somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্যোতিষীর মুখোমুখি একদিন।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




দিন দশেক আগে এক হাফ সেলিব্রিটির একটি লেখা পড়েছিলাম, তিনি সেই লেখায় বেশ কিছু চমৎকার তথ্য দিয়েছিলেন নিজের জীবনে প্রমাণিত কিছু ঘঠনার, বলছি জ্যোতির্বিদ্যার কথা! তিনি নাকি দেশ-বিদেশের বেশ কিছু গুনী জ্যোতিষীর কাছে নিজের হাত দেখিয়ে ভবিষ্যৎ বাণী নিয়েছিলেন যা পরবর্তীতে অনেকগুলো সত্যে রুপ নিয়েছিল সেই থেকে নিজের ভাগ্য গননার একটি সুপ্ত ইচ্ছে মনের গহীনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু আজীবন এই বিদ্যা ভুয়া বলে ভেবে এসেছি এখনো তাই বিশ্বাস করি আর বিশ্বাসের কারণ আজ পর্যন্ত কোন গনকের আমি ভাল পোশাক আশাক পরিহিত দেখেনি, ফুটপথে ছালা বিছিয়ে সেখানেই অস্থায়ী চেম্বার খুলে বসেন। বিকেল থেকে রাত আট দশটা পর্যন্ত চেম্বার স্থায়ী থাকে তারপর ছালা গুটিয়ে বাড়ির পথ ধরেন। অবশ্য ইদানিং টিভির বিজ্ঞাপনে অনেক নামীদামি জ্যোতিষীর দেখা যায় যাদের পোশাক-আশাক, চেম্বার সবই বেশ রাজকীয়।
গতকাল বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথে দেখি পথের গলির এক চিপায় এক মহান জ্যোতিষী ছালা বিছিয়ে বসে আছেন, ছালার এক প্রান্তে একটি বই, বইয়ের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এই একই বই তার দাদার দাদুও মনে হয় পড়তেন, একটি মাইক্রোস্কোপ যা দিয়ে হাতের তালুর প্রতিটি শিরা উপশিরা পর্যবেক্ষণ করা হয়। দুই তিনটি পাত্রে কিছু রং-বেংয়ের পাথর আছে, কিছু অতি পুরানো অষ্ট ধাতুর আংটিও লক্ষ্য করলাম।
মনের গহীনের ইচ্ছের মূল্য দিতে, মনের খচখচানি দুর করে জ্যোতিষ মহাশয়ের নিকট উপস্থিত হলাম, অভ্যাসগতভাবে আগেই দেন দরবার করে নিলাম, জিজ্ঞাসা করলাম ফি কত?
জ্যোতিষ মশাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ নিরীক্ষা করে বললেন, পঞ্চাশ টাকা।
আমি বললাম, না, এত টাকা দিতে পারবো না, বিশ টাকা দিবো।
তিনি বললেন ঠিক আছে দশ টাকা কম দিয়েন, কিন্তু আমি বিশ টাকায় অটল, অবশেষে ত্রিশ টাকায় দফা তবে পুরো দশ মিনিট সময় খরচ করে।
তিনি আমার হাতে সেই মাইক্রোস্কোপ দিয়ে প্রায় পাঁচ মিনিট পর্যবেক্ষণ করলেন, তারপর মুখে এক ফালি হেসে বললেন, আপনার তো রাজ কপাল! রাজনীতিতে আপনার মঙ্গল, এমনকি ভবিষ্যতে ক্ষমতার শীর্ষে আহরণ করতে পারেন!
আমি এতক্ষণ জ্যোতিষ মশাইয়ের কথা গিলছিলাম, কিছুটা চৈতন্য ফিরে আসলে বললাম, আপনি কি মশাই আমার সাথে মশকরা করছেন?
তিনি বললেন, কেন?
একটা আধা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, এক দশক ধরে অফিসে কামলা দিয়ে এখনো শ্রমিক রয়েই গেলাম, এক ধাপ উপরে উঠতে পারলাম না আর আপনি বললেন, রাজনীতি করলে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছাবো!
ধুর মশাই! এই নিন আপনার ত্রিশ টাকা, আমি চললাম।
তিনি আমার হাত শক্ত করে বললেন, বসেন বসেন আরো কিছু কথা শুনেই তারপর যান।
আমি বললাম, আমার এই ছেঁড়া প্যান্ট আর আয়রনহীন জামা দেখে তো আপনার বোঝা উচিত আমার দৌঁড় কতদূর?
