ?
কত বড় পাপ?
জ্বি জানি। অনেক বড় অপরাধ। ক্ষমার
অযোগ্য।
জানেন,এজন্য আপনার কতবড় শাস্তি হতে
পারে?
জ্বি জানি। আর্থিক জরিমানা,
জেলজরিমানা এমনকি আমার হাতও কাটা
যেতে পারে।
তবে এসব জেনেও কেন আপনি চুরি করেছেন?
কারণ, আমি গত এক সপ্তাহ ধরে অভুক্ত। শুধু
আমি অভুক্ত হলেও কথা ছিলো। সাথে
আমার এতিম দু নাতিও না খেয়ে আছে।
তাই চুরি করেছি। আমার আর কোনো উপায়
ছিলোনা হুজুর।
বিচারক এবার পুরো দরবারঘরে চোখ
বুলালেন। তারপর বললেন- কাল যেন নগর
প্রধান, খাদ্যগুদাম প্রধান, শরিয়া প্রধান ,
পুলিশ প্রধান, সমাজ হিতৈষি সহ গন্যমান্য
ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকেন। যথাসময়ে রায়
দেয়া হবে।
বিচারকের নির্দেশ পেয়ে পরদিন সকালে
সবাই হাজির। বিচারকও যথাসময়ে উপস্থিত
হলেন। রায় ঘোষণা হলো-
চুরি করার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে
প্রমাণীত হওয়ায় মোট ৫০টি চাবুক, ১০০
দিনার রৌপ্যমুদ্রা জরিমানা আর
অনাদায়ে ১ বছরের কারাদন্ড ধার্য্য করা
হলো। তবে বৃদ্ধা মহিলা কোন চলচাতুরীর
আশ্রয় না নিয়ে অকপটে সত্য কথা বলার
জন্য হাত কাটা মওকুফ করা হলো।
এবার বিচারক প্রহরীকে চাবুক আনার
নির্দেশ দিয়ে নিজে বিচারকের চেয়ার
থেকে নীচে নেমে এসে বৃদ্ধা মহিলার
পাশে দাঁড়ালেন।
প্রহরীকে বললেন- যে নগরে একজন বুভুক্ষু
মহিলা না খেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় চুরি
করতে বাধ্য হয়-সেখানে তো সবচেয়ে বড়
অপরাধী সে দেশের খলীফা। আর খলীফার
প্রতিনিধি হয়ে আমি বিচার করতে
এসেছি।-তাঁর অধীনে আমি যেহেতু চাকরী
করি। তাই ৫০ চাবুকের ২০টি আমার হাতে
মারাই হোক। আর এটাই বিচারকের আদেশ।
আদেশ যেন পালন করা হয়। বিচারক
হিসাবে চাবুক মারতে আমার ওপর যেন
বিন্দুমাত্র করুনা অথবা দয়া না দেখানো
হয়।
বিচারক হাত বাড়িয়ে দিলেন।দুহাতে পরপর
২০টি চাবুক মারা হলো। চাবুকের আঘাতে
হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এরপর
বিচারক পকেট থেকে একটা রুমাল বের
করলেন।
একজন রুমালখানা দিয়ে বিচারকের হাতে
বাঁধার জন্য এগিয়ে গেলে-বিচারক নিষেধ
করেলেন।
এরপর, বিচারক বললেন- যে শহরে নগর প্রধান,
খাদ্যগুদাম প্রধান সহ অন্যান্য সমাজ
হিতৈষীরা একজন অভাবগ্রস্থ মহিলার ভরণ
পোষণের ব্যবস্থা করতে পারেনা। তারাও
অপরাধী। তাই বাকি ৩০ টি চাবুক
সমানভাবে তাদেরকেও মারা হোক।
এরপর বিচারক, নিজ পকেট থেকে বের করা
রুমালের ওপর ৫০টি রোপ্য মুদ্রা রাখলেন।
তারপর উপস্থিত সবাইকে বললেন- যে সমাজ
একজন বয়স্ক মহিলাকে চোর বানায়, যে ঘরে
এতিম শিশু উপবাস থাকে সে সমাজের
সবাই অপরাধী। তাই এখানে উপস্থিত
সবাইকে -১০ দিনার রোপ্য মুদ্রা জরিমানা
করা হলো। এবার মোট ৫০০ দিনার রোপ্য
মুদ্রা থেকে ১০০টি রোপ্যমুদ্রা জরিমানা
বাবদ রেখে বাকি ৪০০ রোপ্যমুদ্রা থেকে
২০টি চুরি যাওয়া দোকানের মালিককে
দেয়া হলো। আর বাকি ৩৮০ টি বৃদ্ধা
মহিলাকে দিয়ে বিচারক বললেন- এগুলো
হলো আপনার ভরণপোষনের জন্য। আর
আগামি মাসে আপনি বাগদাদে খলিফা
হারুন উর রশীদের দরবারে আসবেন, খলীফা
আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
পরের মাসে বৃদ্ধা মহিলা খলীফার দরবারে
গিয়ে দেখেন- খলীফার আসনে বসা
লোকটিকে যেন কেমন চেনা চেনা মনে হয়।
তারপর ভয়ে ভয়ে খলীফার আসনের দিকে
এগিয়ে যান। একেবারে কাছে গিয়ে বুঝতে
পারেন, লোকটি আর কেউ না, এতো
সেদিনের সেই বিচারক।
খলীফা চেয়ার থেকে নেমে এসে বলেন-
আপনাকে আর আপনার এতিম দু নাতিকে
উপোস রাখার জন্য সেদিন বিচারক
হিসাবে ক্ষমা চেয়েছিলাম, আর আজ
দরবারে ডেকে এনেছি- প্রজা অধিকার
সমুন্নত করতে না পারা একজন অধম
খলীফাকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য। আপনি
আমাকে ক্ষমা করুন বুড়ীমা।
এ মহান খলীফা মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ৮০৯
সালে ইরানের খোরাশান প্রদেশের তোস
শহরে ইন্তেকাল করেন।
ইতিহাসে যিনি "The Just " হিসাবেই
পরিচিত।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×