তিনি এবার একটু নড়েচড়ে বসে বললেন, আমাদের তিন পুরুষের এই বিদ্যা, আমার চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতা মিথ্যা হতে পারে না।
এবার আমার মনের ভিতর কেমন জানি ভাললাগা ভাললাগা কাজ করতে লাগল, হতে তো পারি এক সময়! চা বিক্রেতা মুদি যদি একশত ত্রিশ কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী হতে পারে তাহলে আমি কেন নয়?
এইবার একটু আগ্রহভরে জানতে চাইলাম, কতদিন লাগতে পারে আমার ক্ষমতার শীর্ষে যেতে?
আমার কথা শুনে জ্যোতিষ মশাইয়ের মুখে একটা হাসির ঝলক বয়ে গেল, গম্ভীর জ্যোতিষ মশাই হাসি হাসি মুখে বললেন, বছর দশকের মধ্যে কাঙ্খিত লক্ষ্য পৌঁছায়ে যাবেন, কিন্তু একটু সমস্যা আছে সেই লক্ষ্য পথে।
আমি বললাম, কি ধরনের সমস্যা?
তিনি বললেন, ছোট বড় মিলে দশটি বাঁধা আছে? এই যেমন আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে আরো তিনজন, তারা আপনাকে ক্ষতি করতে চাইবে, আপনার হাতের রেখা বলছে আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন আবার নাও হতে পারেন তবে এই শনিমুক্ত পাথর যদি আপনি ধারণ করেন তাহলে রেখার চলন শক্তি যোগফলে উন্নতি হবে যার কারণে আপনাকে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীরা আর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
আমি বললাম, কত মূল্য এই শনিমুক্ত পাথরের?
জ্যোতিষ মশাই বললেন, এই পাথরের মূল্য অর্থের বিনিময়ে নির্ধারণ সম্ভব নয়, খুবই দুষ্প্রাপ্য, আমরা দাদু এই পাথর টুকরো হিমালয় অঞ্চল হতে সংগ্রহ করেছিলেন। শুধু আপনার হাতে রেখা আমার অত্যধিক ভাললাগায় এই পাথর আপনার জন্য মাত্র এক হাজার টাকা!
জ্যোতিষ মশাইয়ের পাথরের দাম শুনে আমার সকল চিন্তা শক্তি আমার ম্যানিব্যাগ বরাবর যুক্ত হল, এহার ভিতর এক টাকার কয়েন, দুই টাকার জোড়াতালি দেওয়া নোটসহ বড়জোর শ'দুই টাকা আছে, তাও বউ বলে দিয়েছে বাসায় ফেরার পথে যেন কিছু কাঁচাবাজার করে আনি। এক দিকে উজ্জ্বল ভবিষ্যত অন্যদিকে মানিব্যাগের একরাশ হাহাকার।
এমন সময় চমৎকার একটি প্রস্তাব আমার মাথায় উঁকি দিল, কিন্তু প্রস্তাবটি জ্যোতিষ মশাইকে দিতেই তিনি আমাকে খিস্তি করলেন গম্ভীরমুখে, বললেন, ত্রিশ টাকা দিয়ে আপনি পথ মাফেন।
নিশ্চয়ই আপনারা ভাবছেন, আমি জ্যোতিষ মশাইকে উল্টো পাল্টা কিছু বলেছি, বিশ্বাস করুন আমি তেমন কিছুই বলিনি, শুধু প্রস্তাবটা এভাবে দিয়েছি।
বললাম, আমি পাথর ধারণ করে, রাজনীতিতে নামলে সব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে নিশ্চিত প্রধানমন্ত্রী হতে পারবো?
তিনি মাথা ঝাকিয়ে বললেন, হুম।
আপনি এই যে কষ্ট করে উপার্জন করছেন, নিশ্চয়ই পরিবারের সবাইকে ভাল রাখার জন্যে?
তিনি এবার আমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বললেন, হুম।
আমি বললাম, আমার কাছে এই মুহুর্তে এত টাকা নেই, আপনি পাথরটি ফ্রীতে আমাকে দিন সাথে আপনার ঠিকানা, যেদিন আমি প্রধানমন্ত্রী হবো সেদিন প্রথম আপনার ঠিকানায় গিয়ে আপনাকে খুঁজে বের করে উত্তম প্রতিদান দিবো। কথা দিচ্ছি- আপনি যদি ততদিনে এই পৃথিবী মায়া ত্যাগ করে চলে যান তাহলে আপনার পুরো পরিবারকে উত্তম প্রতিদান দিবো।
আপনারা বলুন, আমি কি কোন মন্দ প্রস্তাব করেছিলাম?

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৮
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×